Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

হিসাবধন

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Pages   ◍    16    17    18    19    20    21    (22)     23   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

সেই যুগে এক গ্রামে গুরুধন নামে এক দোকানদার ছিল। তার দোকান ভালই চলত। তবে এক সমস্যা ও ছিল। গ্রামের অনেক লোক তার দোকান থেকে অনেক জিনিস-পত্তর ওধার নিয়ে যেত। তারা আর কখনোই সেই টাকা ফিরিয়ে দিত না। আর এক সময় গুরুধন ও তা ভুলে যেত। ফলে তার কিছু ক্ষতিও হত।

তার বউ তাকে সদাই বলত পাওনার হিসাব একটি কাগজে লিখে রাখতে। এতে ভুলে যাবার সম্ভাবনা কম। ফলে ক্ষতি অনেকটাই আটকানো যাবে। কিন্তু গুরুধন খুব আলসে ছিল। সে আলস্যের কারণে কোন কিছুই লিখত না। সে সব কিছু মনে রাখার চেষ্টা করত, কিন্তু পারত না। সে মনে মনে ভাবল আমি যদি আমার স্মৃতি শক্তিকে বাড়াতে পারি, তবে সব কিছুই আমি মনে রাখতে পারব। তখন লেখা-লেখির ঝামেলা ও আর থাকবে না।

এই ভেবে সে একদিন তার গুরুদেবের কাছে গেল। গুরুদেব ছিলেন সিদ্ধপুরুষ। গুরুদেব তাকে বললেন “হে পুত্র, ভুলে যাওয়া হল একটা আশীর্বাদ। ভগবানের দেওয়া মানুষের পরম বন্ধু। তুমি এমন কিছু বর চেয়োনা, যার কারণে সব কিছু তোমার মনে থাকে। এতে কখনোই তোমার অমঙ্গল বই মঙ্গল হবে না।”

কিন্তু গুরুধন গুরুদেবের কোন কথাই শুনল না। শেষে গুরুদেব তাকে এক মন্ত্র দিলেন। এই মন্ত্রের গুনে গুরুধনের মন থেকে কোন কিছুই কখনো মুছে যাবে না। ছেলেবেলা থেকে জীবনের সব কিছু তার মনে পড়ে যাবে আর এই স্মৃতি কখনোই বিনষ্ট হবে না। গুরুদেব তাকে কঠোর সতর্কতা বানী শোনালেন, যদি কোনদিন সে এই গোপন মন্ত্রের কথা কাউকে বলে তখনিই তার মৃত্যু হবে। গুরুবাক্য অন্যথা হবার নয়। এই কঠোর বার্তা শুনিয়ে গুরুদেব সেখান থেকে বিদায় নিলেন।

আজ গুরুধন খুব খুশি। এবার আর কোন কথাই তার মন থেকে মুছে যাবে না। খদ্দেরদের সব চালাকির এবার সে যোগ্য জবাব দিতে পারবে। গুরুদেবের কাছে থেকে সে খুশি মনে বাড়ী ফিরছিল। পথে তার পরম মিত্র ‘ অতুল কবি ’ এর সাথে তার দেখা। অতুল কবি’র গান আর কবিতা গুরুধনের খুব ভাল লাগত। কিন্তু আজ অতুল কবিকে দেখতেই গুরুধনের মনে পড়ে গেল যে এই কবি বহুবার তার দোকান থেকে খাতা কলম নিয়ে গেছে কিন্তু আজো এক পয়সা দেয়নি। আর সেই সবের হিসাব করলে হয় দেড় হাজার দেড় টাকা। তার উপর ছোট বেলায় এই অতুল কবি গুরুধনের বাড়ী থেকে যত লাউ-লেবু বিনা পয়সায় নিয়ে গেছে তা যোগ করলে মোট পাঁচ হাজার পাঁচ টাকা। এত টাকা কি ছেড়ে দেওয়া যায়? তাই কাছে আসতেই সে অতুল কবির কাছে পাঁচ হাজার টাকার দাবী করে বসল। এত টাকার কথা শুনে তো অতুল কবি আকাশ থেকে পড়ল আর ভাবল গুরুধন নিশ্চয়ই তাকে ঠকানোর চেষ্টা করছে, ধাপ্পাবাজি করে টাকা হাতানোর মতলবে আছে। অতুল কবি গুরুধনের প্রচণ্ড বিরোধিতা করল। দুইজনেতে খুব বাক-বিতণ্ডার পর খুব মারামারিও হল। শেষে গ্রামবাসীরা দুজনকে আলাদা করল।

