Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সুচিত্রা ভট্টাচার্যর লেখনীতে মধ্যবিত্তের জীবনে কিছু শিক্ষা, কিছু সতর্কীকরণ

Bangla Article

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bangla Articles   

সুচিত্রা ভট্টাচার্যর লেখনীতে মধ্যবিত্তের জীবনে কিছু শিক্ষা, কিছু সতর্কীকরণ
( One of the selected article from the article competition, September 2022 )
লেখিকা - সহেলি গুপ্তা (ছদ্মনাম ), নয়ডা এক্সটেনশন, উত্তরপ্রদেশ


## সুচিত্রা ভট্টাচার্যর লেখনীতে মধ্যবিত্তের জীবনে কিছু শিক্ষা, কিছু সতর্কীকরণ

লেখিকা - সহেলি গুপ্তা (ছদ্মনাম ), নয়ডা এক্সটেনশন, উত্তরপ্রদেশ

সাতের দশক থেকে শুরু করে মুঠোফোনে পৃথিবী করায়ত্ত হওয়া অবধি সময়টাকে যদি সামাজিক বিবর্তনের এক মাইল ফলক হিসেবে ধরা হয় তবে তাতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হবে কোনগুলো? নিম্নবিত্তের মধ্যবিত্তে উত্তরণ, একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে অণু পরিবার, মেধা পাচার, কর্মক্ষেত্রে নারীর বলিষ্ঠ পদচারণা, বিশ্বায়ন। এই সমস্ত পরিবর্তন ছাপ ফেলেছে দৈনন্দিন জীবনে, মানবিক সম্পর্কে, সব মিলিয়ে বিগত চল্লিশ বছর যেন এক সন্ধিক্ষণ; পুরনো এবং উত্তর আধুনিক যুগের মাঝে।

