Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অপুর কথা

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Stories   ◍    21    22    23    24    (25)     26    27    28    29   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



অপুর কথা ( ২ য় পর্ব )

আজ অপু উকালতি পাশ করেছে। বাবা মায়ের অতি আদরের অপু, তার বাবা মাকে ভীষণ ভালবাসে। তবে ধনীর এই মেয়েটি অতি সাধারণ, শান্ত, স্নিগ্ধ, সুশীল।

অনেক দিন পর আবার বাবা, মা ‘র সাথে মোটরে করে বেড়াতে বের হল অপু। শহরের রাস্তা ছেড়ে মাটির পথ ধরে শোঁ শোঁ করে সাদা মোটর ধুলা উড়িয়ে ছুটল। সেই ঈশানপুরের দিকে।

ওখানে উপেন রায়ের অনেক জমি-জামা আছে, আছে বেশ বড় বাড়ি। আজ থেকে সতের আঠার বছর আগে তেমনি একবার বিমলাকে সাথে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন ঈশানপুরের বাড়ীতে। ফিরে যাবার সময় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন ছোট্ট অপুকে এখানে। আধা ডাঙ্গায়-আধা জলে প্রায় মৃত পড়েছিল অপু। নাড়ী ধরে দেখলেন চলছে না। ডাকা ডাকি করেন কিছুক্ষণ। কিন্তু কোথাও মানুষ জন দেখতে পেলেন না। হঠাৎ মনে হল এখনো কোথাও কোথাও কুসংস্কার আছে মৃতকে নদীর পাশে ফেলে রাখা হয় শিয়াল, কুকুরের জন্য।

উপেন রায় আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করলেন না। কোন আশা নেই মেয়েটির বেঁচে থাকার তবু এত সুন্দর, এত ফুটফুটে মেয়েটি যদি বেঁচে যায় তবে তো আমার মেয়ে হয়েই বাঁচবে। যা হবার পরে হবে, দেখা যাবে তখন। ঝড়ের বেগে গাড়ী চালিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন সে দিন। তেমনি দুই তিন ডাক্তার এসে হাজির হল, ঔষধ পত্র ও এসে গেল। অপু ফিরে পেয়েছিল নতুন জীবন আর উপেন-বিমলার ঘর আলো করেছিল ছোট্ট অপু।

ওদিকে দুদিন পর ব্রজহরির মনে হল অপুর কথা। খোঁজ শুরু হল অপুর। তখন আর কোঁথাও অপুকে পাওয়া গেল না। নদীর ধারে পাওয়া গেল তার কলসি। সবাই ভাবল অপু নদীর জলে ভেসে গেছে।

ব্রজহরি সে দিন থেকেই অপু অপু করে পাগল হল। ব্রজবাসী আজ তার চোখের বিষ। সারাদিন নেশার সাগরে ডুবে থাকে ব্রজহরি আর হঠাৎ হঠাৎ অপু, অপু বলে চীৎকার করে কাঁদে। কোন কাজের আজ তার হুঁশ নেই।

তবে সংসার চলবে কি ভাবে। ব্রজবাসী ঝি এর কাজ করে। গ্রামে আর ক ‘জন ঝি দিয়ে কাজ করায়। তাই কখনো শুকনো লাকড়ি নিয়ে বাজারে বেচতে যায় আবার কখনো পূজা পার্বণের আগে ফুলের মালা বেচে বাজারে। খেতে না পেয়ে পেয়ে চোখের আলো কমে গেছে, শ্বাসরোগ এসে ঘরে করেছে বুকে। আজ সে তেমন কিছুই ভাল চোখে দেখে না, দু কদম চলতে ও পারে না। দিন রাত তার চোখেও জল থাকে। তার মন ও আজ অপুর জন্য হাহাকার করে। মনে মনে শতবার সে ক্ষমা চায় ভগবানের কাছে, অপুর কাছে।

সে জানে সে আর বেশী দিন হয়তো বাঁচবে না। অপুর মত সেও হয়তো অকালেই মারা যাবে। তা হোক কিন্তু তার পেটের মেয়েটি যেন বেঁচে থাকে। মিলি যেন বেঁচে থাকে। সেও বড় কষ্ট করে বড় হচ্ছে। বাবা-মা ‘র সাজা সে ও পাচ্ছে। কখনো খেতে পায়, কখনো পায় না। তবু মুখ ফুটে কিছুই বলে না।

