মরণখাদ
- শান্তনু চ্যাটার্জী, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগণা
একটি নির্বাচিত গল্প
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, ২০২০
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
সত্যস্বর পত্রিকার একটি প্রতিবেদন
২৩শে অক্টোবর, ২০০৮
অমরগিরিতে যুবতীর মৃত্যু।
নিজস্ব প্রতিবেদন - অমরগিরিতে সাগরের উপকণ্ঠে এক যুবতীর ক্ষতবিক্ষত দেহকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
শিখা দাস নামে ঐ যুবতী একটি ধাবায় কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার ধাবা থেকে বাড়ি ফেরবার পথে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।
এদিন সকালে স্থানীয় মানুষজন মোহনা সাগরতীরে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশের অনুমান এটা আত্মহত্যার ঘটনা।
বেদে পাড়ার ঐ যুবতীর এক প্রতিবেশীর কথায়, দিন কয়েক ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা চলছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ যুবতীর স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তবে অমরগিরিতে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব চন্দর কথায়, এখানকার সুপর্ণ সরণী নামে একটা রাস্তা, একটা খাড়াই পাহাড়ের ওপর এসে শেষ হয়ে গেছে।
সেই পাহাড়ের কিনারা থেকেই বছরে প্রায় তিরিশ-চল্লিশ জন লোক আত্মহত্যা করে। স্থানীয় মানুষজনের মুখে খাদটার নামই হয়ে গেছে মরণখাদ। অত্যন্ত নির্জন এই অঞ্চলটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবার জন্য
অনেকদিন ধরেই দাবী করছেন এলাকাবাসীরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে এখানকার অধিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রশাসন থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এখন এই মৃত্যু আরো একবার প্রমাণ করে দিল, এই এলাকাটা কতখানি ভয়ঙ্কর।
উত্তম মিত্রের ডায়রি
১২ই ডিসেম্বর, ২০১৮
বাবা আজ বলল, "তোকে নাবিকজেঠুর বাড়ি যেতে হবে। আমিই যাব বলে ঠিক করেছিলাম, কিন্তু অফিসে কাজের খুব চাপ। তাই আমার পক্ষে এখন যাওয়া সম্ভব হবে না।
তুই-ই যা। ওনাকে তো তুই ভালোমতোই চিনিস। আর উনিও তোকে চেনেন। কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। "
বাবার কথায় আমি একটু অস্বস্তিতে পড়লাম। নাবিকজেঠুকে যে চিনি না তা নয়। কিন্তু যে লোকটাকে আমি প্রায় সাত-আট বছর দেখিনি, তাকে আজ হঠাৎ দেখতে গেলে কেমন লাগবে সেই ভেবেই আমি
কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। বাবা আমাকে হতবুদ্ধি দেখে আশ্বাস দিল, জেঠুকে আগেভাগে ফোন করে সব কথা জানিয়েই আমাকে পাঠানো হবে। এই বলে বাবা তো আমাকে দিন তিন-চার পরে রওনা হতে বলে
চলে গেল। কিন্তু আমার কেমন-কেমন লাগছে। একটা লোককে কতদিন দেখিনি। এ কথা ঠিক যে, যে জেঠু খুবই খোলা-মেলা মনের মানুষ। কিন্তু আজ এতগুলো বছর পর আবার তাঁর সাথে যখন দেখা হতে চলেছে,
তখন কেমন লাগবে কে জানে?
