-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
এক দিন এক রাজ দরবারে এক চোর এসে হাজির হল। তার কদাকার, কুৎসিত রূপ। সে রাজাকে প্রণাম জানিয়ে বলল “মহারাজ, আমি একজন চোর। সবাই আমাকে রাহু চোর বলে ডাকে। জীবনে আমি অনেক চুরি করেছি, অনেক মানুষের ক্ষতি করেছি। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আর কখনো চুরি করব না। আমি এখন ভাল হয়ে চলতে চাই। আমি একজন গুণী শিল্পী হতে চাই। ছোট বেলা থেকেই মাটির মূর্তি গড়ার সখ ছিল আমার। এই কাজটাকে আমি ভালবাসি আর সেই মত কাজ ও করেছি। কিন্তু যত চেষ্টাই করিনা কেন আমার মূর্তি আর সুন্দর হয় না, কুৎসিত-কুরূপ হয়। কেন আমি শত চেষ্টাতেও সুন্দর মূর্তি গড়তে পারছিনা? এই প্রশ্নের জবাব আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। দয়া করে আমার সমস্যার সমাধান করুন।”
মহারাজ মনে মনে খুব খুশী হলেন। তিনি ভাবলেন “যার মনে সত্য বলার মত এত সাহস আছে, তার মনে দৃঢ়তা ও নিশ্চয়ই থাকবে। তাকে সঠিক রাস্তা দেখানো দরকার।” তিনি রাজগুরুর সাথে পরামর্শ করে রাহু চোরকে রাজ্যে এক উৎকৃষ্ট মূর্তিকারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই মূর্তিকারের নাম ছিল বেণু কুমার।
বেণু কুমারের কাছে গিয়ে রাহু চোর তিন চার দিন পর্যন্ত অতি গর্ব সহকারে নিজের চুরি করার ইতিহাস আর কলা কৌশলের কথা বলে গেল।যেন এটা ছিল একটা বীরত্বের কাজ।
তিন চার দিন ধরে বেণু কুমার রাহু চোরের সব কথা শুনলেন আর মনে মনে হাসলেন। তিনি রাহু চোরকে একটি মূর্তি গড়তে বললেন। রাহু চোর অনেক যত্ন করে, অনেক চেষ্টা করে একটি মূর্তি বানাল, কিন্তু সেটি মোটেই সুন্দর হল না। বেণু কুমার সেটিকে অতি যত্নে তার প্রয়োগশালায় রেখে দিলেন।পরদিন তিনি রাহু চোরকে নিয়ে এক শশ্মানে গেলেন। তখন সেখানে একটি চিতা জ্বলছিল। চারিদিকে অনেক লোক। ডোম আধ পুরা মৃতদেহটাকে লম্বা এক বাঁশ দিয়ে উল্টে পাল্টে দিচ্ছে। চারিদিকে কান্না, অশ্রু আর আপনজনের হারিয়ে যাওয়ার বেদনার অনুভূতি। সেই শোকাকুল পরিবেশে তারা দীর্ঘক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে এলেন।
বেণু কুমার রোজ তাকে সেই শশ্মানে নিয়ে যেতে লাগলেন। শশ্মানের বেদনা, অস্ত্রু আর স্বজন হারানোর হাহাকার পরিবেশ ধীরে ধীরে রাহু চোরকে জীবনের চরম সত্য উপলব্ধি করাতে লাগল। তার মনের মধ্যে এক বিশাল পরিবর্তন এলো। যে রাহু চোর সদা নিজের চুরির ইতিহাস নিয়ে কথা বলত সে এখন জীবন নিয়ে কথা বলতে লাগল।
কিছুদিন এরকম চলার পর বেণু কুমার রাহু চোরকে দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আহত সিপাহীদের কাছে নিয়ে গেলেন। দুজনে মিলে তাদের মুখেই তাদের বীরত্বের কথা শুনল। সেই কথা শুনে দুজনের গায়েই শিহরন জাগতে লাগল। সঠিক বীর এবং বীরত্বের মুখামুখি হয়ে রাহু চোর অনুভব করতে লাগল যে নিজের চুরিকে নিয়ে তার গর্ব করা, এই সব বীর দেশপ্রেমিকদের তুলনার এক ছেলেখেলা মাত্র। তার মনে দেশপ্রেমের এক অঙ্কুর জাগল। আর ক্রমে ক্রমে এই সব বীরদের কাছে এসে এসে সেই অঙ্কুর কিছুদিনের মধ্যেই দেশপ্রেম আর বীরত্বের এক সুবিশাল বৃক্ষে পরিণত হল। সাহসী তো সে ছিলই এবার সেই সাহস এক সঠিক দিক খুঁজে পেল।
