Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

মৃত্যুদূত

bengali online story reading

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

মৃত্যুদূত
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, কলকাতা
( পর্ব ২ )


আগের পর্ব

##
পর্ব ২

বিপাশা কি করবে বুঝতে না পেরে নিজের সোনার কানের রিং খুলে অ্যাম্বুলেন্স চালকের দিকে বাড়িয়ে বলল, "এই নিন। এটা রাখুন। এটা বিক্রি করলে সাত হাজারের বেশিই পাবেন।"

– "যতসব ফালতু কেসে জড়াবেন নাকি! মাঝরাতে সোনার জিনিস খুলে দিচ্ছেন।"

– "আপনাকে তো বললাম যে আমার কাছে এছাড়া কোনো উপায় নেই।"

– "টাকা যখন দিতে পারবেন না তখন সোনাই দিন।"

অ্যাম্বুলেন্স চালক বিপাশার কাছ থেকে সোনার রিং দুটো নিয়ে সানন্দে কেটে পড়ল। বিপাশার চিন্তা এখন একটাই যে স্বামী অম্লানের জন্য যেভাবে হোক ত্রিশ হাজার টাকা তিন ঘণ্টার মধ্যে হসপিটালে জমা করতে হবে। মেয়ে রিঙ্কিকে কোলে নিয়ে সে দ্রুত বাড়ির পথে হাঁটতে থাকে। ল্যাম্প-পোস্টের আলোয় পথ চলতে চলতে সে দু একবার হোঁচট খায়। সে ভাবে ঈশ্বর তার কি পরীক্ষা নিচ্ছেন! বাড়িতে যা টাকা ছিল সব তো হসপিটালে অম্লানকে ভর্তি করতে খরচা হলো। এই অল্প সময়ের মধ্যে এত রাত্রে কোথা থেকে এতগুলো টাকা সে জোগাড় করবে! বিপাশা ঠিক করল বাড়ি নয়, মধু দত্তর কাছে যাবে। মধু দত্তই তাকে মুদিখানার দোকানে কাজ দিয়েছে। অসময়ে বিপাশার সাহায্যে লাগতেও পারে মধু দত্ত। তার পয়সার তো অভাব নেই। ঘণ্টা-খানেক হাঁটার পর বিপাশা মধু দত্তের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াল। হাসপাতাল থেকে আসার পথেই মধু দত্তর বাড়িটা আগে পড়ে। রাস্তার উপরেই তিন-তলা পাকা বাড়ি।

সদর দরজায় বিপাশা বেশ কয়েকবার সজোরে কড়া নাড়তেই মধু দত্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, "কে এত রাতে? কে ওখানে?" বিপাশা সজোরে বলল, "মধুদা, আমি বিপাশা। দরজা খোলো। খুব বিপদ আমার।" মধু দরজা খুলে বিপাশাকে বলল, "এসো। কি বিপদ?" বিপাশা সব কিছু খুলে বলল মধুকে। চিন্তান্বিত মুখে মধু বলল, "অনেক টাকার ব্যাপার! তুমি চিন্তা করো না। আমি দেখছি। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো আজকাল কসাই হয়েছে। তুমি এত রাত্রে আবার হাসপাতাল যাবে টাকা জমা দিতে!"

বিপাশা কান্না ভেজা গলায় বলল, "আমার অন্য কোনো উপায় নেই। তুমি টাকাটা দাও। আমি সময় মতো শোধ করে দেব।" মধু ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে বলল, "এই নাও টাকা। এত রাতে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে কি করবে! তোমার মেয়েকে বরং বৌদির কাছে রেখে যাও।" মধুর বউ মিনতিও বলল, "অতটুকু মেয়েকে নিয়ে যেও না হাসপাতালে। রেখে যাও মেয়েকে।" বিপাশা মধুকে বলল, "তুমি আর বৌদি আমার যে উপকার করলে তা নিজের লোকেও করে না। তোমাদের কাছে আমি চির-ঋণী হয়ে রইলাম।" মিনতি বলল, "তুমি সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে যাও।" টাকা নিয়ে বিপাশা হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালের পথে বেরিয়ে পড়ল।

