Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বিধুভূষণ ও একটি চুরির কাহিনী

Online bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



List of all Bengali Stories

বিধুভূষণ ও একটি চুরির কাহিনী

লেখক - অগ্রদীপ দত্ত, কোলকাতা

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, মে - ২০২৪' স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার একটি নির্বাচিত গল্প )

##

|| এক ||
চেনের হুকটা লাগিয়ে লাট্টু সামনে এসে বলল "হেব্বি তো! দারুণ লাগছে..."
সোনার ফিনফিনে চেনটা আঙুল দিয়ে ঘুরিয়ে লক্ষ্মী একটু মুচকি হাসল, "সত্যি বললি?"
"মাইরি বললাম,ব্যাপক লাগছে..."
দু'নম্বর স্পারে, গাছের ছায়ার নীচে লাট্টু আর লক্ষ্মী হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরেই নদী; স্রোতহীন। দিনের বেলাতেও এদিকটা বেশ নির্জন। দূরে কয়েকটা বাচ্চা স্নান করছে নদীতে। হাওয়ার সঙ্গে তাদের চিৎকার ভেসে আসছে। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে লাট্টুর আবার নজর পড়ল লক্ষ্মীর গলায় পরানো সেই চেনটার দিকে; গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দুপুরের রোদ এসে পড়ায় চিকচিক করছে। চেনটা বেশ ভালোই মানিয়েছে। লক্ষ্মীকে অবশ্য সব কিছুতেই ভালো মানায়। যা চেহারা! তার উপর গায়ের রঙ। এত্ত ফরসা...মুখটা যদিও আহামরি নয়। কেমন যেন ট্যারা বাঁকা টাইপের। ফরসা মুখে অজস্র আঁচিল। লাট্টু এসব নিয়ে ভাবে না। ভাবা মানায়ও না। কারণ সে পিচের মতো কালো, পাটকাঠির মতো রোগা টিঙটিঙে চেহারা; তার উপর লক্ষ্মীর মার্কেট এত হাই থাকার পরেও যে ওকে পটানো গেছে এই কথাটা মনে আসলেই ভীষণ আরাম লাগে লাট্টুর। খুশিতে সে লক্ষ্মীকে জড়িয়ে ধরে।

"ছাড় ছাড়। এগুলো এখন না। ছাড়..." লক্ষ্মী নিজেকে ছাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। মাথাটা চটাং করে গরম হয়ে গেল লাট্টুর। এত্ত রিস্ক নিয়ে সোনার চেনটা এনে গলায় লটকে দেওয়ার পরেও এই শালা মন পাওয়া যায় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে লক্ষ্মী বলল, "পরশু সিনেমা দেখতে যাবি? আমি আর তুই... তখন যা করার করিস..."
লাট্টু কথাটা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল, "চল। কিন্তু আমার রাত ছাড়া হবে না। সকালে জেঠু..."
কথাটা শেষ করতে না দিয়েই লক্ষ্মী বলল, "ও হ্যাঁ, ভালো দেখে একটা টপ আনিস তো। পুতুলটার গায়ে পরানো কমলা রঙের টপটা আনবি। বুঝলি?"
"আগে যে এতগুলো দিলাম! ওখান থেকে পর..."
লক্ষ্মী কাছে এসে লাট্টুর কেঠো হাতটা ধরে বলল, "সব পুরানো হয়ে গেছে। আর ওই জামাটা আমার হেব্বি পছন্দ..."

