লুকানো চিঠির রহস্য

লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৩
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
০২-০১-২০১৯ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৩

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

সুবলবাবু খুব ভীত স্বরে বললেন, "হ্যাঁ, স্যার। বাহাদুরের খুনের খবর আমি আগেই জানতাম। তখন ঐ চিঠিটিকে আমি গুরুত্বই দেই নি। পাড়ার কিছু চেংড়া ছোড়া আমাকে সব সময়ই এভাবে উত্যক্ত করত। আমার তিন সুন্দরী কন্যার উপরেই তাদের নজর ঘুরে বেড়ায়। তাই ঐ চিঠিটি যখন পেলাম, তখন ভাবলাম, এটিও কোনও চেংড়া ছোড়ার কাজ। ফলে চিঠিটি সাথে-সাথেই ছিঁড়ে ফেলে দিই। কিন্তু যখন দেখলাম বাহাদুর সত্যি-সত্যি খুন হয়ে গেছে, তারপর থেকে মনটাকে আর মানাতে পারছি না। বারে-বারেই শুধু মনে হচ্ছে, ঐ চিঠিটা সেদিন ফালতু না ভেবে, একটু গুরুত্ব দিয়ে যদি ভাবতাম, যদি অফিসে এসে বাহাদুরকে চিঠির কথা বলে দিতাম, তবে হয়তো সে বেঁচে যেত; এত বড় একটা অঘটন ঘটত না। অফিসে কিংবা বাড়িতে, কাউকেই এই চিঠিটির কথা আমি বলেনি। আপনাকেই শুধু বললাম। এই বোঝা বুকে নিয়ে খুব মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। তাই বর্তমান চিঠিটির আকার-ধরন সেই চিঠিটির মতই হওয়ায়, এই চিঠিটিকে আমি আর এত ফালতু-নগণ্য ভাবতে রাজি নই।"

সুবল সেনের কথা মন দিয়ে শুনতে-শুনতে চুপ হয়ে গেল রাজবংশী, চেতনার অতল সাগরে ডুবে গেল সে, মিলাতে লাগল সকল হিসাব-নিকাশ। অনেকক্ষণ পরে ধীরে-ধীরে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সদানন্দ খুব জানে, এই হাসির মানে কী, জয়-লক্ষ্মী আর বেশী দূরে নেই। চেয়ারে বেশ আরাম করে হেলান দিয়ে বসল রাজবংশী। ফুরফুরে মেজাজে বলল, "সুবলবাবু, আপনার সব কথা আমি মেনে নিচ্ছি। সেই চিঠির উদ্দেশ্য ছিল এই কোম্পানিতে একটি অরাজকতার সৃষ্টি করা। আততায়ীরা সেই মত কাজও করেছিল, কিন্তু কোনও কারণে পরে পিছিয়ে যায়। কিন্তু কেন?" এ কথা বলার পরেই রাজবংশী চোয়াল ধীরে-ধীরে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে এল। সে বেশ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, "সুবলবাবু, আপনার বাড়ি নিশ্চয় রামনগরের চার নম্বরের কাছাকাছি?"

বেশ অবাক হয়ে সুবলবাবু বললেন, "হ্যাঁ স্যার, রামনগর চার নম্বর, সেকেন্ড ক্রসিং। কিন্তু আপনি কী করে জানলেন? আপনি তো কখনো আমাদের বাড়ি যান নি, আমিও তো আপনাকে কিছু বলিনি।"

রাজবংশী এই কথার কোনও জবাব না দিয়ে অতি কঠোর ভাবে বলল, "সুবলবাবু, আপনি কাল-সাপের ফণার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। যে কোনও সময় এক ছোবলে আপনার প্রাণ যেতে পারে। নিজের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণের জন্য তৈরি থাকুন। আক্রমণ হবেই-হবে। আমি যদি আরও সঠিক ভাবে বলি তবে বলতে হবে, আগরতলার এই সিরিজ খুনের পরবর্তী লক্ষ্য হলেন আপনি।"

রাজবংশীর কথা শুনে ঘরটি যেন হঠাৎ কেঁপে উঠল। সবাই যেন একটা সবেগে ঝাঁকা খেয়ে উঠল, যেন একটা ভুত পড়ে আছে মাটিতে! আঁকতে উঠলেন সুবলবাবু, "বলেন কী স্যার? আমি?"

