All Bengali Stories
75
76
77
78
79
80
81
82
(83)
84
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
অলীক উষ্ণতা
লেখক - সমরেশ মুখার্জী, মনিপাল, কর্ণাটক, ভারত
বড়দিনের ছুটিতে সুমন স্ত্রী, পুত্র, শ্বশুর - শাশুড়ি সহ এসেছে দেওঘর। উঠেছে একটা আশ্রমের অতিথিশালায়। অনেকটা জমিতে গাছপালায় ঘেরা শতাব্দী প্রাচীন অতিথি-নিবাসটি সর্বাঙ্গে অতীত জড়িয়ে
অলস অজগরের মতো পড়ে আছে। খাওয়া-দাওয়া সুস্বাদু, তায় দেওঘরের হজমী জল; ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই সুমন সকাল-বিকেলে নন্দন পাহাড়ে হাঁটতে যায়।
দুপুরে স্নানের আগে ছাদে রোদে বসে গায়ে তেল মাখে। এবারের এক সপ্তাহের এই পারিবারিক দেওঘর ভ্রমণ এক অলস অবসর যাপন।
প্রাতরাশের পর হিমেল মিঠে রোদে ছাদে চেয়ার পেতে সুমন পড়ছিল সুনীলের 'অরণ্যের দিনরাত্রি'। বহুকাল আগে প্রথম পড়া। সে ঘোর আজও কাটেনি। তাই পূনঃপাঠ।
অনবদ্য লেখনীতে জীবন্ত হয়ে ওঠা চার যুবকের সাথে সুমনও যেন মানস ভ্রমণ করছিল ধলভূমগড়ের আশপাশের অরণ্যে। একটা কাঠবেড়ালী চিড়িক-চিড়িক করে ডাকছে ছাদের প্যারপেটে।
মাঝে-মাঝে কালো পুঁতির মতো চোখ মেলে দেখছে ওকে। ওর মিষ্টি রকম-সকম দেখতে গিয়ে সুমনের চোখ সরে যায় বই থেকে।
ক্রমশ মনটাও ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে শুরু করে ছত্রিশ বছর আগে দেওঘরে আসা এক সদ্য একুশের তরুণের সাথে; সুমনের অতীত।
সেটা আশির দশকের শুরু। সুমনের চলছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষ। তিন বছর আগে সুমনের থেকে করবীর শিক্ষাগত পথ আলাদা হয়ে গেছে।
করবীর সাথে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় কোচিং ক্লাসে আলাপ। পরে ওদের বাড়ীতে বহু যাতায়াতে সে আলাপ ঘনিষ্ঠ হয়। করবী কলেজে পড়ছিল জীববিজ্ঞান নিয়ে।
তবে স্কুল পেরিয়ে কলেজের বাইরেও ওদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে। সপ্তাহে দু-একবার ইচ্ছে হলেই সুমন চলে যায় ওদের বাড়ি। ছাদে বসে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। ওদের বাড়ির দরজা সুমনের জন্য অবাধ।
ঐ বয়সের দুটি ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিষয় ছাড়াই আড্ডা চলতে পারে অনন্তকাল। দেওয়ালে হেলান দিয়ে করবী বসতো ছাদের নিচু পাঁচিলে। সুমন বসতো ছাদে পাতা মাদুরে ঠ্যাং ছড়িয়ে।
কখনো শুয়েও পড়তো। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ অন্ধকারে শায়িত সুমনের মুখ অস্পষ্ট হয়ে গেলে করবী বলতো, "তুই এখানে এসে বোস না, মুখ না দেখলে গল্প করতে ভাল্লাগে না।"
দূরে অসীম আকাশ। কাছে করবীর এপাশ ফেরানো ডিমের মতো চিকন মুখে রাস্তার আলো - পেলব, নিদাগ, মোহময়ী। সুন্দরী মেয়েরা কস্তুরী মৃগের মতো। রূপের গরবেই আচ্ছন্ন।
কিন্তু করবীর সৌন্দর্য ছিল একাদশীর জ্যোৎস্নার মত আবিষ্ট করা - উজ্জ্বল অথচ স্নিগ্ধ - পূর্ণিমার মতো চোখ ধাঁধানো নয়। মাদুরের ঐ ভ্যান্টেজ পয়েন্ট ছেড়ে সুমন উঠতে চাইতো না।
আশির দশকের শুরুতে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেলামেশায় শারীরিক নৈকট্যের প্রচলন বেশী ছিল না। স্যাটেলাইট টিভির প্রভাবে সর্বসমক্ষে বীয়ারহাগ বা সহজ-কিসির চল তখনও শুরু হয়নি।
