প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
২৬-০২-২০১৮ ইং
◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
১ম পর্ব
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
২০১৬ সালকে বিদায় দিয়ে গত রাতে ঘুমাতে-ঘুমাতে রাত প্রায় একটা। একটি বিশাল সরোবরের পাড়ে পাড়ে একা একা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে রাজবংশী। সরোবরের কুচকুচে কালো জলে ফুটে আছে শ্বেতপদ্ম, লালপদ্ম, শালুক, সুঁদি।
সামনেই একটি সুন্দর টিলা। তাতে অতি সুন্দর একটি ফুলবাগান। চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল। ফুলে ফুলে সেজে আছে ফুলবাগানটি।
প্রজাপতিরা পাখা মেলে মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুলপরিরা আকাশ পথে নেমে আসছে ফুলবাগানে। রূপার সাজি ভরে ফুল নিয়ে আবার আকাশ পথে উড়ে চলে যাচ্ছে আকাশের ওপারে।
সেখানে তাদের বিশাল এক রাজপ্রসাদ। সেই রাজপ্রসাদ থেকে মৃদু মন্দ হাওয়ারা ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসছে সাদা মেঘের রথ। রথে বসে আছেন মেঘ-রাজা। তিনি ঐ ফুলবাগানে পুষ্পবৃষ্টি করছেন।
মেঘ-রাজার আদেশে স্বর্ণপত্র ঝরে পড়ছে ফুলবাগানটির কোনায়-কোনায়।
ফুল, মেঘ, প্রজাপতি, ফুলপরি, হাওয়া, মেঘ-রাজা সবাই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আনন্দে নেচে-নেচে বেড়াচ্ছে। অবাক চোখে রাজবংশী চেয়ে রইল সেই দিকে।
এমন সময় সে দেখল, হঠাৎ কোথা হতে রকেট বাজিতে চড়ে উড়ে আসছে সদানন্দ বসাক, মহিষাসুরের বেশে। পিছনে উড়ে আসছে তার শত শত কুমন্ত্রী-গন।
সদানন্দ রকেট বাজিতে চড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে আর হা-হা করে হাসতে হাসতে। হাতে ঝাঁকে-ঝাঁকে লঙ্কা পটকা।
লঙ্কা পটকাগুলিতে ফু মেরে আগুন লাগিয়ে এদিক-ওদিক ছুঁড়ে মারছে আর ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছে,"হ্যাপি নিউ ইয়ার! হ্যাপি নিউ ইয়ার!" সেই লঙ্কা পটকাগুলি ঠুস-ঠুস করে ফুটছে আর সদানন্দ রাবণের মত অট্টহাসি দিয়ে উঠছে।
রাজবংশীর খুব মজা লাগছে এই সব দেখতে। সে একটি সবুজ কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে পরম আনন্দে তাকিয়ে আছে সেই দিকে। এমন সময় হঠাৎ তার কানে বজ্রের মত একটি আর্তনাদ ভেসে এল।
আনন্দ আর খুশির সেই পরিবেশে আর্তনাদটি যেন শব্দভেদী বাণের মত তার বুক চিঁড়ে এ-ফোঁড় ও-ফুড় করে দিল।
অসহায় এক পাখীর মত ছটফট করে উঠল সে। আবার সেই আর্তনাদ! চোখ ফিরিয়ে দেখল রাজবংশী, এক পরমা সুন্দরী রাজকুমারী সেই কুমুদবতী সরোবরে ডুবে যাচ্ছে আর
চীৎকার করে রাজবংশীকে বলছে,"ওকে বাঁচান! ওকে বাঁচান! ও যে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আপনি ছাড়া আর কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না। দয়া করে ওকে বাঁচান। দয়া করে ওকে বাঁচান।"
কুমুদবতী সরোবরে ডুবে যেতে যেতে সজল নয়নে দুই হাত জোড় করে রাজবংশীকে কাতর আবেদন জানাতে লাগল সেই রাজকুমারী। সেই রাজকন্যাকে বাঁচাতে রাজবংশী ঝড়ের মত ছুটে যেতে লাগল সরোবরের দিকে।