গুরুধনের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। মাথার চুল কিছু ছিঁড়ে অতুল কবির হাতের মুঠায় আছে। গায়ের জামা ছিঁড়ে অসংখ্য জানালা হয়ে আছে। গ্রাম বাসীরা তাকে এক মরা গাছের গুড়িতে বসিয়ে, অতুল কবির সাথে ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকতে আবেদন, নিবেদন, অনুরোধ, আদেশ দিতে লাগল। আর গুরুধন হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা তুলে এক একজন গ্রামবাসীকে দেখে মনে মনে তার হিসাব করে। এই হিসাব থেকে পনের, কুড়ি বছর আগের একটা সুই পর্যন্ত বাদ যায় না।

ফলে যারা গুরুধন আর অতুল কবিকে আলাদা করতে এল, গুরুধনকে শান্ত করার চেষ্টা করল, এবার গুরুধন তাদের সবাইকে সবার হিসাব বলে দিতে লাগল। তোমার ৫০০ টাকা বাকী, তোমার এক হাজার টাকা বাকী। পনের বছর আগের একটি সুপারির দামের কথা কি কারো মনে থাকার কথা? যা হবার তাই হল। আগে অতুল কবি উত্তেজিত হয়েছিল। এবার গ্রামবাসীরা। সবাই ভাবল, অতুল কবিই ঠিক বলছে। গুরুধন টাকা হাতানোর নতুন ফন্দি এঁটেছে। এই ফন্দি মরণ ফাঁদ হওয়ার আগে এখানেই শেষ হওয়া দরকার। ফলে অতুল কবির বাকী কাজটা গ্রামবাসীরাই করেদিল। মেপে মেপে সবাই এক সাথে, যার যার হিসাব দিল বরং হিসাবের বেশীই দিয়ে দিল। নিজের জামা, ধুতি, চাঁদর, ছাতা, গামছা, জুতা আর মুখের কয়েকটা দাঁতের কোন আর হিসাব পেল না গুরুধন। অনেক হাতে পায়ে ধরে সে গ্রামবাসীদের থেকে মুক্তি পেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘরে গিয়ে পৌঁছল।

বৌয়ের কোন কথার আর জবাব দিল না সে। চুপ চাপ খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল আর মনে মনে গুরুদেবকে ডাকতে লাগল। গুরুদেব এই বিপদ থেকে আমাকে বাঁচাও, রক্ষা কর গুরুদেব, রক্ষা কর। একসময় গুরুধন ঘুমিয়ে পড়ল। স্বপ্নে গুরুদেব দেখা দিলেন। তিনি বললেন, “পুত্র, এই কারণেই আমি বার বার তোমাকে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, ভুলে যাওয়াটা ভগবানের দেওয়া একটা আশীর্বাদ। তুমি আমার কোন কথাই শুননে না। এক বিশাল শক্তি হাতে নিয়ে বসলে। হে পুত্র, শক্তি আর ক্ষমতার সাথে সাথে দায়িত্ব ও চলে আসে। তুমি শুধু তোমার স্বার্থে এই বিশাল শক্তিকে ব্যবহার করেছ। ফলে বিনাশ তো অবশ্যম্ভাবী।”

কাতর সুরে গুরুধন বলল, “আমাকে পথ দেখান গুরুদেব, আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন।”

গুরুদেব- একটাই পথ পুত্র, তুমি সততা আর নিষ্ঠার সাথে তোমার এই ক্ষমতাকে সমাজের উন্নতির কালে লাগাও, মানুষের সেবার কাজে লাগাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এক নতুন দিশা পেল গুরধন। সে পরম সততা আর নিষ্ঠার সাথে তার গুরুর কথা মতই কাজ করতে লাগল। দেখতে দেখতে তার খুব প্রভাব বাড়তে লাগল। দশ গ্রামের ধনী, গরিব সবাই যে কোন সামাজিক কাজের অথবা যে কোন অনুষ্ঠানের হিসাব-নিকাশের দায়িত্ব গুরুধনকেই দেয়। হিসাবে এক পয়সার ও এদিক সেদিক হয় না। গ্রামবাসীরা তাই তাকে আদর করে গুরুধনের বদলে ডাকে হিসাবধন।



## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Pages     16    17    18    19    20    21    (22)     23