বাবার কথা তো ফেলতে পারি না।
নাবিকজেঠু, বাবার জেঠুর বড় ছেলে। পঁচিশ বছরের বড় এই দাদার সঙ্গে বাবার ভাব একেবারে অভিন্নহৃদয় বন্ধুর মত। জেঠুর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা বাবার কাছে কত শুনেছি।
দীর্ঘদেহী, স্বাস্থ্যবান মানুষটা ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার এসেছেন আমাদের বাড়িতে। কিন্তু বিশ বছর ভারতীয় নৌবাহিনীতে কাজ করে আর তারপরে প্রায় বাইশ বছর সরকারী চাকরি করার পর
এখন তিনি আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে সমুদ্রের ধারে ছোট্ট বাড়ি করে থাকেন। সঙ্গে 'হরি' নামে এক চাকর সর্বক্ষণের জন্য থাকে। বাবা তো বলে, 'বৌ মরে যাওয়ার পর ওর মাথাটাই গেছে।
না হলে এই বয়সে কেউ আপনার জনকে ছেড়ে দূরে থাকে? জেঠুর দুই ছেলে। বড় ছেলে থাকে কলকাতায়। আর.বি.আইয়ে কাজ করে। আর ছোট ছেলে, ডি.আর.ডি.ওর সায়েন্টিস্ট।
হায়দ্রাবাদে আছে। দুজনেরই বিয়ে থা হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েও আছে। দুজনেই তাদের বাবাকে কাছে আনতে চায়। কিন্তু নাবিকজেঠুর এক জেদ। তিনি ঐ সমুদ্রের পাড় থেকে নড়বেন না।
যদি বাবাকে চাও, তো তোমরা এখানে এসো। এই তো হল নাবিকজেঠুর কথা। এখন দু-তিনদিনের মধ্যে জোগাড়যন্ত্র করে বেরোতে হবে।
কলেজের এখন ছুটি। আর এটাই আমাকে পাঠানোর মূল কারণ। যাই হোক, এখানে যা হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়েছে, তাতে সমুদ্রের ধারে গেলে ভালোই লাগবে মনে হয়।
১৫ই ডিসেম্বর, ২০১৮
দুদিন লেখালিখি বন্ধ ছিল। এর কারণটা অবশ্যই হল যাওয়ার তোড়জোড়। নিজের জামাকাপড় গোছানো হয়ে গেছে। ট্রেনের টিকিট কেটে আগাম আসন সংরক্ষণ করে রেখেছি।
আর হ্যাঁ, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খবর হল, নাবিকজেঠুর সাথে কথা বলেছি। আমি, বাবা, মা তিনজনেই ভালোভাবে কথা বলেছি জেঠুর সাথে। কথা বলে মনে হল, এখনও উনি আগের মতোই খোলা-মেলা স্বভাবের আছেন।
আমার সাথে কথা শুরু হতেই তিনি বলে উঠলেন, "কি রে চাঙ্গা বিশু। কেমন আছিস?" উনি আমাকে ছোটবেলায় যে চাঙ্গা বিশু বলে ডাকতেন, সেটা ওনার এখনও মনে আছে দেখে খুব ভাল লাগল।
তবে আজ বাবার কাছে যেটা শুনলাম, সেটা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। বাবা জানাল, নাবিকজেঠুর ক্যান্সার হয়েছে। এই অবস্থায় ওনার পক্ষে অমন একটা অজ এলাকায় একা-একা থাকাটা নিতান্তই অনুচিত।
তাই মানিকদা, মানে জেঠুর বড় ছেলে চাইছে জেঠুকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু জেঠুকে রাজী করানোটাই মুশকিল। যাই হোক, আমিও জেঠুকে বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে বলব।
জানি না, উনি আমার কথা কতদূর শুনবেন। তবে বাবাকে দেখে মনে হল, এ ব্যাপারে বাবা খুবই উদ্বিগ্ন। আর নিজে এখন যেতে পারছে না বলে আমাকে পাঠাচ্ছে। এই ফাঁকে অবশ্য আমার একটু ঘুরে আসা হবে।
একা একা দূরপাল্লার ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার আগে একবার হয়েছে। তবে কাল যে যাব - এই নিয়ে একটা উত্তেজনাও মনে-মনে কাজ করছে।
না হলে, রাত এই সাড়ে বারোটার সময়েও আমার চোখে ঘুম থাকবে না কেন? কাল ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় ট্রেন। মা বলেছিল, সাড়ে ন'টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে।
সেই মত ন’টার মধ্যে খাওয়াদাওয়াও শেষ করে নিয়েছিলাম। এখন আর ঘুমই আসছে না।
