This article is regarding the History of Tripura.
Last updated on: 23rd November 2018.
◕ ত্রিপুরার ইতিহাসের এক গুপ্তচর, মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্যকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও তার পরিনাম
ত্রিপুরার ইতিহাস
( পর্ব ৮)
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
ত্রিপুরার মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যের বজ্রাঘাতে মৃত্যু হলে মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্য ১৮৫০ খ্রীঃ ১ লা ফেব্রুয়ারি সিংহাসন আরোহণ করেন। এক কথায় মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য ত্রিপুরাকে ঋণের সাগরে ডুবিয়ে গিয়েছিলেন।
ঈশানচন্দ্র মাণিক্য যখন রাজা হন তখন ত্রিপুরা কমপক্ষে ১১ লক্ষ্য টাকার ঋণের সাগরে ডুবে ছিল। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, এই ঋণ আর কোন ভাবেই পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে,
রাজপরিবারের ভরণ-পোষণই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াল। পরিস্থিতি দিন-কি-দিন এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, ইংরেজ গভর্মেণ্টের রাজস্ব আর ঋণ শোধ করতে ত্রিপুরাকেই বিক্রি করে দেবার অবস্থা দাঁড়াল।
এমনি ভীষণ পরিস্থিতিতে মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্য অতি স্থির, ধীরতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। তিনি নিষ্ঠাবান রাজগুরু, বিপিনবিহারীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করলেন। রাজগুরু বিপিনবিহারীর বিদ্যা-শিক্ষা খুব বেশী
ছিল না, কিন্তু তিনি ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। তিনি সুকৌশলে রাজকোষের ধন-সঞ্চয়ের পথ পরিষ্কার করলেন। ফলে রাজ্যের আয় হু-হু করে বাড়তে লাগল। পরিণামে কিছুদিনের মধ্যেই মহারাজ ও রাজগুরুর একান্ত প্রচেষ্টায়
ত্রিপুরা রাজ্য বিক্রির হাত থেকে বেঁচে গেল। ধীরে ধীরে সমস্ত ঋণও পরিশোধ হল। এই ঘটনাটি অনেকেই ভাল চোখে দেখল না। রাজগুরুর আর মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটিও অনেকের চোখে শূল হয়ে দাঁড়াল।
সেই আগুনে ঘি ঢালা হল, যখন রাজগুরুর পরামর্শক্রমে মহারাজ ঈশানচন্দ্র নিজের দুই ছেলে, রাজকুমার বজেন্দ্রকে যুবরাজ আর রাজকুমার নবদ্বীপচন্দ্রকে বড় ঠাকুর পদে নিযুক্ত করেন। এই রাজকুমার নবদ্বীপচন্দ্রের
একান্ত অনুগামী ছিলেন ত্রিপুরার বিখ্যাত ঐতিহাসিক কৈলাশচন্দ্র সিংহ। এই নবদ্বীপচন্দ্র আরো একটি কারণে চিরকাল ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কারণ উনার ঘরেই জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের হিন্দি সিনেমার মহান সুরকার,
শচীন দেববর্মণ।
মহারাজ ঈশানচন্দ্রের এই পদক্ষেপ মহারাজের ভাইয়েরা মেনে নিতে পারেন নি। ওনারা খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তারা রাজা, যুবরাজ, বড় ঠাকুর সহ রাজগুরু প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলেন।
প্রসঙ্গত, মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যের ৯ টি পুত্র ও ১৫টি কন্যা ছিল। এই ৯ পুত্রের একজন হলেন ঈশানচন্দ্র মাণিক্য। ওনার বাকী ভাইদের নাম হল:
উপেন্দ্রচন্দ্র, বীরচন্দ্র, নীলকৃষ্ণ, চক্রধ্বজ, মাধবচন্দ্র প্রমুখ। তাদের স্বল্প পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয়:
উপেন্দ্রচন্দ্রঃ তিনি মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য দ্বারা বড় ঠাকুর পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন খুব অত্যাচারী ও আয়েসি। সারাদিন তিনি মদের সাগরে ডুবে থাকতেন। ঈশানচন্দ্র মহারাজ হবার পরে এক বছরের মধ্যেই তিনি
অপরিমিত মদ খাওয়ার কারণে অকালে মারা যান।
বীরচন্দ্রঃ ইনি পরিবর্তী কালে ত্রিপুরার মহারাজা, মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য। উনার আমলেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক গড়ে উঠে কর্নেল মহিম ঠাকুরের নেতৃত্বে।
এই কর্নেল মহিম ঠাকুরের নামেই আগরতলার কর্নেল চৌমুহনীর নাম রাখা হয়।
