Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ৩
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ৩

যথা সময়ে তুলারাম পাড়ায় বিয়ে হয়ে গেল আট বছরের নয়নবুধীর। রাজধানী থেকে ঘোড়ায় চড়ে সেনা-সৈন্য নিয়ে বর এল, বরযাত্রীক এল। বরযাত্রীরা সবাই সিপাহি, বরও সিপাই। বেশ আনন্দ-উল্লাসে বিয়ে হয়ে গেল নয়নবুধীর। কয়েকদিন ধরে চলল একের-পর এক অনুষ্ঠান। হঠাৎ একদিন দুপুরে ঘোড়ায় চড়ে কিছু সৈন্য তুলারাম পাড়ায় হাজির। সংবাদ এসেছে, "বঙ্গের সাথে মহারাজ বিজয়মাণিক্যের যুদ্ধ-যুদ্ধ অবস্থা। আজকের মধ্যেই রাঙামাটিতে উপস্থিত হতে হবে; এমনটাই সেনাপতির আদেশ। হাতে সময় নেই, এখুনি রওনা দিতে হবে।"

সিপাহীর জীবন শুধু এক সিপাহীই জানে। সকল আনন্দ-অনুষ্ঠান মাঝ পথে ছেড়ে, সকল আত্মীয়-পরিজনকে বিদায় জানিয়ে, বরযাত্রী সহ বর তখুনি বেরিয়ে পড়ল রাঙামাটির অভিমুখে। নববধূ রয়ে গেল তুলারাম পাড়াতে, প্রথা-মেনে তাকে আরও কয়েকবছর থাকতে হবে বাপের বাড়িতেই।

এখন কান পাতলে চারিদিকে শুনা যায় যুদ্ধের আতঙ্ক; অথচ যুদ্ধের কোনও খবর পৌঁছায় না তুলারাম পাড়ায়। যুদ্ধের পাশাপাশি চাপা উদ্বেগে উড়ে বেড়ায় নয়নবুধীর কথা। সবে মাত্র বিয়ে হল, আর এরই মাঝে বরকে যুদ্ধে চলে যেতে হল! মেয়েটির কপালে কী আছে কে জানে? অনেকে আবার গল্প জমায়, "কত ভাগ্যবান নয়না! কেমন জঙ্গল থেকে উড়াল দিয়ে সোজা গিয়ে পড়ল রাজধানীতে; রাজ-কর্মচারীর ঘরে, একেবারে রাঙামাটিতে! ভাবতেই অবাক লাগে, পেঁচার বাসা থেকে চন্দন বনে!! চাঁদের দুয়ারে যাবার এমন ভাগ্য কী সবার হয় গো? আর জামাইটিকে দেখ? কত সুন্দর! যেন সোনার টুকরা, ঠিক রাজপুত্র! যেমন চেহারা, তেমনি গা-গতর। কপাল দেখো নয়নার; খাসা ময়না পেয়েছে গো!"

বিয়ের পর গ্রামে নয়নবুধীর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। রাজ-কর্মচারীর বৌ বলে কথা; তাও একেবারে রাজধানীর বৌ। নয়নবুধীর বাপ-মা'র সম্মানও বেড়ে গেল কয়েকগুণ। সবাই তাদের খুব সম্মানের চোখে দেখতে লাগল। এমন সন্তান কী সবার থাকে, মা-বাবা'র সম্মান যারা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়! নয়নাকে নিয়ে খুব গর্ব তার মা-বাবার। গর্বিত সমগ্র তুলারাম পাড়া; নিজেদের মাঝে রাজ-কর্মচারীর সম্বন্ধ পেয়ে।

