Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৭
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
১৩-০২-২০১৯ ইং

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
পর্ব ১৭

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশীর কথা শুনে ধুম-ধরে বসে রইল ফতুর আলি। কিছুক্ষণ পর হাল্কা স্বরে বলতে শুরু করল, "বাবুর বন্ধুটা আমারে চড় দিছিল। হে খুব দুষ্ট লোক। আমাকে যখন দেখে তখনই গালি দেয়। হে'র ধুতিতে আমি আগুন লাগিয়ে দেব! ওর টাকটা ফাটিয়ে দেব! শালা ফেউর, কুকুর ছাউ, আমাকে লাথি মেরেছিস! আমি কী তোর মত পশু? শালা বলদ, দিন-রাত বাবুকে ঠগিয়ে যাচ্ছিস। আমি বুঝি, বুঝি না? আচ্ছা বাবা, বাবু কেন সেই দুষ্ট লোকটির সাথে কথা বলে? কেন কথা বলে? হে যে দুষ্ট, তা কী বাবু বুঝে না? আমি বুঝি অথচ বাবু কেন বুঝে না?"

মিঠুন জিজ্ঞাস করল,"লোকটি কেন তোমাকে চড় মেরেছিল? কেন লাথি মেরেছিল? তুমি কী করেছিলে?"

চেয়ার ছেড়ে উঠে ফতুর হাত-পা নেড়ে অভিনয় করে সত্যি ঘটনাটি দেখাতে লাগল, "আমি এখানে বসে পা দুলিয়ে-দুলিয়ে চা খাচ্ছিলাম। হে এখানে এমন ভাবে বসেছিল। হে নিজেই একবার নড়ে-চড়ে পা ছড়িয়ে বসল। ঐ সময় আমার পা হে'র ধুতিতে একটু লাগল। সাথে সাথেই হে প্রচণ্ড ক্ষেপে আমারে ধুম করে একটি কিল মারল, তারপরেই খুব জোড়ে একটা চড়। চড়ের ঠেলায় আমি এমন ভাবে এখানে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমি মাটিতে পড়ে যেতেই হে আমারে জোরে-জোরে লাথি মারতে লাগল। বাবু চা-টা ফেলে দৌড়ে এসে তাকে আটকাল, আমাকে ধরল। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে তখন খুব তর্কাতর্কি বেঁধে গেল।"

রাজবংশী দোকানদারটির দিকে চেয়ে ইশারায় জানতে চাইল, "ফতুর কী ঠিক কথা বলছে?"

দোকানি মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ, তেমনটাই হয়েছিল। আমিও তখন ঝগড়া থামাতে এগিয়ে যাই। এটা তো স্বাভাবিক, ভদ্রজনের গায়ে কেউ ইচ্ছা করে পা ঠেকালে তিনি তো রাগে যাবেনই, রাগ হবারই তো কথা। পাগল বলে তুই যা খুশি তাইই করবি নাকি?"

"হ্যাঁ, আপনি ঠিক কথাই তো বলছেন। কবে ঘটেছিল ঘটনাটা?"

"গত বৃহস্পতিবার।"

"বৃহস্পতিবার ঘটল এই ঘটনা, আর শুক্রবারে খুন হলেন বাহাদুর প্রসাদ। হুমম! আচ্ছা, আপনি কী ঐ লোকটিকে চেনেন, যে ফতুরকে লাথি মেরেছিল?"

দোকানী একটু আমতা-আমতা করে বলল,"না-মানে, মুখ চেনা-চিনি, বাহাদুর স্যারের সাথে প্রায়ই আসতেন তো, তাই মুখ চেনা-চিনি। তবে নাম,ধাম কিছুই জানি না।"

"ঠিক আছে, কোনও অসুবিধা নেই; সে কথা থাক। আমাকে কিন্তু আপনার চায়ের প্রশংসা করতেই হবে। এই নিন আপনার চায়ের দাম। এমন একটা চা খেয়ে মনটাই খুব ভাল হয়ে গেল। মনে হল যেন মনটা একদম হালকা, ফুর-ফুরে হয়ে গেছে। দুর্দান্ত লাগল, এমন চা বহু যুগ খাইনি। এই পাঁচশ টাকা থেকে আপনার চায়ের দাম রেখে বাকীটা এডভান্স হিসাবে রেখে দেবেন, আজ বিকেলে আমার বাড়িতে দু'শ কাপ চায়ের অর্ডার। আর এই রইল আমার কার্ড। এতে আমার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর সব লেখা আছে। ধলেশ্বর, ১৩ নম্বরে,'সুদামা কুটির'। বাড়ির সামনে 'সুদামা কুটির' নামটি খুব বড় করে লেখা, চিনতে কোনও অসুবিধা হবে না। তবে সময় মত আপনাকে পৌঁছতে হবে; অনুষ্ঠান সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে। কোনও অসুবিধা আছে?"