আজ সংসারের ভার তার উপর, সে মার মতই লোকের বাড়িতে ঝি খাটে, বাজারে ফুল বিক্রি করে, শুকনো লাকড়ি বিক্রি করে তবেই ঘরে চাল, ডাল আসে। জীবন তো চলছে তবে তা মরার মত।

আজ আবার সেই ঈশানপুর সেই মাটির পথে, সেই গোমতী নদীর পাশ দিয়ে চলছে উপেনবাবুর গাড়ী। সেদিন অপু ছিল মাটিতে আজ গাড়ীতে।

সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। ছোট্ট বাজার, হাল্কা হাল্কা বাড়ি-ঘর। গোমতীর পাশ দিয়ে যখন গাড়ীটি ছুটছে, সাঁঝের আলোতে নদীটিকে দেখে অপুর মনে এক অচেনা শিহরন জাগল, এক অচেনা খুশীতে অপুর মনটা হঠাৎ ভরে গেল। না জানি কেন তার দু চোখ বেয়ে কয়েক ফুটা জল গড়িয়ে পড়ল। উপেন আর বিমলা ও উদাস চোখে সেই গোমতীর দিকে তাকিয়ে রইল। এখানেই তারা কুড়িয়ে পেয়েছিল তাদের প্রাণের ধন।

ভোর হল, আজ যেন সূর্যটা এক নতুন ছন্দ নিয়ে এল জীবনের। সকালবেলা নন্দু আর রামুকে সাথে নিয়ে ঈশানপুরটা একটু ঘুরে দেখতে বের হল অপু। নন্দু আর রামু রায়-বাড়িতেই কাজ করে। পায়ে হেটে, মাটির পথটা তার বেশ লাগছিল। ভোরের নতুন সূর্য, তাজা হাওয়া আর ঐ দূর দূর পর্যন্ত সবুজ ধানের খেত। হাটতে হাটতে তারা চলে এল গোমতীর পারে। গোমতীকে দেখেই আবার যেন তার মনটা খালি হয়ে গেল। সে একটু ভাবুক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল গোমতীর দিকে। আবার নীরবে হাটতে শুরু করল। চলতে চলতে এক জায়গায় এসে হঠাৎ সে আবার থমকে দাঁড়াল। মনে হল যেন খুব চেনা, খুবই চেনা এই জায়গাটা, যেন কত বার সে এখানে এসেছে। কিন্তু তবু যেন অচেনা।

অপু বেশ অবাক হল। এদিক ও দিক তাকিয়ে পিছন ফিরে নন্দুকে বলল “ নন্দু!

এদিক দিয়ে কি নদীটার কাছে যেতে পারব ?”

নন্দু দৌড়ে কাছে এসে জবাব দিল “ হ্যাঁ, দিদিমণি। চলুন।”

অপু এবার আবার তার মা ‘র পাশে। তবে চিনতে কেন সময় লাগছে ? নদীটা যেন কথা বলতে চাইছে অপুর সাথে। অপু যেন বুঝতে পারছে না। অপু নদীটার আরো কাছে গেল, হাত রাখল নদীর ফটফটে জলে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাত নাড়ল নদীর জলে। হঠাৎ তার বুকটা ধক-ধক করে কেঁপে উঠল। সে বিদ্যুতের মত পিছন ফিরে তাকাল উল্টো দিকের মাটির পথটির দিকে। একটা চীৎকার যেন বেড়িয়ে এল বুকের ভীতর থেকে। মাঃ-। চোখ দিয়ে তার ঝড়ের বেগে নেমে এল ধারা। আর কিছুই বাকী রইল না।

সে যেন পাগলের মত দুই হাতে নদীর জলটা জড়িয়ে ধরতে চাইল। মা ‘কে জড়িয়ে ধরতে চাইল। পরল না। আবার চেষ্টা করল, পারল না। সে যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে মা ‘র কোলে। আর মা ও যেন তার মতই আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল। বড় বড় ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিতে লাগল অপুকে। অপু দু পা নেমে গেল জলে। আনন্দ, খুশী, দুঃখ নিয়ে সে অনেকক্ষণ মা ‘কে জড়িয়ে ধরে রইল, মার পানে চেয়ে রীল। সে তেমনি দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। শেষে নদীর জলটা কপালে ঠেকাল, মাথায় রাখল।

