Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২

রাঙামাটির দক্ষিণ-পূব দিকে প্রায় ৮ দিনের পায়ে হাটার দূরত্বে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়, গভীর অরণ্যে ঢাকা এক জনপদ, তুলারাম পাড়া। রাঙামাটির সাথে যোগাযোগের সরাসরি কোনও রাস্তা নেই। যা আছে তা অতি সংকীর্ণ এক জংলী ফাঁড়ি পথ। বছর-ছ'মাসেও কোনও একা পথিককে সে পথে দেখা যায় না। আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ঢেকে আছে পথ। দৈত্যের মত সারি-সারি শাল, সেগুন, তমাল পথের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, শিয়াল, কুকুর, শূয়র, বানর চিবিয়ে খায় জঙ্গলের সকল নিস্তব্ধতা। অজগর, পানক অবাধে ঘুরে বেড়ায় কোনায়-কোনায়। সাধারণ মানুষ শুধু মরতেই এ পথে হাঁটে। রাজধানী আর সভ্যতার আলো-ধ্বনি এই জনপদের দৃষ্টিপথের বহু দূরে। তবে দুই-তিন বছর অন্তর রাজ-কর্মচারীদের একটি দল রাজকর নিতে এখানে আসে। সেই দলে থাকে কিছু বনিক এবং বহু সংখ্যক সিপাহী। শুধু মাত্র ঐ সময়টায় ফাঁড়ি পথটি ক'দিনের জন্য চঞ্চল হয়ে উঠে। রাজ ও রাজ্যের নতুন কিছু সংবাদ ঐ শুধু সময়টাতেই এসে পৌঁছায় এই জনপদে; সত্য-মিথ্যা বিচার না করে। সুসভ্যতা সুদূর থেকে এসে বারে-বার প্রবেশের পথ খুঁজে জন-জগতে; ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় মহাশূন্যে।

তুলারাম পাড়ায় ক'জন অতি বৃদ্ধ আছেন, যারা তাদের যৌবনকালে ঐ ফাঁড়ি পথটিতে দল বেঁধে পায়ে হেটে রাজধানীতে গিয়েছিলেন, আবার ফিরেও এসেছিলেন। দুর্গম পথটি তারাই শুধু কিছু-কাছু চিনেন; আধা-মাদা। এখনো সময়-সময় ওরা সেই গল্প করেন। বৃদ্ধ চোখে যৌবনের রাজধানীকে দেখে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানস-পটে তা তুলে ধরেন; পরপদে দিয়ে যান নিজ পদের ছাপ। সে অনেক বছর আগের কথা, তবু মনে হয়, এই তো সেদিন মাত্র রাজধানীতে গিয়ে এলাম। স্মৃতির পটে ধরা রাখা রাজধানী এখনো মনে ঝল-ঝল করছে। কথা শুনতে-শুনতে শিশুরা অবাক চোখে চেয়ে থাকে বৃদ্ধদের ছল-ছল চোখে। কল্পনার তুলিতে অচেনা, অজানা রাজধানী আর সভ্যতার ছবি মনের মহাশূন্যে আঁকে ওরা। রাজধানী কী ধান কে জানে?

রাজধানীতে যাবার কালে প্রবীণরা বেশ কিছু পাহাড়ি জনপদকে সচক্ষে দেখেছিলেন। এক সাথে পথ চলতে-চলতে ঐ সব জনপদের কিছু-কিছু যুবকের সাথে তাদের গভীর বন্ধুত্বও হয়েছিল। সেই বন্ধুত্ব এখনো আছে, কিন্তু বন্ধুটি আছে কি নাই, সেই খবর নেই। কে দেবে খবর? বৃদ্ধরা সেই বন্ধুর কথা, সেই বন্ধুত্বের অনেক গল্প শিশুদের শোনান। শিশুদের অবুঝ হৃদয়ে এ ভাবেই বেঁচে থাকে আগের প্রজন্মের ইতিহাস; অল্পপ্রাণ জীবনের সুদীর্ঘ স্মৃতি গাঁথা।

মহা-প্রতাপশালী মহারাজ বিজয়মাণিক্য তখনো বেঁচে আছেন। ছোট্ট ফুট-ফুটে ঝর্ণার মত চঞ্চল পাহাড়ি মেয়ে নয়নবুধীর বয়স তখন আট। একদিন একদল রাজ-কর্মচারী রাজকর নিতে কিছু বনিক এবং সৈন্যদল সহ তুলারাম পাড়াতে এসে হাজির। রাজ-কর্মচারীদের মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধও ছিলেন। উনারা বিভিন্ন জনপদের প্রবীণদের চিনতেন। প্রতি দুই-তিন বছর অন্তর-অন্তর রাজকর আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন জনপদে ঘুরা-ঘুরির সুবাদেই এই পরিচয়। নতুন যুবা রাজ-কর্মচারীদের বিভিন্ন জনপদের সাথে পরিচয় করানোই বর্তমানে তাদের লক্ষ্য। এভাবেই পুরাতনের সাথে হাত মিলিয়ে ভবিষ্যতের রথ এগিয়ে যায়।