দোকানদারটি হঠাৎ এই পরিস্থিতিতে পড়ে কী করবে-না কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। পুলিশের লোককে 'না'-ও বলতে পারছে না, আবার এত দূরে যেতে 'হ্যাঁ'-ও বলতে পারছে না, তাছাড়া দু'শ কাপ চায়ের এত বড় অর্ডারের লোভও ছাড়তে পারছে না। রাজবংশী অবস্থা বুঝে দোকানদারটির পিঠ চাপরে বলল, "আরে ধুর মশাই, অত চিন্তার কী আছে? অত চিন্তা করছেন কী, এই নিন আরও পাঁচশ টাকা। মোট এক হাজার টাকা এডভান্স দিয়ে গেলাম। সময় মত পৌঁছে যাবেন।"

এত টাকার লোভ দোকানদারটি আর এড়াতে পারল না। সে খুব হাসি মুখে মাথা নাড়ল,"ঠিক আছে স্যার, আমি আজ বিকেল ছ'টার মধ্যেই পৌঁছে যাব। চায়ের সাথে কী বিস্কুট আনতে হবে?"

রাজবংশী বেশ খুশি হয়ে বলল,"খুব ভাল, খুব ভাল। এ কথাটা আমার মাথায় ছিল না। বিস্কুটও সাথে থাক। পরিমাণ মত নিয়ে আসবেন। পয়সার জন্য কিছু চিন্তা করবেন না, তবে অনুষ্ঠানে কোনও জিনিসের যেন অভাব না হয়।"

রাজবংশীর হঠাৎ এই পরিবর্তন আর এমন ফুলের মত টাকা ছিটানো দেখে মিঠুন বেশ অবাক হল। সদানন্দ কিন্তু আসন্ন দুর্বার ঝড়ের ইঙ্গিত পেয়ে গেল। সে মনে-মনে সকল কিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে দিল। সে ঠিক বুঝতে পারল, অনুষ্ঠান-ফনুষ্ঠান কিছুই নেই, রাজ মাছকে জালে তুলতে যাচ্ছে। গা শিহরে উঠল সদানন্দর। তবে কী যুদ্ধের অনুষ্ঠান আজ সন্ধ্যাতেই হবে; জীবন-মৃত্যুর অনুষ্ঠান? তাহলে মানে দাঁড়াল, আজ সন্ধ্যাতেই সাক্ষাত হতে চলেছে খুনির, আজ সন্ধ্যাতেই হামলা হতে চলেছে রাজবংশীর উপর। গরম রক্তের একটা স্রোত বয়ে গেল সদানন্দের সারা শরীরে। মুহূর্তে ঘেমে উঠল সে। কিন্তু এত কিছু জেনেও রাজবংশী কেমন শান্ত মস্তিষ্কে সকল গুটি সাজিয়ে যাচ্ছে একের-পর এক! পিছন থেকে হাল্কা একটু কাশি ঝাড়ল সদানন্দ। প্রত্যুত্তরে রাজবংশীও একটু কাশি ঝাড়ল। কেউ কিছু বুঝল না। কিন্তু কাশিতে-কাশিতে সদানন্দ আর রাজবংশীর সকল কথা হয়ে গেল। মেরুদণ্ড একেবারে সোজা সদানন্দের। অত্যন্ত ত্যাড়া চোখে সে একবার দোকানদারটির দিকে তাকাল। মনে-মনে বলল,"প্রথম শিকার! ওরে গগনচারী, চোখের পলকে তোর উপরে কী তোপ দেগে গেল রাজবংশী, টের পাবি তা সন্ধ্যাকালে।"

টাকা-পয়সা মিটিয়ে দিয়ে ওরা যখন বেড়িয়ে যাবে ঠিক তখুনি ফতুর আলি আবার হুড়ুম করে রাজবংশীর পা জড়িয়ে ধরল,"বাবু, বিকালে আমি কোথায় খাব, বাবা?"