কিছুদিন এরকম চলার পর বেণু কুমার তাকে নিয়ে একদিন বনে গেলেন বনফুল তুলতে। চারিদিকে অতি সুন্দর রঙ-বিরংগী অসংখ্য বনফুল ফুটে আছে। আর বনফুলের উপর উড়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার প্রজাপতি। এমন শোভা, এমন মনোরম দৃশ্য রাহু চোর আগে কখনোই দেখেনি। সে পাথরের মত দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চিত্তে সেই দৃশ্য দেখতে লাগল। তার প্রাণ যেন তৃপ্ত হল এই দৃশ্য দেখে।
বেণু কুমার আর রাহু চোর অনেক বনফুল তুলে আনল। তারা সেই ফুলে অনেক গুলি ফুলের তোড়া বানাল। আর পরদিন সকালে গ্রামের এক পাঠশালায় গিয়ে সব শিশুদের একটি একটি করে ফুলের তোড়া দিতে লাগল। এতে শিশুরা খুব খুশী হল। শিশুদের কিলকারিতে, আধো আধো কথাতে দুজনের প্রাণ ভরে গেল। শিশুদের মাঝে এসে রাহু চোরের মনে আজ এক স্বর্গীয় আনন্দের অনুভূতি এলো। আজ সারা দিন তার মনে শিশুরাই ঘর করে রইল। সে শুধু তাদের কথাই বলতে লাগল।
এমনি করে চলল কিছুদিন। আজ আর রাহু চোর তার চুরির ইতিহাস মুখে আনতে চায় না। মনে ও করতে চায়না। তার মুখে শুধু প্রেম ভালবাসার কথা, আনন্দ উল্লাসের গল্প। এমনি এক দিনে বেণু কুমার আবার তাকে একটি মূর্তি গড়তে বললেন। আজ রাহু চোর এমন একটি মূর্তি গড়ল, যে মূর্তির দিকে তাকিয়ে সে নিজেই চোখ ফিরাতে পারল না। সে একটি শিশুর মূর্তি গড়ল। শিশুটির মাথায় আর কাঁধে বসে আছে দুটি রঙিন প্রজাপতি। শিশুটি প্রাণ খুলে হাসছে। মনে হচ্ছে যেন শিশুটি এখুনি কথা বলবে। রাহু চোর নিজেই অবাক হয়ে গেল নিজের মূর্তি দেখে। সে বেণু কুমারের কাছে জানতে চাইল কেন সে আজ এত সুন্দর মূর্তি অনায়াসেই গড়তে পারল? এই মূর্তির দিকে তাকিয়ে সে নিজেই চোখ ফিরাতে পারছে না।
বেণু কুমার বললেন “শিল্প হল মানুষে মনের ছবি। মানুষের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। সূক্ষ্ম চিন্তা- চেতনা আর বিবেকের বাস্তব রূপ। যার মন, অনুভূতি যত সুন্দর তার শিল্প তত সুন্দর এবং সমৃদ্ধ। মানুষ তার বিবেক আর চেতনা অনুসারেই তার শিল্প রচনা করে।” তিনি রাহু চোরকে আরো বললেন যে, যখন সে চুরি করত তখন তার মন মানসিকতা জুড়ে অপরাধ, হিংসা, ভয় বিরাজ করত। তার চিন্তা ভাবনা আর অনুভূতি ও ছিল নিচু মানের। ফলে তার গড়া মূর্তি তেমনই হত। আর যখন তার মনে জীবনের ও বাস্তবের সুন্দর অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা গুলি প্রবেশ করতে লাগল তখন তার মন মানসিকতার মান ও বেড়ে গেল। আর তার প্রতিফলনই দেখা গেল তার শিল্পে। বেণু কুমারের কথা শুনে রাহু চোর অবিভুত হয়ে গেল। নিজেকে ফিরে পেয়ে সে বেণু কুমারের দু পা জড়িয়ে লুটিয়ে পড়ল। বেণু কুমার তাকে ধুলা থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি রাহু চোরকে এক নতুন নাম দিলেন। ঋতুরাজ।
তার অনেক দিন পরে বেণু কুমার ঋতুরাজকে নিয়ে আবার রাজদরবারে হাজির হলেন। রাহু চোরকে চিনতে রাজার কোন অসুবিধা হল না। তবে তিনি জানতেন এই রাহু চোর আর আগের মানুষ নেই। বেণু কুমার রাজার সামনে ঋতুরাজের তৈরী একটি মূর্তি হাজির করলেন। সেই মূর্তিটি ছিল স্বয়ং রাজার। মনে হল যেন একই রাজা দুই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। সেই মূর্তি দেখে সভার সবাই অপলকে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages
15
16
17
18
(19)
20
21
22
...