-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
All Bangla Articles
13
14
15
16
( 17 )
◕
কিন্তু কে ছিল সেই মেয়েটি, যাকে রবি ঘোষ সাহায্য করেছিলেন বম্বের বিখ্যাত অভিনেত্রী হয়ে উঠতে?
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা
## চিত্রপরিচালক তপন সিংহ তখন পুরীতে "নির্জন সৈকতে" ছায়াছবির শুটিং করছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক অবিস্মরণীয় ছবি। যেখানে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন খ্যাতনামা অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়। আর নায়িকা ছিলেন উদীয়মান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। এই ছায়াছবিতে রবি ঘোষ ছিলেন পুরীর এক পাণ্ডা। চলচ্চিত্র-প্রেমিকদের মধ্যে যারা "নির্জন সৈকতে" দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে একটি দৃশ্য, যেখানে রবি ঘোষ একটি হোটেলে উঠেছিলেন। পুরী-যাত্রী অনিল চট্টোপাধ্যায়কে সেখানে তিনি আশ্রয় প্রদান করেছিলেন। এবং প্রথমদিন আর কিছু না পেয়ে কচু খাইয়েছিলেন। কাকতালীয় ভাবে পুরীতে অনিলবাবুর কিছু সহযাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়; চার বিধবা ও একটি যুবতী, যে সদ্য প্রেমিকের কাছে আঘাত পেয়েছিল। এবং তাঁরা ওনাকে খিচুড়ি রেঁধে খাইয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের খিদে তৃপ্ত করেছিল। এমন সময়, রবি ঘোষ সেখানে এসে অবাক হয়ে দেখেন যে অনিলবাবুর তাঁর বউয়ের হাতের কচু না খেয়ে খিচুরির স্বাদ উপভোগ করছেন।
খুব অল্প সময়ের জন্য রবি ঘোষ ওই ছায়াছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু এতো কম সময়ের চরিত্রে কি অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন! এমনভাবেই, তিনি কত ছায়াছবিতে অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রের গর্বের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। এই রবি ঘোষের হাত ধরেই কিন্তু এক বাঙালি মেয়ে সত্যজিৎ রায়ের ছায়াছবিতে অভিনয় করে বলিউডে পা রেখে রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু কে ছিল সেই মেয়েটি? রবি ঘোষ কি করে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন?
"নির্জন সৈকতে" ছায়াছবির শুটিং চলাকালীন রবি ঘোষের সঙ্গে এক সাংবাদিক তরুণকুমার ভাদুড়ীর দেখা হয়। তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। মেয়েটি ছিল বেশ ছটফটে, দিলখোলা এবং মুডিও বটে। ব্রেকটাইমে রবি ঘোষ, শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সেই মেয়েটি আড্ডা জমিয়ে দিত। তখন রবি ঘোষের মাথায় একটা আইডিয়া এল। সত্যজিৎ রায় "মহানগর" ছায়াছবির জন্যে বছর চোদ্দের একটি ছটফটে মেয়ে খুঁজছিলেন। রবি ঘোষের মাথায় তখন তরুণকুমার ভাদুড়ীর সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ল। তরুণবাবুর কাছে তিনি গেলেন সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব নিয়ে। তরুণবাবু বললেন, "আমি জানি না। ওকেই বরং জিজ্ঞেস করে দেখ।"
মেয়েটি কিন্তু মোটেই সিনেমা-প্রেমিক ছিল না। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে রাজি করালেন রবি ঘোষ। কলকাতায় ফিরে তিনি সত্যজিৎ রায়কে ফোন করলেন আর বললেন, "ঘরে যেন বেশি লোকজন না থাকে। যা খেপচুরিয়াস মেয়ে, বিগড়ে গেলে মুশকিল।"
সত্যজিৎবাবু বললেন, "ঠিক আছে, নিয়ে এসো।"
নির্দিষ্ট দিনে রবি ঘোষ সেই ছটফটে মেয়েটিকে নিয়ে গেলেন। ঘরে সস্ত্রীক সত্যজিৎ রায় ছাড়াও ছিলেন বংশী চন্দ্রগুপ্ত। বিশ্বখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায় মানুষের সাইকোলজি দারুণ বুঝতেন। কাকে কীরকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কাজ আদায় করা যায়, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়তম। তিনি ঐ মুডি মেয়েকে অতি নৈপুণ্যের সঙ্গে সামলে নিয়েছিলেন। সত্যজিৎবাবু খুব স্বাভাবিকভাবে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, "কি করো? ছবি-টবি দ্যাখো?"
