Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

আর একটি নতুন ভোর

Bengali Story

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)    

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



আর একটি নতুন ভোর

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা
( লেখিকা পরিচিতি: প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। লেখিকার বিভিন্ন লেখা দেশ, উনিশ কুড়ি, গৃহশোভা, কথাসাহিত্য, প্রসাদ, নন্দন, উদিতা এবং আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। )

অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

পর্ব ১


আজ বিকেলটা বড়ই অশুভ ঠেকছে। কতকগুলি কাকের 'কা-কা' আওয়াজ অশুভ বার্তাই বহন করে আনছে এই গোধূলি বেলায়। কাকের ডাক 'অশুভ লক্ষণ' এই বিশ্বাস আজন্ম ধরে লালন পালন করে আসছে খরী নদীর তীরের বাসিন্দারা। কাকেদের এই বিকট আওয়াজে মিনু বাগদির হাতের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সে নদীর পাড়ে বসে দুপুরের খাওয়ার এঁটো বাসন মাজতে ব্যস্ত ছিল। বাসন মাজা থামিয়ে মিনু বাগদি বিকালের ম্লান সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল, "কেউ একটা মরবে গো। কাকগুলা না হলে এমনি করে চিৎকার করে! আমার শাউরিটা তো পড়ে আচে বেশ কয়দিন হল। আজ তার জীবন নিতে এইচে মনে হচ্চে।" মিনু হাতে এক মুঠো বালি নিয়ে কাকগুলোর উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করল। নিজের মনে কি যেন বিড়বিড় করে বলতে-বলতে আবার সে কাজে মনোযোগ দিলো।

ভাদ্র মাসের খরী নদী। এখন তার আষাঢ়- শ্রাবণের ভরা যৌবনের রূপ একটু ম্লান। তবুও স্রোতের টান বেশ ভালোই। সোঁ-সোঁ শব্দে সে নিজের ছন্দে বয়ে চলেছে। গত চার বছর খরীর ভয়ঙ্করী মূর্তি কেউ দেখেনি। এই চার বছরে নদীর পাড়ে জনবসতিও বেড়েছে। আগে মিনু বাগদির পরিবার ছাড়া কেউ এই নদীর পাড়ে বাস করতে আসেনি। আর এই চার বছরে আরও কয়েক ঘর বাগদি, হাড়ি, ডোম এসে নদীর পাড়কে জমজমাট করে তুলেছে। এখন সব মিলিয়ে বারো-চোদ্দ ঘর লোকের বাস নদীর তীরে। খরী নদীর চর বেশ কয়েক বছর আগে জনমানবশূন্য বলে বিবেচিত হত। ভদ্রসমাজ থেকে দূরে বাস করে এই অঞ্চলের মানুষরা নিজেদের স্বতন্ত্র জগৎ তৈরি করে ফেলেছে। নিজেদের অধিকার-বশত তারা চরের নামও দিয়েছে 'ভুসুন্ডি চর'। নদীর ওপারে মালডাঙ্গা। সভ্য সমাজের আলোক লেগেছে মালডাঙ্গার গায়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে লোকবসতিও ঘন হয়েছে। 'ভুসুন্ডি চর'-এ সভ্য সমাজের আলোক এসে পৌঁছায়নি। এখানে ছিটে বেড়ার ছোট-ছোট ঘরের বাসিন্দাদের নিশ্চিন্ত, নিরাপদ জীবনে কেউ ব্যাঘাত ঘটায় নি। পুরুষ মানুষেরা কাঠ কেটে, মুরগী চাষ করে, মাছ বিক্রি করে সংসার চালায়। মেয়েরা চোলাই মদ তৈরি করে সংসারে রোজগার বাড়ানোর জন্য। এর চেয়ে বেশি যারা রোজগার করতে চায় তারা মালডাঙ্গায় গিয়ে রিক্সা চালায়, মোট বয়, পরের জমিতে খাটে, মাংসের দোকানে কাজ করে। মোট কথা শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী যে-যার নিজের কাজ নির্ধারণ করে। সন্ধ্যা নামলে সারাদিন খাটাখাটনির পর ক্লান্ত পাখির মতো যে-যার নিজের বাসায় ফেরে। এভাবেই কেটে যায় 'ভুসুন্ডি চর'-এর মানুষের দিনরাত।

