-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
List of all Bengali Stories
◕
জানোয়ার
লেখিকা - জয়ন্তী ঘোষাল, কোলকাতা
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, মে - ২০২৪' স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার একটি নির্বাচিত গল্প )
##
নাঃ। কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না টমিকে। ও যেখানে যেখানে ঘোরে-ফেরে সেই সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পেলাম না। ওর নাম ধরে কত যে ডাকলাম। অথচ দু'দিন আগেও আমার গলা পেলে যেখানেই থাকুক তীর বেগে ছুটে আসত। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে গাল চেটে, পা চেটে, মুখে নানা রকম শব্দ করে সে তার আনন্দ প্রকাশ করত। আজ কি সে শুনতেই পাচ্ছে না? না, শুনেও সাড়া দিচ্ছে না অভিমানে? একরাশ হতাশা আর ক্লান্তি নিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম স্নানের ঘাটের পৈঠাতে। কত যে কথা মনে পড়ে যেতে লাগলো একের পর এক।
টমিকে আমরা কেউ খুঁজে-পেতে বাড়িতে আনিনি। ও নিজেই চলে এসেছিল একদিন আমার পিছন পিছন। আমার স্কুলের পথে যে জেলে বস্তিটা পড়ে সেখানে টমি ওর মা, আর ছ-সাতটা ভাই বোনের সঙ্গে খেলা করত। মারপিট আর খুনসুটি করত। সেদিন বাড়ি ফেরার সময় টিফিন বক্স খুলে এক-টুকরো পড়ে থাকা রুটি ওর দিকে ছুঁড়ে দিলাম। তারপর আর দেখিনি কি হলো। প্রায় মাইল-টাক পথ চলে আসার পর হঠাৎ কুঁইকুঁই শব্দ শুনে পিছনে ফিরে দেখি টমি। এতদূর চলে এসেছে আমার পিছু পিছু। বললাম, যা বাড়ি চলে যা। ও লেজ নাড়াতে লাগলো টুকটুক করে। আমি আরো জোরে বকুনি দিয়ে বললাম, রাস্তায় কত গাড়ি যাচ্ছে। এক্ষুনি চাপা পড়বি তো। যা, বাড়ি যা। ও আরো জোরে লেজ নাড়াতে নাড়াতে আমার দু পায়ের ফাঁকে এসে দাঁড়াল। আমিও দাঁড়িয়ে পড়লুম। এত্ত-টুকুন ছানা; এখনো মায়ের কোলের মধ্যে ঢুকে অন্যদের সঙ্গে মারপিট করে, দুধ খাবার জন্যে। এটাকে এই বড় রাস্তার মাঝখানে ছেড়ে রেখে যাই-বা কী করে? আমায় চিন্তা করতে দেখে বন্ধু হীরু বলল, "দে ওটাকে। আমি পুষবো।" শুনেই রেগে গিয়ে বললাম, "কেন? তুই পুষবি কেনো? ওতো আমার সঙ্গে সঙ্গে আসছে। আমার পায়ের ফাঁকে ঢুকেছে। আমার দেয়া রুটি খেয়েছিল বলেই পোষ মেনে গেছে। আমার কুকুর ও। তোকে দেব কেন?"
হীরু দাঁত বের করে ভেঙচি কেটে বলল, " ই...! আমার কুকুর! দু'পা সঙ্গে এলেই অমনি তোমার কুকুর হয়ে গেল? কৈ, ডাক তো দিকি দূরে গিয়ে, কেমন তোর কাছে আসে দেখি?"
আমি সঙ্গে সঙ্গে এক-ছুটে সামনে অনেকটা এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ডাকতে আর হলো না। এমনিতেই টমি একছুটে গিয়ে আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পায়ের পাতাটা চাটতে লাগলো। আমি বীরের মতো হীরুর দিকে তাকিয়ে বললাম, "দেখলি ! আমার পোষা কিনা?" হীরু অমনি ওর পকেট থেকে একটা বিস্কুট বের করে ডাকলো, "আঃ আঃ আতু। আয় ভুলু, আমার কাছে আয়। আরো বিস্কুট দেব।" কিন্তু টমি এক-চুল নড়ল না। আমার আরো কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে টুক টুক করে নাড়তে লাগলো ছোট্ট লেজটি। আমি এবার আদর করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে হীরুকে বললাম, "দেখতে পেলি এবার টমি কার? আর ওকে কখনো 'ভুলু' 'ফুলু' বাজে নাম ধরে ডাকবি না বলে দিলুম। ওর নাম টমি। চল টমি, বাড়ি চল।" টমিকে কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে মহানন্দে কুঁইকুঁই করতে করতে আমার হাত চাটতে লাগলো। সেদিন বাড়িতেই নিয়ে এলাম ওকে। মা প্রথমে খুব রাগারাগি করলেও শেষ পর্যন্ত আমার জোরাজুরিতে মেনে নিল। ওর জায়গা হলো সিঁড়ির নিচে। ছেঁড়া বস্তা পেতে, তার ওপর মায়ের পুরনো শাড়ি বিছিয়ে ভালো করে জায়গা করে দিলাম ওর ঘুমোবার জন্যে। কিন্তু হতভাগার পছন্দ হলো না। সকালে উঠেই দেখি আমি আর দাদা যে ঘরে শুই, তার সামনে পাপোশের ওপর কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছেন বাবু। 'টমি' 'টমি' বলে ডাকতে লাল লাল চোখের ট্যারা দৃষ্টি মেলে অতি কষ্টে একবার তাকিয়েই আবার আগের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে লাগলো। যেন বলল, "আঃ! বিরক্ত করছ কেন? একটু ঘুমোতে দাও তো বাপু শান্তিতে..."