প্রায় দিন তিনেক পরপর নতুন নতুন জামা, শাড়ি হাতে গছানোর পরও কী করে এত তাড়াতাড়ি সব পুরোনো হয়ে যায়; লাট্টুর মগজে ঢুকলো না। কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল সে। আচমকা মনে হল মেয়েটা তাকে গাধা বানাচ্ছে না তো? জেঠুর ভুলো-মনের ফায়দা নিয়ে জিনিসগুলো সরিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? আর চুরি করা ঠিক হবে না, লাট্টু ভাবল। দোকান থেকে 'ক্যাশ আউটের' ব্যাপার নিয়ে জেঠু যে তাকে সন্দেহ করে এটা বোঝা যায়। বড়জোর এই মাসটা থেকে পরের মাসেই টাকা পয়সার হিসেব বুঝে দোকান থেকে কেটে পড়তে হবে। না হলে এই মেয়ে ছাড়বে না। দোকানে থাকলে কিছু না কিছু সরাতেই হবে। এর চেয়ে ভালো অন্য ধান্দা খুঁজে নেওয়া। তাছাড়া দোকানে চুরি করার মতো আর সেরকম কিছু নেই। নতুন-লটে মাল আসে মাসে একবার। বিক্রি-বাট্টা তলায় গিয়ে আছাড় খাচ্ছে একবছর ধরে। জেঠুর পকেটের খবর ভালো করেই জানে লাট্টু। জেঠির নাকি কী কঠিন অসুখ। লাট্টু মোটা-প্রতাপের মুখে শুনেছে সব। এতকিছু জেনেও দোকানের ক্যাশ থেকে টাকা আউট, নতুন ড্রেসের বান্ডিল থেকে সবচেয়ে ভালোটাই লক্ষ্মীর জন্য সরিয়ে রাখে। তাও কিছুতেই ঐ মেয়েটার মন গলে না। লাট্টু মনে মনে ঠিক করল আর চুরি করবে না। ধরা পড়ার আগেই দোকান থেকে কেটে পড়বে।

"কীরে আনবি তো?" ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর চেষ্টা করল লক্ষ্মী।
লাট্টু বিরস মুখে উত্তর দিল, "শুক্রবার বিকালে ফুল-ব্রিজের নীচে চলে আসিস..."

|| দুই ||
"আমি বোধহয় আর বাঁচব না..." স্টোভে চাপানো গরম জল গ্লাসে ঢালতে গিয়ে কথাটা কানে এল বিধুভূষণবাবুর।
স্যাঁতস্যাঁতে, অন্ধকার ঘর। বিছানার সাইডের জানালাটা খোলা। আশপাশের সমস্ত ফ্ল্যাটের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে একতলা এই ঘুপচি ঘরের অন্ধকারের ভেতর ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে দিনের আলো। খোলা জানালা দিয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যায় সেদিকে তাকিয়েই শম্পা আবার বলে উঠল, "আমাকে আর ডাক্তার দেখাতে হবে না। তোমার টাকাগুলো শুধু শুধু নষ্ট হচ্ছে..."
কথাগুলোর প্রত্যুত্তর ঠিক কী হতে পারে বিধুভূষণ চৌধুরী ভেবে পান না। জোর গলায় ধমক দিলেও সেই ধমক ফ্যাকাসে শোনাবে তিনি জানেন। শম্পাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কোলন ক্যানসার। থার্ড স্টেজ। ডাক্তার বলে দিয়েছেন যতদিন বাঁচবে কেমো চলবে।
ঘরে বিচ্ছিরি রকমের নিস্তব্ধতা। গরম জলে পাউডার গুলে বিছানায় শুয়ে থাকা স্ত্রী'র দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মুখে বললেন, "এটা খেলেই ঠিক হয়ে যাবে..."
শম্পা ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে গ্লাসের দিকে তাকালো। সেই নজরে বাঁচার কোনো আশা নেই। চোখের জল আড়াল করতে বিধুভূষণ বেড়িয়ে এলেন রাস্তায়। দুপুরে দোকানে ঢোকার সময় দেখলেন বাইরে দাঁড় করানো ম্যানিকুইনটার জামার উপর হাত বোলাচ্ছে লাট্টু। বিধুভূষণকে দেখে একটু থতমত খেয়ে বলল, "আমি খেতে যাই তাহলে..."

এসময়টা দোকানে কাস্টমার থাকে না। সারাদিনে হাতেগোনা কয়েকটাই কাস্টমার আসে। সকলেই পুরোনো বাঁধা কাস্টমার। শহরের আউট-সাইড বলে এখানে দোকানও হাতেগোনা। গলির শেষের কাঞ্জিলালের বড়ো দোকানটা খোলাতে ব্যবসার অবস্থা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। দিন পনেরো পর শম্পাকে হসপিটালাইজড করতে হবে। ব্লাড লাগবে চার ইউনিট। তারপর কেমো। অনেক টাকার ধাক্কা। তবু ট্রিটমেন্ট করাতেই হবে বিধুভূষণবাবু মনস্থির করলেন।