রাজবংশী আঙ্গুল তুলে সামনের 'মাইক্রো ফাইনাইন্স কোম্পানি' দেখিয়ে বলল, "ওখানে, ঐ ক্যান্টিনে। শুধু আজ নয়, সব সময়। আমি বাহাদুরের বৌকে বলে দেব। দিদিমণিও খুব ভাল, একেবারে বাবুর মত। তোমার থাকা-খাওয়ার আর কোনও অসুবিধা হবে না।"

পুলিশের জিপ ছুটে চলল পুলিশ হেড কোয়াটারের দিকে। সবাই চুপ। ঝড় আসার আগের চরম নিস্তব্ধতা। সদানন্দ বলল, "আমাদের বাইক তো রয়ে গেল চন্দ্রবালা দেবীর বাড়ির সামনে।"

এ কথার জবাব কেউ দিল না। রাজবংশী শুনেও যেন শুনল না। সে মোবাইলে কী সব করতে ব্যস্ত। নিজের মোবাইল ছেড়ে বেশ কিছুক্ষণ পর রাজবংশী জবাব দিল, "বাইকটা ওখানেই থাক। ওরা ওখানে আমার বাইককে যতক্ষণ ফলো করতে থাকবে ততক্ষণে আমরা এদিকের সব কাজ সেরে নেব। আমার মনে সন্দেহ হয়েছিল অনেক আগেই যে, কেউ হয়তো বাহাদুরের বাড়িটাকে অবজারবেশনে রাখছে; কে আসছে, কে যাচ্ছে, তা ওয়াচ করছে। তাই তাদের খাতায় আমার নামটা ঢুকিয়ে দিতেই আমি আমার বাইকটা সেখানে রেখে এসেছিলাম। মনে হচ্ছে এতে খুব কাজ হয়েছে। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার; বাহাদুরের খুনির সম্ভব্য অবয়ব আমরা একটা পেয়ে গেছি ফতুর আলির কথায়। মনে হচ্ছে খুনি ধুতি-পাঞ্জাবী পড়া কোনও এক ব্যক্তি এবং তার মাথায় টাক আছে।" এমন সময় রাজবংশী মোবাইল ফোনটি আবার টুং-টুং করে বেজে উঠল। রাজবংশী কথা ছেড়ে নিজের মোবাইলে আবার ডুবে গেল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ।

ঘণ্টা খানেক পরে পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে আগের গাড়িতে করেই আবার বেরিয়ে এল সদানন্দ আর রাজবংশী, কিন্তু মিঠুন এল না। ওদের এই বেরিয়ে আসার আগেই গোপনে ঘটে গেল আরেকটি ঘটনা। একটি সাদা মারুতি ভ্যান পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে নীরবে বের হয়ে অনেক উল্টা-পাল্টা রাস্তা ঘুরে অতি সন্তর্পণে রাজবংশীর বাড়ির সামনে এসে থামল। যমদূতের মত দেখতে কয়েকজন হাট্টা-কাট্টা লোক ঝটপট সেই মারুতি ভ্যান থেকে নেমে হিংস্র শিকারি কুকুরের মত দ্রুত রাজবংশীর বাড়িতে ঢুকে গেল। সদানন্দ গাড়িতেই বসেছিল, গাড়ি থেকে নামেনি। ফোনে সে ভবচরণকে সকল নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিল। ভবচরণ ঘরের দরজা খুলে দিল। মিঠুনের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের এনকাউন্টার স্পেশালিষ্টরা চুপচাপ ঢুকে গেল ঘরের ভিতর। সাদা মারুতি ভ্যানটি সদানন্দকে সাথে নিয়ে অতি নীরবে আবার ফিরে গেল পুলিশ হেড কোয়াটারে। এর বেশ কিছুক্ষণ পর সেই আগের গাড়িতে করে পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে বেরিয়ে এল সদানন্দ আর রাজবংশী। গাড়িটি এবার সোজা গিয়ে থামল চন্দ্রবালা দেবীর বাসায়। তাদের পিছু-পিছু আরেকটি পুলিশের জিপ এসে থামল ঐ বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে সাত-আটজন পুলিশ ডুকে গেল চন্দ্রবালার বাড়িতে। কড়া পাহারা বসানো হল সেখানে। ঠিক তেমনি কড়া পাহারা বসানো হল রামনগরে সুবল সেনের বাড়িতে এবং মাইক্রো-ফাইনাইন্স কোম্পানিতে। অনিমেষ ভদ্রকে নির্দেশ দেওয়া হল আজ রাতটা কোম্পানিতেই থেকে যেতে।