সেই থেকে টমি হয়ে গেল আমাদের বাড়ির একজন সদস্য। বলতে গেলে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ভোর থেকে কত যে কাজ ওর! সকালে বাবা ভাত খেয়ে স্টেশনে যাবেন ট্রেন ধরতে। টমি যাবে সঙ্গে সঙ্গে। বাবাকে ট্রেনে তুলে দিয়েই পড়ি কি মরি করে ছুটতে ছুটতে ফিরে আসবে বাড়ি। এবার আমি বের হব। জামা জুতো পরে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েই দেখব আমার আগেই টমি সদর দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অস্থির ভাবে লেজ নাড়ছে। যেন বলছে, কেই কি এত দেরি করে? আর পারিনা বাপু তোমাদের নিয়ে। আমার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের গেট অব্ধি যাওয়া চাই টমির। তিন মাইল দূরের স্কুল আমাদের। আমরা সবাই মিলে দল বেঁধে হেঁটেই যাই। টমি চলে কখনো দলের আগে-আগে, কখনো-বা একটু পিছনে। ও আসার পর বন্ধুদের দলে আমার বেশ দর বেড়ে গেছে। নিয়মিত স্নান টান করানোয় টমিরও ভোল পালটে গেছে। এখন রীতিমত সুন্দর, গোলগাল, লোমশ আর চনমনে কুকুর সে। সবাই তাকে একটু আদর করতে চায়। এটা ওটা খাওয়াতে চায়। কোলে নিতে চায়। আমি খবরদারি করি। করব নাই বা কেন? টমি আমার সম্পত্তি। এই পৃথিবীতে আমার একান্ত নিজস্ব অস্থাবর সম্পদ বলতে একমাত্র ঐ টমি। তার ওপর যা কিছু অধিকার আমার।
আমি স্কুলের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলে, টমি একটু বিশ্রাম নেয় ঐখানে একপাশে শুয়ে। তারপর হন হন করে বাড়ি ফিরে আসে। খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে আবার বিকেল হলেই চলে আসে স্কুলের গেটে। আমি বের হলে অত ছেলের ভীড় ডিঙিয়ে ঠিক কাছে এসে আমার জামা ধরে টান দেয়। তারপর আবার শুরু হবে তার হাঁটা আর ছোটা। বাড়ি ফিরেও কি বিশ্রাম আছে তার? দাদু বাগানে যাবে গাছপালা দেখাশোনা করতে; টমি যাবে পিছু পিছু। একবার দাদু কোমরের গামছা খানা ফেলে রেখে চলে এসেছিল। টমি মুখে করে নিয়ে এল। আর একবার ছোটো ফারসি-কোদাল খানাই ফেলে এল দাদু বাগানের লাগোয়া পুকুর পাড়ে।। সেবারও টমি মুখে করে নিয়ে এল কোদাল খানা। তারপর দাদুর মুখের দিয়ে তাকিয়ে এমন ভঙ্গী করে লেজ নাড়তে লাগলো, যেন মনে হল বলছে, কী যে করো বাপু তুমি। আর পারি না তোমায় নিয়ে।
সেবার এক কাণ্ড হলো। বাবা অফিসে যাবার পথে কিভাবে যেন তাঁর মান্থলিটা হারিয়ে ফেললেন। সেদিন আর অফিস যাওয়া হলো না। স্টেশন থেকেই বাড়িতে ফিরে এলেন। এসেই খোঁজাখুঁজি, চ্যাঁচামেচি। বাড়িতেই ফেলে গেছেন কিনা, কেউ লুকিয়ে রেখেছে কিনা, এই নিয়ে হৈ হৈ রৈ রৈ। হঠাৎ কোথা থেকে টমি এসে হাজির। তার মুখে মান্থলির ব্যাগ। আসলে পানের দোকানে পান কেনবার সময় বাবার হাত থেকে ছোটো মান্থলি ব্যাগটা কিভাবে যেন পড়ে গিয়েছিল। ছায়াসঙ্গী টমি সেটা কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে। কিন্তু কাউকে দেখায়নি। নিজস্ব একটা ভাঁড়ার ঘর আছে ওর; উঠোনের পেয়ারা তলা। সেখানেই পুঁতে রেখেছিল। সেখানে ও ওর যাবতীয় সম্পত্তি সযত্নে মাটি চাপা দিয়ে রেখে দেয়। কেউ হয়তো ভাবতে পারে একটা কুকুর ছানার আবার নিজস্ব সম্পত্তি কি? আছে আছে। ওরও নিজস্ব সম্পত্তি আছে। বাড়ির সবাই যে-যখনি কিছু খাচ্ছে, আদরের টমিকে কিছু-না কিছু দিচ্ছে। কিন্তু সব সময় তো আর খিদে থাকে না। তাই টমি, বাড়তি বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ঐ পেয়ারা তলায় নিয়ে গিয়ে মাটি খুড়ে পুঁতে রাখে। খিদে পেলে ডান থাবা দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে খাবার বের করে খায়। বাবার মান্থলির ছোটো ব্যাগটাও টমি তার ঐ গুপ্ত ভাণ্ডার থেকে বের করে বাবার পায়ের কাছে রেখে দিল। তখন তার আদর দেখে কে? সেও লেজ নেড়ে নেড়ে হাত-পা চেটে অস্থির। সমানে কুঁই কুঁই করেতে লাগল, যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, "তবে? বলো এবার, টমি কি কম কাজের?"
এ হেন আদরের, আর করিৎকর্মা টমি রাগ করে চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে। কোথাও তার চিহ্ন মাত্র নেই। কিন্তু কেন? এমন কি হয়েছিল যে দু বছরের এত ভালবাসা, সবার এতো আদর, এত বিশ্বাস, সবকিছু পায়ে মাড়িয়ে চলে গেল সে ! এত অভিমান! ঘটনাটা তা হলে বলি।
সেদিন আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল টমি। আমি ক্লাস করছি দোতলায়। হেড স্যারের অঙ্ক ক্লাস। বেলা তখন একটা। হঠাৎ কিছু লোকজনের ক্রুদ্ধ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শোনা যেতে লাগল। ঘাড় ঘুরিয়ে উঁকি মেরে দেখি স্কুলের গেটের সামনে বেশ বড় সড় একটা ভীড় জমে গেছে। অনেকগুলো লোক রাগে অন্ধ হয়ে চিৎকার করতে করতে স্কুলের ভেতরে ঢুকে আসতে চাইছে। কিন্তু দরোয়ান বাহাদুর তালা দিয়ে রেখেছে গেটে। লোকগুলো বাহাদুরের সঙ্গে ধস্তা ধস্তি করছে। আর চিৎকার করে গালি গালাজ করে চলেছে। দুমাদুম ইট পাটকেল পড়ছে স্কুলের সামনের মাঠের মধ্যে। হেডমাস্টার মশাই ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। পিছন পিছন আমরাও। দোতলার বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে তাকিয়েই আমার মাথা ঘুরে গেল। একী কাণ্ড করেছে টমি? ওর মুখে দেখি একটা মুরগী। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে চলেছে টমির মুখ থেকে। বুঝতে পারলাম স্কুলের পাশে যে জেলেপাড়া ওখান থেকেই মুরগীটাকে শিকার করে সোজা স্কুলে চলে এসেছে, আমাকে দেখিয়ে বাহাদুরি নেবে বলে। ওর পিছু পিছু তাড়া করে এসেছে জেলেপাড়ার লোক। তাই ভয় পেয়ে লাফিয়ে পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকে পড়েছে স্কুলের মাঠে। তাকিয়ে দেখলুম ওর ভয়ার্ত দুটো চোখ তখন ব্যাকুল ভাবে চারিদিকে আমাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। ততক্ষণে হেডস্যার চলে গেছেন গেটের কাছে। আরো কয়েকজন স্যারও পৌঁছে গেছেন সেখানে। অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা চলল। শেষ পর্যন্ত মোটা টাকা জরিমানা নিয়ে তবে মারমুখী লোকগুলো ফিরে গেল।
আমি বাড়ি ফিরলাম। পিছন পিছন যথারীতি ফিরল টমিও। ওর মুখ থেকে আগেই মরা মুরগীটা কেড়ে নিয়ে বাহাদুর ছুঁড়ে দিয়েছিল জেলেদের দিকে। টমি বোধহয় কিছু বুঝতে পেরেছিল। ওর ছোটো ছোটো কালো চোখে অপরাধীর দৃষ্টি দেখেছিলাম আমি। বোধহয় অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইছিল। বাড়ি ফিরে আমি কাউকে কিছু না বললেও খবর পৌঁছতে দেরি হলো না। আমাদের পাড়ার অনেকেই পড়ত ঐ স্কুলে। তাদের মুখেই খবরটা বেশ পল্লবিত আকারেই এসে পৌঁছুল আমাদের বাড়িতে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যে নাগাদ স্কুলের পিওন এলো আমাদের বাড়ি। বাবা তখন সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছেন। পিওন বাবার হাতে ধরিয়ে দিল হেডস্যারের লেখা চিঠি। বেচারা টমি! অন্যান্য দিনের মত সেদিনও সে সারাদিন পর বাবাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে। বাবার দু পায়ের ফাঁকে গলে গলে, গায়ে লেজ বুলিয়ে, পা চেটে দিয়ে নানা ভাবে তার আনন্দ প্রকাশ করে চলেছে।
