All Bengali Stories
78
79
80
81
82
83
84
(85)
86
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
আত্মার আর্তনাদ
লেখিকা - সানজিদা আফরোজ, মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ
আমার নাম রমা রায়। শরৎচন্দ্রের গল্পের রমা নয়, আমার মায়ের 'সরস্বতী' আর বাবার 'জয়ত্রী'; রমা রায়। ভাইয়ের সকাল বেলার ঘুম ভাঙ্গানো বিরক্তিকর অথচ মিষ্টি গানের পাখির নাম রমা রায়।
আর আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঠাকুরদাদার স্বাধীনতার স্বাধীন স্বত্বের আর যুদ্ধে পা হারানোর সান্ত্বনার নাম রমা রায়। আমার বন্ধুদের বিজলী আলোর ঝলকানি আর শুভ্র রোদের উষ্ণতার রমা রায়।
আমিই সেই দস্যি মেয়ে, যে চুরি করে সেই বার কাজল-মাসীর সব আচার খেয়ে ফেলেছিলাম। কেউ কখনই জানতে পারে নি, আজ স্বীকার করছি।
কারণ আজ আর আমার কোনও ভয় নেই। আজ আর আমার কোনও লজ্জাও নেই। ওরা আমাকে আমার সারা জীবনের অহংকার আর সব লজ্জা থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
আমার জন্ম হয়েছিলো এক কুয়াশা ঢাকা পৌষের সকালে। বাবা নাকি আমাকে কোলে নেয়ার আগেই আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে যে অঞ্জন নদী বয়ে গেছে,
সেই নদীতে গিয়ে অনেকগুলো শিউলি ফুল ভাসিয়েছিল। বাবার বিশ্বাস ছিল ফুলগুলো যতদূর ভেসে যাবে, আমার আয়ু-কালও তত লম্বা হবে।
বাবা ভেবেছিলো ফুলগুলো ভেসে যাবে সমুদ্রে, তারপর মহাসমুদ্রে আর আমার জীবনকাল বয়ে যাবে জন্ম থেকে জন্মান্তরে। কিন্তু বাবা কি কখনো জানবে, সেই ফুল কিনারা পার হবার আগেই ডুবে গেছে অঞ্জন নদীর গভীর জলে।
শিউলি ফুলের সাথে আমার জন্মের বিরোধ। মনে আছে, এসএসসি-তে গোল্ডেন 'এ-প্লাস' পাওয়ার পর মায়ের খুশির শেষ নেই। আমার এতো প্রিয়-প্রিয় খাবার রান্না করেও সে যেন তুষ্টিই পাচ্ছিলো না।
শেষ-মেষ আমাকে তার অতি পছন্দের লাল শাড়িটি দিয়েছিলো। আমি সেই দিনই শাড়িটি পড়েছিলাম। পায়ে আলতাও পড়েছিলাম। আমার বান্ধবী মরিয়ম সেদিনও অনেকগুলো শিউলি ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে
আমার খোঁপায় পড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ঐ যে বললাম, জন্মের বিরোধ! আমার খোঁপাতেও দীর্ঘস্থায়ী হল না, সৌরভ ছড়ানোর আগেই উড়ে গিয়েছিলো এক ঝড়ো বাতাসে।
তোমরা কি জানো, আমার এই অল্প জীবনকালে প্রেমও এসেছিলো? অবাক হচ্ছো? কিন্তু তোমারা রাগ করো না, কারণ বুঝেই উঠতে পারিনি সেটা আসলে প্রেম ছিল কি না।
আচ্ছা, তাহলে শোনো। ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো শেষবার যখন দেশের বাড়ি যাই, তখন। ট্রেন আসতে দেরি করেছিলো। আমরা যখন ট্রেন থেকে নামলাম, তখন রাত দু'টোর কাছাকাছি।
