-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
বকুল দেশের রাজা প্রায়ই রাজমহল ছেড়ে ছদ্মবেশে নিজ দেশের আনাচে কোনাচে ঘুরে বেড়ান। একদিন রাজা বকুল দেশের নিজল নদীর পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন ঘাটে খুব সুন্দর একটি নৌকা বাঁধা আছে। নৌকাটি তাজা ফুলে ফুলে সাজানো। তাজা ফুলের সুভাষ চারিদিক ম-ম করছে। রাজার মনে কৌতূহল হল। তিনি এগিয়ে গিয়ে সেই নৌকাটিতে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক সুন্দরী-রূপসী যুবতী এসে সেই নৌকায় হাজির হল। সে নিজের নৌকায় এক পরপুরুষকে দেখে অবাক হয়ে রাজার পরিচয় জানতে চাইলেন। রাজা নিজের পরিচয় গোপন করে তাকে বললেন, “আমি এমন সুন্দর নৌকা আর এমন সুন্দর ফুল আগে কখনো দেখিনি। তুমি কোথা থেকে এমন সুন্দর ফুল সংগ্রহ কর? আর কেনই বা তুমি তোমার নৌকাকে এত সুন্দর করে সাজাও?”
রাজার কথা সেই যুবতীর খুব ভাল লাগল। সে রাজাকে বলল “চলুন আজ আপনি আমার সাথে ঘুরে বেড়াবেন। তাহলেই সব জানতে পারবেন!” নৌকা গিয়ে ভিড়ল এমন এক ঘাটে যে ঘাটের চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুলের বাগান। অসংখ্য রঙ্গিন প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে সেখানে। নিজের দেশে এমন সুন্দর ফুলের বাগান আছে, রাজা তা জানেনই না। রাজা সারাদিন সেই যুবতীর সাথে ফুল বাগানে-বাগানে ঘুরে বাড়ালেন। এমন দিব্য আনন্দ রাজা আর আগে কখনো পাননি। যুবতীটি বলল “হে অতিথি, এই ফুলবাগান গুলি আমারই ফুলবাগান। এটা আমার এক সখ। আমি ফুল, প্রজাপতি, পাখী এগুলিকে নিয়ে থাকতেই ভালবাসি। সারাদিন আমার এদের সাথেই কাটে। এই ফুলগুলি দিয়েই আমি আমার ঘর সাজাই, নৌকা সাজাই। আমার খুব ভাল-লাগে।”
সন্ধ্যার আগেই তারা আবার সেই নৌকা দিয়ে নিজল নদীর এপারে চলে এলেন। বিদায় নেবার আগে রাজা সেই যুবতীকে বললেন “কাল আমি আবার আসতে চাই। তুমি কি আমাকে আবার সেই ফুল বাগানে নিয়ে যাবে?”
যুবতীটি হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না। শুধু একটু হাসি হেসে বিদায় নিলো।
পরদিন রাজা আবার যথা সময়ে যথা স্থানে এসে হাজির। আজো নিজল নদীর ঘাটে সেই নৌকাটি বাধা আছে। তবে তাতে আজ আর গতকালের মত রূপ নাই। আজ সেই নৌকাটিতে তাজা রক্ত আর রক্ত। রাজা খুব অবাক হলেন। তিনি ধীর পায়ে নৌকাটিতে বসলেন। এমন সময় এক ডাকাত, হাতে উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে সেই নৌকায় এসে হাজির হল। তার সারা শরীরে রক্ত। তার তরবারি রক্ত রঞ্জিত। সে নিজের নৌকায় ঘাটের অতিথিকে দেখে অট্টহাসি হেসে বলল “খুব ভাল হয়েছে। তুমি আমার নৌকাতে এসেছ। আমি মনে মনে একজনকে খুঁজছিলাম। মা ভবানী আমার প্রার্থনা শুনলেন। দেখ অতিথি, আমি একজন ডাকাত। অন্য একটি ডাকাত দলের সাথে আমার দলের লড়াই চলছে। আমার এক সাথী মারা গেছে। তাকেই নিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। তাই নৌকাতে এত রক্ত। জানি আজ হয়তো আমারও মরণ হবে। যদি আমার মরণ হয় তবে তুমি আমাকে এই নৌকায় করে এই ঘাটে নিয়ে এসো, আর এখানেই আমার মৃতদেহ রেখে আপন পথে চলে যেও। হয়তো তোমার কাছে এটাই আমি আমার জীবনের শেষ অনুরোধ করলাম।”