হটপ্যান্ট ও স্লিভলেস টি-তে মেয়েদের রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে তখনও ঢের দেরী। সেসময় আলতো হঠাৎ স্পর্শ বা হঠাৎ সরে যাওয়া আঁচলের কৃপায়
আবিষ্ট হয়ে যেতো মন। সব রহস্যই অচিরে উন্মোচিত হয়ে যাওয়া উচিত নয়।
চার বছরের মেলামেশায় ওদের সম্পর্কটা যে নিছক বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ ছিল না সেটা ওরাও বুঝত, কিন্তু তার স্বরূপটা ছিল অস্পষ্ট। মানব সভ্যতার ইতিহাসে অসংখ্য বার উচ্চারিত হওয়া তিনটি শব্দের সেই অমোঘ বাক্যটিও
ওরা কেউ কাউকে বলেনি। হয়তো তার প্রয়োজনও ছিল না। নিঃশ্বাস নিতে কি বাতাসের স্বীকৃতি লাগে? তেমনই সহজ ছিল সেই সম্পর্ক। তার পরিণতি নিয়েও কিছু ভাবেনি ওরা।
সুমনের মনে হতো, এই যে ওদের বাড়িতে ওর অবারিত দ্বার, ইচ্ছে হলেই গিয়ে, কেউ না থাকলেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওর সাথে নির্দ্বিধায় আড্ডা দিতে পারে, এটাই তো অনেক পাওয়া।
কোনো কারণে তা বন্ধ হয়ে গেলে খুব খারাপ লাগবে। খুব ফাঁকা লাগবে মাসের কয়েকটা দিন।
দূর্গাপূজোর ছুটির পর কলেজ খুলতেই সুমন জানতে পারে প্রায় গোটা ডিসেম্বরটা কাটবে দেওঘরে সার্ভে ক্যাম্পে। সিনিয়ররা জানালো, দিনে ফিল্ড-ওয়ার্ক, রাতে রিপোর্ট বানানো, ড্রয়িং করা এসব নিয়ে ক্যাম্পের দিনগুলো দারুণ কাটবে।
দেওঘরের মতো মনোরম জায়গায়, শীতকালে, উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে বন্ধুদের সাথে হৈচৈ করে একমাস কাটবে ভেবে সুমনের আনন্দ আর ধরে না।
সেদিন বিকেলে কলেজ থেকে ফিরেই সুমন সাইকেল ছোটায় করবীদের বাড়ি।
দেওঘর যেতে তখনও দেড় মাস বাকি। খুব উৎসাহ নিয়ে খবরটা জানাতে করবীর মুখটা একটু যেন ম্লান হয়ে গেল। অস্ফুটে বলে, "তুই তাহলে পুরো ডিসেম্বরটা থাকবি না? ধ্যাৎ, ভাল্লাগে না।"
তবে করবী মেয়ে, তায় ভীড়েও চোখে পড়ার মতো সুন্দরী, অনেক পুরুষের মুগ্ধতা মাখানো দৃষ্টির তারিফে অভ্যস্ত। সুন্দরী নারীদের দুর্বলতা প্রকাশ না করাই সহজাত প্রবৃত্তি।
বরং পুরুষের দুর্বলতা উদাসীনতায় এড়িয়ে যেতেই তারা অভ্যস্ত। তাই পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলে, "তবে তুই তো আর বেড়াতে যাচ্ছিস না, ওটা তোদের প্র্যাক্টিক্যাল, যেতে তো হবেই।
খুব আনন্দ করবি মনে হচ্ছে। তোদের, মানে ছেলেদের কি মজা। আচ্ছা, দেওঘরে তো ডিসেম্বরে খুব ঠাণ্ডা পড়ে শুনেছি। তুই যা এ্যালবেলে, ভালো মতো শীতের পোশাক নিয়ে যাস কিন্তু।
না হলে ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। ওখানে ভালো ডাক্তার বদ্যিও পাবি না। আচ্ছা, আমি তোকে একটা হাফ সোয়েটার বুনে দেবো, কেমন।"
পরের সপ্তাহে গিয়ে সুমন দেখে হলুদ, মেরুন উল দিয়ে একমনে একটা সোয়েটার বুনছে করবী। বলে, "নিউ মার্কেট থেকে এনেছি। তুই ফর্সা তো, এই কম্বিনেশনটা তোকে মানাবে।
আচ্ছা, একবার দাঁড়া তো, দেখি ঘরটা ঠিক নিলাম কি না।" বর্ডারটা সুমনের গায়ে ফেলে ও সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ে, "যাক বাবা, আন্দাজে নিয়েছিলাম কিন্তু ঠিক হয়েছে।"
দিন দশেক বাদে গিয়ে সুমন দেখে পিঠের দিকটা শেষ। বুকের দিকটাও অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। সেদিন বিকেলে বাড়িতে কেউ নেই। সুমনকে দেখেই জানতে চায় করবী,
"আগের দিন আনবি বলেছিলি, এনেছিস?"