চীৎকার করে বলতে লাগল,"আমি আসছি! আপনি ঘাবড়াবেন না! আপনি কে? কাকে বাঁচাব? কার কথা বলছেন?" কোন জবাব এল না। সেই নারী ডুবে যেতে লাগল সেই সরোবরে।
সেই রাজকন্যাকে বাঁচাতে নিজের সমগ্র শক্তি দিয়ে ছুটতে লাগল রাজবংশী, কিন্তু নিজের জায়গা থেকে এক বিন্দুও এগোতে পারল না। কেউ যেন তাকে বেঁধে রেখে দিল পিছন থেকে।
চোখের সামনে কাঁদতে-কাঁদতে সেই সরোবরে ডুবে গেল সেই রাজকন্যা। রাজবংশী চেয়েও কিছু করতে পারল না। চীৎকার করে ধরমরিয়ে জেগে উঠে বসল রাজবংশী।
সারা শরীর তার কাঁপছে, ঝর ঝর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। "এত ভোরে এ কী স্বপ্ন দেখলাম আমি? কী তার মানে?" মনে মনে বলে উঠল সে। চোখ তুলে একবার নিজের ঘরটির দিকে তাকাল,
"না! সব তো ঠিকই আছে। ঐ তো পাশের বিছানায় সহকারী সদানন্দ বসাক দিব্যি গভীর ঘুমে মগ্ন। এ কেমন ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম? কে ছিল সেই রাজকন্যাটি? এত কাতর সুরে কাকে বাঁচানোর কথা বারে বারে বলছিল সে?"
কিছুই ভেবে পেল না। চুপচাপ কিছুক্ষণ গুম মেরে বসে রইল। ঠিক তখুনি লোহার গেইটের টং টং শব্দ তার কানে গেল। গা ঝাড়া দিয়ে কান খাড়া করে সেই শব্দটা শোনার চেষ্টা করল,"না! আমার ফটকেই তো শব্দ হচ্ছে।
কেউ কী তবে আমার গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে? কিন্তু এত সকালে কে এল?" রাজবংশীর এক ঠেলাতেই সদানন্দ গভীর ঘুম ছেড়ে জেগে উঠল।
গেইট খুলেই রাজবংশী খুব অবাক হয়ে গেল,"আরে স্যার! আপনি? এত সকালে? আসুন স্যার, আসুন? এই সাধুদা, দেখ কে এসেছেন? আসুন স্যার আসুন, ভিতরে আসুন।"
বৈঠকখানার দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন আগরতলার বোধজং নগর থানার ওসি বিবেক দেবরায়। ওসি সাহেবকে এত সকালে দেখে সদানন্দও বেশ অবাক হয়ে গেল,
সম্ভ্রমের সাথে মাথা নুইয়ে বলল,"স্যার আপনি! এত সকালে! গুড মর্নিং!"
এক ফালি হেসে বিবেক-বাবু বললেন,"গুড মর্নিং ইয়ং-ম্যান। হ্যাপি নিউ ইয়ার।"
রাজবংশী আর সদানন্দ দুজনই এক সাথে উইশ করল,"হ্যাপি নিউ ইয়ার স্যার।"
অতি সমাদরে বিবেক-বাবুকে বৈঠকখানায় বসানো হল। ভবচরণ জল খাবার নিয়ে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল তাদের আলোচনা। বিবেক-বাবু বলতে শুরু করলেন,"দেখো রাজ, আমার বয়স এখন প্রায় তিপ্পান্ন।
যখন আমার বয়স তেইশ, তখন পুলিশে চাকরি পাই। আজ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করছি। চাকরির সুবাদে মানুষ চিনতে এখন খুব এক ভুল হয় না। তাই তোমার কাছে ছুটে এলাম।
কারণ, গত প্রায় মাস দুয়েক ধরে নিজের বিবেকের সাথে আমার ডিউটির খুব সংঘাত চলছে। মন বলছে সেই মানুষগুলি সহজ-সরল-নির্দোষ, কিন্তু ডিউটি করতে গিয়ে বার-বার তাদের এরেস্ট করতে হচ্ছে।
একটি কেসে আইনগত পুলিশের ডিউটি করতে গিয়ে বারে-বারে আমার মন, বিবেক ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আইনের পথে চলতে গিয়েই আমি সবচেয়ে বড় বেআইনি কাজ করে যাচ্ছি।
বিবেক দংশনে রাতের ঘুম পর্যন্ত ঠিক মত হচ্ছে না। তাই আমি গোপনে আই-জি সাহেবের সাথে দেখা করি আর উনার পরামর্শ ক্রমেই তোমার কাছে এই সাত-সকালে ছুটে আসি।