"সুবলবাবু, আমার অনুমতি ছাড়া আপনি এক পা-ও কোনও দিকে বাড়াবেন না। মিঠুন, সিরিজ খুনের পরবর্তী টার্গেট, সুবলবাবু যেন কোনও ভাবেই মিস না হয়। এখুনি সুবলবাবুর সুরক্ষার কড়া ব্যবস্থা কর। আমি আই.জি সাহেবকে সব বলছি। এই 'মুনমে মাইক্রো-ফাইনাইন্স' কোম্পানি এক ষড়যন্ত্রের আখড়া। এখান থেকেই ষড়যন্ত্রের সব চাবিকাঠি চারিদিকে ছড়িয়েছে পড়ছে। কেউ তো আছে যারা এই কোম্পানির বরবাদ চায়, যাদের কাছে বাহাদুর একটা বড় বাধা। এখন বাহাদুর তো নেই, রইল বাকী রাখী! তাহলে এই রাখী ম্যাডামটি কে? তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।"

ঠিক এমন সময় একজন সিপাহী দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। তার হাতে একটি কাগজ। সে স্যালুট ঠুকে কাগজটি মিঠুনের দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল, "স্যার, বাহাদুর প্রসাদের মোবাইল ফোনের গত তিন মাসের কল লিস্ট।"

ঝটপট কাগজটি হাতে নিয়ে, সেটি রাজবংশীর হাতে তুলে দিল মিঠুন। কাগজটি হাতে নিয়েই রাজবংশী ঝুঁকে পড়ল কাগজটির উপর আর খুব মনোযোগ সহকারে সবগুলি নম্বর দেখতে লাগল, তারপর কলম দিয়ে কয়েকটি বিশেষ নম্বরকে মার্ক করতে লাগল। সেই নম্বরগুলি দেখতে-দেখতে হঠাৎ টান মেরে সদানন্দের হাত থেকে ডাইরিটি ছিনিয়ে নিয়ে, বিনা বাক্যে তার মাঝে কী যেন হিসাব-পত্র লিখতে লাগল।

ভদ্রবাবু, সদানন্দ আর মিঠুন লেখাগুলির উপর ঝুঁকে পড়ল, কিন্তু মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝল না। লেখাগুলিকে লেখা না বলে চিত্র বলাই ভাল। খাতার মাঝের হিসাব-নিকাশ শেষ করে কয়েক মুহূর্ত সেই লেখাগুলির দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাজবংশী, তারপর হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠল। হাসতে-হাসতে নিজের মোবাইল ফোনটি বের করে ভদ্রবাবুকে বলল, "কী হল ভদ্রবাবু, এত কী ভাবছেন? পেয়েছি, পেয়েছি, আর কোনও চিন্তা নেই।" এই বলে রাজবংশী একটি নম্বরে ফোন লাগাল। ওপাশ থেকে একটি নারী কণ্ঠ ভেসে এল,"হ্যালো, কে?"

রাজবংশী, "হ্যালো, কে? মুনমে!!"

পাগলের মত ওপাশের সেই নারী কণ্ঠী চেঁচিয়ে উঠল, "কে? কে? কে আপনি?"

"আমি অনুব্রত রাজবংশী কথা বলছি। আপনাকে এখুনি এখানে আসতে হবে। ঠিকানাটি লিখে রাখুন। কাউকে সাথে আনার দরকার, একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন। এখানে পুলিশ আছে, ভয়ের কিছু নেই। কাছাকাছি আসলে আমাকে ফোন করবেন, আমি আপনাকে রসিভ করব। রাখছি।"

ফোন রেখে হাসতে-হাসতে রাজবংশী ভদ্রবাবুকে বলল, "হল তো! এবার যান, আপনার কর্মচারীদের বলুন, কালকেই ওদের বেতন হয়ে যাবে। আর একটা কাজ করুন, সবাইকে ডেকে হল-ঘরটিতে জমা করুন; একজন বিশেষ অতিথি আসছেন।"

ভদ্রবাবু যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি পাথরের মত বড়-বড় চোখ করে চেয়ারে বসে রইলেন।

"আরে না-না ভদ্রবাবু! এখন ওভাবে বসে থাকার সময় নেই। চলুন সবাইকে ডেকে হল-ঘরে জমা করুন। আমরাও আসছি।"

"না-মানে, বলছিলাম, একবার বলে দেওয়ার পর কালকে যদি বেতন না হয়, তখন? তখন তো আমি বিপদে পড়ে যাব মাসি, না-মানে মশাই? এমনিতেই ঐসময়ের ওয়ালিস খেয়ে এখনো পিঠে সা-গা-পা-নি ছুটছে। আবার যদি-"

"আরে ধুর মশাই, চলুন তো। কোম্পানির আসল মালকিন আসছেন; মিস রাখী, যিনি আপনাকে মুম্বাই থেকে মেইল পাঠাতেন। উনার সাথে আপনার প্রথম দেখা হতে চলেছে, একটু জেল্লা-চমক ধরুন। মিস রাখী এখন আগরতলাতেই আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি এখানে এসে যাবেন, উঠে পড়ুন, কিছু কাজ বাকী আছে।" এই বলে রাজবংশী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওকে দাঁড়াতে দেখে বাকীরাও উঠে দাঁড়াল আর তার পিছু-পিছু সেই রুম থেকে বেরিয়ে এল।

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
■ গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    31    32    33    34    35    (36)     37    38    39   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717