অন্ধকারের মধ্যে ক্ষীণ আলোর রেখা দেখে যেমন মানুষ আশায় বুক বাঁধে বিপাশাও সেই আশায় ছুটছিল। তার শরীর যেন আর বইছে না। জীবনের সঙ্গে দুর্নিবার লড়াই করতে-করতে সে ক্লান্ত। কিন্তু ক্লান্তি তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। স্বামী অম্লান হসপিটালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। সময় ও পরিস্থিতি তাকে যেন অন্তহীন আঁধার গহ্বরে ফেলেছে। সকালের সূর্যোদয় তার কাছে যেন মরীচিকা। সে ঈশ্বরকে মনে-মনে স্মরণ করতে-করতে হসপিটালে এসে উপস্থিত হলো। হসপিটালে ত্রিশ হাজার টাকা জমা করে বিপাশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যাবে এমন সময় এক সিস্টার এসে বলল, "অম্লান দাস তো আপনার স্বামী। উনি কোভিড পজিটিভ। ওনার অবস্থা ভালো নয়। গায়ে ভালো রকম জ্বর আছে। শ্বাসকষ্ট খুবই হচ্ছে। আমরা অনেক আগেই অক্সিজেন দিয়েছি। উনি কতখানি নিতে পারবেন তা নিয়ে এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না। ইমারজেন্সি কেবিনে ডক্টর দেখছেন।"

বিপাশা সিস্টারের হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলল, "আমি সর্বস্ব দিয়ে দিতে রাজি আছি। শুধু আমার হ্যাজব্যন্ডকে আপনারা সুস্থ করে দিন প্লিজ। ওর সাথে একবার দেখা করা যাবে?" সিস্টার বলল, "না, আজ দেখা হবে না। কাল সকাল দশটার পর আসুন।"

বিপাশার কথা বলার মতো শক্তি ছিল না। তার দুপায়ের ক্ষমতা যেন ফুরিয়ে এসেছে। ধীর পায়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে সে অঝোরে কাঁদতে লাগল। জনমানবশূন্য রাতে অন্তর্যামী ছাড়া তার সে কান্নার শব্দ কেউ শুনতে পেল না। হাঁটতে-হাঁটতে সে যখন মধুর বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াল তখন ঘড়ির কাঁটা তিনটে ছুঁইছুঁই। সে দরজার কড়া নাড়াতেই মধু দরজা খুলে দিল। মিনতি রিঙ্কিকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বিপাশাকে বলল, "কি গো তোমার স্বামী কেমন আছে?"

বিপাশা ধরা গলায় বলল, "কোভিড পজিটিভ। গায়ে ভালো জ্বর আছে। অক্সিজেন চলছে।"

মধু বলল, "দেখতে পেয়েছো?"

বিপাশা বলল, "না। কাল সকাল দশটার আগে দেখতে পাব না।"

রিঙ্কি হঠাৎ চোখ রগড়াতে-রগড়াতে কেঁদে বলল, "আমি বাবার কাছে যাব। বাবা কবে ফিরবে?"

মিনতি বলল, "ফিরে আসবে তোমার বাবা। এখন ডাক্তার ছাড়েনি তো। ছাড়লেই ফিরে আসবে।"

বিপাশাকে মধু বলল, "সারারাত তোমার অনেক ধকল গেল। ভগবানের ভরসায় ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। চারদিকের পরিস্থিতি খুব খারাপ। তোমার এত রাত্রে বাড়ি গিয়ে কাজ নেই। তুমি বরং মেয়েকে নিয়ে রাতটা থেকে যাও এখানে। কাল সকাল দশটায় এক বার তোমার স্বামীর খবর নিয়ে যেও। মিনতি তোমার মেয়েকে কতবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করল। মা ছাড়া কিছুতেই মেয়ে ঘুমালো না। হাতমুখ ধুয়ে মেয়েটাকে ঘুম পাড়াও। নিজেও একটু ঘুমাও। শরীরটা ভালো লাগবে।"

মিনতির কোল থেকে রিঙ্কি নেমে এসে বিপাশার শাড়ির আঁচল ধরে বলল, "মা, বাবা কবে ফিরবে আমাদের কাছে?" বিপাশা মেয়ের এই প্রশ্নের উত্তর কি দেবে ভেবে না পেয়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। রিঙ্কি বলল, "মা, তুমি কাঁদছ কেন?" মিনতি বিপাশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "যাও কল তলায়। বাচ্চাটার সামনে কেঁদো না। ভগবানকে ডাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ঘর থেকে একটা শাড়ি এনে দিই।"