রাস্তার ওপাশ থেকে মোটা-প্রতাপ আর দেবু অনেকক্ষণ থেকেই জোরে জোরে কথা বলে যাচ্ছে। চোখের সামনে পেপার খুলে সেই কথাগুলোই কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করলেন বিধুভূষণবাবু। কিছুক্ষণ শুনে বুঝতে পারলেন চুরি-টুরি নিয়েই কথাবার্তা বলছে। পালপাড়ার আশেপাশে কিছুদিন থেকে চুরির উপদ্রব বেড়েছে। প্রায় রাতেই দোকানের তালা ভেঙে সব জিনিস সাফ করে পালাচ্ছে চোর। কেউ ধরতে পারছে না। এই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরাও ফিট করা নেই। থাকলে অনায়াসে ধরে ফেলা যেত। চুরির ভয়ে মংলু, রাজেশরা এখন কেউই আর বাড়ি ফিরছে না। যে যার দোকানের মেঝেতেই রাত কাটাচ্ছে। কিছুদিন হল দোকানে লাট্টুই রাতে ঘুমাচ্ছে। ও এখানে কাজ করছে পাঁচ বছর হল। দু'বেলা না খেতে পাওয়া লাট্টুকে একসময় বিধুবাবুই কাজে ঢুকিয়েছিলেন। এখন অবশ্য ওদের অবস্থা অনেকটাই সচ্ছল। দাদার লটারির টিকিটের ব্যবসায় ভালো টাকাই আসছে। লাট্টু মাঝেমধ্যেই বলে সেসব কথা। আর খুব বেশিদিন এখানে কাজ করবে না সেকথাও শুনিয়ে রেখেছে। বিধুভূষণ চৌধুরীর সাতান্ন বছরের কপালের চামড়ায় আরও কয়েকটা ভাঁজের সংখ্যা বাড়ল।

|| তিন ||
এই টপটা যেভাবে হোক ম্যানেজ করে দিতে হবে। এটা পরলে মাখন লাগবে ওকে। কিন্তু জিনিসটা এখান থেকে আউট করা চাপের। ম্যানিকুইনটার জামায় হাত দেওয়া মাত্রই ওপাশের দোকান থেকে মোটা-প্রতাপের গলা, "এটা তোর আইটেমকে গিয়ে পরা। পুরো ঝিঙ্কু লাগবে..."
এর উত্তরে কী বলবে ভেবে না পেয়ে ক্যাবলার মতো দাঁত ক্যালালো লাট্টু।
"কেস তো দেখছি পুরো জন্ডিস। মাছওয়ালার বেটির সাথে.. চালাও চালাও..." বলে ভুড়ি দুলিয়ে দুলিয়ে হাসল প্রতাপ।
ভেতরে গদির উপর বসে থাকা বিধুভূষণবাবুর মাথায় সটাং করে ধাক্কা মারল কথাটা। অনেককিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল এবার। সন্দেহটা অনেকদিনের। প্রথমে ভেবেছিলেন রাস্তা-ঘাটে বেখেয়ালে হয়ত কোথাও পড়ে গিয়েছে। কিন্তু দু'দিন আগে বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে অবাক হয়েছিলেন দেখে। বিয়েতে বৌকে দেওয়া সোনার সেই চেনের মতো অবিকল জিনিসটা মাছওয়ালা চন্দনের মেয়ে লক্ষ্মীর গলায় ঝুলছে। চিনতে অসুবিধে হয়নি। বিশেষ একধরণের তারার ডিজাইন করা। কিন্তু ওটা ওর গলায় গেল কীভাবে! ভাবাচ্ছিল। আজ উত্তর পেলেন। আরও কিছু খোঁজ-খবর নেওয়া দরকার।
খোঁজ খবর নিতে হল না। দু'দিন পরই চুরিটা হল। দোকানে ক্যাশের ড্রয়ারে হাজার পাঁচেক টাকা হিসেব করে রেখে তালা মেরে চাবিটা নিতে ভুলে গেছিলেন। সকালে এসে গুনতে গিয়ে দেখলেন সাতশো টাকা শর্ট। বার তিনেক নিজে গোনার পর প্রতাপকে দিয়ে গুনিয়ে দেখেও হিসেব একই। শনিবার দুপুরে খেয়ে দোকানে আসার পর লাট্টুকে প্রশ্নটা করেই ফেললেন বিধুভূষণ,"লাট্টু শোন!!"
কাস্টমারের দেখে যাওয়া ভাঁজ ভাঙা শাড়িগুলো ভাঁজ করছিল লাট্টু। মুখ তুলে বলল, "কী গো?"
"বললাম যে, তুই কি এর মধ্যে ম্যানিকুইনটার ড্রেস খুলেছিলি?" বলে বাইরের দিকে আঙুল দেখালেন।
এমন আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গলায় জোর আনার চেষ্টা করল লাট্টু, "কই... না তো। কেন?"
"আসলে সব বোতামগুলো উলটো পাল্টা লাগানো ছিল। তাই ভাবছিলাম কোনো কাস্টমার এসে দেখতে চেয়েছিল কিনা..."
কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে লাট্টু বলল, "ও হ্যাঁ। একজন এসে এটা দেখতে চাচ্ছিল। তাই খুলে দেখিয়েছিলাম। তুমি তো ছিলে না কাল সকালে..."
'কে চাচ্ছিল,' তা খুব ভালো করেই জানা আছে বিধুবাবুর। প্রতাপ কাল দেখেছে মেয়েটাকে। সিনেমা হলের সামনে। এই ড্রেসটাই পরে ছিল। লাট্টুও ছিল পাশে। কাল সন্ধ্যায় মাল নিয়ে ওদিক দিয়েই ফিরছিল প্রতাপ। ওদের দেখে সেই ছবি তুলে আনে মোবাইলে। তিনিই বলেছিলেন লাট্টুর উপর নজর রাখতে। এখন আরও কিছু প্রমাণ দরকার। চোরের নাম সামনে আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই।