কিন্তু এত কিছুর পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও দেখা দিল। সম্মানের চাপে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেল ছোট্ট নয়নবুধীর। রাতারাতি পাল্টে গেছে নয়নবুধীর জীবন। যেখানেই যায়, সবাই তাকে চোখে-চোখে রাখে। কেউ বলে, "ওমা! রাজ-কর্মচারীর বৌকে কী এমন খেলা খেলতে আছে? এ যে অতি সাধারণ খেলা গো, শিশুদের খেলা। এ খেলা তোমায় মানায় না গো দিদি!"
কেউ বলে, "শ্বশুর বাড়ির লোকজন যদি জানে তুমি এ খেলা খেলছ, তখন কত মন্দ বলবে বলো তো? কী ভাববে আমাদের?"
কেউ বলে, "চুল-বাঁধাটা হয়নি গো দিদি! বিয়ের পরে আবাঁধা চুল রাখতে নেই? এখন তো তোমার বাঁধা সংসার, তাই আমাদের মত চুলটা বাঁধতে শেখো!"

প্রাণ চঞ্চলা, ছটফটে, কচি নয়নবুধী বাঁধা পড়ে যায় জাগতিক সম্মানের শক্ত পিঞ্জরে। কিন্তু মন কী মানে? দুর্বার, চঞ্চল, পাহাড়ি ঝর্ণাকে শাসন দিয়ে কী আটকে রাখা যায়? নয়নবুধীকেও আটকে রাখা যায়নি। সুযোগ পেলেই চুপি-চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। ভুতের বাতাস গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ায় বন-পাহাড়ে, চম্পক আর ইন্দ্রের সাথে! দুর্বার ঘূর্ণিবাত আপন মনে পাক খায় তুলারামের প্রতি গবাক্ষে; দুই ডানা, চম্পক ও ইন্দ্রের উপর ভর করে।

তিন বন্ধুর মিলিত হবার দুটি জায়গা আছে তুলারাম পাড়াতে। একটি হল, পাশের টিলার একটি বৃহৎ বটের ছায়া। তিন বন্ধু এর নাম দিয়েছে বটুকৃষ্ণ। অপরটি, সেই টিলার নীচের একটি বড় পুকুর। ওরা এর নাম দিয়েছে নটুকৃষ্ণ। বটুকৃষ্ণ আর নটুকৃষ্ণ ওদের চোখে এক দৃশ্যকাব্য, সকল খেলার সাথী। বটুকৃষ্ণের ছায়ায় বসে ওরা নানান খেলা খেলে। জনপদের অন্য বালক-বালিকারাও এসে জুটে। প্রবীণদের আড্ডার প্রধান জায়গা এই বটুকৃষ্ণ।

অপরদিকে, নটুকৃষ্ণের জল অতি পরিষ্কার, একেবারে ফক-ফকে সাদা। এই নটুকৃষ্ণের জলে সমগ্র জনপদটির তৃষ্ণা মিটে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জনপদের মেয়েদের ভিড় লেগেই থাকে নটুকৃষ্ণতে। নটুকৃষ্ণর তীরে একটি বড় কাঁঠাল গাছের ছায়ায়, মরা আমের গুড়িতে বসে তিন বন্ধুতে খুব গল্প করে। আজও ওরা একসাথে নটুকৃষ্ণতে জড়ো হয়েছে। শুরু হয়েছে গল্প-

চম্পক উদাস নয়নে বলল, "ঐ দেখেছিস, আকাশটা কেমন নীল হয়ে আছে? না জানি কেন আকাশটা কখনো নীল হয়? আবার কখনো লাল হয়? ঐ দেখ, ঐ দিকে চেয়ে দেখ, কেমন রূপ ধরেছে?"

চম্পককে একটা টপকা মেরে, খুব বিজ্ঞের মত নয়না চটপট জবাব দিল, "আমি জানি! আমি জানি! আমি তো রাজ-কর্মচারীর বৌ, তাই সব কিছু আমার জানা। তোদের যখন-যা কিছু প্রশ্ন, আমাকে জিজ্ঞেস করবি! এবার বলছি শোন, মহারাজ আকাশটাকে যখন-যেমন আদেশ করেন, আকাশটা তখন-তেমন রং মাখে। মহারাজ যখন বলেন, নীল হ; তখন আকাশটা নীল হয়। মহারাজ যখন আদেশ করেন, লাল হ; তখন আকাশটা লাল হয়ে যায়। বুঝলি মুরক্ষ!"