আবার বেহায়া কাক 'কা-কা' শব্দে নদীর চরের নিস্তব্ধতার জাল কাটল। মিনুর হাতের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে মিনুর কপালে ফোঁটা-ফোঁটা ঘাম জমেছিল। মিনু ডান হাতের তালুর উল্টো পিঠে ঘাম মুছে বলল। "আচ্চা জ্বালা তো। হেই হুস।"

নদীর চরের একপ্রান্তে সোনাঝুড়ি, আম, বেল, কাঁঠাল আর বন্য গাছে ঝোপ তৈরি হয়েছে। দূর থেকে দেখে ছোট জঙ্গল বলে মনে হয়। বড় অনাদরে গাছগুলো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ঝোপটার মধ্যে গাছগুলোকে আশ্রয় করে কাকগুলোর চিৎকার বেড়েই চলল। মিনু বিরক্ত হয়ে মাজা বাসনগুলো সশব্দে ফেলে বলল,"ব্যাটাদের বড় বাড় বেড়েছে। আজ তাড়িয়েই ছাড়ব।" মিনু কাপড়টাকে কোমরে গুঁজে ঝগড়ার ভঙ্গিমায় ধেয়ে গেল ঝোপের মধ্যে। ঝোপের মধ্যে মিনু প্রবেশ করে এক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেল। ঝোপের মধ্যে একটা মেয়ে শুয়ে। চারদিক জনমানবশূন্য। কাকগুলো মেয়েটার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বসে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। গোধূলির পড়ন্ত আলোয় মেয়েটার মুখে অনাবিল শান্তির ছায়া। জীর্ণ পোশাক দেখে এটুকু স্পষ্ট যে, মেয়েটার ক্ষতি করে কেউ এখানে ফেলে দিয়ে গেছে। মেয়েটার পায়ের কাছে শুখনো রক্তের ছাপ, হাতে গলায় নখের আঁচড়। মেয়েটির গায়ে দামি স্কার্ট। পোশাক পরিচ্ছদ দেখে আন্দাজ করা যায় মেয়েটি ভদ্র ঘরের। বয়স কুড়ির মধ্যে। বেশ লম্বা। মাথায় কোঁকড়ানো চুল। মেয়েটিকে অবিবাহিত বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। মিনু বুঝতে পারল না যে, মেয়েটি এখানে এই অবস্থায় এলো কি করে।

মিনু বাগদি কাকগুলোকে মেয়েটার কাছ থেকে তাড়িয়ে মেয়েটার মুখ নাড়িয়ে বলল, "ও মেয়ে ওঠো গো। দেখতে পাও না কাকগুলো তোমায় ছিঁড়ে খাচ্ছে! কি হয়েচে তোমার? শুনছো ও মেয়ে!" নিশ্চল পাথরের মতো শুয়ে মেয়েটা। মিনু কোনও প্রত্যুত্তর না পেয়ে নিজেই বিড়বিড় করে বলে গেল,"মেয়েটা বেঁচে আছে তো? এখন আমি কি করি! বেলা যে পড়ে এলো। এভাবে মেয়েটাকে ফেলে যাই কি করে! কোন অমানুষরা মেয়েটাকে এখানে ফেলে গেল কে জানে!" মিনু মেয়েটার বুকে কান পেতে বলল, "পেরাণটা এখনও যায়নি মনে হচ্চে। ধুকপুকানি রয়েছে।"

মিনু দ্রুত পায়ে উঠে গিয়ে নদী থেকে এক গ্লাস জল নিয়ে মেয়েটার মুখে কয়েকবার জলের ঝাপটা দিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখতে লাগল কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায় কিনা, কিন্তু কোনও সাড়া মিনু পেল না। সে মুহূর্তের জন্য ভাবল তার সোয়ামী হাবলকে বলে যদি তার বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। সে দেরি না করে হাবলকে ডাকতে বাড়ি চলে গেল। হাবল মিনুর মুখে সবটা শুনে প্রথমে রাজি না হলেও পরে মিনুর জেদের কাছে হার মানল। শুধু সে মিনুকে একটা শর্ত দিলো যে, মেয়েটিকে কেন্দ্র করে পরে যদি কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয় সেই দায়ভার কিন্তু সম্পূর্ণ মিনুর।
Next Part


অন্য পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    91    92    93    (94)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717