Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নতুন ভোর

স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর- ২০২২ একটি নির্বাচিত গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

নতুন ভোর
লেখিকা: দেবিকা বসু, গাজিয়াবাদ, উত্তরপ্রদেশ
স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর- ২০২২ একটি নির্বাচিত গল্প


##
কোজাগরী পূর্ণিমায় নাকি রাত জাগতে হয়। মা লক্ষ্মী আকাশপথে সাদা প্যাঁচার পিঠে চেপে পরিক্রমায় বেরিয়ে দেখেন তাঁর জন্য জেগে আছে কোন গৃহস্থ। 'কে জাগে!' সন্ধান চলে দূর দূরান্তরে। যে মানুষ জেগে থাকে, মা লক্ষ্মী তার ঘরে নেমে এসে অচলা-রূপে বিরাজ করেন। সুখ সমৃদ্ধি উপচে পড়ে সেই ঘরে। এত শত কথা আগে জানত না বিভাবরী। বিয়ের পরে কলকাতা থেকে অনেক দূরে প্রথমবার পুজো কাটল। ভিন রাজ্যে কয়েকজন বাঙালী এক জায়গায় হলে দুর্গাপুজো হবেই। আর দুর্গাপুজো হলে লক্ষ্মীপুজোও হবে, এ তো জানা কথা। খিচুড়ি ভোগের সাথে বেগুনি, লাবড়া, চাটনি, পাঁপড়ভাজা, বোঁদে ও পায়েস। চোখে জল এল খেতে বসে। রাজীব পরিবেশন করতে-করতে বিভাবরীর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখল। হুসহাস শব্দ তুলে খেতে-খেতে স্মিতাবৌদিও খেয়াল করল। "খিচুড়িটা আগজ্বলন্ত গরম... তোমার চোখে তো জল চলে এল!"

— "হ্যাঁ গো বৌদি, ঝালে। কিন্তু কি অপূর্ব খেতে হয়েছে, বলো!" কাজল বাঁচিয়ে সাবধানে চোখের জল মুছেছিল বিভাবরী। পরে মা ফোন করলে গলায় উচ্ছ্বাস ফুটিয়ে তুলেছিল সহজাত নৈপুণ্যে।

পাঁচ বছর বয়সে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে এসে হাওড়া স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছিল রাজীব। সন্ধান মেলেনি বাড়ির লোকের। শেষ পর্যন্ত রাজীবের জায়গা হয় মিশনারি পরিচালিত এক হোমে। আঠারো বছর বয়সের পরে হোমে আর থাকা যায় না। আবাসিক জীবনের শেষে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে ওকে। ক্যাব চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কল সেন্টারে নাইট শিফট সেরে রাজীবের ক্যাবে টাকা-ভর্তি পার্স ফেলে চলে এসেছিল বিভাবরী। অফিসে পার্স জমা করে গেছিল রাজীব। কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন করে বিভাবরী। তারপর থেকে রাজীবের ক্যাবেই ফিরেছে নিয়মিত। যাত্রাপথের আলাপটুকুর জন্য দুজনেই উন্মুখ হয়ে থাকত। বিভাবরীকে টানত রাজীবের হার না মানা মনোভাব। আলাপ গাঢ় হলে রাজীব নিজের অনাথ পরিচয় অকপটে জানিয়েছিল বিভাবরীকে। হিসেব মতো ওদের মধ্যে প্রেম হওয়ার কথা নয়। তবু প্রেমটা শেষ অব্ধি হয়েই যায়।

কোজাগরী পূর্ণিমায় রাত জাগার প্ল্যানটা রাজীব জানলেও বিভাবরীকে আগে বলেনি। বিভাবরী পালাবার তালে ছিল। পুজোর মূল উদ্যোক্তা প্রশান্তদার গানের গলাটি চমৎকার। ওর হাত ধরে গেয়ে উঠল। 'জাগরণে যায় বিভাবরী।' রবিঠাকুর, লক্ষ্মীঠাকুর সবার অনুরোধ ফেলে কিনা ঘুমোতে যাবে বিভাবরী! তা কি হয়, তা কি হয়! চেয়ারগুলো পেতে গোল হয়ে বসেছিল ওরা। মস্ত বড়ো চাঁদখানা আকাশ ভাসিয়েছে আলোর বন্যায়। পুজো-পুজো গন্ধের সঙ্গে গুঁড়ো-গুঁড়ো জ্যোৎস্না মিশে তৈরী হয়েছে এক স্বর্গীয় বাতাবরণ। সৌম্যদার প্রস্তাব অনুযায়ী এক-এক করে সবাই খালি গলায় গান, কবিতা বা গল্প শোনাচ্ছিল। শুনতে-শুনতে ঘুমঘুম ভাবটা কেটে যাচ্ছিল। দূরে বসে থাকলেও রাজীবের দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছিল ওকে। বিভাবরীকে স্মিতাবৌদি ঠেলল। গল্প শোনাতেই হবে, নয়তো ছাড়া পাবে না। "গান গাইব?" বলতেই সবাই অবাক। ওকে আগে অনেকবার অনুরোধ করেছে। তখন 'গান জানি না' বলে এড়িয়ে গেছে। বাবা ছোটবেলায় বিভাবরীকে শিখিয়েছিল। 'জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো।' অথচ কুলশীল জানা নেই বলে, হোমে বড়ো হয়েছে বলে, রাজীবকে মেনে নিতে পারল না। বিভাবরীও পিছু হটতে পারেনি। রাজীবের এই চাকরিটা পেতেই ওরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নেয়। জানতে পেরে রাগে বাবা মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলল একটানে। মায়ের মন অবশ্য কোনও টানই অগ্রাহ্য করতে পারে না। আজ নাকি লক্ষ্মীপুজোর ভোগ খেতে বসে বাবা কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল, "মেয়েটা ভোগ খেতে কত ভালোবাসতো। মেয়েটাকে পর করে দিলাম আমি। কি করে এখন ভোগ মুখে তুলি!!" মা ফোনে বলছিল, বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। মাকে নিয়ে ওদের কাছে আসতে চেয়েছে।

বাবার কাছেই গান শেখার হাতেখড়ি। বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পরে গভীর অভিমানে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল বিভাবরী। অনেকদিন বাদে আজ মনপ্রাণ দিয়ে গান গাইল—
'রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে
তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহানার ধারে॥
সেইখানেতে সাদায় কালোয়
মিলে গেছে আঁধার আলোয়—
সেইখানেতে ঢেউ ছুটেছে এ পারে ওই পারে—
তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহানার ধারে॥

সুরের মূর্ছনায় বাবার প্রতি জমে থাকা অভিমান বাষ্প হয়ে মিশে যাচ্ছিল হিম বাতাসে। টুপটাপ শিশিরবিন্দু ঝরে পড়ে ভিজছে ঘাস-জমি। হাজার কিলোমিটার দূরে অনুতপ্ত বাবাও আর্দ্র হৃদয়ে জেগেছেন সারারাত। নতুন ভোর জেগে ওঠার আগে আড়মোড়া ভাঙছিল ধীরে-ধীরে।
( সমাপ্ত )


Next Story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717