পুনরাবৃত্তি
- রিফাহ রাফিয়া বারী, আমলাপাড়া, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ
একটি নির্বাচিত গল্প
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, ২০২০
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
গল্পের শুরুটা ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল কোন এক সকালের।
টুম্পা তড়িঘড়ি করে রেডি হচ্ছে, তাকে ক্যাম্পাসে যেতে হবে। টুম্পা কিছুটা ভীত ও চিন্তিত। আজকে তার জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন, তার স্বপ্নের পথচলা আজকে থেকেই শুরু হতে পারে,
আর না হলে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। সে কোন কিছুই ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছে না। নাস্তা না করেই বাসে করে সে ক্যাম্পাসের পথে রওনা হল।
সেমিনার হল। হলের আলোক সজ্জা দেখে টুম্পার চোখ ধাঁদিয়ে গেলো। হল ভর্তি মানুষ, দেশের বিশিষ্ট জনদেরও আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। টুম্পা আয়োজনটা যতটা না বড় আশা করেছিলো,
এখন মনে হচ্ছে আয়োজনটা তার থেকেও বড়। আয়োজন শুরু হল। প্রথমে বিশিষ্ট জনদের বক্তৃতা হল। তারপর শুরু হল পুরষ্কার বিতরণী। টুম্পা নিশ্বাস বন্ধ করে বসে রইলো,
এই সেই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। হঠাৎ টুম্পা শুনতে পেল মাইক্রোফোনে তার নাম ঘোষণা করো হল। টুম্পা তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলো না কিন্তু ততক্ষণে সকল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ,
ফোকাস টুম্পার দিকে। টুম্পা এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের প্রথম স্বীকৃতির দিকে। টুম্পা এবার ক্যাম্পাসে বর্ষসেরা গল্পকার নির্বাচিত হয়েছে। পুরষ্কার বিতরণীর পর হল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,
বন্ধুরা অনেক হৈ-হুল্লোড় করলেও টুম্পা তখনো ঘোরের মধ্যে ছিল। অনুষ্ঠান শেষে টুম্পাকে ঘিরে বন্ধুদের উচ্ছ্বাসের কমতি রইলো না। হঠাৎ করে তাদের মধ্যে রিহানের আগমন ঘটলো।
রিহান এবার সাহিত্যের অন্য ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন হওয়ায় টুম্পার সাথে রিহানের খুব একটা পরিচয় ছিল না। আজই প্রথম টুম্পার সাথে রিহানের পরিচয় ঘটলো।
গানে, গল্পে আড্ডায় সেদিনের বিকেলটা টুম্পার জীবনে স্মরণীয় হয়ে রইলো। প্রথম পরিচয়ের পর থেকে রিহানের সাথে টুম্পার প্রায়ই দেখা হতো। দুজন ই একই স্বপ্নের পথিক হওয়ায় গল্পে, আড্ডায়
তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে বেশি সময় লাগে নি। প্রথমে বন্ধুত্বটা ক্যাম্পাসের দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে ম্যাসেজের টুংটাং শব্দে পরিণত হল। ধীরে-ধীরে জানা শোনা বাড়লে ক্যাম্পাসে চা খাওয়ার
অজুহাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, রাত জেগে একে অপরের এসাইনমেন্ট করে দেওয়া, দিন শেষে ফোনালাপে সারাদিনের খুঁটিনাটি নিয়ে গল্প করতে-করতে হাসিতে লুটিয়ে
পরা যেন নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছিলো। ক্যাম্পাসে যেন একে অপরকে ছাড়া চলতোই না। একসময় ক্যাম্পাসের সব থেকে ভালো বন্ধুর তকমাটাও পেয়ে গেলো। সবাই যে এই বন্ধুত্বকে শুধুই বন্ধু হিসেবে
ভাবতো তা নয়। অনেকে এই বন্ধুত্বতে প্রেম বলে আখ্যায়িত করলো। রিহান অন্যের কথায় কান না দিলেও টুম্পা মাঝে-মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে এ কি শুধুই বন্ধুত্ব?
নাকি তার থেকে আর একটু বেশি! এ কি ভালোবাসা! পরক্ষণেই টুম্পা সকল সংশয় ঝেড়ে ফেলে দিতো, সে এগুলা ভেবে কোনভাবেই বন্ধুত্বটাকে হারাতে চায় না। ভাবতো ভালবাসা কি এতই সহজ নাকি!
তবে টুম্পা যে রিহানের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরছে, এটা সে বুঝতে পারে!