চিঠিটা পড়তে পড়তে বাবার মুখ রাগে টকটকে লাল হয়ে গেল। চিঠিখানা ভাঁজ করে পকেটে রাখতে রাখতে বাবা সজোরে একটা লাথি কষিয়ে দিলেন টমির ওপর। লাথিটা পড়ল গিয়ে ঠিক ওর মুখের ওপর। চিৎকার করে ককিয়ে উঠল টমি। আবার এক লাথি। এবার পড়ল টমির পেটে। ছিটকে দূরে সরে গিয়ে কিরকম একটা অবাক চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সে বাবার দিকে। তার পরই লুটিয়ে পড়ল মাটির ওপর। বোধহয় যন্ত্রণা হচ্ছিল খুব। আমার খুব ইচ্ছা করছিল ওর কাছে গিয়ে ওর গায়ে একটু হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তু বাবার ভীষণ মূর্তি দেখে আর সাহস হল না। বাবা বলতে লাগলেন,"শালা, জানোয়ার জানোয়ারই থাকে। যা, বেরো, বেরো বাড়ি থেকে। দূর হয়ে যা একেবারে। আর কক্ষনো যেন মুখ দেখতে না হয় তোর।" এই বলে উঠোনের তার থেকে গামছাটা টেনে নিয়ে পুকুরে চলে গেলেন গা ধুতে। টমিও বেরিয়ে গেল নিঃশব্দে বাবার পিছন পিছন। বাইরের অন্ধকারে কোথায় কোনদিকে কেউ জানল না। আমি ভাবলাম, রাগটা একটু পড়ুক বাবার। তারপর না হয় টমিকে খুঁজে আনব। দাদা বলল, খিদে পেলে দেখিস ঠিক নিজে থেকেই বাড়ি ফিরে আসবে।
তারপর দিন গেল, রাত এলো। টমি ফিরল না। সকাল হলো। এলো না। একটা একটা করে সাত সাতটা দিন চলে গেল। এরমধ্যে সারা পাড়া, সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খু্ঁজলাম। টমির কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। রোজ স্কুলে যাবার পথে জেলেপাড়ার মধ্যে দিয়ে যাবার সময় চারদিক তাকাতে তাকাতে যাই, যদি দেখতে পাই। ডাকি গলা চড়িয়ে, "টমি, টমি, আতু আঃ আঃ আ..." কেউ আসে না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসি বিষণ্ণ মনে। বাবাও সেদিন থেকে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছেন। টমির সেই পেয়ারা তলাটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন লুকিয়ে। মা ওর ভাত খাবার থালাটা রোজ ধুয়ে মুছে তুলে রাখতে রাখতে বলে, "কোথায় যে গেল ওটা!"
সেদিন ছিল সোমবার। সকালে স্কুলে যাচ্ছি দল বেঁধে। হঠাৎ পিচ রাস্তার পাশ থেকে একটা বোটকা দুর্গন্ধ ভেসে এল। চারিদিক তাকিয়ে দেখি ডান পাশে একটা মরা কুকুর পড়ে আছে। পেটের ওপর দিয়ে বাস বা লরির ভারি চাকা চলে যাওয়ায় একদম চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে দেহটা। কিন্তু মুখখানা তখনো ঠিক আছে। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে, আমি একটু এগিয়ে গেলাম। ওর কপালে বড় লাল সিঁদুরের টিপটা দেখতে পেলাম স্পষ্ট। মা অশোক-ষষ্ঠীর দিন স্নান করিয়ে টমির কপালে পরিয়ে দিয়েছিল।
এখন বয়স হয়েছে আমার। জীবনে আর কখনো কুকুর পুষিনি। ছেলেপুলে, নাতি পুতিদেরও বারণ করেছি পুষতে। মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় টমির কথা। ভাবি, ওর মৃত্যুটা কি দুর্ঘটনা ছিল না কি আত্মহত্যা?
( সমাপ্ত )
Next bangla story
List of all Bengali Stories
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717