পুলিশ পুলিশের কাজ করবে কিন্তু আমি চাই তুমি তোমার মত করে অপরাধীকে খুঁজে বের কর। তবে মনে রাখবে, তুমি যে পুলিশের পক্ষ হয়ে কাজ করছ এই কথা যেন কাক-পক্ষীতেও জানতে না পারে।
আড়ালে থেকে পুলিশ তোমাকে সব রকমের সহায়তাই করে যাবে। তোমার পারিশ্রমিকও তুমি পুলিশের পক্ষ থেকেই পাবে। কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু আসল সত্যটি বের করে আনা চাই।
আরেকটি কথা তোমাকে বলে রাখি, অপরাধী কে, সে কথা অবশ্য আমরা কিছু-কিছু জানি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রমাণ কিছু নেই। অপরাধীর দল খুব পয়সাওয়ালা আর প্রভাবশালী লোক।
তাদের ফাঁদেই পড়ে গেছে বেশ কয়েকটি নিরীহ মানুষ। মনে রাখবে তোমাদের আসল কাজ হবে একটি খুনের আসল সত্য খুঁজে বের করা।"
"খুন! ঘটনাটি একটু খুলে বলবেন স্যার!"
"হ্যাঁ, খুন! ঘটনাটি বলছি, শোনো। আগরতলার খয়েরপুরের পাশেই কাশীপুর। এই কাশীপুর দিয়ে একটি রাস্তা উত্তরদিকে সোজা পশ্চিম-নয়াবাদী চলে গেছে। সেখানে ছোট বড় টিলা যেমন আছে, সমতল কৃষি জমিও প্রচুর।
গ্রামীণ এলাকা, তবে খুব মনোরম। এই গ্রামেরই একজন নবদ্বীপ চক্রবর্তী। মানুষের বাড়িতে পূজা পাঠ করে কোন মতে উনার সংসার চালান।
উনার একমাত্র ছেলে রাম কুমার চক্রবর্তী। যেমন তার নাম রাম, তেমনি দেখলেও মনে হয়, রাম সত্যি রাম। একেবারে নিখাদ সোনা। গ্রামের লোকেরাও এ কথাই বলে। যেমন স্বভাব-চরিত্রে, তেমনি কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে।
রাম দেখতেও খুব সুন্দর, উঁচা লম্বা, সুন্দর চেহারা, বলিষ্ঠ দেহ।
পড়াশুনাতেও খুব ভাল। এক কথায় রাম, রাম। বাবার সাথে টুক-টাক পূজা পাঠের কাজ করলেও, রামের আসল লক্ষ্য পড়াশুনা। কিন্তু গরীব বাপের ছেলে এত সহজে কি পড়াশুনা করতে পারে?
তাই নিজের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করতে ছোটবেলা থেকেই রাম মানুষের বাড়িতে কাজ কর্ম করে। খুব কষ্ট করেই সে নিজের পড়াশুনাকে চালিয়ে গেছে। এই কথাগুলি আমার নয়, গ্রামের মানুষের।
অনেক ঝড় ঝাপটার, অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে অবশেষে MBB কলেজ থেকে সে BA পাশ করেছে। তাদের পরিবারকে দেখলে খুব সহজেই বুঝা যায়, ওর খুব সহজ, সরল এবং গরীব, কিন্তু সৎ এবং মেহনতি।
এই রামকে নিয়েই আজ যত ঝামেলা। কলেজের পড়াশুনা শেষ করার পর, এই কিছুদিন আগে কলেজের এক সহপাঠী বনশ্রী ঘোষালকে সে ভালবেসে বিয়ে করে।
তাদের ভালবাসা নাকি দীর্ঘদিনের। কলেজ জীবনের প্রায় শুরু থেকেই একে অপরকে ভালবাসে। কিছুদিন আগে পালিয়ে গিয়ে দুজনে কোর্ট-ম্যারেজ করে ফেলে।
বনশ্রীর বাবা না থাকলেও মা আছে, বড় দুই ভাই আছে, বৌদিরা আছে। ভাইয়েরা খুব ধনী, অনেক ব্যবসা তাদের। সব মিলিয়ে প্রায় বিশ-পঁচিশ কোটি টাকার মালিক। অনেকগুলি বাড়ি তাদের। তবে কাশীপুরেই তাদের আসল বাড়ি।
এমন ধনী ঘরের মেয়ে বনশ্রী। বনশ্রী কেমন স্বভাবের তা তো আমি জানি না, তবে তার ভাইদের দেখলেই মনে হয় এক-একজন হাজার গুণ্ডার গুরুদেব। সাদা-কালো এত বড়-বড় ব্যবসা কী আর এমনি সামলানো যায়?