নৌকা নিজল নদীর যে ঘাটে ভিড়ল সে ঘাটে সত্যি দুই ডাকাত দলের মাঝে তুমুল লড়াই চলছে। রক্তে সেই ঘাটের মাটি লাল হয়ে আছে। “রে রে” করে অতিথির সাথী ও উদ্ধত তরবারি নিয়ে সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মরণ হল। রাজা কোন ভাবে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে, সেই ডাকাতের মৃতদেহকে নৌকায় নিয়ে নিজল নদীর এ পারে ফিরে এলেন। আর সেই ডাকাতের কথামত তার দেহকে সেই নৌকায় রেখেই নিজের পথে পা বাড়ালেন। রাতে রাজার ঘুম এলো না। সেই ডাকাতের কি পরিণত হল তা জানতে তিনি অতি ভোরেই সেই ঘাটে, সেই নৌকার কাছে এসে হাজির হলেন। কিন্তু কি অবাক কাণ্ড সেই নৌকাতে গতকালের কোন চিহ্ন মাত্র নাই। তার পরিবর্তে সেখানে বসে একজন এই কাকভোরে তানপুরা হাতে অতি নিমগ্ন চিত্তে ভোরের গানের রেওয়াজ করছেন। অতিথিকে নিজের নৌকায় দেখে তিনি অবাক হয়ে রাজার পরিচয় জানতে চাইলেন। রাজা তার নকল পরিচয় দিলেন। দুজনাতে খুব ভাব হল। সেই গায়ক রাজাকে নিজের গানের জলসাতে নিয়ে গেলেন। সারাদিন সেথায় শ্রুতিমধুর গান হল। রাজা খুব উপভোগ করলেন। দিনের শেষে আবার তারা ফিরে এলেন নিজল নদীর এপারে। রাজার কথার কোন জবাব না দিয়ে গায়ক তেমনি মুচকি হেসে নীরবে বিদায় নিয়ে দুরের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। রাজাও ফিরে এলেন তার ঠিকানায়।
নিজল নদীর সেই ঘাট, সেই নৌকা রাজাকে ভাবিয়ে তুলতে লাগল। পরদিন ভোরে রাজা আবার সেই ঘাটে গিয়ে হাজির হলেন। আজ সেই নৌকা ধন-দৌলতে পূর্ণ। অনেক হীরা, মনি, মুক্তা চকচক করছে। এই নির্জন স্থানে, একটি নৌকা এত অমূল্য সম্পদে পূর্ণ। রাজা আজ আর নৌকাতে উঠলেন না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। এমন সময় সেই নৌকাতে এসে উঠলেন এক সওদাগর। তিনি রাজাকে দেখে বললেন “আরে অতিথি এসো, এসো। আমার নৌকাতে এসো। আজ তোমাকে সাথে নিয়েই আমি আমার ব্যাপার করি। তুমি এর যথাযথ পারিশ্রমিক ও পাবে। চলে এসো।” তারা নিজল নদীর এক ঘাটে গিয়ে উঠলেন। সেখানে আজ যেন মূল্যবান পাথর কেনা বেচার হাট বসেছে। এমন হাট রাজা আগে কখনো চোখেই দেখেননি। নিজের রাজ্যেই এমন হাট আছে রাজা তা ও জানতেন না। সেই সওদাগর অনেক ধন-সম্পদ কেনা বেচা করল। অনেক লাভ হল তার। দিনের শেষে তারা আবার ফিরে এলো নিজল নদীর এ পারে। সওদাগর রাজাকে বললেন তোমার যা দরকার তুমি এই নৌকা থেকে নিয়ে নাও। এই বলে তিনি নৌকা আর ধন-রত্ন তেমনি ফেলে রেখে মুচকি হেসে নিজের পথে হেটে চললেন আর আধারে মিলিয়ে গেলেন। নৌকা ভরা ধন দৌলত এমনি পরে রইল ঘাটে। রাজা কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। তিনি ও হতভম্বের মত খালি হাতেই ফিরে গেলেন নিজের আবাসে।
পরদিন তিনি আবার এলেন নিজল নদীর সেই ঘাটে। কিন্তু আজ আর ঘাটে সেই নৌকা নাই। রাজা বেশ অবাক হলেন। তিনি অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু কোন লাভ হল না। তিন দিন এমনি কাটল। শেষ রাজা গুপ্ত পথে রাজপ্রাসাদে ফিরে এলেন। রাজপ্রাসাদে এসেই তিনি জরুরী সভা ডাকলেন। সভায় তিনি সবাইকে সব কথা খুলে বললেন। মন্ত্রী-সন্ত্রী সবাই রাজার কথা শুনে খুব অবাক হলেন। শুধু রাজগুরু অবাক হলেন না। তিনি মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। তিনি বললেন “হে রাজন, আপনারা কেউ জানেন না, কয়েকশত বছর আগে দূর দূর পর্যন্ত জন মানব হীন সেই ঘাটে এক মহান তপস্বী থাকতেন। পাশেই উনার তপোবন ছিল। আজ সেই তপস্বী নেই কিন্তু তার পবিত্র তপ আজো সেই জায়গাকে পবিত্র রেখেছে। আজো সেই তপস্বীর সূক্ষ্ম শরীর মানুষকে জীবনের নানান শিক্ষা দিয়ে চলেন। হে রাজন, আপনার সাথেও তেমনটাই হয়েছে। সেই তপস্বীর মায়া রচনা আপনাকে এই শিক্ষা দিতে চেয়েছিল যে, জীবনে আপনি যেমন নৌকায় বসবেন তেমন ঘাটেই গিয়ে উঠবেন। যেমন সঙ্গী চয়ন করবেন তেমন পরিবেশেই গিয়ে পড়বেন।”
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages
16
17
18
19
(20)
21
22
23
...