এমন একটা সময় যেন অপেক্ষাই করছিল মৌলিক এক লেখনীর, সমসাময়িক সময়কে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনে। এই সময়েই আত্মপ্রকাশ লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের। যাঁর গল্পের চিত্রকল্পে চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে সমাজ, সংসার, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির আখ্যান। নকশাল আন্দোলনের অভিঘাত থেকে বাঙালির ফ্ল্যাট বাসনা সবটাই ধরা পরেছে তাঁর লেখনীতে। তাঁর রচনায় সর্বাপেক্ষা স্ফুরিত সময়টি হলো নয়ের দশক। এই দশকেই উদার অর্থনীতির প্রবেশ ঘটেছে মধ্যবিত্তের জীবনে, পৃথিবী হয়েছে এক বিরাট গ্রাম, নৈতিকতা বনাম বাস্তবতায় জোর কাজিয়া লেগেছে, বদল ঘটেছে মানবিক সম্পর্কের রসায়নে, বদলেছে চাওয়া পাওয়ার মাপকাঠি; আর্থ সামাজিক এহেন জটিল বিষয়গুলোকে লেখিকা ব্যাখ্যা করেছেন নারী ও পরিবারকে কেন্দ্রে রেখে। তাই অনেকেই লেখিকাকে নারীবাদী লেখিকা বলে আখ্যায়িত করতে চেয়েছেন। তিনি কি শুধুই মেয়েদের জন্য লিখতেন? তাই যদি হবে তবে অভিজিৎ ( 'গভীর অসুখ'), কন্দর্প, শিবসুন্দর সেনগুপ্ত( 'কাছের মানুষ') দের অনুভূতির ভাগী হলেন কি করে? অথবা শুধুই গেরস্থের জীবনে আলোকপাত করেছেন? তাহলে তনুময়, শুভাশিস দের ('কাছের মানুষ') অতিবাম রাজনীতি অথবা রুদ্র দাশগুপ্ত, সাত্যকির ( 'ভাঙনকাল') বাম রাজনীতির তত্ত্ব তালাশ করলেন কেন? 'কাছের মানুষ' লেখিকার প্রকাশিত সর্ববৃহৎ ও বহু চর্চিত উপন্যাস তার মধ্যে কেন্দ্রীয় চরিত্র ইন্দ্রাণী আর তিতির, দুই প্রজন্মের দুই নারী তবে আরও এক উজ্জ্বল চরিত্র হলেন ডাক্তার শিবসুন্দর সেনগুপ্ত। শিবসুন্দরের উপস্থিতি ইন্দ্রাণী জানলেও ইন্দ্রাণীর উপস্থিতি শিবসুন্দরের অজানা ছিল কারণ, ইন্দ্রাণী ছিল শিবসুন্দরের ছেলে শুভাশিসের জীবনের এক অতি গোপন অধ্যায়। শিবসুন্দর আর ইন্দ্রাণী দুজনেই শুভাশিসের নৈতিক কষ্টিপাথর। হ্যাঁ, এক নারী আর আরেকজন বৃদ্ধ এক সফল চিকিৎসকের মার্গদর্শী, এই গল্পে অন্যান্য আরও অনেক নারীর উপস্থিতির সাপেক্ষে লেখিকা বুঝিয়েছেন ইন্দ্রাণীর অনুকমত্ব। বাকিরা নিজেদের মতো করে উজ্জ্বল কিন্তু ইন্দ্রাণী স্বতন্ত্র। ইন্দ্রাণী শিক্ষিতা, শিক্ষিকা, সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, ব্যক্তিত্বময়ী, মা, স্ত্রী আবার প্রেমিকা। প্রায় সবকটা চরিত্রে ইন্দ্রাণী সফল, কিন্তু ইন্দ্রাণী রূপকথার নায়িকা নয় তাই প্রায় সফল, পুরোটা নয়। তার ব্যর্থতাই যেন উপন্যাসের মূল ট্র্যাজেডি। ইন্দ্রাণীর দাম্পত্য জীবন আর প্রেমিকা জীবন ব্যর্থ। আরেক জনের প্রতিও সে ব্যর্থ ; সে হলো তিতির, ইন্দ্রাণী - শুভাশিসের অবৈধ সন্ততি তিতির, যে কিনা সারা জীবন ইন্দ্রাণীর স্বামী আদিত্যর মেয়ের নামেই পরিচিতি পেলো। শুধু তাই নয় প্রেমিক শুভাশিসের মেয়ে তিতির ইন্দ্রাণীর তেমন প্রিয় হলো না, প্রিয় হলো প্রেমহীন সম্পর্কজাত ছেলে বাপ্পা। মানুষের জীবন তো এমনই ফর্মুলা বিহীন, খাপছাড়া, অপ্রত্যাশিত। অনেক পাঠক -পাঠিকা অভিযোগ করেন ইন্দ্রাণীর মৃত্যু তাঁরা মানতে পারেন নি, কিন্তু ইন্দ্রাণী যদি মারা না যেতো তাহলে তো আমরা বুঝতেই পারতাম না‌ শুভাশিসের প্রাণ-ভোমরা যে নিহিত ছিল ইন্দ্রাণীতেই, ইন্দ্রাণীর মৃত্যুর পর ইন্দ্রাণীর' শুভ ' প্রায় মরতে বসেছিল। এই ঘটনায় শুভাশিস জায়া ছন্দাও ইন্দ্রাণীর সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনতে বাধ্য হয়। যাকে এতদিন অবিমিশ্র দানবী ভেবে এসেছিল ছন্দা সেই দানবীই যে আসলে দেবী হয়ে রক্ষা করে চলেছিল তার সুখের প্রাসাদ সে কথা হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছিল ছন্দা।