১৭ই ডিসেম্বর, ২০১৮
এইভাবে এতদূরে একা একা কারুর বাড়ি যাওয়া আমার জীবনে এই প্রথম। ট্রেনে ঘুমটা ভালোই হয়েছিল। স্টেশন আসার একটু আগে ঘুমটা ভেঙেছিল ভাগ্যিস! নইলে আর নামতে হতো না।
যাই হোক, ট্রেন থেকে নেমে একটা অটো ভাড়া করে জায়গাটার নাম বলতেই একটা রাস্তার মোড়ে এসে অটোটা দাঁড় করাল। ভাড়া নিল দশ টাকা। সামনে তাকিয়ে দেখি হরিকাকু রাস্তার মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে।
আগে ওনাকে অনেক জোয়ান দেখেছিলাম। এখন মাথার চুল সব সাদা হয়ে গেছে। মুখে খোঁচা-খোঁচা কাঁচাপাকা দাড়ি। নাবিকজেঠুর সাথে উনিও আমাদের বাড়িতে অনেকবার এসেছেন।
আমাকে আসতে দেখে হরিকাকু ঈষৎ হাসলেন। তারপর পরস্পর কুশল বিনিময় করতে-করতে দুজনে এগোতে থাকলাম।
নাবিকজেঠুর বাড়িটা একটা অসাধারণ জায়গায়। সমুদ্রের ধারে একটা ছোট পাহাড়। আর তারই একপাশে জেঠুর একতলা ছোট একটা বাড়ি। বাড়ির সামনের যে রাস্তাটা, সেটা জেঠুর বাড়ি পর্যন্ত এসেই শেষ হয়ে গেছে।
ওদিকটায় আরেকটু এগোলে বেশ বড়ো-সড়ো একটা খাদ। প্রায় চল্লিশ ফুটের ওপর গভীর এই খাদটার নিচে রয়েছে বালিয়াড়ি। আর তার থেকে কিছুটা এগিয়েই শুরু হয়েছে সমুদ্রতট।
সামনে তাকালে দেখা যায় চিকচিক করছে সমুদ্রের জল। আমি বাড়িতে ঢোকার আগে ঐদিকে একটু যেতে গেছিলাম। হরিকাকু আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলেন। আর চোখ পাকিয়ে বলে উঠলেন, "ওইদিকে যাবে না বাবু।
ওইটা হইল মরণখাদ!"
আমি হরিকাকুর কথা বিশেষ বুঝলাম না। ওকে কিছু জিগ্যেস করবার ইচ্ছেও হল না। কারণ আমি তখন ঐ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। এখানে প্রতি মুহূর্তে ভেসে ভেসে আসছে
সেই সমুদ্রের গর্জন। নাবিকজেঠুর বাড়ির সামনেই আছে একটা ছোট উঠোন। তাতে বিভিন্ন ধরনের ছোট-ছোট ফুলের গাছ।
আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলাম তখন সাতটা বেজে গেছে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখলাম নাবিকজেঠু বাড়ির সামনের উঠোনটায় উবু হয়ে বসে আগাছা পরিষ্কার করছেন। জেঠু আগের থেকে একটু রোগা হয়েছেন
বলে মনে হল, আর মুখে অনেক দাড়ি রেখেছেন। আমাকে দেখে উঠে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও চট করে প্রণামটা সেরে ফেললাম।
কি রে কেমন আছিস? ইত্যাদি কুশল বিনিময় কিছুক্ষণ হল। তারপর উনি আমাকে বারান্দাতে একটা চেয়ারে বসতে দিলেন আর হরিকাকুকে নিয়ে ভেতরের ঘরে গেলেন।
আমি বসে বসে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। সূর্য বেশ কিছুটা উঠেছে। সমুদ্রের জলে তার আলো পড়ে মনে হচ্ছে যেন শত-শত মণি-মুক্তো ছড়ানো আছে সামনের ঐ অসীম বিস্তৃত জলরাশির ওপরে।
সমুদ্র খুব হাওয়া দিচ্ছিল সকালবেলাতে, লোনা হাওয়া আর তার সাথে সমুদ্রের গর্জন। এর বেশ একটা নেশা ধরানো ক্ষমতা আছে; খানিকক্ষণ ধরে শুনতে থাকলে যেন মনে হয় বাস্তবের এই কোলাহলময়
পৃথিবীটাকে কোথায় দূরে ফেলে এসেছি। যেহেতু এখানে বড় রাস্তা করার পরিসর নেই, আর এখানে লোকবসতিও বেশি একটা নেই, তাই কোলাহল এই জায়গাকে এখনও ছুঁতে পারেনি।
সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে আমি এতটাই বিমোহিত হয়ে গেছিলাম যে, বারান্দা থেকে বেরিয়ে আমি এগিয়ে যেতে লাগলাম। আর ঠিক তখনই নাবিকজেঠু ডাক দিলেন, "কি হে, চাঙ্গা বিশু! ওদিকে কোথায় চললে?