মা ‘কে ফিরে পাওয়ার আনন্দ শুধু সেইই বুঝল। মার পাশে অনেকক্ষণ বসে থেকে অপু উঠে এল। ধীর পায়ে এগিয়ে চলল সেই উল্টা দিকের মাটির পথে। নন্দু আর রামু কিছুই বুঝতে পারল না শুধু তেমনি দিদিমণির পিছন পিছন চলতে লাগল।

অপুর চোখের সামনে ভেসে উঠল একে একে সেই পুরানো দিনের স্মৃতি। ছোট্ট অপু, সেই হারিয়ে যাওয়া অপু আবার ধীর পায়ে ফিরে চলল নদীর তীর থেকে তার বাড়ীতে। অপু ধীর পায়ে এগোতে লাগল। পায়ে পায়ে সে সোজা নিজের বাড়ির সামনে। একে একে সব অংক তেমনি মিলে গেল। চোখ দুটা ছলছল করে উঠল। একটা চাপা কান্না বেড়িয়ে এল ভীতর থেকে।

অপু আর এগিয়ে গেল না। ফিরে এল। নন্দুকে বলল “এখানে কোথাও চা পাওয়া যাবে। একটু বসে চা খাব।” ঘুরতে ঘুরতে যখন তারা বাজারে চা খেতে এল তখন সূর্য বেশ একটু তাজা হয়েছে। হাল্কা খিদে ও পেয়েছে। এক মিষ্টি দোকানের সামনে যেতেই কয়েকজন দৌড়ে এসে বসার জায়গা করে দিল। দিদিমণিকে কেউ চিনে না তবে নন্দু আর রামুকে তো সবাই চিনে। তাই আর দিদিমণিকে চিনতে কারো বাকী রইল না।

চা আর একটু হাল্কা মিষ্টি খেয়ে ওরা দোকান থেকে বের হতেই একটা মেয়ে হুমড়ি খেয়ে সামনে এসে পড়ল। বয়স সতের আঠার, মলিন জামা গায়, রুক্ষ চুল। তবে চেহারা সুন্দর কিন্তু মুখে দরিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।

দিদিমণি, দিদিমণি বলে সে এক গাল হেসে কতকগুলি ফুলমালা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। কিন্তু চোখ দুটি যেন করুন কান্নায় অনেক কিছুই বলে দিচ্ছিল।

অপু নিজেকে সমলে নিয়ে বলল “কিছু কি চাই তোমার ?”

ভীতু সুরে মেয়েটি বলল “ ফুল লাগবে দিদিমণি ?” এই বলে সে তার দুই হাত বাড়িয়ে দিল অপুর দিকে। অপু ফুলগুলির দিকে একবার তাকিয়ে মেয়েটার চোখের দিকে তাকাল। এই চোখগুলি ও যেন সেই নদীটারই মত কিছু বলতে চাইছে তাকে। অপু একটু তীক্ষ্ণ নজরে মেয়েটার দিকে তাকাল, যেন কিছু খোঁজতে চাইছে তার চোখে।

অপু আরো একটু কাছে এলো মেয়েটার। চোখ ঘুরিয়ে আবার সেই ফুলগুলির দিকে তাকাতেই মেয়েটির হাতের সেই বড় লাল তিলটি যেন দিনের সূর্যের মত আলোকিত হয়ে উঠল। অপু থপ করে সেই হাতটা চেপে ধরল। “এটা কিসের দাগ ?”