প্রেমকে সর্ব অবস্থায় সঠিক ভাবে বোঝা তো যায় না, তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়, প্রেমের সঠিক রূপটি ধরিয়ে দেয় সময়। যেমন সময়ই দয়িতা কে বুঝিয়েছিল তার প্রেমিক বোধিসত্ত্ব মজুমদার নন বরং সৌমিক ('নীল ঘূর্ণি ')। লেখিকা শুধুই নারীর অধিকার নিয়েই সরব ছিলেন তা নয় নারীর দায়িত্ববোধ নিয়েও সরব ছিলেন। 'দহন' এর দুই মেয়ে ঝিনুক আর রমিতা দুজনেই শিক্ষিতা, আধুনিকা কিন্তু রোমিতা ঝিনুক হয়ে উঠতে পারেনি। কোথাও যেন এক প্রচ্ছন্ন মেসেজ; ওহে রোমিতা ! তুমি ঝিনুক হয়ে ওঠো!

নারীর জীবনে পুরুষের প্রাসঙ্গিকতাকেও স্বীকার করেছেন লেখিকা। নারী স্বাবলম্বী হলেই তার সব পাওয়া হয়ে যায় না তার জীবনে একজন সংবেদনশীল পুরুষেরও প্রয়োজন হয় ( 'আমি রাইকিশোরী')। আরেক দল বলেন, দাম্পত্য কলহের আরেক নাম সুচিত্রা ভট্টাচার্য। শুধু দাম্পত্য বা পরিবার কেন; আট - নয়ের দশকে সমাজের সর্বস্তরে মেয়েরা নিজের স্বকীয় সত্তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা যজ্ঞে নেমেছে। সম-মান, সম-বেতনের মত মৌলিক দাবিগুলো ছাড়াও নারী চেয়েছে পুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের অধিকার, আত্মীয়া বা প্রেমিকা ছাড়াও সম-মনস্ক পুরুষের সাথে নারী বন্ধুত্বের দাবী রাখতে পারে ( 'ধূসর বিষাদ')। সমসাময়িক সময়টা তুলে ধরাই তো ওঁর কাজ। তিনি তাঁর লেখনীতে এমন এক সময়কে বেছেছেন যখন নারী পুরুষ ব্যক্তিত্বের সংঘাত অনিবার্য তো ছিলই; তাতেই আলোকপাত করেছেন লেখিকা।

শ্রদ্ধেয়া সুচিত্রা ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলেন, " আমি জানি না আমার লেখা সাহিত্য পদবাচ্য হয়ে উঠেছে কিনা!"

অদিতি মজুমদারের স্বামী সুপ্রতিম মজুমদার স্ত্রীর লেখালেখির সাফল্যে ঈর্ষা করে যে অভূতপূর্ব আচরণ করেছেন ( 'হেমন্তের পাখি') তা কিন্তু অনেক 'অদিতি'র জীবনেই তাদের ' সুপ্রতিম' রা করে দেখিয়েছে ! ঠিক এসব মুহূর্তেই মনে হয় ওঁর রচনা দর্শনের স্তরে উন্নীত হয়, আর সাহিত্য? 'পরবাস' এর তরুণ কুলদীপের রিমঝিমের প্রতি অব্যক্ত প্রেমের মিষ্টি-মধুর অনুভূতি কি শুধুই লেখিকার কল্পনা। সে কি আমাদেরই মৌলিক আবেগ নয়?