হঠাৎ করেই একদিন রিহান টুম্পাকে তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলে। রিহান আগে কখনো এতটা তাড়া দেয়নি, রিহান ঠিক আছে কি না, তা ভাবতে-ভাবতে টুম্পা মনে-মনে অস্থির হয়ে পড়লো।
রিহানকে আজ খুব খুশি দেখাচ্ছে। রিহান যে ঠিক আছে, এটা দেখেই টুম্পা হাফ ছেড়ে বাঁচল। টুম্পার জন্য সারপ্রাইজ বলে, রিহান পরিচয় করিয়ে দিলো তার ভালবাসার মানুষ সিনথিয়ার সাথে।
টুম্পা এতে মনে-মনে চমকালেও তা প্রকাশ করলো না। এই প্রথম টুম্পা রিহানের প্রতি আলাদা টান অনুভব করলো। মনের মাঝে তোলপাড় শুরু হলেও তা আড়াল করে তাদের আলাদা সময় কাটানোর জন্য
ছেড়ে দিয়ে টুম্পা সেখান থেকে চলে আসলো। আসার সময় তার চোখ থেকে এক বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়লো! এ অশ্রুর নাম ই কি তবে ভালোবাসা?
টুম্পা কি তবে রিহানকে ভালোবেসে ফেলেছে? টুম্পা প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো জানে, কিন্তু সে মনের কোণে সেই উত্তর গুলোকে ঠাঁই না দিয়ে সেই উত্তর গুলোকে মনের কোণে চিরকালের জন্য চাপা দিয়ে দিলো!
রিহানও কখনো জানবে না এই উত্তর গুলো! মাঝে মাঝে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর অর্থহীন হয়ে পরে, সেই উত্তর গুলো অজানা থাকাই ভালো!
রিহানের সাথে টুম্পার বন্ধুত্বটা ফিকে হতে শুরু করলো! আসলে ফিকে হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? সময় যখন ভাগ হয়ে যায় তখন তো মানুষ ভালোবাসার মানুষকেই অগ্রাধিকার দেয়।
টুম্পার তা মেনে নিতে কষ্ট হলেও ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসাকে সার্থক করতে তাকে যে ত্যাগ করতেই হবে! এদিকে রিহানের আচরণে টুম্পা বুঝতে পারে রিহান টুম্পাকে অবিশ্বাস করে!
যেকোনো সম্পর্কের ভীত-ই হল বিশ্বাস, সেই ভীত ই যখন নড়বড়ে হয়ে যায় তখন সম্পর্কটা ঠুনকো হয়ে পরে! এবার টুম্পা-রিহানের বন্ধুত্বে আঘাত আসতে শুরু করে!
রিহান-সিনথিয়া'র কথা জানতে পেরে ক্যাম্পাসের সবাই অবাক হয়ে যায়। তারা যে বন্ধুত্বটার পরিণতি অন্যরকম ভেবেছিলো তা ভিন্ন হওয়ায় বিস্ময়ের পরিমাণটা একটু বেশি ছিল।
"টুম্পা, আর আমার প্রেমিকা! শুধু লিখতে জানলেই হয় না, প্রেমিকা হতে গেলে চেহারা লাগে! প্রেমিকা হলে সিনথিয়ার মত প্রেমিকা হওয়া উচিত,"
কোন এক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে রিহানের এই কথাগুলো দূর থেকে শুনতে পাওয়া টুম্পার জগতটাকে এলোমেলো করে দেয়। টুম্পার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে থাকে!
প্রিয় বন্ধুটির মুখ থেকে শোনা কথা গুলো তার হৃদয়ে তীরের মত বিধে যায়। একটা মানুষ তার কাজে আর মানসিকতায় এতটা ভিন্ন কিভাবে হতে পারে, টুম্পা ভেবে পায় না!
যেখানে রিহানের প্রতিটি লেখা, শারীরিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে কর্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করার কথা বলে, সেখানে রিহানের এই ধরনের মানসিকতায় টুম্পা হতভম্ব হয়ে যায়।
আসলে প্রতিটি মানুষই নিখুঁত অভিনেতা। মুখে বড়-বড় বুলি আওড়ালেও সকলে আসলে বাহ্যিক সৌন্দর্যের পূজারী। সত্যি হয়ে যায় প্রবাদ বাক্যটি "আগে দর্শনধারী, তারপর গুণ-বিচারী!"
টুম্পার ব্যক্তিসত্তায় আঘাত লাগে, টুম্পা ধীরে ধীরে রিহানের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। একটা মানুষের উপর নির্ভরশীলতা কিভাবে একজনকে কুড়ে-কুড়ে শেষ করে দেয় সে বুঝতে শুরু করে।
টুম্পা সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সে হয়ে পরে একা, সম্পূর্ণ একা! টুম্পা যে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন, সেদিকে রিহানের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কিভাবেই বা থাকবে, রিহান তো নিজের মধ্যে নেই।
রিহান ও যে অন্য কারো প্রতি নির্ভরশীল! নির্ভরশীলতা কাউকে করেছে সম্পূর্ণ একা, কাউকে ভাসিয়েছে আবেগের অথৈ সাগরে, আর দুজন বন্ধুকে করেছে একে অপর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা!
এরই মাঝে ছয় মাস কেটে গেছে। টুম্পা সাহিত্য অঙ্গন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, রিহানের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুতে সে নিজেকে জড়াতে চায় না। কি আশ্চর্য! তাই না!
যে জগতটা ছিল টুম্পার প্রাণ, সেই সাহিত্য জগতই কিনা তার ভালো থাকার পথে বাধা! আসলেই কি বাধা, না-কি টুম্পা নিজেকে এক একাকীত্বের অদৃশ্য দেওয়ালে আটকে রেখেছে?