বনশ্রীর এই ভাইগুলি একের পর এক কেস ঠুকে যাচ্ছে রাম আর তার মা-বাবার বিরুদ্ধে। নারী অপহরণ, নারী নির্যাতন, পণের জন্য বধূর উপর অত্যাচার, কিছুই বাধ রাখেনি ওরা। একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ছে রামের পরিবারকে।
কিন্তু শেষে, এই কয়েকদিন আগে যে কেসটি ওরা সেই গরীব পরিবারটির বিরুদ্ধে ঠুকল, তা হল খুনের মামলা। রাম আর তার মা-বাবা মিলে বনশ্রীকে খুন করে তার লাস গুম করে দিয়েছে, এই হল তাদের অভিযোগ।
বাধ্য হয়েই রাম আর তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে আমার এরেস্ট করতে হয়। ওদের কাছে ভাল খাবার-দাবাড়ের সামর্থ্য পর্যন্ত নেই, উকিল করবে কোথা থেকে? কিন্তু এখানেই ঘটে যায় প্রথম চমক।
খুনের কেসটি যখন আদালতে উঠে তখন সবাইকে অবাক করে শহরের সবচেয়ে দামী, প্রতিভাবান এবং জাঁদরেল উকিল বাসুদেব মিত্র এসে হাজির! বাসুদেব মিত্র-র মত এত বড় আর এত দামী উকিলকে ওরা কেমন করে ঠিক করল,
সেটা কিন্তু এখনো একটা ঘোর রহস্য। এমন গরীব বেচারারা এত পয়সা কোথায় পেল? তবে বনশ্রীর কাছে যে প্রচুর সোনার গয়না-গাটি ছিল, এটা কিন্তু ঠিক।
বনশ্রীকে মেরে ফেলার পর, তার গয়না-গাটি গুলিই কী এত দামী উকিল ঠিক করতে কাজে লাগানো হয়েছে? সেটি কিন্তু একটি বিশাল প্রশ্ন। এর উত্তর আমি জানি না। তবে ঐ আসামিগুলিকে দেখলে কিন্তু অপরাধী বলে
মনে হয় না। সে যাক, উকিল বাসুদেব-বাবুর আইনি দাও-প্যাঁচে এখন রাম আর তার মা-বাবা জেলের বাইরে থাকলেও যে কোন সময় আবার ওদের এরেস্ট করতে হতে পারে।
তাই আমি চাই, তুমি এই কেসটি হাতে নাও আর তোমার মত করে আসল সত্যটি খুঁজে বের কর। আসল অপরাধী কঠোর সাজা পাক, সে আমরাও চাই।"
রাজবংশী একটু চিন্তিত স্বরে বলল,"কিন্তু আপনার বিবেক দংশন হচ্ছে কেন, সে কথা তো বললেন না?"