চন্দ্রবালা দেবীর বাড়ির সামনে থেকে নিজের বাইক নিয়ে রাজবংশী আর সদানন্দ সোজা চলে এল নিজের বাড়িতে। পুলিশের গাড়িটি চন্দ্রবালার বাড়ি থেকেই ফিরে গেল থানায়।

তখন ঘড়িতে প্রায় সাতটা। রাজবংশীর ঘরে হাল্কা আলোতে খুব কম ভলিউমে টিভি চলছে। পরিকল্পনা মত বারান্দার সব লাইট জ্বালানো। ঘরের ভিতরে সবাই যার-যার পজিশনে তৈরি বসে আছে। সবাই জানে, কাকে কী করতে হবে। ঘরে কোনও কথা-বার্তা নেই, শুধু রাজবংশী এক মনে নিজের মোবাইল ফোনটি ঘেঁটে যাচ্ছে। সদানন্দ ফিস-ফিস করে বলল, "কই সেই চা-ওয়ালা তো এলো না?"

রাজবংশী একবার সদানন্দের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল, "আসবে, নিশ্চয়ই আসবে। অপেক্ষা কর।"

টিক-টিক শব্দে ঘড়ির কাটা একের পর এক সিঁড়ি এগিয়ে চলেছে; অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা। ধুক-ধুক করছে সবার বুক। তখন প্রায় আটটা। বাড়ির সামনে একটি বাইক থামার শব্দ হল। নড়ে-চড়ে বসল সবাই, মেরুদণ্ড টান-টান। অল্প সময় পর বাড়ির লোহার গেইট খোলার শব্দ হল। কেউ একজন আসছে। সবার চোখ রাজবংশীর দিকে। মিলে যাচ্ছে রাজবংশীর গণিত। সে বুড়ো আঙ্গুল তুলে ইশারায় জানিয়ে দিল,"এসে গেছে। সবাই তৈরি থাক।" ঘরের কলিং বেলটি বাজল,"টুং-টুং।"

রাজবংশী সোজা হয়ে দাঁড়াল। সজোরে একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিল বুকের গভীরে। তারপর ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল বন্ধ দরজার সামনে। রাজবংশীর পাহারায় নিয়োজিত উদ্ধত পিস্তলগুলি আড়ালে জেগে রইল দরজার দিকে নিজেদের মুখ তাক করে। আরেকবার দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে অতি স্বাভাবিক ভাবে দরজাটা আধা খুলে দিল রাজবংশী। হুবহু মিলে গেল ফতুর আলির বর্ণনা। ধুতি-পাঞ্জাবী পড়া, টাক মাথার একজন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স প্রায় পঞ্চাশ। দেখলেই বুঝা যায়, বেশ উচ্চ শিক্ষিত এবং অভিজাত ঘরনার লোক। এই তো খুনি! রাজবংশী বেশ দূরত্ব বজায় রেখে অতি তীক্ষ্ণ চোখে লোকটির চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল। রাজবংশীকে দেখে লোকটি হাত তুলল, "নমস্কার। আমার নাম মিস্টার চন্দ। এটা কী বিবেক লস্করের বাড়ি?"

রাজবংশীও অতি ভদ্রতার সাথে বলল, "আজ্ঞে না, এই নামে তো কেউ এখানে থাকেন না। আপনি হয়তো ভুল ঠিকানায় এসেছেন। আমার নাম অনুব্রত রাজবংশী। পেশায় একজন গোয়েন্দা। বাড়ির নাম 'সুদামা কুঠির'। সামনের সাইন বোর্ডে তা লেখা আছে। আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি। তাছাড়া বিবেক লস্কর কী এই ঠিকানাই আপনাকে দিয়েছিল? আপনি ভুল করেন নি তো?"

