Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ৭
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ৭

তুলারাম পাড়াকে এখন মন্দির বলে মনে হয় নয়নবুধীর; মানুষগুলিকে দেবতা। মনের এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলল নয়নবুধী। এখন রাজধানী আর ভাল লাগেনা তার, রাজাকেও ভাল লাগেনা। শিকড়-বাকড় ছেড়ে চলে যাবার কথা মনে হলেই যন্ত্রণায় ক্যাঁকিয়ে উঠে সে। নিজের অস্তিত্ব, নিজের চোখের সামনেই একে-একে মুছে যেতে থাকে তার, এ কী কম যন্ত্রণার? মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, তুলারাম পাড়া ইত্যাদির কথা ভেবে-ভেবে প্রায় রাতেই নীরবে কাঁদে সে। সেদিন এমনি অবস্থায় হঠাৎ তার মনে হল, "সত্যিই তো, ইন্দ্র যদি আমাকে বিয়ে করত, তাহলে খুব ভাল ছিল। মরণ-বাঁচন, সুখ-দুখ সব এখানেই থাকত, সবার সাথে থাকত, ওর সাথে থাকত। বুকের প্রেম নিয়ে, খুশি আর আনন্দে, একে অপরের সাথে মিলেমিশে ভাঙা টংয়ে থাকতাম, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতাম। আজ বুঝি সুখের কামনায় ধনী রাজকর্মচারী পেয়ে ভিখারি হলাম; রাজধানীর ভিখারি!" একথা ভেবে চোখ দিয়ে টপ-টপ করে জল গড়িয়ে পরতে লাগল তার। ঘন-ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগল সে। বুকের এই তপ্ত আগুন কে শীতল করবে?

মন মরা নয়নবুধী আজকাল প্রায়ই ড্যাব-ড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকে ইন্দ্রের দিকে। তার চোখ দুটি, মনের সকল কথা জলের মত বলে দেয় ইন্দ্রকে। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে সবকিছু বুঝেও অবুঝ হয়ে থাকে ইন্দ্র। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারে-বারে ইন্দ্রের সামনে প্রেম-ভালবাসার কথা তুলে নয়নবুধী, কিন্তু ইন্দ্র সুনিপুণ ভাবে এড়িয়ে যায় সবকিছু। নয়নবুধী অনেক মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে, কিন্তু ইন্দ্র কি আর জল হয়? সেদিনের নয়নবুধীর সেই প্রত্যাখ্যান, চেতনার এক দক্ষ কারিগর বানিয়ে দিল ইন্দ্রকে। আজ সে একজন বিবেকবান পুরুষ। সে জানে, নয়নবুধী পরের বৌ, তাছাড়া বাল্যবন্ধু হলেও সমাজের রীতি-নীতি বলেও তো একটি কথা আছে! তৃষ্ণার্ত নয়নবুধী বেঁচে থাকার আশা নিয়ে ছল-ছল চোখে তাকিয়ে থাকে ইন্দ্রের দিকে; আজ ইন্দ্র বরাবরই নিরুত্তাপ।

এক পক্ষকালের মধ্যে হঠাৎ একদিন পনের-বিশ জন সিপাহীকে সাথে নিয়ে নয়নবুধীর জামাই, হীরামন হাজির হল তুলারাম পাড়ায়। চারিদিকে সাড়া পড়ে গেল, "নয়নার জামাই এসেছে! নয়নাকে নিতে এসেছে। নয়না রাজধানীতে যাবে, উদয়পুরে যাবে!"

খুব খাতির করা হল অতিথিদের। সকল আনন্দ শুধু এক রাতের জন্য। সকাল হতেই সমগ্র তুলারাম পাড়াকে চোখের জলে ভাসিয়ে, জামাইয়ের সাথে বিদায় নিল নয়নবুধী; চিরদিনের জন্য। এক পাহাড়ি কন্যা, বৌ সেজে, বরের ঘোড়ায় চড়ে চলল রাজধানী উদয়পুরের দিকে। বটুকৃষ্ণের পাশ দিয়ে যাবার সময়, মা'র দেওয়া কড়ি প্রণাম করে বুড়ো বটের দিকে ছুড়ে দিল নয়নবুধী।

জনপদের সবাই নয়নবুধীকে বিদায় জানালেও চম্পক আর ইন্দ্রকে গত রাত থেকেই দেখা যায়নি। কারণটি নয়নবুধী খুব জানে, হৃদয়ের আঘাত হৃদয় সইতে পারে না। বিদায়ের এই দংশন ওরা সইবে কী ভাবে?