তাহমিনা, মনে আছে? তুই যখন ‘শুভ বিজয়া’ মেসেজ দিয়েছিলি তারও ত্রিশ মিনিট পর আমরা ট্রেন থেকে নেমেছিলাম। অনেক অপেক্ষা করেও স্টেশনে কোনও সি এন জি পাচ্ছিলাম না।
শেষে বাবা বলল, দুই কিলোমিটার পথ হেঁটেই চলে যাবে। আমরাও হাঁটা শুরু করলাম। বিপদ হল আমার দাদার। সব ভারী ব্যাগগুলো যে ওর হাতেই ছিল। দশ মিনিট হাঁটার পর দাদা বলল ও আর পারবে।
আমাদের গ্রামের বাড়ীতে ওর অনেক বন্ধু ছিল। ঠাকুরদাদার চিতার সময়ে সে গ্রামে তিনমাস ছিল। তখনি সব বন্ধু বানিয়েছে। যাইহোক,
আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। ও নাকি তার কোন এক বন্ধুকে মেসেঞ্জার-এ কল দিয়েছে। বন্ধু বলেছে সে আসছে। আমাদের কিছু ব্যাগ সে নিলে আমাদের হেঁটে যেতে আর কষ্ট হবে না।
আমার হাতে ছিল শুধু আমার নীল রঙের সাইড ব্যাগটি। আরতি মাসি লন্ডন থাকে এসে যে ব্যাগটি গিফট করছে, সেটি।
আমরা সবাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু দাদার বন্ধুর সেই ঐতিহাসিক পাঁচ মিনিট আর শেষ হয়।
আমার খুবই রাগ আর বিরক্ত লাগছিলো। শেষে অতিদীর্ঘ পাঁচ মিনিট শেষ করে সেই কৃষ্ণ যখন পৌঁছালেন তখন চারটা বাজে।
কিন্তু সে যখন আসলো তখন যেন সত্যিকারের কৃষ্ণের বাঁশি বাজলো আমার মনে। সব রাগ, বিরক্তি যেন ভোরের বাতাসে হারিয়ে গেল। ছেলেটির মুখখানি যেন শরৎকালের রোদেলা সকাল।
তাপ আছে অথচ উত্তাপ নেই। মুখে সব সময় হাসি লেগেই আছে, আর হাসিতে এক ধরনের শান্তি, সকাল বেলার শান্তি। যেন ভোরের প্রথম বাতাস শিউলি ফুলের ঘ্রাণ আর কোমলতা নিয়ে প্রাণটা ধুয়ে দিয়ে গেলো।
ও! বলা হয় নি, ওর নাম ইন্দ্র। লম্বায় আমার দাদার থেকে ৩ ইঞ্চি বেশি, অর্থাৎ ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি হবে। গোলাকার মুখ আর ছোট-ছোট চুল, মুখে কয়েকটা বসন্তের দাগ, খাড়া সরু নাক, হালকা-পাতলা গড়ন।
অঞ্জন নদীর পার ঘেঁষে আঁকা-বাঁকা গ্রামের মেঠো পথ, আরেক পাশে বিস্তীর্ণ জোড়া ধানক্ষেত। পূর্ণিমার আলো আর বাতাসের সাথে ধানক্ষেতের মিতালি, যেন কল্পনার স্বর্গ রাজ্য।
রাজ্যের রাজকুমারীর নাম রমা রায়, আর এক অচিন দেশের রাজকুমার ইন্দ্রনাথ।
যাইহোক। হাঁটতে-হাঁটতে সবাই খুব ক্লান্ত। যদিও ভারী সব ব্যাগ ওর হাতেই ছিল, কিন্তু ওর মুখে ক্লান্তির চিহ্নমাত্র নেই। যেন বহুকাল বিশ্রাম করার পর কেউ নতুন উদ্যমে অতি উৎসাহে কিছু শুরু করতে যাচ্ছে।
সেদিনও পায়ে আলতা পড়েছিলাম। কুয়াশা ভেজা ঘাসের উপরে আমার লাল আলতা পড়া পায়ে হাঁটতে-হাঁটতে আমি যখন হারিয়ে গিয়েছিলাম অজানা ভাবনায়, ঠিক তখনি সে প্রথম আমার সাথে কথা বলল,
"তোমার ব্যাগটাও আমাকে দাও।"
আমার মনে হল যেন হঠাৎ করে বজ্রপাত হল। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। হঠাৎ করে মনে হল পুরো দুনিয়া থেমে গেছে। ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলো। বাতাস আর বইছে না।