সুমন মাথা নেড়ে জানায় এনেছে। নিয়মিত দিনপঞ্জি লেখার অভ্যেস সুমনের নেই। তবে মাঝে মধ্যে কিছু কথা, ঘটনা নাড়া দেয়।
সেসব অনুভবই হারিয়ে যাওয়ার আগে ভাষার তবকে জড়িয়ে রেখে দেয় ডায়েরীর পাতায়। তাতে অনেক সময় থাকতো করবীকে নিয়ে ওর কল্পনাবিলাস।
সপ্তাহে বার দুয়েক আড্ডা দেবার পরেও ডায়েরীতে তাকে নিয়ে লেখার তাগিদ হয়তো ঐ বয়েসেই মানায়।
করবী সুমনের ডায়েরী পড়তে চাইতো। বলতো, "তোর লেখার ভঙ্গীটা খুব সাবলীল। কতো সামান্য কথা, ঘটনার ওপর কী সুন্দরভাবে কত কী লিখিস তুই! আমি তো বাবা কোনোদিন পারবো না।
ডায়েরী হচ্ছে আত্মকথন, তাই এতে মিথ্যাভাষণ করবি না। যদি কিছু পরিষ্কার ভাবে লিখতে না পারিস; প্রচ্ছন্ন ভাবে, রূপকের সাহায্যে লিখবি কিন্তু কপটতা করিস না।"
চার বছর মেশার পরেও সুমন ওর ডায়েরীর পাতাতেও ঐ তিনটি শব্দের প্রত্যাশিত বাক্যটি লেখে নি। তবে ওকে নিয়ে ডায়েরীর পাতায় রাঁধা কিছু খেয়ালী পোলাওয়ের বিবরণ পড়েও করবী রুষ্ট হয়নি।
মাস ছয়েক আগে প্রথমবার ওর ডায়েরী পড়ে সুমনকে একটা ছোট্ট চিঠি লিখেছিল করবী, "এই বয়সেই আমি নানা রকম পুরুষ চরিত্র দেখে ফেলেছি।
কিন্তু সামনে বসে গল্প করা তুই, আর ডায়েরীর পাতায় ফানুস ওড়ানো তুই যেন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। এতদিন মিশেও তোর বাহ্যিক আচরণে তোর এহেন ভাবনার কোনো প্রকাশ দেখি নি কখনো। আশ্চর্য!"
চেয়ারে বসে টেবিলে দুহাত রেখে নিমগ্ন হয়ে ডায়েরীটা পড়ছে করবী। টকটকে লাল একটা স্লিভলেস ব্লাউজ পড়েছে। চোখের সামনে থোড়ের মতো পেলব অনাবৃত বাহু।
টসটসে অধরোষ্ঠ যেন আধচোষা লেবু লজেন্স। মাঝে-মাঝে ঠোঁটের ফাঁকে খেলা করছে পাতলা হাসির পরত। সুমন সদ্য শেষ করেছে সুনীলের 'স্বপ্ন লজ্জাহীন'।
তার কিছু রেশ হয়তো পড়েছে সাম্প্রতিক লেখায়। সুমনের মনে হচ্ছে সুনীলের অনবদ্য লেখনীতে জীবন্ত মনীষাই যেন সামনে বসে আছে। পড়া শেষ করে করবী মিটিমিটি হেসে বলে,
"ক্রমশ তোর কলম খুব সাহসী হয়ে যাচ্ছে! তবে লেখার ধরণটা খুব আন্তরিক। চালিয়ে যা। আচ্ছা দাঁড়া, তোকে একটা জিনিস দেখাই," বলে করবী ঝোলা ব্যাগ হাঁটকে একটা কলেজের খাতা বের করে।
কয়েকটা পাতা সরিয়ে, "এই তো পেয়েছি," বলে পাতাটা খুলে খাতাটা সুমনের দিকে বাড়ায়।
"কী এটা?"
"নিজেই দ্যাখ না।"
সুমন খাতাটা নিয়ে দেখে তাতে একটা পুরো পাতায় গোটা-গোটা অক্ষরে লেখা - "কী খবর?" - নীচে তারিখ সহ সই করা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
Next Part
All Bengali Stories
75
76
77
78
79
80
81
82
(83)
84
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717