এসো, আগে বিশ্রাম কর। তারপর বিশ্রম্ভালাপ করা যাবে। "
নাবিকজেঠু আমাকে যে ঘরে নিয়ে গেল সে ঘরটা বেশ ছোট। একটা ছোট চৌকি পাতা আছে ঘরের মাঝখানে। আর তার পাশেই একটা টেবিল। আমি নিজের ব্যাগ মেঝেতে রেখে খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে,
বাইরের পোশাক পাল্টে আবার সেই বারান্দার চেয়ারে এসে বসলাম। লুচি আর আলুর দম ছিল সকালের টিফিনে বরাদ্দ। নাবিকজেঠুর সাথে সাধারণ কথাবার্তা সারলাম।
উনি জানালেন, ওনার গত কয়েকদিন আগে পায়ে সামান্য চিড় ধরেছিল, কিন্তু এখন দিব্যি আছেন। যদিও আমি দেখেছি, নাবিকজেঠু এখনও একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন। কিন্তু তিনি সেটাকে বিশেষ আমল দিলেন না।
আমি জিগ্যেস করলাম, "কি করে অমন হল তোমার?"
উনি খুব স্বাভাবিকভাবেই বললেন, 'ঐ একটা লোককে টেনে তুলতে গিয়ে পা ফসকে পড়েছিলাম। ওতেই একটা চিড় ধরেছিল। "
আমি বললাম, "তোমার কিন্তু এরকম একা-একা থাকাটা একদম উচিত নয়। মানিকদা তোমাকে অত করে যেতে বলে, তবুও তুমি ওদের কথা শোনো না।
তোমার কি ওদের জন্য একটুও মন কেমন করে না?"
আমার কথা শুনে মুচকি হেসে নাবিকজেঠু বললেন, "করে না, তা নয়। তবে এখানে যা আছে, তা কি আর ওখানে পাব?"
আমি বললাম, "কী পাওয়ার আছে এখানে? এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো? এটা হয়ত তুমি কলকাতায় পাবে না। কিন্তু তোমার নিজের জীবনটা তো আগে, তাই না?
যখন ইচ্ছে করবে, মাঝে-মাঝে চলে আসবে এখানে। "
বললেন, "তুই যখন এখানে এসেছিস, তখন দুটো দিন থেকে যা। সামনের শুক্রবার আমার জন্মদিন। আমার ইচ্ছে, এবারের জন্মদিনটায় তুই আমার এখানে থাক। "
নাবিকজেঠুকে যত দেখছি, ততই বিস্মিত হচ্ছি। সারাদিনে ওনাকে যেমন কর্মঠ, আর প্রাণচঞ্চল দেখলাম, তাতে মনেই হয় না, লোকটা ক্যান্সার আক্রান্ত।
আমার মনে হল, ঐ মারণরোগের ভয়টাকে যেন উনি বেমালুম ভুলে আছেন। বাড়ি যাওয়ার প্রতি ওনার তীব্র আপত্তি। অবশ্য এই পরিবেশের সঙ্গে তিনি হয়ত নিজেকে এমনভাবে জড়িয়ে নিয়েছেন যে
এখান থেকে যেতেই তাঁর মন চাইছে না। কিন্তু একথাও সত্যি, এখান থেকে ওনার রোগের চিকিৎসা করাও সম্ভব নয়। ওনার মত বিচক্ষণ ব্যক্তির কি এই সহজ সত্যিটাকে বুঝতে পারছেন না? কে জানে?