তুলারাম পাড়ার শেষ সীমানায়, যার পরে শুধু গভীর বন-আর বন, সেখানে বনফুলের বড় একটি তোড়া হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চম্পক আর ইন্দ্র। যাদের দেখতে মন-প্রাণ এত ব্যকুল ছিল, দুর থেকে তাদের দেখে অঝরে কাঁদতে লাগল নয়নবুধী। তুলারাম পাড়াতে প্রাণের মানুষদের বিদায় দিয়ে-দিয়ে হৃদয় আজ দিশাহারা, রিক্ত। যন্ত্রণার কত ভার আর বইবে সে? চোখ আর কত কাঁদতে তার? নিজের প্রাণের মত প্রিয় দুই বাল্যবন্ধুকে বিদায় জানাবার মত মনের দৃঢ়তা তার বুকে আর অবশিষ্ট রইল না। সে তাদের দিকে ফিরে তাকাতে পারল না। আঁচলে মুখ চেপে, অতল সাগরের ঝড় বুকে নিয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে দুরের শ্যামল বনানীর দিকে তাকিয়ে রইল সে; তবু চোখে কিছুই পড়ল না। বিদায়ের এই রূপ তাদের দেখাতে পারল না সে, নিজেও দেখতে পারল না।

চম্পক আর ইন্দ্র ফুলের তোড়াটি হাতে নিয়ে অসহায় ভাবে তেমনি দাঁড়িয়ে রইল ওখানে। নয়নবুধী তাদের পাশ দিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে চলে গেল, ফিরেও তাকাল না। দুই বন্ধু চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইল নয়নবুধীর চলে যাবার পথের দিকে। ধীরে-ধীরে নয়নবুধী পাহাড়ি পথ ধরে, সবার সাথে চলে যেতে লাগল দুরে-বহু দূরে। তখনো নয়নবুধীর কান্নার শব্দ ভেসে-ভেসে আসছিল। যতক্ষণ নয়নবুধীকে দেখা গেল, ততক্ষণ দুই বন্ধু ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল তেমনি ভাবে, প্রত্যাখ্যাত ফুলের তোড়াটি হাতে নিয়ে।

সিপাহীদের সাথে ধীরে-ধীরে গভীর বনের মাঝে মিলিয়ে গেল নয়নবুধী, যেন মনের মাঝেই মিলিয়ে গেল, চিরতরে; ডুবে গেল সময়ের এক বিন্দুতে, এক রূপসী জল-কন্যার মত; চাইলেও তাকে আর দেখা যাবে না, ধরা যাবে না, শোনা যাবে না।

ওদিকে শোকের সাগরে ডুবে গেল তুলারাম পাড়া। বালক-বালিকা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার চোখে জল। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে? কে কাকে বুঝাবে? আজ সবুজ বনের নির্জন প্রকৃতি ছাড়া তুলারাম পাড়াকে সান্ত্বনা দেবার বুঝি কেউ নেই! হলও তাই! দেখতে-দেখতে উজ্জ্বল আকাশের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে গেল, চারিদিক অন্ধকার হয়ে এল। প্রচণ্ড ধুলা উড়িয়ে, দৈত্যের মত গাছের ঢাল-পালা দাপিয়ে, খুব জোরে বয়ে যেতে লাগল হাওয়া। কড়-কড় করে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল আকাশে। এই অসময়ে ভয়ানক এক তুফান ছুটে আসতে লাগল তুলারাম পাড়ার দিকে। এ-কি কোনও অশুভ, অঘটনের পূর্বাভাস? না-কি, এক বিষাদকে কেটে দিতে আরের বিষাদের সুনিপুণ উপস্থিতি; প্রকৃতির সুদক্ষ হাতিয়ার। সকল বেদনাকে উড়িয়ে দিতে উড়ে আসতে লাগল এক ভয়ঙ্কর তুফান তুলারাম পাড়ার দিকে। চারিদিকে সবাই ছুটা-ছুটি করে ঘরে চলে যেতে লাগল, দরজা বন্ধ করে দিতে লাগল; ভেঙ্গে গেল দুঃখের হাঁট।

Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717