মেয়েটা থতমত খেয়ে গেল। একটু লাজু স্বরে বলল “ দিদিমণি এটা জন্ম থেকেই আমার হাতে।”

অপু সাধারণ হওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, তেমনি পাথরের মত বলল “ তোমার বাবার নাম? ”

মেয়েটা আরো অবাক হয়ে গেল, বলল “ আমার বাবার নাম ব্রজহরি।”

হঠাৎ বাবার নামটা মেয়েটার মুখে শুনে, অপুর পা দুটি যেন অবশ হয়ে এল। অপু আরো শক্ত করে চেপে ধরল মেয়েটার হাত। যেন সে সাত রাজার ধন খোঁজে পেয়েছে আর তা যেন হাত থেকে ছুটে না যায়। সে তেমনি অপলকে তাকিয়ে রইল সেই মেয়েটির দিকে। আজ তার খুশীর ঠিকানা নাই। এই তার সেইই ছোট বোন। অপু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। বুকের কান্না, হাহাকার চেপে রেখে অনেক কষ্টে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল “ কি নাম তোমার ?”

- মেয়েটি তেমনি অবাক সুরে বলল “মিলি।”

অপু মুখের কাঁপা হাসিতে বলল “বাঃ খুব সুন্দর নাম। আমার নাম অপরাজিতা। তোমার ফুলগুলির দাম কত?”

মিলি হাসির সুরে বলল “এটা এক টাকা, এটা দুইটা …।”

অপুঃ আরে না না। সব গুলির দাম কত ?

মিলি যেন প্রথমে বিশ্বাস করতে পারল না নিজেকে। তেমনি অবাক সুরে বলল “মানে ?”

অপুঃ মানে ! আমি তোমার সবগুলি ফুল কিনতে চাই ? তার দাম কত ?

মিলি যেন আকাশ থেকে পড়ল। এই প্রথম তার সব ফুল বিক্রি হবে। তার মুখ দিয়ে সত্য কথাই বেড়িয়ে গেল। সে বলল “দিদিমণি আজ পর্যন্ত আমার সব ফুল কোন দিন বিক্রি হয়নি। তাই আমি নিজেও জানি না এর দাম কত ? আপনি যা দিবেন আমি তাইই নেব।”

অপুঃ তবে আমার দুটি শর্ত আছে।

মিলি অবাক চোখে বলল “মানে ?”

অপুঃ আমার সাথে বসে ঐ দোকানে চা-সিঙেরা খেতে হবে। কাল আমাদের বাড়ীতে পূজার ফুল দিতে হবে। যদি তুমি রাজি থাক তবে আমি সব ফুল কিনি !

মিলি যেন ভেবে পাচ্ছিলনা কি হচ্ছে। সে তেমনি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নন্দু আর রামুও অবাক হয়ে একে অপরকে দেখছিল।

অপুর টানে মিলির চমক ভাঙ্গল। সে দিদিমণির সাথে গিয়ে চেয়ারে বসল। এসে গেল গরম চা, গরম সিঙেরা। জীবনের এই প্রথম তার সকাল বেলায় চা-নাস্তা। মিলি ছলছল চোখে দিদিমণির দিকে চেয়ে রইল। কিন্তু দিদিমণির চোখ কেন ছলছল করছিল, কোন খুশীতে ছলছল করছিল, তা সে বুঝতে পারেনি।

চা-নাস্তা শেষ হলে অপু ব্যাগ খুলে একটা ৫০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিল মিলির দিকে। “এই তোমার ফুলের দাম। হবে তো ? নন্দু, ফুল গুলি নিয়ে নাও তো।”

মিলি ভেবেই পাচ্ছিল না এ কি হচ্ছে। সে হতবাক হয়ে বলল “কিন্তু দিদিমণি ?”

অপু জানে ফুলগুলির দাম এত নয়, তবু মিলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল “কাল আমাদের বাড়িতে ফুল দিতে পারবে তো ? ঐ রায়-বাড়ি চিন ?”

মিলি খুশীতে খুশীতে বলল “হ্যাঁ, দিদিমণি চিনি।”

অপুঃ ঠিক আছে। কাল ফুল নিয়ে আসবে কিন্তু। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।

অপু বাড়ির পথে পা বাড়াল। পিছন পিছন নন্দু আর রামু। মিলি তেমনি দাঁড়িয়ে রইল। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না সব কিছু।

ফিরার পথে মিলির ফুল-মালা হাতে নিয়ে অপু কত যে আদর করল তাতে। কত বার বুকে জড়াল, গালে জড়াল। দুপুরের ঠিক আগে তারা ঘরে ঢুকল।


পরবর্তী পর্ব
আগের পর্ব - ১ম পর্ব

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Stories     21    22    23    24    (25)     26    27    28    29