|| চার ||
নাক মুখ ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে গলগল করে। বিধুভূষণ চৌধুরীর দোকানের সামনে পুরো পালপাড়া বাজার উপচে পড়ছে ভিড়ে। মংলু, দেবু, প্রতাপ, রাজেশ বেধড়ক চড়,থাপ্পড়, কিল, লাথি চালাচ্ছে। আশপাশের দোকানদারগুলোও কয়েক ঘা করে বসিয়ে যাচ্ছে বুক, পিঠ, তলপেটে। রাস্তায় গুটিয়ে পড়ে আছে লাট্টু। কুঁকিয়ে উঠছে ব্যথায়। লক্ষ্মী ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। একটু আগে ওকে ধরে আনা হয়েছে। হাতের মুঠোয় চেপে ধরা সেই ফিনফিনে সোনার চেন। লাট্টুই যে চুরি করে ওকে সব চালান করত লক্ষ্মী ভয়ে সবই উগড়ে দিয়েছে একটু আগে। এমন বেধড়ক মার দেখে ভিড়ের মধ্য থেকে একজন সহানুভূতির সুরে বলে উঠল, "ছেড়ে দিন। আর কত মারবেন। মরেই তো যাবে..."

রাজেশ সেই ভিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল, "ছেড়ে দেব মানে? বিধুদার বৌ-এর ট্রিটমেন্টের দু'লাখ টাকা মেরে সাফ করে দিল আর আপনি বলছেন ছেড়ে দিতে?"
প্রতাপ চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, "মেরে ছাল তুলে দেবো, বল শালা টাকাটা কোথায়?"

লাট্টু কিছু একটা বলার চেষ্টা করল। পারল না। ঠোঁট ফেঁটে কষ জমে আছে। বিধুবাবু দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চুপচাপ। একজন বলল, "এসব চোর-ছ্যাঁচোড়দের রাখেন কেন দোকানে!"

