ক্ষণিক-স্মৃতি
- অনুশ্রী মাইতি, হরিপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
একটি নির্বাচিত গল্প
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, ২০২০, ত্রিপুরা
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
■
অপু ছিল 'জানা' বাড়ির ছোট ছেলের একমাত্র ছেলে। সে ছিল ঠামি-দাদুর "গর্বের" নাতি ও নয়নের মনি। ছোট নাতির সব দোষ, দুষ্টুমি সব কিছু ঠামির কাছে, "ও একটু এসব করবেই!"
কিন্তু নাতির যে এখন চোদ্দ বছর, এবার যে তার সব দোষ ক্ষমা করা যায় না, তা ঠামি বুঝত না। নাতি ঠামির সঙ্গে যা-যা দুষ্টুমি করত, ঠামির তাতে সমস্যা হলেও হাসি মুখে বলত,
"ও দাদুভাই এসব কী হচ্ছে, উঃ দুষ্ট নাতি আমার।" কিন্তু অপুর কাছে কোনও মূল্যই ছিল না এই ঠামির ভালোবাসার।
অপুর এখন চোদ্দ বছর। সে যখন বাড়ি থেকে স্কুলে যেত তার ঠামি তাকে বারে-বারে বলে দিত, "দাদুভাই, স্কুলে জল খেয়ো, মন দিয়ে পড়াশুনা করো, দুষ্টুমি করো না, সাবধানে গাড়ি-ঘোড়া দেখে যেও।"
যার উওর ছিল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি বেশি চিৎকার করো না।" ঠামির শুনতে খারাপ লাগলেও, ঠামি মনের মধ্যে কষ্টকে চাপা দিয়ে বলত, "দাদুভাই, সাবধানে কিন্তু যেও," যা অপু কানেও নিত না।
কিছুদিন পর, একদিন স্কুল ছুটির সময় প্রবল বৃষ্টি এল, তখন ঠামির খুব দুচিন্তা হল,"আমার দাদুভাই কী করে আসবে?"
তাই বৃষ্টি থামার আগেই ঠামি ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। স্কুলের সামনে সেই ঘোর বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় দিয়ে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকল স্কুলের দিকে এই আশা নিয়ে যে, "নাতি নিশ্চই আমায় দেখে খুব খুশি হবে।"
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি একটু কমলে স্কুল ছুটি হয়। একের-পর এক বাচ্চারা দলে-দলে বেরিয়ে আসে। ঠামি এক দৃষ্টে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কখন তার নাতি বেরিয়ে আসবে ও বলবে, "ও ঠামি, তুমি আমায় এগিয়ে নিতে এসেছ।"
এরই মধ্যে ঠামির চোখে পড়ে নাতি তারই বয়সী কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করতে-করতে আসছে। তা দেখে ঠামি সাত-পাঁচ কত কী ভেবে ফেলল।
কিন্তু অপু বন্ধুদের সাথে গল্পে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছিল যে, গেটের সামনে গভীর অপেক্ষায় একটু আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঠামিকে সে দেখতেই পেল না।
তখন ঠামির মনটা খুব ভার হয়ে যায়। নাতি গেটের বাইরে বেরিয়ে এলে ঠামি বলে ওঠে, "ও ছোট দাদুভাই ছাতার নীচে এসো।"
তা শুনে নাতি অবাক হয়ে যায়। কিন্তু এই ঝড় বৃষ্টিতে ঠামি যে এত কষ্ট করে তাকে আনতে এসেছে সেটা তার চোখে পড়লো না। তার চোখে পড়লো ঠামির পুরনো শাড়ি, জুতো না পড়া পা।
তখন সে ভাবল, "ঠামি চলে এল। ধুর, আমি ভাবলাম বন্ধুদের সঙ্গে ভিজে-ভিজে গল্প করতে-করতে যাব। তাছাড়া আমি আমার বন্ধুদের ফেলে ছাতা মাথায় যাব কী করে,
আর ঠামিও এভাবে এসেছে কেন?"
এইসব ভেবে খুব বিরক্ত হয়ে সে বলে, "তোমায় কী আসতে বলেছি? তোমায় কে আসতে বলেছে? আমার ছাতার দরকার নেই। তুমি যাও তো এখানে থেকে!"
তা শুনে ঠামির ছোট কল্পনাটি ভাঙতে বাকি থাকলো না। তবুও ঠামি হাসি মুখে বলল, "দাদুভাই ছাতাটা নিয়ে যাও। নিজের ও বন্ধুদের মাথায় ধর, শীতকালের জল, শরীর খারাপ করবে।"
অপু চীৎকার করে উঠল, "তুমি চুপ কর। আর একটা কথাও বলবে না," এই বলে ছাতা না নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে-করতে এগিয়ে যেতে লাগল।
সেই সময় অপুর এক বন্ধু পিছন ফিরে তাকায় ও বন্ধুদের ছেড়ে পিছিয়ে আসে। সে ঠামির কাছ থেকে ছাতা নিয়ে বলে, "ঠামি, অপু না নিক, আমি তোমার ছাতা নিচ্ছি।
আমি জলে ভিজবো না, আমি তোমার ছাতা মাথায় দিয়ে যাব।" ঠামি নিজের নাতির ব্যবহারে আঘাত পেলও যখন অন্য একজন নাতির বয়সী ছেলে এসে ছাতাটি নিল আর ঠামির কষ্টের দাম দিল, তখন ঠামি খুব খুশি হল।
অপুর এখন ছাব্বিশ বছর বয়স; বিদেশে থাকে, ভালো চাকরি করে। একবার দেশে ফেরার সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে সে দেখে, রাস্তার পাশে একটা ছোট স্কুল।
সেই স্কুলের সামনে কয়েকজন দাদু, ঠাকুমা ছাতা নিয়ে একদৃষ্টে স্কুলের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাতি - নাতনিদের জন্য, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়ে যাবার জন্য।
তখন অপুর মনে পড়ে যায় বহুদিনের পুরানো সেই ঘটনা।
সে খুব অনুতাপের সাথে মনে-মনে বলতে লাগল, "ঠামি আজকে আমি তোমার ঐ দিনের ভালোবাসা খুব মিস করছি। ঐ দিন আমি তোমার ভালবাসার, কষ্টের দাম বিন্দু মাত্র দেই নি।
কিন্তু সেই ভালবাসা কতটা গভীর ছিল, সেই আদরের বন্ধনটা কত দৃঢ় ছিল তা আজ বুঝি। ঠামি তোমায় আজ খুব মিস করছি। তুমি জানো না, তোমার ঐ দিনের নিকৃষ্ট নাতির সেই ক্ষণিক-স্মৃতি আজ আমার কাছে কী!"
আর্দ্র হৃদয়ে এই কথাগুলি ভাবতে-ভাবতে অপু অপেক্ষারত দাদু, ঠাকুমাদের দিকে তাকিয়ে রইল পরম সম্মান আর শ্রদ্ধার সঙ্গে।
( সমাপ্ত)
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
সে তবে কে?
All Bengali Stories
65
66
67
68
69
70
71
(72)
73
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717