মেয়েটি বলল, "হ্যাঁ।"
সত্যজিৎবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "কীরকম?"
এই প্রশ্ন শোনামাত্রই সেই ছটফটে মেয়েটি বলিউডের তৎকালীন স্টার নায়িকাদের নকল করে দেখাতে লাগল। যেমন, মধুবালা, সুরাইয়া ও নার্গিস। আর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ এসব দেখে বিস্মিত বোধ করলেন। এক ঘণ্টা ধরে এমন চলতে লাগল। ফেরার সময় সেদিন সত্যজিৎবাবু বললেন, "রবি, আমি তাহলে শুটিং-এর তারিখ ঠিক করছি।"
রবি ঘোষ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "তার মানে সিলেক্টেড?"
সত্যজিৎ রায় মৃদু হেসে বললেন, "হ্যাঁ, সিলেক্টেড।"
মেয়েটি "মহানগর" ছায়াছবিতে প্রধান চরিত্র অনিল চট্টোপাধ্যায়ের ছোট বোনের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা শুরু করেছিল। সেই মেয়েটি আর কেউ নয়, স্বয়ং বঙ্গ-কন্যা জয়া ভাদুড়ী। পরে ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পাস করে জয়া বহু বছর পর কলকাতায় এলেন। কোন এক পরিচালক তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিলেন যে তাঁকে নায়িকা বানিয়ে ছবি করবেন। কিন্তু সেই চিত্রপরিচালক তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখলেন না। তখন জয়া ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। এবারও মুশকিল আসান সেই রবি ঘোষ। তিনি তাঁর বাবা তরুণবাবুকে অনুরোধ করলেন, "আপনি চলে যান, ও আমার কাছে থাকুক।"
তরুণবাবু তখন রবি ঘোষের ভরসায় নিজের প্রতিভাময়ী কন্যাকে কলকাতায় রেখে গেলেন। এরকম একটা সময়ে রবি ঘোষ জানতে পারলেন যে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় "ধন্যি মেয়ে" নামক একটা ছবি করবেন। সেখানে রবি ঘোষ ভজহরির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তিনি অরবিন্দবাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনার হিরোইন হয়েছে?"
এইটুকু অবধি এসে পাঠকেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে রবি ঘোষ জয়া ভাদুড়ীর জন্যে আর একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। ধন্যি মেয়ে-এর পরিচালকের সঙ্গে ছবির নায়িকা নিয়ে "ভজহরি" (রবি ঘোষ)-এর পরবর্তী কথাবার্তা সংলাপ রূপে দেওয়া হল পাঠকের সুবিধার্থে।
অরবিন্দবাবুঃ না রবি, কত খুঁজছি, কিন্তু মনের মতো পাচ্ছি না।
রবি ঘোষ: একটা নতুন মেয়ে দিতে পারি। কত দেবেন?
অরবিন্দবাবুঃ কেন? দু"হাজার। নতুনেরা যা পায়।
রবি ঘোষ: হবে না। যদি পাঁচ হাজার দেন, তাহলে প্রোডিউসারকে সঙ্গে করে আমার বাড়িতে চলে আসুন।
অরবিন্দবাবুঃ তা মেয়েটা কে?