আজ রাত অনেক হল। এবার আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে।
১৮ই ডিসেম্বর, ২০১৮
আজ একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আমার মনে হচ্ছে, নাবিকজেঠু আর হরিকাকু দুজনেই আমার কাছ থেকে কিছু লুকোতে চাইছে। রাত বারোটা বাজে এখন। তবু লিখতে বসেছি। ঘটনাটা ঘটেছিল সকালবেলায়।
ছ’টা থেকে সাড়ে ছ'টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠা আমার রোজকার অভ্যাস। আজও তাই উঠেছিলাম। আমার ঘরের জানালা দিয়ে সোজা তাকালে দেখা যায় সূর্য উঠছে। নিচে সমুদ্রের বেলাভূমি,
সেখানে গুটিকয়েক লোক ছোট-ছোট ডিঙি নৌকো নিয়ে মাছ ধরছে। দিনের কমনীয় আলোয় চকচক করছে সমুদ্রের জল। তার কিরণ ঠিকরে এসে পড়ছে আমার এই ঘরে।
সিলিংয়ে একটা ঢেউ খেলানো আলো। উঠোনে তখন হরিকাকু কাজ করছিলেন। ফুলগাছের চারাগুলোতে জল দিচ্ছিলেন। আর নাবিকজেঠু বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলেন।
বোধ হয় গভীর কোন চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি। কতক্ষণ এমনটা চলছিল বলতে পারি না। আমি বাইরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি নাবিকজেঠু খুব দ্রুত চায়ের কাপটা টেবিলে রেখেই দৌড়ে গেলেন বাইরের দিকে।
চায়ের কাপ থেকে চা কিছুটা চলকে পড়ল তার গায়ে, কিছুটা পড়ল টেবিলে। কিন্তু তিনি তাতে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যেতে লাগলেন বাইরের দিকে।
তার দিকে তাকিয়ে হাতের কাজ ফেলে রেখে হরিকাকুও ছুটলেন তার পেছন-পেছন, "বাবু দৌড়বেন না, বাবু দৌড়বেন না’ বলতে-বলতে।
আমি আর থাকতে পারলাম না। আমিও দ্রুত দরজা খুলে সবেগে ওদের পেছন-পেছন ছুটলাম। বাড়ির সীমানা পেরতেই দেখলাম, মরণখাদের ধারে এক ব্যক্তি প্রায় শুয়ে পড়েছে।
আর তাকে সেখান থেকে তুলে নাবিকজেঠু আর হরিকাকু প্রাণপণে টেনে নিয়ে আসছেন এদিকে। আমি তো ওদের এইভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কী হয়েছে লোকটার?
বয়স প্রায় তিরিশ হবে। মাথায় ঘন চুল। মুখে দাড়ির জঙ্গল। গায়ের রং বেশ কালো। লোকটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে নাবিকজেঠু বসালেন বারান্দার চেয়ারটাতে। নিজে বসলেন ইজিচেয়ারে।
তার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক কাপ গরম কফি নিয়ে এলেন হরিকাকু। তাকে সেই কফি দেওয়া হল। লোকটা ইতিমধ্যে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে নাবিকজেঠুর দিকে বিস্ময়াবহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ।
তারপর একটা আক্রোশ তার দৃষ্টির সমস্ত বিস্ময়কে ভস্মীভূত করে ফেলে অত্যন্ত কঠোর হয়ে উঠল। লোকটা বেশ কর্কশভাবে নাবিকজেঠুকে বলে উঠল, "আমাকে আপনারা এখানে নিয়ে এলেন কেন?"
নাবিকজেঠু খুব শান্তভাবে, মুখে ঈষৎ হাসি এনে বললেন, 'আমার কফি খাওয়ার সঙ্গী জুটছিল না, তাই আপনাকে নিয়ে এলাম। আপনি আমার সাথে কফি খান। তারপর যেখানে যাচ্ছিলেন, সেখানে যেতে পারেন।
আমি আপনাকে আটকাব না। "
লোকটা ঠিক আগের মতোই কর্কশ স্বরে বলতে লাগল, "নিকুচি করেছে কফি," এই বলে সে পেয়ালার কফিটুকু অত্যন্ত দ্রুত কোনও রকমে গলাধঃকরণ করে সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
যাওয়ার সময় সে অত্যন্ত দ্রুত হাঁটছিল, দেখলাম তার পা কিছুটা টলছিল। কিছুক্ষণ সমস্তটাই নিস্তব্ধ। একটা পাখি ট্যাঁ-ট্যাঁ শব্দে খুব ভোর থেকেই ডেকে যাচ্ছিল। তার আওয়াজটা এখনই হঠাৎ থেমে গেল।
আমরা এই নিস্তব্ধতার প্রতি হঠাৎ সচেতন হয়ে যেন ভাবরাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরলাম। নাবিকজেঠু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হরিকাকুকে বললেন, "কফির কাপ দুটো নিয়ে যা হরি। "
হরিকাকু চলে গেলে আমি নাবিকজেঠুকে জিগ্যেস করলাম, "কী হয়েছে জেঠু? ঐ লোকটা কে?"