মিনতি একতলার একটা ঘরে বিপাশাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিল। বিপাশা রিঙ্কিকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। তার ঘুম এলো না। সে ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার সময়টা কাটার অপেক্ষা করছিল। তার মনে অম্লানের মুখটা বারবার ভেসে বেড়াতে লাগল। স্মৃতির সরণি বেয়ে বিয়ের পর অম্লানের সঙ্গে কাটানো সব মুহূর্ত মনে করে দু'গাল বেয়ে অশ্রু নেমে এলো। সে দু'একবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সে মৃদুস্বরে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলল, "আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও। তোমার কাছে আর কোনোদিন কিছু চাইব না ভগবান।" বিপাশার নিদ্রাহীন রাত কেটে গিয়ে সকাল হলো। বিপাশা মিনতির কাছে রিঙ্কিকে রেখে সকাল দশটায় হাসপাতালে পৌঁছাল। হাসপাতালে গিয়ে বিপাশার অম্লানের সঙ্গে দেখা হলো। অম্লানের অবস্থা গত রাতের চেয়ে একটু ভালো। সকাল থেকে জ্বর আসেনি। অক্সিজেন চলছে। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। বিপাশার সঙ্গে কথা বিশেষ হলো না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিপাশার মুখ-চোখ দেখে অম্লানের দু'চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে বালিশে পড়ল। বিপাশা অস্ফুট কণ্ঠে বলল, "কাঁদছ কেন? আমি তো আছি। দেখো তুমি ভালো হয়ে যাবে। আমকে একা করে তুমি কোথাও যেতেই পারবে না।" কথা বলতে-বলতে বিপাশার গলা ধরে এলো।

ডাক্তারবাবু এলেন অম্লানের কেবিনে। বিপাশাকে পাশে ডেকে বললেন, "ডোন্ট ওরি। কাল রাত্রে উনি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছেন তার চেয়ে আজ অনেক বেটার। উনি দিন কয়েকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবেন।"

— "কবে ওনাকে বাড়ি নিয়ে যাব ডাক্তারবাবু?"

— "দেখুন অন্তত তিনটে দিন ওনাকে এখানে থাকতে হবে। অক্সিজেন চলছে তো। সেটা বাড়িতে কি আপনি অ্যারেঞ্জ করতে পারবেন?"

— "না। ওকে এখানেই তিনটে দিন রেখে দিন। আমি বরং দেখে যাব। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাক আগে।"

— "ঠিক আছে। আপনি এখন আসুন।"

বিপাশা হাসপাতালের রিসেপশনে আগের বিল আনতে গেলে একটি ছেলে বলল, "গত রাত এবং আজ সকালের বিলটা ধরুন। আপনি কি এখুনি পেমেন্ট করতে চান?" বিপাশার হাত শূন্য। সে বলল, "আচ্ছা পেশেন্ট ছাড়ার পর বিল-পেমেন্ট করা যাবে?"

ছেলেটি বলল, "আপনি পেশেন্ট ছাড়ার পরই করবেন। তবে কাল রাত এবং আজ সকালের যে বিল হয়েছে সেটা পেমেন্ট করলে ভালো হয়।"

বিপাশা বিলটা হাতে নিয়ে দেখল দশ হাজার টাকা। সে বলল, "আমি বিকেলে পেশেন্টকে দেখতে এসে বিলটা পে করে দেব।" বিপাশা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মেয়ে রিঙ্কিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরল। ব্যাঙ্কে জমানো টাকা তুলে বিকেলে বিপাশা হাসপাতালের বিল মেটালো। সে অম্লানের সঙ্গে দেখা করল। বেশি কথা বলতে অম্লানের কষ্ট হচ্ছিল। ডাক্তারবাবু নিষেধ করায় বিপাশা স্বল্প কথা বলে চলে এলো। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সে হাঁটতে-হাঁটতে মধুর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "মধুদা, আজ আমার শরীরটা ভালো নেই। কাল রাতে তুমি যে ত্রিশ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলে সেটা এনেছি। এটা রাখো।"

— "তোমার তর সইল না। আজই কি দিতে হবে! দুদিন পরেও তো দেওয়া যেত। তোমার বর কেমন আছে?"