মহারাজের ভাইদের উত্তেজনা, ক্ষোভ আর ষড়যন্ত্রের ঠাহর পেয়ে রাজগুরু, ঈশানচন্দ্র মাণিক্যকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন, তিনি যেন কখনোই নীলকৃষ্ণ আর বীরচন্দ্রকে কোনও সরকারী পদে না রাখেন এবং তাদের থেকে যেন
সাবধানে থাকেন।
এমনি যখন পরিস্থিতি, ঠিক সেই সময় একদিন এক গুপ্তচর মহারাজকে সংবাদ দিল যে, রাজপরিবারের কিছু লোক সেনাপতি সর্দার খাঁ ও ছোবন খাঁ'কে প্রচুর অর্থের লোভে ফেলে কিনে নিয়েছে এবং তাদের সাথে মিলে
মহারাজকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। এমন খবর শুনেও শৈশব থেকেই শান্ত প্রকৃতির এবং ধর্মপ্রাণ ঈশানচন্দ্র বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। তিনি এ ব্যাপারে সবার উপর নজর রাখতে গুপ্তচরটিকে আদেশ দিলেন। আরও বললেন নিয়মিত যেন উনার
কাছে সকল খবর পৌঁছানো হয়। গুপ্তচর তার কাজে লেগে গেল। সে অতি নিপুণতার সাথে ভিন্ন-ভিন্ন বেশ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছা-কাছি যেতে লাগল।
এক গভীর রাত্রে এক জনশূন্য স্থানে ষড়যন্ত্রকারীরা একত্রিত হয়ে মহারাজ ঈশানচন্দ্রকে হত্যা করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও দিনক্ষণ স্থির করল। ষড়যন্ত্রকারীরা টেরও পেল না যে, ওখানেই মহারাজের সেই গুপ্তচরও ছিল।
প্রভাত হতেই মহারাজের কাছে গোপনে সকল সংবাদ উপস্থিত করা হল। এতকিছু শুনেও মহারাজ বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না, বরং নিজের অ্যাকশন স্থির করে নিলেন এবং যথা সময়ের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। ক্রমে
ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনা মতই সেই রাত উপস্থিত হল। তখন আনুমানিক রাত দশটা। সকল কিছু চক্রান্তকারীদের পরিকল্পনা মতই চলছিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই গুপ্ত আঘাতে মহারাজকে বধ করা হবে।
শুধু মহারাজ জানতেন তিনি যথা সময়ে কী করবেন। ঠিক এমনি উত্তেজনাময় অবস্থায় রাতের অন্ধকারে মহারাজ ঈশানচন্দ্র তার চাল চাললেন। তিনি গোপনে অতি চতুরতার সাথে নিজের পোশাক সেই গুপ্তচরকে পড়িয়ে দিলেন। আর
নিজে সেই পরিচারক, গুপ্তচরের পোশাক পড়ে নিয়ে, জীর্ণ কম্বল গায়ে দিয়ে, তার নীচে লুকিয়ে রাখলেন নিজের তলোয়ার,আর আলোর বাতি নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন নিজের বধ্যভূমির দিকে। ষড়যন্ত্রকারীরা এত বড় ঘটনাটির
কোনও কিছুই বিন্দুমাত্রও আঁচ করতে পারেনি।
নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পূর্বেই মহারাজ পরিচারকের বেশে আলোর বাতি নিয়ে নিজের বধ্যভূমিতে উপস্থিত হলেন। সেনাপতি সর্দার খাঁ আর ছোবন খাঁ তখনো মহারাজের অপেক্ষায়ই আছে।
মহারাজ যে এসে গেছেন, সে খবর তাদের নেই। মহারাজও জানতেন সেনাপতি সর্দার খাঁ আর ছোবন খাঁ গুপ্ত আঘাতে মহারাজকে হত্যা করতে এখানেই আছেন। তাই উনি অতি সাহস ও বীরত্বের সাথে আলোর বাতি মাটিতে রেখে
হঠাৎ কম্বলের নীচ থেকে তলোয়ার বের করে সর্দার খাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সিংহের মত গগন ভেদী চীৎকার করে উঠলেন, "ক্যা সর্দার খাঁ!" মহারাজের চীৎকার শুনে ঠিক তখুনি কিছু দেহরক্ষীও ঐ স্থানে ছুটে আসতে লাগল।
এরকম চরম বাস্তবতা চক্রান্তকারীরা কল্পনাই করতে পারেনি। এমন চরম বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে ছেবরা খেয়ে উঠে, সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত এবং কীংকর্তব্যবিমূঢ় সর্দার খাঁ নিজের সামনে ছদ্মবেশী মহারাজকে দেখে
ভয়ে কাঁপতে-কাঁপতেই ওখানে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। অন্যরা আধারের সুযোগ নিয়ে কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচল।
নিজের সেনাপতির এমন ছেবরা খাওয়া অবস্থা দেখে, বেহুঁশ হওয়া সর্দার খাঁর সামনে দাঁড়িয়ে হেসে উঠলেন মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্য।
ইতিহাসে পাওয়া যায়, মহারাজ ঈশানচন্দ্রের সেই পরিচারকটির নাম ছিল 'দাগন'।
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
Next Part
ত্রিপুরার ইতিহাস সম্পর্কে জানুন প্রতি সোমবার ও শুক্রবার।
আগের পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