নাবিকজেঠুর আমার দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্যে বলে উঠলেন, "কেউ না," এর বেশি কোন উত্তর না করে ধীর পায়ে ঘরের ভিতর চলে গেলেন তিনি।
হরিকাকুকে পরে এই লোকটার সম্বন্ধে জিগ্যেস করেছি। তাঁর ভাসা-ভাসা উত্তরে এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম, ঐ লোকটা মরণখাদে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে এসেছিল।
নাবিকজেঠু সেটাই আগেভাগে বুঝতে পেরে ছুটে যান। তারপর তাকে দুজনে মিলে ধরে নিয়ে আসেন।
এ তো খুব ভাল কথা। আমার শুনে খুব ভাল লাগল। লোকটা আবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করবে কিনা জানি না। কিন্তু আপাতত যে তার প্রাণ রক্ষা পেল, সেটাই আমাকে খুব খুশী করল।
কিন্তু নাবিকজেঠু অমনভাবে কিছু না বলেই চলে গেলেন কেন? উনি চাইলে তো আমাকে খুলেই বলতে পারতেন। উনি কি কিছু লুকোতে চাইছেন? আরেকটা ব্যাপার!
যদিও হরিকাকু আমাকে পুরো ঘটনাটাই বললেন। তবু আমার মনে হল, উনিও যেন কিছু চেপে যাচ্ছেন। আমার এই অনুমানে ভুলও হতে পারে।
তবে যদি এটা ঠিক হয়, তবে কি ধরে নেব আমি বাইরের লোক বলেই ওনারা আমার কাছে সবটা খোলাসা করে বলছেন না? ব্যাপারটা আমার ঠিক মাথায় ঢুকল না।
আজ আর লিখব না। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। একটা ব্যাটারির আলো আছে বটে। তবে তার ভরসায় আর বেশি রাত জাগাটা উচিত হবে না।
১৯শে ডিসেম্বর, ২০১৮
আজকে সারাদিনে যা-যা ঘটল, সেই অভিজ্ঞতা আমার সারাজীবনের যে একটা অন্যতম সম্পদ হয়ে থাকবে, এ আমি বুঝতে পারছি। যতদূর সম্ভব যথাযথরূপেই বর্ণনা করবার চেষ্টা করছি:
আজ সকাল থেকেই বাড়িতে বিভিন্ন লোকের আনাগোনা লেগে ছিল। লোক সংখ্যা নেহাত কম নয়, শ'খানেক তো হবেই। ঐ ছোট্ট বাড়িতে তিলধারণের জায়গা ছিল না। তাদের উপলক্ষ নাবিকজেঠুর জন্মদিন উদযাপন,
আর লক্ষ্য ছিল তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো। বিদায় সংবর্ধনা কেন? সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। আজ জানলাম, নাবিকজেঠু আর এখানে থাকবেন না।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি তাঁর বড় ছেলের কাছে চলে যাবেন। এই অশক্ত শরীরে আর তাঁর পক্ষে যে এইভাবে আত্মীয়স্বজন-বিহীন হয়ে থাকা সম্ভব নয়, এটা তিনি উপলব্ধি করেছেন জেনে আমার খুব ভাল লাগল।
যদিও এটা তাঁর মনের ইচ্ছা নয়। কিন্তু এবার তাঁকে যেতেই হবে। নিজের জন্মদিনে প্রায় শ'খানেক লোকের মাঝে মধ্যমণি হয়ে ঐ বারান্দাটার সেই আরামকেদারাটায় বসে তিনি যখন বক্তৃতা করছিলেন,
তাঁর ভেতরে চেপে থাকা কষ্টটা বোঝা যাচ্ছিল। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষগুলোকে তিনি খুব ভালোভাবে চেনেন। আর এদের তিনি চেনেন এক অভূতপূর্ব কারণে, যা শুনে আমার মন আজ আশ্চর্যরকমের ভারাক্রান্ত।