এরপর রবি ঘোষ সেই উদীয়মান নায়িকা জয়া ভাদুড়ীর ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে বললেন। শুনে অরবিন্দবাবু লাফিয়ে উঠলেন। প্রথম দিনেই শুটিং-এর পর উত্তমকুমার মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, "উরিব্বাস, রবি! এ তো ধানি লঙ্কা রে।"
ঐ ছবির আরেক অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন, "বাপ রে! কি তৈরি?"
"ধন্যি মেয়ে" ব্লকবাস্টার হয়ে হেল। মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে শুরু করে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জহর রায়, রবি ঘোষ, তপেন চট্টোপাধ্যায় নিজেদের জায়গায় অনবদ্য ছাপ রাখলেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে তখন চলচ্চিত্র জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু উদীয়মান জয়া ভাদুড়ীকে ওই ছবিতে অভিনয় করার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর একদিন হঠাৎ বম্বে থেকে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় ফোন করলেন রবি ঘোষকে। বললেন, "রবি, জয়া কি তোর এখানে?"
তিনি বললেন, "হ্যাঁ।"
হৃষীকেশবাবু বললেন, "আর বলিস না। ওকে আমি পাগলের মতো খোঁজে বেড়াচ্ছি। একটা ছবি করছি - গুড্ডি; জয়াকে নায়িকা করব। ওকে পাঠিয়ে দে।"
জয়া নারাজ ছিলেন। বললেন, "না, যাব না। বাংলা ছবি করব।"
তখন রবি ঘোষ বললেন, "শোনো বাবা, তুমি তো বাংলাদেশে মানুষ হওনি। জানো না এখানকার দুঃখ, বেদনা আর স্ট্রাগলকে। ওসব আমি সইতে পারব, তুমি পারবে না। তুমি বম্বে যাও। আর এত ভালো হিন্দি জানো তুমি। তুমি সেখানে তোমার প্রতিভাকে ফুটিয়ে তুলতে পারবে।"
এরপর জয়া ভাদুড়ী তাঁর মূল গন্তব্য-স্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বলিউডের রাজসিংহাসন তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছিল এতদিন। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। উঠতি এক যুবরাজ "জঞ্জির" ছবিতে অভিনয় করলেন বাংলা থেকে আগত জয়ার সঙ্গে। এই ছবির পর বলিউডের রাজসিংহাসন তাঁর "মহারাজ" বা "শাহেনসা" অমিতাভ বচ্চনকেও পেয়ে গেল। এই ছবির পর রাজা ও রানির বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর জয়া ভাদুড়ী হয়ে গেলেন 'জয়া বচ্চন'। পরবর্তীকালে, বলিউডের শাহেনসার সঙ্গেও রবি ঘোষের খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল। যা নিজেও অমিতাভ বচ্চন স্বীকার করেছিলেন বহুবার।
তরুণকুমার ভাদুড়ীর সেই মেয়েটি যে সিনেমায় নামতেই চাইছিল না, বিশ্বখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছায়াছবিতে অভিনয় করে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করে ধাপে-ধাপে উঠছিল। আবার হিন্দি ছায়াছবিতে অভিনয় করার ডাক পেয়েও প্রথমে যেতেই চাইছিল না। তাঁকে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং তিনি সাফল্যের শীর্ষে উঠেছিলেন। আজ ভারতের খুব কম মানুষই আছে যিনি জয়া বচ্চন ও তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা স্বামী অমিতাভ বচ্চনকে চেনেন না। কিন্তু খুব কম লোকেই জানেন যে, জয়া বচ্চনকে তার জায়গায় পৌঁছে দিতে ভিত্তি এবং সিঁড়ি উভয়ই তৈরি করে দিয়েছিলেন প্রতিভাবান অভিনেতা রবি ঘোষ।
তথ্যসূত্র:
আপন মনে – লেখক: রবি ঘোষ
All Bangla Articles
13
14
15
16
( 17 )
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717