— "অভাবের সংসারে টাকার অভাব চিরদিন। বিপদের সময় যে এতগুলো টাকা ঋণ দিলো তার ঋণ আগে শোধ করা আমার কর্তব্য। আজ অম্লানের শরীর একটু ভালো। দুপুরে হালকা খেয়েছে।"

— "কবে ছাড়বে বলছে?"

— "এখনও তিন দিন থাকতে হবে। অক্সিজেন তো চলছে।"

— "সাবধানে থাকাই ভালো। করোনা যে কবে যাবে পৃথিবী থেকে কে জানে! যমদূতের মতো যেন মানুষকে নিতে এসেছে। যাইহোক, মেয়েকে নিয়ে তুমি সাবধানে থেকো।"

বিপাশা বাড়ি ফিরল। সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে। সময়গুলো কিভাবে কাটছে বোঝা যাচ্ছে না। রিঙ্কি মাকে দেখে ছুটে এসে বলল, "মা, বাবা বাড়ি কবে আসবে?" বিপাশা একটু ঢকঢক করে জল খেয়ে বলল, "তিন দিন পর ফিরবে বাবা।" রিঙ্কি একটু কাঁদো-কাঁদো মুখে বলল, "আমার খুব মন খারাপ করছে বাবার জন্য। কতদিন বাবার কোলে উঠিনি।" বিপাশা রিঙ্কির কপালে চুমু খেয়ে বলল, "বাবা, খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।" বিপাশাও অম্লানের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনটে দিন যেন তার কাছে তিনটে বছর।

বিপাশা প্রতিদিনের নিয়ম মাফিক অম্লানকে দু'বেলা হাসপাতালে দেখে আসে। অম্লানের শরীর আগের চেয়ে অনেক সুস্থ। কিছু কিছু কথা হয় অম্লানের সঙ্গে তার। আজ বিকালে অম্লানকে আনতে যাবে বিপাশা। হাসপাতালের রিসেপশনে পোঁছাতেই বিপাশাকে একটি ছেলে বলল, "পেশেন্ট নেম অম্লান দাস। আপনি ওনার বাড়ির লোক তো?"

— "হ্যাঁ। ওনাকে কখন ছাড়া হবে?"

— "আপনি বিলটা পে করে দিন। এই কাগজে সাইন করে দিন। তারপর ডক্টরের সঙ্গে কথা বলে আপনি পেশেন্টকে নিয়ে যেতে পারেন।"

— "ম্যাডাম, আপনি কার্ড না ক্যাশে বিল পে করবেন?"

— "ক্যাশে পেমেন্ট করব।"

বিপাশা বিলটা হাতে তুলে চমকে গেল। চার লক্ষ টাকা। সে জানত প্রাইভেট হসপিটালের খরচা বেশি। কিন্তু এত টাকার যে বিল হবে সে ভাবতেও পারেনি। তাই সে ব্যাঙ্কের যে স্বল্প সঞ্চিত অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট ছিল তা তুলে সঙ্গে এনেছে। তার ব্যাগে তিন লক্ষ টাকা আছে। বিপাশা ভাবছিল যে এক লক্ষ টাকার ঘাটতি সে মেটাবে কি করে। বিপাশা ছেলেটার হাতে তিন লক্ষ টাকা তুলে দিয়ে বলল, "তিন লক্ষ টাকা আছে এখানে। আমি এক লক্ষ টাকা এনে দিচ্ছি ঘণ্টা-খানেকের মধ্যে। আমার স্বামীকে ছেড়ে দিন। ওনাকে আমি বাড়ি নিয়ে যাব।"

– "সরি ম্যাডাম। পুরো বিল না পেমেন্ট হলে পেশেন্টকে নিয়ে যেতে পারবেন না। হসপিটালের একটা সিস্টেম আছে।"

