-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
সে অনেক দিন আগের কথা। এক বনে এক উচ্চমানের সাধু ছিলেন। তিনি একদিন তার এক শিষ্য, তপানন্দকে ডেকে বললেন, “হে পুত্র চিরদিনের মত হিমালয়ে সাধনার জন্য চলে যাচ্ছি। আমার গুরু আদেশ। কিন্তু যাবার আগে আমি আমার এই আশ্রমের সকল দায়িত্ব তোমার হাতে দিয়ে গেলাম। তুমি যোগ্য তাই তোমাকে এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এই নাও একটি দিব্য লাঠি। এটি যেমন-তেমন লাঠি নয়। এই লাঠির বিশেষ কিছু গুন আছে। এই লাঠি খুব সাবধানে প্রয়োগ করবে।”
তপানন্দ হাত জোড় করে বললেন “কেমন গুন গুরুদেব?”
গুরুদেবঃ হে বৎস, এই লাঠির দুইটি গুন আছে।
প্রথম গুনঃ তুমি যদি রাগে বা অভিমানে, কারোর ক্ষতির উদ্দেশ্য এই লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত কর তবে তোমার ভাগ্য তার কাছে চলে যাবে। তুমি ভাগ্যহীন, শ্রী হীন হয়ে পড়বে। তুমি হীন, দরিদ্র হয়ে যাবে। হে বৎস, আমরা রাগে বা অভিমানে কারোর ক্ষতি করার চেয়ে, নিজের অজান্তে নিজেদেরই ক্ষতি করি বেশী। কথায় বলে, পরের জন্য ফাঁদ পাতলে সেই ফাঁদে নিজেকেই পরতে হয়।
দ্বিতীয় গুনঃ তুমি আত্মরক্ষার কাজে যখন খুশি তখনই একে প্রয়োগ করতে পার। আর তখন সামনের জনের ভাগ্য তোমার কাছে চলে আসবে। সে তখন ভাগ্যহীন, শ্রী হীন, হত দরিদ্র হয়ে পড়বে।”
তপানন্দ হাত জোর করে বললেন, “গুরুদেব আমার ভাগ্য যদি অপরের কাছে চলে যায় তবে কি তাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না?”
গুরুদেবঃ না পুত্র। ২৪ বছর পর্যন্ত তুমি আর তোমার ভাগ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তারপর তুমি তোমার অর্ধেক ভাগ্যকে শুধু ফিরিয়ে আনতে পারবে।
তপানন্দঃ কিভাবে গুরুদেব?
গুরুদেবঃ ঐ ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায়, তোমার মঙ্গল কামনায় তোমাকে আবার এই লাঠি দিয়ে আঘাত করে, তবেই তুমি তোমার অর্ধেক ভাগ্য ফিরে পাবে। আর এই ২৪ বছরের মধ্যে যদি সে মরে যায় বা অন্য দেশে চলে যায় তবে আর কোন উপায় নাই। তাই পুত্র এই লাঠি থেকে সাবধান।
যথা সময়ে গুরুদেব হিমালয়ে চলে গেলেন। এর কিছুদিন পরে তপানন্দ তার সেই লাঠি নিয়ে নগর ভ্রমণে বের হলেন। বিকাল বেলায় তিনি এক সুন্দর মাঠের পাশে বসে বিশ্রাম করছিলেন। সে মাঠে কিছু কিশোর খেলা করছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল সেই নগরের এক অতি ধনী শেঠ এর সন্তান, লালচান। আর এক দিন মজুরের ছেলে হরিদাস। লালচানের খুব পয়সার অহংকার ছিল। সে ভাবত পয়সা দিয়ে সে সব কাজ করতে পারবে। আর এই পৃথিবী তার পদতলে থাকবে। ছেলেরা খেলা করতে করতে হঠাৎ ঝগড়া শুরু করে দিল। আর ঝগড়া শুরু হতেই লালচান, হরিদাসকে গালি দিতে দিতে দৌড়ে তপানন্দর কাছে এলো। তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে তার হাতের লাঠি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে হরিদাসের পিঠে ভীষণ জোরে এক আঘাত করল। হরিদাস যন্ত্রণায় মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল আর লালচান পাশে দাঁড়িয়ে হা-হা করে হাসতে লাগল।