সেদিক দিয়ে ওঁর রচনাগুলো আবেগ আর বুদ্ধির মধ্যে বেশ এক সেতুবন্ধন করে। দর্শন আর সাহিত্য ছাড়াও আরেক দিক আছে ওঁর রচনা গুলির মধ্যে; সাধারণের সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার উচ্চাশা, - ইন্দ্রাণী চরিত্রের বাস্তবতাকে ঘিরে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে; ইন্দ্রাণী এমন একজন নারী যে নাকি একাধারে মোহময়ী, অন্যদিকে ব্যক্তিত্বময়ী; এমন মিশেল আদৌ কি বাস্তবে থাকা সম্ভব! যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে বেশ কয়েকজন মানুষ। শ্বশুরবাড়িতে বউ থাকে এক কোণে পরে, তার ওপর কিছু দায় ন্যস্ত থাকে বটে তবে তার জন্য অতখানি সম্মান বরাদ্দ হয় না। কিন্তু ইন্দ্রাণীর জন্য ছিল প্রচুর সম্মান; তাও যদি ইন্দ্রাণীর স্বামী বা বাপের বাড়ি একটু ধনী হতো তাও একটা কথা ছিল, শুধুমাত্র একজন মেয়ে তার নিজের গুণেই এতোখানি! শুভাশিসের সঙ্গে সম্পর্কে শরীর যেখানে প্রায় নেই বললেই চলে সেখানে তবে কিসের আঠা! মাঝে তবে কি ঔরসজাত তিতির ফ্যাক্টর? উপন্যাসের শেষে ইন্দ্রাণী মারা যাওয়ার পরে তিতির আর তেমন আকর্ষিত করেনি শুভাশিসকে, পরে তিতিরই উপযাচক হয়ে তার তথাকথিত 'ডাক্তার আঙ্কেল'-কে জীবনে জায়গা করে দিলো। সে ক্ষেত্রেও ধ্রুবক হলো ইন্দ্রাণী। পার্থিব শরীরটা চলে যাওয়ার পরেও ইন্দ্রাণী নামক নারী এতোখানি প্রাসঙ্গিক! সব রকম বিনিময় মূল্যের বাইরে গিয়ে নারীর এ হেন উপস্থিতি দেখিয়ে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দিকে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন লেখিকা।

সবরকম প্রতিতুলনা, ব্যতিক্রম ওঁর রচনার প্রাণ। একদিকে বামপন্থী আদর্শকে কলুষিত করা 'সাত্যকি' অন্যদিকে আদর্শকে সম্বল করে এগিয়ে চলা 'রুদ্র দাশগুপ্ত' দুজনেই একই আদর্শবান শিক্ষকের ছাত্র। আবার সেই আদর্শ শিক্ষকেরই সন্তান 'চন্দন' নিজ জীবনে সাত্যকির চেয়েও আরও বেশী রকম আপোসপন্থী (' ভাঙনকাল' )। বিগত প্রজন্মের 'শ্রীময়ী' হাল প্রজন্মের মিতুলের থেকে অনেক বেশি আধুনিকা (' ফিরে দেখা ')। আধুনিকতা কোনও প্রজন্মের মুখাপেক্ষী নয়। আবার ঝিনুকের ঠাকুমা মৃণালিনী দেবী! মহা ব্যতিক্রমী বললে কম বলা হয়, উনি একজন গন্ডিভাঙার নিদর্শন। প্রবীণা সংসারের সাত - সতেরোতে জুড়ে থেকে নবীনাদের সঙ্গে চুলোচুলি করবেন না সে আবার কেমন কথা! আবার যে সমাজে সাধারণত মেয়েরা মেয়েদের শত্রু বলে বিবেচিত হয় সেই সমাজেরই মেয়ে কৃষ্ণা হয়ে উঠলো কিশোরী বেলার সই লাজবন্তির দুর্দিনের সাথী, লাজবন্তির বৌদি অনুরাধা যে ভূমিকায় ব্যর্থ ('ভাঙনকাল')।

মধ্যবিত্ত সমাজের পুরুষ চন্দন - সাত্যকি হবে কেন? তোমরা বরং রুদ্র দাশগুপ্তকে লক্ষ্য করে এগোও! রুদ্রর মতন করে জীবনবোধ গড়ে তোলো, দেখো টানাপোড়েন থেকে বেঁচে যাবে! আর বোধিসত্ত্ব মজুমদারের মতো যাঁরা নিজ সাধনালব্ধ ফল দ্বারা সমাজের উন্নতি করতে চান তাঁরা মনে রাখুন রাখি বা দয়িতাদের অন্তেবাসী করে রাখলে আপনাদের সাধনায় প্রাপ্ত মানব কল্যাণ মাঠে মারা যাবে ( 'নীল ঘূর্ণি ')।