তুলারাম পাড়ায় খুব খাতির করা হল রাজ-কর্মচারীদের। দুই-তিন দিন খুব আমোদ-প্রমোদ, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া হল, পাশাপাশি চলল রাজকর আদায়ের কাজও। সব কাজ শেষ করে, কর সমেত রাজ-কর্মচারীরা সসৈন্যে দুর্গম পাহাড়ি পথে বিদায় নিল। বিদায়ের পর দিন, সকাল বেলায়-
নয়নবুধী তার ছোট্ট খেলার, বেতের ঝুড়িটি হাতে নিয়ে সমবয়সী দুই বন্ধু, চম্পক আর ইন্দ্র কুমারের সাথে বড়দের পিছু-পিছু চলতে লাগল জুমের দিকে। আজ নয়নবুধীকে খুব খুশি-খুশি লাগছে, যেন আরও বেশী প্রাণ-চঞ্চল, আরও বেশী মাতোয়ারা। ভোরের হাল্কা শীতল পাহাড়ি পথে পা পড়ছে না তার; ভোরের আলোতে সে উড়ে বেড়াচ্ছে। যেন বাধন হারা পাখী, সুনীল আকাশে উড়ে যেতে চাইছে। খিল-খিল হাসিতে মনের আনন্দকে সে জানান দিল। বলল, "বুঝলি, বাবা কিন্তু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। আসছে পূর্ণিমাতেই আমার বিয়ে। বাবা বলেছেন, আমি একটি সুন্দর জামাই পাব। কি মজা, কি মজা! আচ্ছা, তোদের কবে বিয়ে হবে? তোরা কবে জামাই পাবি?"

ওর কথা শুনে চম্পক আর ইন্দ্র, কী বুঝল কে জানে? ওরা নয়নবুধীর ফুট-ফুটে প্রাণবন্ত মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল। মা হাসি চেপে পিছন ফিরে ধমক দিলেন,"চুপ কর নয়না, বড্ড বেশী বক-বক করছিস।"

বকুনি খেয়ে ক্ষণিক শান্ত হয়ে সুবোধ বালিকার মত চুপ-চাপ পথ চলতে লাগল সে, কিন্তু মনের খুশি বুকের মাঝে আর বাঁধ মানছে না। একটু পরেই আবার ফিস-ফিস করে বলতে লাগল, "জানিস, রাজধানীতে থাকে, আমার জামাই। ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে মহারাজ রোজ আসা-যাওয়া করেন। আমি রোজ রাজাকে দেখতে পাব! কী মজা! কী মজা!" খুশির আওয়াজটা এবারও বেশ জোরেই হয়ে গেল। মা আবার ফিরে ধমক দিলেন,"হেইত! এখনো তোর বক-বক শেষ হল না? এত মজা, মজা কী করছিস? মাথা গুজে হাঁট, দুষ্টু মেয়ে!"

এবার নয়না আর শান্ত হল না, মা'র কথা উপর ফিক করে হেসে উঠল। তার হাসি দেখে মা'ও হেসে উঠলেন; কিছু না বলে অন্যদের সাথে পথ চলতে লাগলেন। পিছনে নয়না আবার ফিস-ফিস করে বন্ধুদের বলতে লাগল,"তোরা কিন্তু আমার বাড়িতে যাবি, তোদের আমি রাজা দেখাব।"

রাজা দেখার কথা শুনে দুই বন্ধু আরও অবাক চোখে নয়নবুধীর দিকে তাকিয়ে রইল। এবার নয়না বন্ধুদের ধমক দিল, "এই, এমন ভাবে আমার দিকে চেয়ে থাকবি না কিন্তু। আমি কিন্তু রাজধানীর বৌ। মা! মা! দেখো না, ওরা আমার দিকে কেমন তাকিয়ে আছে? ছাগল কোথাকার! সুন্দরী বৌ কি কখনো দেখিস নি নাকি?"

"তোতার মত টেঁ-টেঁ করলে লোকে তো চেয়ে থাকবেই! চুপ-চাপ হাঁট দেখি নয়না!"

'রাজধানীর বৌয়ের' নালিশ করে কোনও কাজ হল না দেখে নয়নবুধী একটু ক্ষুণ্ণ হল বটে। বিড়বিড় করে বলতে লাগল, "মা কিছু জানে না। রাজধানী বৌয়ের কোনও দাম নাই বুঝি?" কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে থেকে একটু পরেই আবার হাসি মুখে ফিস-ফিস করে বলতে লাগল, "ঐ দিন যে ওরা এসেছিল না, আরে ঐ রাজ-কর্মচারীরা, তাদের মধ্যেই তো আমার শ্বশুর ছিল, আমার জামাইও ছিল। আমি কিন্তু আমার জামাইকে দেখেছি। তোদের মত সেও আমার দিকে এভাবেই তাকিয়ে ছিল। আমিও খুব ভেংচি কেটে দিয়েছি! হি-হি! আরও শুনবি, ও যখন আমার হাত ধরতে চেয়েছিল, আমি শক্ত করে ওর হাতে, এই এমন ভাবে একটি চিমটি কেটে দিয়েছিলাম। এই চিমটির কথা ওর খুব মনে থাকবে; সারা জীবন।"

ইন্দ্র 'আওঁ-আওঁ' করে চীৎকার করে উঠল। একজন বয়স্ক তড়িৎ পিছন ফিরে বললেন, "কী রে? কী হল?"

নিজের হাতটি ডলতে-ডলতে ইন্দ্র মিনমিন সুরে উত্তর দিল,"নয়না খুব জোরে আমাকে চিমটি কেটেছে। ইস, খুব ব্যথা লাগছে বাবা। দাগ পড়ে গেছে রে!"

তখনো কি কেউ জানত, এই চিমটির ব্যথা এক তরুণ হৃদয়ে বারে-বারে প্রেমের হিল্লোল বয়ে নিয়ে আসবে?

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717