তপানন্দ হায় হায় করে লালচানের পিছু ছুটে গিয়েও তাকে আটকাতে পারলেন না। শেষে তিনি লালচানের পিছু পিছু তাদের বাড়ীতে গিয়ে উঠলেন। তার বাবার কাছে গোপনে সব কথা খুলে বললেন। কিন্তু সেই শেঠ তপানন্দর কথা কিছুই বিশ্বাস করল না। তপানন্দ নিজের মতই আশ্রমে ফিরে এলেন। সেই রাতে সেই শেঠের গুদাম ঘরে ভীষণ আগুন লাগল। এক কানা কড়িও বাঁচানো গেল না। শেঠের অর্ধেক সম্পত্তিই সেই আগুনে ছাই হয়ে গেল। পরের দিন রাতে আরের গুদাম ঘরে আগুন। এভাবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেই শেঠের সম্পত্তি দশ ভাগের এক ভাগের ও কম থেকে গেল। তখন শেঠের মনে পড়ল তপানন্দর কথা। শেঠ তপানন্দকে খুব খোঁজে বেড়ালেন। কিন্তু উনাকে কোথাও পাওয়া গেল না। শেষে নিজের বাকি সম্পত্তিকে বাঁচাতে সেই শেঠ এক উপায় করলেন। তিনি তার বাকি সব সম্পত্তি বেঁচে দিলেন। আর যা পেলেন তার কিছু অংশ নিজের কাছে রাখলেন আর বাকি টাকা নিয়ে তিনি হরিদাসের কাছে গিয়ে উঠলেন। তিনি হরিদাসকে সেই টাকা দিয়ে সব কথা খুলে বললেন। আরো বললেন, হরিদাস যেন এই টাকাতে ব্যবসা করে অনেক উন্নতি করে। তিনি তাকে অনুরোধ করলেন সে যেন লালচানের দুর্দিনে তাকে একটু সাহায্য করে।
সে দিন রাতেই সে শেঠ মারা গেলেন। তবে তিনি মরার আগে লালচানকে বললেন, “হে পুত্র, আমার সময় শেষ। আর আমার চলে যাবার সাথে সাথেই তুমি এক কঠিন সময়ে পড়বে। তোমার না থাকবে মান, না থাকবে ধন। খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে তুমি চলবে। তবে তুমি সততা আর পরিশ্রমকে ছাড়বে না। আমি তোমার জন্য একটি চিঠি লিখে রেখেছি। এই নাও সেই চিঠি। এটি এখনই খুলবে না। ঐ কাঠের ছোট বাক্সটাতে রেখে দাও। আজ থেকে ঠিক ২৪বছর পরে যদি কোন এক সাধু এক লাঠি নিয়ে এসে আমাকে বা তোমাকে খোঁজ করে তখনই তার সামনে এই চিঠি খোলো। নচেৎ নয়। তখন সেই সাধু যা যা বলবে সেই মত কাজ করবে। তাহলে তোমার দুঃখ কিছু লাঘব হবে। আর যদি সেই সাধু না আসে তবে জানবে যে এভাবেই তোমার সারা জীবন চলবে।” এই বলে শেঠ চোখ বুঝলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলতে লাগল আর লালচান পড়ল অথৈ সাগরে। দেখতে দেখতে তার অহংকার দরিদ্রতায় বদলে গেল।
আজ লালচানের না রইল খাবার সংস্থান, না রইল পড়ার সংস্থান। সে দিনমজুরি করতে লাগল। কিন্তু কোন কাজই তো সে আগে শিখেনি, কোন কাজই তো সে জানে না, আবার বেশী পরিশ্রম ও করতে পারে না। তাই মানুষ তাকে দিয়ে কাজ ও করাতো না। তবু দয়া করে যারাই তাকে দিয়ে কিছু কিছু কাজ করাত, তারাও বলে-কয়ে কম পয়সা দিত। এ ভাবেই লালচানের দিন-আনে-দিন-খায় অবস্থা। তবে সে তার বাবার শেষ কথামত স্বভিমান ছাড়েনি, সততা ছাড়েনি, পরিশ্রমকেও ভয় পায়নি। সে বিনা কাজ করে কারো থেকে টাকা পয়সা নিত না।
ওদিকে হরিদাসের ব্যবসা দিনে দিনে আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেল। বস্তায় বস্তায় তার কাছে টাকা আসতে লাগল। সে লালচানের বাবার অনুরোধকে ভুলল না। বহুবার সে লালচানকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু লালচান বিনা মজুরিতে সাহায্য নেয়নি। ফলে কম বেশী সে হরিদাসের বাড়ীতেই চাকরের কাজ করত আর তাইই দিয়ে তার সংসার চলত। প্রায়ই সে রাতের বেলায় বাবার সেই চিঠির কথা ভাবত, সেই সাধুর কথা ভাবত। কিন্তু বাবার আদেশকে সে অমান্য করেনি। এমনি করে একে একে দুঃখের মধ্য দিয়ে ২৪টা বছর কেটে গেল।