ধান ক্ষেতে ঢেউ নেই। পাখিরা উড়তে-উড়তে থেমে গেছে। সবাই যেন বড়-বড় চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। মনে হল পূর্ণিমার আলো শুধু আমাদেরই গায়ে পড়ছে। ইন্দ্র কি বলল, কেন বলল;
মনে হল কিছুই বুঝি শুনিও শুনি নি। কিন্তু কেউ যেন এসে আমার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে ওকে দিলো। আমি তো দেই নি, আমার হাত অলৌকিকভাবেই আমার ইচ্ছার তোয়াক্কা না করে ব্যাগটি ওকে দিয়ে দিয়েছে।
ওর দুই হাতে দুইটা ব্যাগ আগে থেকেই ছিল। আমার পার্সটিও সে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো মেয়েদের মতো। উফ! দয়া করে তোমরা হেসো না।
তারপর শোনো, যেতে-যেতে আমার বাবা ওকে জিজ্ঞেস করলো, "ভালো ডিমওয়ালা কৈ মাছ কোথায় পাওয়া যায়?" আমি ডিমওয়ালা কৈ মাছ খেতে পছন্দ করি তো; তাই।
সে অনেক বাজারের নাম বলল। তারপর বাবা বলল , "ওহ! শেষ-মেশ বাড়ি দেখা যাচ্ছে।" এ তো ভালো কথা। কিন্তু পূর্ণিমার চাঁদ যেন কালো মেঘে ঢেকে গেলো। এতো দূর হাঁটা কষ্টের,
কিন্তু আমিতো চাই না এই পথ শেষ হোক। বাস্তব কখনো আবেগ মানে না। আমরা বাড়ি পৌঁছলাম। ইন্দ্র আমাদের বাড়ি রেখে চলে গেলো। মা অনেক করে ওকে নাস্তা খেয়ে যেতে বলল,
কিন্তু ও বলল কি যেন কাজ আছে ওর। আচ্ছা, ওর কি এমন কাজ ছিল? কিছুক্ষণ থাকলে কি কাজের খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? হতো হয়তো।
সেদিন আমি আর ঘুমাতে পারিনি। শুধু ওর কথা মনে পড়ছিল। খুব অস্বস্তি আর লজ্জা লাগছিলো এই ভেবে যে, কেন ওকে আমার ব্যাগটা দিয়ে দিলাম। ওর হাতে তো অনেক ভারী দুটো ব্যাগ ছিল,
আমার কেন মায়া হল না, এই সব। যাইহোক, সকাল দশটার দিকে আমি স্নান করে চুল শুকানোর জন্য ছাদে যাই। নিচে তাকাতেই দেখি একটা সাইকেল নিয়ে ইন্দ্র আমাদের বাড়ির দিকে আসছে।
আমি আরেকবার নিজের উপর সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এক দৌড় দিয়ে উঠানে যাই। আমাকে দেখেই ও হাত থেকে একটা বাজারের ব্যাগ দিয়ে বলল, "তোমার কৈ মাছ,"
বলেই সাইকেল ঘুরিয়ে ফেললো। কিন্তু কেন? একটু থাকলে কি হবে? ওকে কি এখন চলে যেতেই হবে? আমি হঠাৎ বললাম, "মা বলেছে খেয়ে যেতে।"
ও পিছন ফিরে বলল, "আমার বোন হসপিটালে। ওর বেবি হবে। ব্লাড লাগবে। একটু বিজি আছি, পরে আসবো।"
সেই আসা সে আসলো, কিন্তু আমাদের চলে আসার দিন। ট্রেন এ উঠার সময় বলল, "তোমাকে কিছুই ঘুরিয়ে দেখাতে পারিনি, পরের বার আসলে অনেক ঘুরাবো।"
আমি মনে-মনে বললাম, "আমাকে তুমি ঘুরাও নি, কিন্তু আমার মনটাকে কেন এতো ঘুরাচ্ছো?"
ও আমার মা আর দাদাকে কথা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসলে আমাদের বাসায় উঠবে। আমি ঢাকায় আসলাম কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আসে না কেন?