এতো বনিবনা তন্নিষ্ঠা -শৌনকের; বিয়ে হতে কোনও বাঁধাই ছিল না তাও দুজনের নিখাদ জুটির মধ্যে কি করে অভিমন্যু প্রাসঙ্গিক হয়ে গেলো!( 'অন্য বসন্ত')। ঝকঝকে ক্যারিয়ার, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শৌনক তুলনায় নেহাতই ছাপোষা অভিমন্যু কিসের জোরে এগিয়ে গেল শৌণকের চেয়ে! আজন্ম নিজের বাবার শিল্পী-সত্তাকে মা'র কেরানি-সত্তার কাছে লাঞ্ছিত হতে দেখে বেড়ে ওঠা তন্নিষ্ঠা অভিমন্যুর মধ্যে খুঁজে পেলো শুভেন্দুর ভেতরের সেই অপ্রকাশিত উদ্ভাবনী শক্তি যা নাকি সর্বত্র বাঁধার মুখে পরেছে। নন্দিতা চেয়েছেন তাঁর স্বামী শুভেন্দু হবেন নিখুঁত একজন কেরানি, এমনকি শুভেন্দুর নাট্য জগতের সহযোদ্ধা নিজে দলপতি হওয়ার উচ্চাশায় শিল্পীকে 'জো হুজুরি'- র স্তরে নামাতে চেয়েছেন! ওঁরা ভুলে গেছেন ঘষে-মেজে শৌনক, নন্দিতার মতো করণিক তৈরি করা যায় কিন্তু অভিমন্যু, শুভেন্দুর মতো মেধা ট্রেনিংয়ে প্রাপ্ত নয়, এঁরা নতুন পথ তৈরি করেন, সেই পথে চলে শৌণক, নন্দিতার মতো জনতা। অধিকাংশ অভিভাবক নিজ সন্তানকে একজন সফল পেশাদার হিসেবে তৈরি করতে চান সন্তানের নিজস্ব ভাবটির বাইরে গিয়ে, কখনও আবার একেবারে বিপরীতে গিয়েও! কিন্তু যার যেমন ভাব তাকে সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে না দিয়ে শুধু অনুকরণ করলে সৃষ্টি যে অনাসৃষ্টিতে পর্যবসিত হবে।