"না-না, ভুল তো হবার কথা নয়। ভুল করিনি। এই ঠিকানাটাই দিয়েছিল। তবে কী জানেন, বয়স হয়েছে তো, চোখেও একটু কম দেখি, তাই বাইরে বাড়ির নামটি স্পষ্ট দেখতে পারিনি, কিন্তু আমার দেখা উচিত ছিল। তবে কিছু একটা যে লেখা আছে সেটা কিন্তু অনুমান করতে পেরেছিলাম। ছি ছি, শুধু-শুধু আপনাকে কষ্ট দিলাম, আমাকে ক্ষমা করবেন। চলি, এখন তো রাত সাড়ে আটটা বাজে। এত রাতে বিবেককে আর কোথায় খুঁজব! দেখি,কাল ওকে পাওয়া যায় কী না! ভাল থাকবেন, চলি। নমস্কার।" এই বলে লোকটি নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন। লোকটি গেট থেকে বের হতেই রাজবংশী সশব্দে ঘরের দরজাটি বন্ধ করে দিল। দরজা বন্ধ করেই রাজবংশী চোখ মুখ মরিচ বাটার মত লাল করে হেসে উঠল,"ইয়েস, আমরা পেয়ে গেছি। সাপ ফণা তুলেছে, এবার নির্ঘাত ছোবল মারবে। সবাই প্রস্তুত থাক।" ঠিক এমন সময়ই আবার দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। রাজবংশী ঝট করে নিজের বুক পকেট থেকে সান-গ্লাসটি চোখে পড়ে, পাশেই তৈরি রাখা গামছা দিয়ে নিজের নাক-মুখ মুহূর্তে শক্ত করে বেঁধে নিল। তারপর বুড়ো আঙ্গুল তুলে আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে দিল। বুড়ো আঙ্গুল ডাউন মানেই আক্রমণ শুরু। ঘরের ভিতরের সবাই তৈরি। পিছন দরজা দিয়ে বারান্দায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্যও কয়েকজন তৈরি। বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুলের ইশারায় এক, দুই, তিন কাউন্ট করেই বুড়ো আঙ্গুল ডাউন করে দিল রাজবংশী আর দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই ঝড়ের মত এক ঝাঁক ক্লোরোফর্ম উড়ে এল রাজবংশী চোখে-মুখে আর তার পিছন-পিছন উড়ে এল এই বড় তীক্ষ্ণ ছোড়া সহ একটি বজ্র হাত। রাজবংশীকে চিনলে-জানলে কেউ কী আর এমন বোকা কাজ করত। রাজবংশীর বিদ্যুৎ বেগের ক্যারাটের এক আঘাতেই সেই বজ্র হাত থেকে ছোরাটা ঝন-ঝন করে মেঝেতে পড়ে গেল। পরবর্তী কিকে আততায়ী মাগো, মাগো করে চীৎকার করে বারান্দায় উড়ে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়ল। ততক্ষণে পুলিশের লোকজন পিছন থেকে দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলল। আততায়ীর হাত-পা ঝটপট বেঁধে দেওয়া হল। আট-দশটা পিস্তল খুব কাছ থেকে চেয়ে রইল তার দিকে। সে বুঝতে পারল, আজ যমরাজের হাত থেকে পালানো আর পথ নেই; মাথায় অনেক অপরাধের ভার; সাধের জীবনের এই শেষ। সাথে-সাথেই সে নিজের গলায় ঝুলিয়ে রাখা একটি তাবিজ মুখে পুড়ে দিল। পটাশিয়াম সাইনাইড। প্রাণ হীন দেহটি এলিয়ে পড়ল বারান্দায়। ততক্ষণে পুলিশের হুইসল বেজে উঠল একের পর এক। রাজবংশীর গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটর সাইকেল উল্কার বেগে ছুটে পালাতে লাগল। পিছনের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িটি সেই মোটর সাইকেলটিকে ধাওয়া করল, কিন্তু তাকে ধরা গেল না। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে সেই মোটর সাইকেল পালিয়ে গেল। ওয়ারলেসে এই খবর ছড়িয়ে দেওয়া হল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে; চারিদিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে-একে পুলিশের গাড়ি এসে জড়ো হতে লাগল রাজবংশীর বাড়ির সামনে। চরম সতর্ক বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হল চন্দ্রবালা, সুবল সেন আর মুনমে মাইক্রো ফাইনাইন্স কোম্পানিতে।

এদিকে রাজবংশীর বারান্দায় মৃত আক্রমণকারীকে দেখে সবাই আকাশ থেকে পড়ল, আরে, এ তো সেই চা-ওয়ালা, সেই চায়ের দোকানদার! রাজবংশী একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতে লাগল। এই বুঝি ছিল তার চায়ের অর্ডার!

Next Part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    33    34    35    (36)     37    38    39    40   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717