উফ! ওকে কি ফেইসবুক-এ অ্যাড করবো? না! ও করুক! ওর এতো ভাব কেন? আমি লুকিয়ে-লুকিয়ে দাদার মেসেঞ্জার-এ ওদের টেক্সট পড়ি।
এত্ত এত্ত গল্প করে ওরা! আমাকে একটা টেক্সট দিলে কি হয়?
ভর্তি পরীক্ষার দিন আমি পার্লার এ কেন গিয়েছিলাম, এখন বুঝতে পারছিস ফাতেমা? তুই সাক্ষী, আমি কতো কষ্ট করে সেজেছিলাম।
কিন্তু জানিস ওই বোকাটা কি করেছে? পরীক্ষা শেষ করে ও মায়ের নাম্বারে কল দেয়। মা রান্নাঘরে ছিল, আমি ফোনটা ধরেছি। ও বলল, "কে রমা?" আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কখন আসবেন?"
সে বলল "জরুরী কাজ আছে, আসতে পারছি না। প্লিজ, মাফ করে দাও। ডিসেম্বর এর ১৬ তারিখ আসব, তখন ৭ দিন থাকবো। ও আচ্ছা, তোমার নাম্বার থেকে আমাকে একটা টেক্সট দিও।"
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ কত্ত সময়। ও আমার নম্বর চাইলো কেন? কি লিখে টেক্সট দিবো? শেষে আমি কি লিখে টেক্সট করেছি জানো? -"আমার নম্বর'।
তারপর থেকে ও আমাকে মিষ্টি-মিষ্টি টেক্সট দিতো, আমিও দিতাম। কিন্তু ও তো বলেনি, আমরা কি প্রেম করছি? 'ভালোবাসি' তো বলেনি। ১৬ তারিখ ও আসলে ওকে জিজ্ঞেস করবো।
আমরা 'ভালোবাসি' বলবো হাত ধরে । না, না! হাত ধরে না। ও হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে আমাকে ভালোবাসি বলবে। আমি লজ্জা পেয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে অন্য দিকে ফিরে ভালোবাসি বলবো।
১৬ তারিখ সকালে আমি আবারো পার্লারে গিয়েছিলাম। পায়ে আলতা পরেছি, লাল আর সবুজ রঙের জামা
পড়ে তোদের সাথে স্মৃতিসৌধে যাই। ওখানে মণি মাসির সাথে দেখা। উনার বাসা সাভারে। মাসি কোনও ভাবেই ছাড়বেন না। তোরা তো চলে আসলি, আমি মাসির বাসায় ছটফট করছি; কখন বাসায় ফিরবো।
ইন্দ্র বেলা দুটোর দিকেই আমাদের বাসায় চলে এসেছে। আমি মণি মাসির বাসা থেকে ৪ টার সময় বের হই। পুরো রাস্তায় এত্ত জ্যাম। পথ যেন শেষই হচ্ছে না। মনে হল যেন হাজার বছর বসে আছি বাসের সিটে।
বাস থেকে নামলাম রাত ন'টায়। রিকশাও পাচ্ছিলাম না। রিকশার জন্য কে অপেক্ষা করে? আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছাতেই হবে। ইচ্ছা করছে দৌড় দেই। কিন্তু না, আর তো দশ-পনের মিনিট। হেঁটেই চলে যাবো।
আমি যখন রেল-লাইন পার হচ্ছিলাম, দেখি আমার দাদার বয়সী পাঁচজন। আমার দিকে তাকিয়ে একজন বলল, "আপনার হাতে ঐটা কী পতাকা?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ।"
তারপর আরেকজন বলল, "পতাকাটিকে আপনি নিজ হাতে এইখানে উড়িয়ে দিয়ে যান।"
ওদের দেখে আমার যমদূত বা অসুর মনে হয়নি, আমার ঠাকুরদাদার মুখে শোনা গল্পের পাকিস্তানী হানাদারদের মতোও ছিল না। ওরা দেখতে মানুষের মতোই ছিল, আমার দাদার মতোই।
আমার স্বাধীন দেশের পরম বন্ধুর মতো। আমি আমার গর্বের পতাকা উড়াতে ওদের কাছে যাই। হঠাৎ করে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে কেউ রেললাইনের নিচে গর্তের মতো কিছু একটার মধ্যে ফেলে দেয়।