বিধুভূষণ হতাশ গলায় বললেন, "কে জানত এতবছর ধরে টাকা দিয়ে কাল সাপ পুষছি! কিছুদিন থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। এবার তো বৌ-এর ট্রিটমেন্টের পুরো টাকাটাই মেরে দিল। ভুল করে ড্রয়ারে ফেলে রেখে গেছিলাম।"
"দেখো গে, এ-ই হয়ত দোকানের তালা ভাঙছিল এতদিন..." ভিড়ের মধ্য থেকে আরেকজন বলে উঠল।
"বক-কাটিং চেহারার এত পাওয়ার! দেখে তো বোঝা যায় না।" ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে রাজেশ বলল, "শালাটা তো কিছুই বলছে না..."
"ওর বাপ বলবে..." চোয়ালে কেতিয়ে এক লাথ মারল দেবু। মুখের ভেতর থেকে একটা রক্ত মাখা ভাঙা দাঁত ছিটকে বেরিয়ে এল রাস্তায়।

|| পাঁচ ||
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন বিধুভূষণবাবু। বেশ কয়েকদিন থেকে মাঝরাতে এভাবে আচমকা উঠে পড়েন। মাথায় চেপে বসা অদ্ভুত ইচ্ছেটাকে কোনোমতে দমিয়ে রেখে আবার শুয়ে পড়েন বিছানায়। কিন্তু আজ আর দমানো সম্ভব নয়, টের পেলেন। শম্পা ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে। চাদরের নীচ দিয়ে কাঠি হয়ে যাওয়া হাত দুটো বেরিয়ে আছে বাইরে। পরশু দিন সেকেন্ড সাইকেলের কেমো শুরু। শেষদিন অবধি ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। টাকা জোগাড়ের হাজারটা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এতগুলো টাকা কোনোভাবেই ম্যানেজ করা গেল না। লাট্টুকে ফাঁসিয়ে সেই দু'লাখ টাকার বানানো গল্পতেও লাভ হয়নি। কোনো কূলকিনারা না পেয়ে শেষ-মেশ তাকে ফাঁসানোর প্ল্যানটা কষেছিলেন বিধুভূষণ। ভেবেছিলেন লাট্টুর পুরানো চুরির প্রমাণ দেখিয়ে টাকাটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। লাট্টু বলত ওদের অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। তাছাড়া ভাইকে বাঁচাতে তার দাদা নিশ্চয়ই ধার-দেনা করে হলেও টাকাটা মেটাতো। কিন্তু এসব কিছুই হল না। বরং যেটা ভাবেননি সেটা হল।
বিছানার তলা থেকে শাবল আর করাতটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বিধুবাবু রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। এই ইচ্ছেটা গত সাতদিন থেকে হচ্ছে। সেদিন পাবলিকের উদোম মার খেয়ে লাট্টুর অনবরত ব্লিডিং, সদর হাসপাতালে ভর্তির পরেরদিন সকালে ডাক্তারবাবু এসে ডেথ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিয়ে গেল লাট্টুর বাবার হাতে। পাগলের মতো মাটিতে কাঁতরাতে থাকা একটা অসহায় মায়ের আকুতি ভেসে উঠল চোখের সামনে। বিধুভূষণ চৌধুরী হাঁটার স্পীড বাড়ালেন। নিস্তব্ধ রাতের শুনশান রাস্তায় কালচে হলুদ রঙের আলো ছড়িয়ে আছে স্ট্রিট-লাইট। ঘুমিয়ে থাকা কুকুরগুলোর ডাক তীব্র হচ্ছে ধীরে ধীরে। চোর আসলে কুকুরগুলো কীভাবে যেন আগে থেকেই টের পেয়ে যায়। একটা দোকানের সামনে এসে ব্যাগ থেকে শাবল বের করলেন বিধুভূষণবাবু। এই অদ্ভুত ইচ্ছেটা লাট্টু মারা যাবার পরদিন থেকে জন্মেছিল। পরপর অনেক ক'টা দোকানের তালা ভাঙার ইচ্ছে। যাতে লোক এসে জড়ো হয় সেদিনের মতো, চোরকে হাতে নাতে ধরার খুশিতে এলোপাথাড়ি লাথি, ঘুষি চালায় সবাই। আসল চোরের ধরা পড়ে যাওয়া ভীষণ দরকার আজ। ধরা পড়ে গেলে শেষ অবধি চোখ বন্ধ করে মার খেয়ে যেতে হবে। যতটা মার খেলে লাট্টুর বাবা-মায়ের কাছ থেকে চুরি যাওয়া জিনিসটার মূল্য মেটানো সম্ভব।
( সমাপ্ত )


Next bangla story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717