"তাহলে মেঘগুলি কেন ক্ষণে-ক্ষণে এত রূপে বলদে যায়?"

"এই যে বললাম, মহারাজের আদেশ! মহারাজ মেঘদেরও তো আদেশ করেন। রাজ-আদেশে ওরা এত রূপ বদলায়। রাজ-আদেশ বলে কথা!"

"তাহলে বৃষ্টি কেন হয়?"

"মহারাজের আদেশ।"

"কোন মহারাজ? মহারাজের নামটা তো বল?"

মহারাজের নাম বলতে গিয়ে উচ্চারণটি মুখে আটকে গেল ছোট্ট নয়নবুধীর। নিজের অক্ষমতা প্রকাশে খুব ক্ষেপে গেল সে। চীৎকার করে বলতে লাগল, "মহারাজের নাম জানিস না, মুরক্ষ? মহারাজের নাম না জানলে একদম চুপ করে বসে থাকবি! এত-শত প্রশ্ন করবি না? জানিস-না, আমি রাজধানীর বৌ? আর রাজধানীর বৌয়েরা এত কথার জবাব দেয় না!"

চম্পক আর ইন্দ্র চুপ করে তাকিয়ে রইল নয়নবুধীর দিকে। মনে অনেক প্রশ্ন, কিন্তু প্রশ্ন করবে-কি করবে না, ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে নয়নবুধী নিজেই জবাব দিল, "তোরা কী আমার বিয়েতে এসেছিলি? বিয়ের আসরে তো তোদের একজনকেও আমি দেখিনি!"

চম্পক মুখ বেঁকিয়ে বলল, "বিয়েতে আসব! হেঁএ! মা তো টং থেকে নীচেই নামতে দেয়নি।"

"তুই এসেছিলি ইন্দ্র?"

বেশ অভিযোগের সুরে ইন্দ্র বলল, "হ, আমি তো এসেছিলাম। তোর বাবা রাক্ষসের মত ধমক দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিল।"

"কেন?"

"কেন আবার কী? আমি চুপি-চুপি বিয়ের আসরে এসে দেখি, তুই তোর বাবার কুলে ঘুমচ্ছিস। গলায় বেল ফুলের মালা, মুখে ধানের ছড়া আঁকা, চন্দন দিয়ে। পাশে অনেক লোক বসে গল্প করছে, হাসাহাসি করছে। আমি কাছে গিয়ে ধীরে-ধীরে তোকে ডাকতে লাগলাম। তখুনি তোর বাবা বেক্ষসের মত তেড়ে-মেরে এমন ধমক দিল যে, ভয়ে আমি ভেঁত করে কেঁদে দিলাম। আমার বাবা না-জানি কোথা থেকে ছুটে এল, বাবাও আমাকে খুব ধমক দিয়ে ওখান থেকে বিদেয় করল। এত ধমকালে কী আর বিয়ে হয়? সব বেক্ষসের দল! এক পাগলার দশ ভুত!"

ঠিক এমন সময় টিলার উপরে খুব দৌড়া-দৌড়ী, হুড়া-হুরি শুরু হয়ে গেল। রক্তিম চোখে জঙ্গল অভিমুখ থেকে ঝড়ের বেগে দৌড়ে এল অখিরা; হাতে শক্ত করে ধরা উন্মত্ত টাক্কাল। আসন্ন প্রাণঘাতী বিপদের কথা জানান দিতে গায়ের জোরে, গলা-ফাটিয়ে, চীৎকার করে বলতে লাগল সে, "আয়ে রে! আয়ে রে! আয়ে রে! আয়ে রে!"

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717