তখন বুঝলাম, ওরা আসলে মানুষের রূপ ধরে ছিল; ওরা বন্ধু ছিল না, দাদাও ছিল না। ওরা ছিল হানাদার। হয়তো গল্পের পাকিস্তানী হানাদার নয়, হয়তো তাদেরই রেখে যাওয়া আজকের প্রজন্মের হানাদার।
সেদিন আমার মানব জীবনের আর্তনাদ কেউ শুনল না। এক নিমিষে শেষ করে দিলো আমার সব নারী জন্মের অহংকার। আমার গর্বের পতাকা পড়ে রইলো আমারই পায়ের কাছে।
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। তারা ধারালো কিছু একটা আমার গলার কাছে নিয়ে আসতেই রক্তে ভিজে গেলো আমার পুরো শরীর। আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু হাঁটতে পারি নি।
পিছনে একটু ঘুরতেই আবার মাটিতে গড়িয়ে পড়লাম। আমার ঠাকুরদাদার কীর্তি, আমার প্রাণ-প্রিয় জাতীয় পতাকা আমার মাথার ভার নিলো। নিজেকে ময়লা আবর্জনার থেকেও নোংরা মনে হচ্ছিলো।
বেঁচে থাকার সাহস হচ্ছিলো না। কিন্তু মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমার ঠাকুরদাদার অর্জনকে অসম্মান করা। স্বাধীন দেশকে পরাধীন করা। বেঁচে থাকবো না মরে যাবো - এই চিন্তা যখন মনে,
ঠিক তখনই দেখি আমার বাবা-মা, দাদা আর ঠাকুরদাদা পুজোর ঘরে আমাকে ডাকছে। দেখলাম, ইন্দ্র অনেকগুলো শিউলি ফুল একটা ডালা থেকে আমার দিকে উড়িয়ে দিচ্ছে।
তোমাদেরও দেখেছি, পুজোর ঘরে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে। আমি প্রাণ ভরে ইন্দ্রের শিউলি ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম, যেন এক নেশার মতো। কতক্ষণ পর সেই নেশা কাটল ঠিক বলতে পারবো না।
কিন্তু নেশা যখন কাটল তখন চোখ খুলে তাকানোর অনেক চেষ্টা করছিলাম, পারছিলামই না। তখন বুঝলাম, আমি মৃত। সেদিনের শিউলি ফুলের মতো আমিও হারিয়ে গিয়েছি, না ফেরার দেশে।
আমার ঠাকুরদাদার রক্তের ঋণ শোধ করে দিলাম আমারই কলঙ্কিত রক্ত দিয়ে। আমার নাম রমা রায়। শরৎচন্দ্রের গল্পের রমা নয়, বসন্তের প্রথম প্রহরে ঝরে যাওয়া ফুলের কলির নাম রমা রায়,
ইন্দ্রনাথের না বলা ভালোবাসার নাম রমা রায়, আমার বাবা মায়ের দুঃখের নাম রমা রায়, আমার দাদার বোন হারানোর বুক ভরা কষ্টের নাম রমা রায়, আমার ঠাকুরদাদার ব্যর্থ আত্মত্যাগের নাম রমা রায়,
আমার বন্ধুদের কান্না জড়িত বজ্রকন্ঠের প্রতিবাদের নাম রমা রায়। আমাকে ১৭ বছর বয়েসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে।
( লেখিকা কর্তৃক স্বীকারোক্তি: এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এই গল্পের নাম, চরিত্র, স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী, বিবরণ এবং বর্ণিত ঘটনাবলি কেবলমাত্রই লেখকের কল্পনা।
যদি বাস্তব, জীবিত বা মৃত পাত্র-পাত্রীর সাথে এই গল্পের স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী, কিংবা ঘটনা মিলে গিয়ে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণভাবে কাকতালীয় এবং অনিচ্ছাকৃত।
গল্পটি কোন সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। )
( সমাপ্ত )
Next Bengali Story
All Bengali Stories
78
79
80
81
82
83
84
(85)
86
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717