আজোও রৌদ্রজ্জ্বল সকাল, চারদিক আলোতে ঝলমল করছে। ক্যাম্পাসে টুম্পা একা বসে সেই রৌদ্রজ্জ্বল সকালের কথা ভাবছে যে সকালটিই ওর জীবনে নিবিড় অন্ধকার বয়ে নিয়ে এসেছে।
হঠাৎ করে সামনে তাকিয়ে দেখে রিহান মুখোমুখি বসে আছে, টুম্পা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। টুম্পা ভূত দেখার মত চমকালেও রিহানের বিমর্ষ মুখ খানি দেখে ব্যাকুল হয়ে পরে।
রিহান জানায় সিনথিয়ার সাথে তার সম্পর্কের ইতি ঘটেছে। সিনথিয়া শুধু রিহানকে তার জনপ্রিয়তার কারণে ভালবেসেছিল, কিন্তু সিনথিয়ার মোহে আচ্ছন্ন থাকায় রিহান সাহিত্যের প্রতি বিমুখ হয়ে পরে।
জনপ্রিয়তায় ভাটা পরে, সিনথিয়া চলে যায়! রিহান টুম্পার কাছে বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে এসেছে! টুম্পার একে-একে মনে পরতে থাকে ব্যক্তিসত্তায় আঘাত লাগার কথা,
তার একাকীত্বে বন্ধুর অভাবটা। কি করবে সে? টুম্পা রিহানের এই একাকীত্বে পাশে এসে দাঁড়ায়। হতাশা থেকে আগলে রাখে!
টুম্পা জানে হতাশা মানুষকে কিভাবে শেষ করে দেয়! একাকীত্বে একটা কাঁধের কতটা প্রয়োজন! টুম্পার কাছে আবেগের অনুভূতির থেকে বন্ধুত্বের অনুভূতি অনেক বড়।
বন্ধুত্বও এক প্রকার ভালোবাসা! বন্ধুত্ব এমন এক ভালোবাসা যে ভালোবাসায় নেই কোন চাহিদা, আছে শুধু শুদ্ধতম অনুভূতি। মাঝে-মাঝে এই বন্ধুত্বের ভালোবাসা সব সম্পর্ককে হার মানায়!
পাঁচ বছর কেটে গেছে! টুম্পা তার মেয়ের স্কুল ব্যাগ গোছাচ্ছে! একটি কাঙ্ক্ষিত শেষ দিয়ে গল্পের সমাপ্তি এখানে ঘটলেও ঘটতে পারতো, ঘটে নি!
টুম্পা আজ অন্য কারো ঘরণী! অন্য কারো স্ত্রী! অন্য কারো ভালোবাসার মানুষ! কারণ, রিহান আবারো তার মানসিকতার কাছে হার মেনেছিল। রিহানের মত মানুষদের ক্ষেত্রে
বহু বছর ধরে লালন করা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিনই বটে! তাদের ক্ষেত্রে দিন শেষে মানসিক সৌন্দর্য হার মানে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কাছে, হার মানে শুদ্ধতম ভালোবাসার অনুভূতি!
রিহান চলে গেলো। এবার টুম্পা ঠিক করলো, সমাজের মানসিকতা একটু হলেও পরিবর্তন করবে! নিজের স্বপ্নের পথ ধরল, ফিরে এলো সাহিত্য অঙ্গনে! রিহানকে কখনে সে জানতে দেয় নি ভালোবাসার কথা,
সব ভালোবাসার কি পূর্ণতা দরকার আছে? সব গল্পের সমাপ্তি হতে নেই! টুম্পা তার স্বপ্নের পথে এসেছিলো বলেই হারিয়ে যায় নি! হারিয়ে যায়নি যে এটাই তো গল্পের পূর্ণতা তাই না?
রাইসা ডায়েরী বন্ধ করলো! এতক্ষণ সে তার মায়ের গল্প লেখার ডায়েরী পড়ছিল, তার মা সাহিত্যের এক জনপ্রিয় মুখ। রাইসাকে কেউ বলে দেয় নি, কিন্তু রাইসা জানে এই গল্পটি তার মায়ের!
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগের তার মায়ের অতীত! এভাবেও ভালোবাসা যায়! অশ্রুসিক্ত চোখে রাইসা ভাবতে লাগলো তার মা কি আদৌও সমাজের মানসিকতা
পরিবর্তন করতে পেরেছে? তার মা কি জানে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ের জীবনে একই ঘটনা ঘটতে চলেছে? তার মা কি কখনো জানতে পারবে তার মেয়েও শুদ্ধতম ভালবাসার অনুভূতি পেতে চলেছে!
কখনো জানবে না! তবে কি রাইসার জীবনে তার মার জীবনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? ইতিহাসের কি সত্যি পুনরাবৃত্তি ঘটে! রাইসার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু ডায়েরীতে গড়িয়ে পড়লো!
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
সে তবে কে?
All Bengali Stories
62
63
64
65
66
(67)
68
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717