হঠাৎ চোখ ছলছল করে উঠল ওসি সাহেবের। চেহারাটা এত আবেগময় হয়ে গেল যে তিনি না পারলেন কিছু বলতে, না পারলেন হাসতে, না পারলেন কাঁদতে। শুধু কিছু বলতে চেয়ে এদিক ওদিক মাথা নাড়লেন, কিন্তু কিছুই বলতে
পারলেন না। একটু স্বাভাবিক হয়ে পকেট থেকে একটি কাগজ বের করলেন,"আমিও তো খুব গরিব ঘরেরই সন্তান ছিলাম, তাই গরিবের যন্ত্রণাটা কিছুটা অনুভব করতে পারি।
এই হল নবদ্বীপ চক্রবর্তীর ঠিকানা। ঠিকানাটা রেখে গেলাম। তুমি পারলে আজই একবার গিয়ে দেখে আসো, নিজের প্রশ্নের উত্তরটি নিজেই পেয়ে যাবে।
আবারও কথাটি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেই, কেউ যেন জানতে না পারে পুলিশ তোমাকে এই কাজে লাগিয়েছে। সবাই যেন জানে, নবদ্বীপ চক্রবর্তীই তোমাকে ডেকে এনেছে।"
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ওসি সাহেব বিদায় নিলেন। ঘড়িতে তখন সকাল আটটা। ওসি সাহেব চলে গেলে বেশ কিছুক্ষণ ধুম মেরে বসে রইল রাজবংশী।
হঠাৎ বলল,"চল সাধুদা, এখুনি নবদ্বীপ চক্রবর্তীর সাথে দেখা করা আসি। মনে হচ্ছে এই কেসটিতে এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করা আর ঠিক হবে না।"
ধলেশ্বর ১৩ নম্বর রোড থেকে রাজবংশীর D-13 নম্বরের বাইকটি আসাম-আগরতলা রোড দিয়ে কাশীপুরের দিকে ছুটে চলল। মৈরব নগর আর আমতলী পার হয়ে মিনিট বিশেকের মধ্যেই ওরা নয়াবাদীতে এসে থামল।
ঘড়িতে তখন ১লা জানুয়ারি ২০১৭-এর সকাল ন'টা। দূর দূর পর্যন্ত ছেয়ে আছে মাঘের ঘন কুয়াশা। তাপমাত্রা প্রায় ১২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। একটি মোড়ে কয়েকজন লোক খড়ের আগুন জ্বেলে আগুন পোহাচ্ছিল।
রাজবংশী তাদের কাছে নবদ্বীপ চক্রবর্তীর ঠিকানাটি জেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। একটি জড়া জীর্ণ বাড়ির সামনে এসে D-13 নম্বরের বাইকটি এসে দাঁড়াল। গরীবের বাড়ি তবে বাড়িটি ছন্নছাড়া নয়, শ্রী-হীন নয়।
বাড়িটিতে একটা বনেদী ঝলক আছে।
মা লক্ষ্মী যে এক সময় এই বাড়িতে খুব ঠাট-বাটের সাথে ছিলেন তা দেখলেই বুঝা যায়। আজ মা লক্ষ্মী এই বাড়িতে না থাকলেও অলক্ষ্মীর কিন্তু দূর-দূর পর্যন্তও দেখা নেই।
বাড়িটির চৌ-সীমানায় সুন্দর বন-পাতাবাহার গাছ লাগানো। সারা বাড়িতে খুব সুন্দর আলো বাতাস খেলছে। ছোট উঠানের এদিক- ওদিক দুটি জীর্ণ মাটির ঘর। একটি ঘরের পাশে ছোট্ট একটি ফুলের বাগান।
ঘরের শক্ত-পোক্ত বিবর্ণ দরজা জানালাগুলিতে সেই আদিকালের নক্সা। গত কয়েক যুগ ধরে রং-আলকাতরা যে পড়েনি তা খুব বুঝা যায়।
উঠানের এক কোনে চারটি বাঁশের খুঁটির উপর একটি চোট খড়ের চাল, রান্নাঘর।
বাড়ির সামনে D-13 নম্বরের বাইকটি দাঁড় করিয়ে ধীরে পায়ে বাড়ির ভীতর প্রবেশ করল অনুব্রত রাজবংশী, পিছু-পিছু সদানন্দ বসাক। একটু গলা ঝাড়া দিয়ে রাজবংশী ডাকল,"কেউ কি বাড়িতে আছেন?"
পরবর্তী পর্ব
অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
All Bengali Stories
22
23
24
25
26
27
28
29
30
31
(32)
33
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717