ওঁর লেখনীর রসে বঞ্চিত হয়নি বাংলা চলচ্চিত্র জগতও! নয়ের দশকের শেষের দিকে - মুক্তি পেল 'দহন'। বাংলা ছবির যাত্রায়িত ধাঁচে জর্জরিত মধ্যবিত্ত বাঙালি দর্শক যখন বাংলা ছবিকে ভুলতে বসেছিল তখনই ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের এই ছবিটা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ঢল নেমেছিল। সিনেমাপ্রেমী থেকে সমালোচক মণ্ডলী সবাই আবার ভাবতে বাধ্য হলেন বাংলা ছবি নিয়ে। পরিচালক সহ দুই অভিনেত্রী পেলেন পুরস্কার। সুচিত্রা ভট্টাচার্য নামটাকে ছাড়িয়ে গেলো 'ঝিনুক'। সৃষ্টি স্রষ্টাকে ছাপিয়ে গেছিল লেখিকার জীবদ্দশাতেই। 'দহন' ছাড়াও তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিত্রায়ন গুলি হলো 'অলীক সুখ', 'অন্য বসন্ত', 'গহীন হৃদয়', 'ক্যানসার' ( গভীর অসুখ ),। নাট্যায়ন হয়েছে 'কাঁচের দেয়াল', 'কাছের মানুষ'। 'কাছের মানুষ' দুই বাংলা থেকেই পৃথকভাবে হয়েছে। দুইটিই বড্ড সফল। সারবত্তাহীন ডেলিসোপগুলির ভীড়ে 'কাছের মানুষ' যথারীতি হীরকদ্যুতিসম উজ্জ্বল। এই মুহূর্তে যখন সিনেমাতে মর্মস্পর্শী গল্পের খুব অভাব, সম্বল বলতে কিছু রহস্যনির্ভর ওয়েবসিরিজ আর ইতিহাস, সেই সময় বাংলা সহ পুরো দেশে সুচিত্রা ভট্টাচার্যর কাহিনীগুলোর ওপর আরও বেশি কাজ হওয়া প্রয়োজন। সিনেমা- নাটকের আসল উদ্দেশ্য যদি লোকশিক্ষা হয় তবে তাঁর সমাজ- পরিবার - দর্শন - ভবিষ্যৎ দর্শন সবটাই মানুষের কাছে পৌঁছনো প্রয়োজন। বিশেষত সেই সময়ে যখন নাকি মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। মধ্যবিত্তের জীবন জীবিকার স্থিরতা প্রশ্নের মুখে। বেসরকারিকরণ, পেনশন ব্যবস্থার বিলুপ্তি, ছোট ব্যবসার ক্ষয়িষ্ণু ভবিষ্যতসহ অণু-সংসার ভেঙে পরমাণু-সংসার, এই সময়টার ভবিষ্যৎ বাণী লেখিকা করেছিলেন সেই নয়ের দশকেই। এতো ক্ষয়, এতো ভাঙনের কারণ কি কি? কিভাবেই বা রোধ করা যেতে পারে এই অবক্ষয়? উত্তর আছে ওঁর অভিধানে! সাদামাটা সরকারি চাকুরীজীবী এই লেখিকা নিজেই মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষ হওয়ার সুবাদে মধ্যবিত্ত জীবনকে খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এই সমাজের প্রতিনিধি হয়ে তিনি বুঝেছিলেন বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে টিকে থাকা যাবে না, আবার মূল্যবোধকেও তো ছাড়া উচিৎ না। বাস্তবতা আর নৈতিকতা এই দুই বিরোধী শক্তিকে এক সূক্ষ্ম সুতোয় বেঁধেছিলেন তিনি।

ইতিমধ্যে সুচিত্রা ভট্টাচার্যর গল্প চৌর্যবৃত্তিরও শিকার হয়েছে। গল্প চুরি করে ছবি তৈরি হয়ে মুক্তিও পেয়ে গেছে, লেখিকার মৃত্যুর পরেই ঘটেছে এই ঘটনা। এই অসাধুতা কি ভাবে সম্ভব? নেপথ্যে কেমন ধারা ভোজবাজিই বা আছে! লেখিকা বেঁচে থাকলে এসবের যথার্থ কারণ অনুসন্ধান করে নিশ্চিত তুলে ধরতেন পাঠক মহলে! যেমনটা তুলে ধরেছিলেন প্রযোজক অশোক মুস্তাফিরফন্দী ( 'কাছের মানুষ' )। সংস্কৃতি জগতের নীতিহীনতাকে বিবেকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ছাড়তেন! সংস্কৃতি জগতের অবক্ষয় রোধে অবশ্যই তাঁর কলম সোচ্চার হতো!

লেখিকা শুধু কলমেই ক্ষান্ত থাকেন নি, সমাজের কথা ভেবে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই সরাসরি ভাবে অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বহু আলোচিত তথাকথিত পরিবর্তনের অভিযানে। দুর্ভাগ্যবশত সেই পরিবর্তনের ফল আশাব্যঞ্জক হয়নি, তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছেন তাঁরই এক গল্পে ( 'দমকা হাওয়া')। এটাই বোধহয় মহৎ-এর ধর্ম। নারী -পুরুষ, পেশাজীবী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, শিল্পী তিনি সবার কথাই লিখেছেন সব মানুষের কথা ভেবে পথেও নেমেছিলেন। সে ভাবে ভাবলে তিনি নারীবাদী, ভাববাদী, বাস্তববাদী, নীতিবাদী, সর্বোপরি মানবতাবাদী।
(সমাপ্ত )


All Bangla Articles   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717