শেষে একদিন সত্যিই এক সাধু লাঠি নিয়ে এসে হাজির হল। তার চেহারায় যেন এক দিব্য আভামন্ডল ছড়িয়ে আছে। তিনি লালচানের সেই ভাঙ্গা কুটিরে এসে লালচানের খোঁজ করলেন, তার বাবার খোঁজ করলেন। ২৪টা বছর পরেও লালচান, ছেলেবেলার সেই সাধুটিকে চিনিতে ভুল করল না। বাবা এই সাধুর কথাই বলেছিলেন। সে দৌড়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে সাধুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল। লালচানকে এই অবস্থায় দেখে তপানন্দের ভারী দুঃখ হল, দয়াও হল। তিনি মনে মনে তাকে অনেক আশীর্বাদ দিলেন, তার মঙ্গল কামনা করলেন।
লালচান তার সাধ্যমত সাধুকে আদর আপ্যায়ন করল। সে তার জীবনের সব ঘটনা সাধুর কাছে খুলে বলল। সে তার বাবার শেষ সময়ের সেই চিঠির কথাও বলল। সে সাধুকে সেই চিঠি এনে দিল। তাতে লালচানের দুঃখের কারণ বিস্তারিত ভাবে লেখা ছিল। লালচানের জন্য কিছু টাকা তিনি যে হরিদাসের কাছে জমা রেখে গেছেন, এই কথা ও লেখা ছিল। এবার লালচান বুঝতে পারল কেন হরিদাস সব সময় তাকে এত কাছে ডাকে? কেন তাকে এত সাহায্য করেতে চায়? সব কিছু তার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল।
সে সাধুকে জিজ্ঞাস করল এখন তার কি করনীয়। তপানন্দ বলল, “ হে বৎস, তুমি হরিদাসের কাছে টাকা চাইতে যেও না। টাকা আজ আছে তো কাল নেই। এটা তোমার চেয়ে ভাল কে বুঝতে পেরেছে! বরং তুমি হরিদাসের কাছ থেকে তোমার অর্ধেক ভাগ্যকে ফিরিয়ে নিয়ে আস। তাহলেই তোমার টাকা তোমার পিছু পিছু আসবে।”
-কিভাবে গুরুদেব?
- যে লাঠি দিয়ে তুমি হরিদাসকে আঘাত করেছিলে, সেই লাঠি দিয়েই হরিদাসকে তোমার মঙ্গল কামনা করে তোমাকে সজোরে সেই আঘাত ফিরিয়ে দিতে বল। এতে হরিদাসের কিছুই ক্ষতি হবে না তবে তোমার অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে। যাও পুত্র এখুনি তুমি হরিদাসের কাছে যাও। আমি এখানেই তোমার অপেক্ষা করব।
লালচান তার বাবার সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, সাধুর কথা মতই কাজ করল। সে হরিদাসের কাছে গিয়ে সব খুলে বলল, বাবার চিঠিটি দেখাল। সে সজল নয়নে, করজোড়ে সেই লাঠির আঘাত বন্ধুর কাছে ভিক্ষা চাইল। হরিদাস তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। তক্ষুনি দুই বন্ধু লালচানের বাড়িতে চলে এলো। সাধুর কথা মত হরিদাস সজোরে সেই লাঠি দিয়ে লালচানের পিঠে আঘাত করল। এক আঘাতেই লালচান যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ধুলায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু মনে বড় শান্তি পেল সে। মনে তার বড় আনন্দ ও ছিল। হরিদাস দৌড়ে গিয়ে ধূলার মাঝে পড়ে থাকা বন্ধুকে জড়িয়ে ধরল।
তপানন্দ লালচানকে বললেন, “হে পুত্র, আজ তোমার এক নতুন জন্ম হল। আবার তুমি তোমার জীবন নতুন করে শুরু কর। তুমি আবার তোমার ব্যবসা শুরু কর। আর এই নাও আমার আশীর্বাদ স্বরূপ কিছু পলাশ ফুল। এ দিয়েই তুমি তোমার নতুন ব্যবসা শুরু কর। কাল সরস্বতীর পূজা। বাজারে এই পলাশ ফুল গুলি বিক্রি করে তুমি ভাল পয়সা পাবে। সে পয়সাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে তুমি এগিয়ে যাও, এই আশীর্বাদ করছি। তবে এই পলাশ ফুল তোমারি পলাশ ফুল। ২৪ বছর আগে আমি তোমাদের বাড়ী থেকে চলে যাবার সময় একটি পলাশ ফুলের চাড়া সাথে নিয়ে গিয়ে ছিলাম। আমি জানতাম আমি ২৪ বছর পর আবার এখানে আসবো আর তোমাকে এই হীন-দীন অবস্থায় দেখব। সে দিনের সেই গাছ আজ তোমাকে আবার নতুন পথ দেখাল।”
চোর, পুলিশ আর বাড়ী মালিক সবাই সাধু বাবার কাছে মনের মনের কথা বলল।
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages
16
17
18
19
20
(21)
22
23