বিপাশা দেখল ছেলেটির সঙ্গে ঝামেলা করে কিছু হবে না। অম্লানকে ফেরাতে হলে হসপিটালের পুরো বিল ক্লিয়ার করতে হবে। কিন্তু এক লক্ষ টাকা তাকে কে দেবে! মধুদাকে সে চাইবে! কিন্তু দুদিন আগেই সে মধুদার ঋণ শোধ করেছে। হঠাৎ নজরে পড়ল তার বাঁ হাতের সোনা দিয়ে বাঁধানো লোহা আর আঙুলে আংটির দিকে। বিয়ের দিন অম্লান তাকে কিনে দিয়েছিল। দেরি না করে সে দ্রুত পায়ে সোনার দোকানে এলো। দুটো জিনিস বিক্রি করে সে আশি হাজার টাকা পেল। বাকি কুড়ি হাজার টাকার জন্য পরিচিতদের দরজায় করাঘাত করল বিপাশা। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। টাকা দেওয়া তো দূরের ব্যাপার উল্টে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিপাশাকে রোজগারের পথ দেখাল। বাড়ি ফিরে হঠাৎ ঠাকুর ঘরে রাখা রিঙ্কির দুটো মাটির ভাঁড়ের কথা মনে পড়ে গেল বিপাশার। রিঙ্কির অন্নপ্রাশন এবং দুটো জন্মদিন খুব ধূমধাম করে হয়েছিল। আত্মীয়স্বজন পরিচিতদের কাছ থেকে উপহার স্বরূপ যে অর্থ রিঙ্কি পেয়েছিল তা ওই ভাঁড়েই রাখা আছে। বিপাশা অথবা অম্লান কেউই ওই ভাঁড়ে কোনোদিন হাত দেয়নি। আজ বাধ্য হয়ে বিপাশা দুটো ভাঁড় ভেঙে ফেলল। কুড়ি হাজারের বেশ কিছু বেশি টাকাই ছিল। বিপাশা তাড়াহুড়ো করে প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটাল ছুটল। এদিকে হাসপাতালে অম্লান বিপাশার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। তার চিন্তা হচ্ছিল বিপাশা কি করে এতগুলো টাকা জোগাড় করবে! হঠাৎ এক সিস্টার ঘরে আসায় তার চিন্তার জাল কেটে গেল। সিস্টার বলল, "অম্লানবাবু, আপনার আজ ছুটি। আপনার স্ত্রী বাইরে আপনার জন্য ওয়েট করছেন। চলুন।" অম্লান সিস্টারের কথায় স্বস্তি পেল। সে ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল রিসেপশনে বিল পেমেন্ট করে বিপাশা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছে। বিপাশা অম্লানকে দেখে বলল, "বাড়ি চলো। রিঙ্কি তোমার ফেরার অপেক্ষা করছে।" ডাক্তারের কাছ বিদায় নিয়ে বিপাশা একটা রিক্সা ধরল বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। রিক্সায় উঠে বিপাশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অম্লান বিপাশার হাতটা জড়িয়ে ধরে বলল, "তোমাকে খুব কষ্ট দিলাম এই কদিন। হসপিটাল বিল তুমি মেটালে কি করে?" বিপাশা নিচু স্বরে বলল, "টাকা কোথা থেকে পেলাম একথা এখন থাক। তুমি সুস্থ হয়েছো এতেই আমি খুশি। কিছু না হোক একটা মহামারী মানুষ চিনতে শিখিয়ে দিলো, জানো।"

— "আমার বউটা কত পরিণত হয়ে গেছে। আজ তোমার জন্য আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম।"

— "ওসব কথা মুখে আনবে না। সময় পরিস্থিতি আমাকে অনেকখানি বদলে দিয়েছে। আমি কখনো ভেবেছিলাম কি সংসারের বাইরে বেরিয়ে রোজগার করব! ভেবেছিলাম কয়েকটা টাকার জন্য পরের দরজায় দরজায় ঘুরব! ভেবেছিলাম কি তোমাকে বাঁচাতে গভীর রাত অগ্রাহ্য করে শহরের রাস্তায় একাকী দৌড়াবো! এসব কিছুই ভাবিনি। তোমার চাকরি চলে যাওয়া, তোমার অসুস্থতা আমাকে বাধ্য করল এসব করতে। এই কয়েকটা দিন জীবন অনেক কিছুর সম্মুখীন করল।"

বিপাশার চোখ থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপটপ করে জল অম্লানের হাতে পড়ল। অম্লান বিপাশার কাঁধে হাত রেখে তাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরল। ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা। দুজনেরই আজ ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। গভীর নীরবতার ভাষায় অম্লান বিপাশার কথা হলো। ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে রিক্সা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পথ শেষে গন্তব্যে পৌঁছাবে। জীবনের পথ আরও দীর্ঘ। গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তায় জীবন যে আরও কত ঘটনার মুখোমুখি করবে তারই অপেক্ষায় যেন দু'জনে।
( সমাপ্ত )

আগের পর্ব

Next Bangla Story



List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717