তাঁর কথা তাঁর ভাষাতেই লেখার চেষ্টা করি। নাবিকজেঠু তাঁর জন্মদিনে ফুলে মালায় সজ্জিত হয়ে ধোপদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবী পরে বলতে শুরু করলেন,
"শুরুটা করি একেবারে গোরা থেকেই। আমি যখন প্রথম এখানে আসি, সেটা প্রায় দশ বছর আগে। এখানকার নির্জন প্রকৃতি বরাবরই আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করত।
আমি নিস্তব্ধ সকালে, নির্জন দুপুরে, পড়ন্ত বিকেলে সমুদ্রের এই নৈসর্গিক শোভা দেখতাম। আর বিকেলবেলায় ঘুরতে বেরানো ছিল আমার অন্যতম প্রধান শখ। একদিন একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল।
দেখলাম, বছর কুড়ি-বাইশের একটা মেয়ে এই মরণখাদের সামনে বসে-বসে একটা ছোট ডায়রি খুলে কি-সব লিখছে। আমি সেদিন বিকেলে ঘুরতে বেরচ্ছিলাম।
ওর দিকে তাকালাম, কিন্তু কোন প্রশ্ন করলাম না। ফেরবার পথে দেখি মেয়েটা আর নেই। কিন্তু পরেরদিন আবার মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। ঐ একই জায়গায় এসে বসে ডায়রিতে কি-সব লিখছে।
আমি সেদিনও বিশেষ আমল দিলাম না। এমনি করে দু-তিনদিন ধরে রোজই অমন ভাবে ওকে লিখতে দেখে আমার খুব কৌতূহল হল। একদিন ওকে জিগ্যেস করলাম, 'কি রে? এখানে রোজ বসে বসে কি লিখিস তুই?
কবিতা বুঝি?' মেয়েটা আমার দিকে এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে বলে উঠল, 'না, কবিতা নয়। হিসেব করছি। ' আমি আরেকটু কৌতূহলী হয়ে বললাম, 'কিসের হিসেব?'
সে প্রথমত আমাকে বলতে চাইছিল না। পরে ধীরে-ধীরে আমি ওর সাথে ভাব জমালাম। ওকে ঘরে নিয়ে এসে এক কাপ কফি খাওয়ালাম। সঙ্গে আরো কিছু খাবার ছিল। ও দেখলাম বেশ খুশী হল।
তারপর সে আমাকে যা বলল, তা অনেকটা এরকম। সে একটা ছোট মোটেলে কাজ করে। সম্ভবত ঘর পরিষ্কার করার কাজ। তাতে সে যত টাকা পায়, তার এক অংশ সে জমায়।
আর তার বর ছিল এক নম্বরের নেশাখোর আর জুয়াড়ি। সে মেয়েটার সব টাকা জোর করে ছিনিয়ে নিত। মেয়েটা তাই আগেভাগে তার কিছু টাকা সরিয়ে রাখত, যাতে তার বর টের না পায়।
সে ঠিক করেছিল, এভাবে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে সে দূরে কোথাও চলে যাবে, তারপর অন্য কাজ খুঁজে নেবে। সে মনে প্রাণে চাইতো তার বরের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যাক।
আমি ওর কথা শুনে সেদিন একটা ছোট্ট 'বেশ তো' বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। বেশ কয়েকদিন এইভাবে চলল। রোজই মেয়েটাকে দেখতাম ঐ একই জায়গায় বসে লিখছে।
সেই দৃশ্যটা আমার স্মৃতিতে এখনও ছবির মত ভেসে ওঠে। তারপর একদিন হঠাৎ মেয়েটা এদিকে আসা বন্ধ করে দিল। বেশ কয়েকদিন সে বেপাত্তা। তারপর প্রায় দিন পাঁচেক বাদে তাকে আবার দেখতে পেলাম।
তার হাতে লেখার খাতা নেই, কলম নেই। সে শূন্য দৃষ্টিতে উদাস মনে বসে আছে। ঐ গভীর খাদের দিকে তাকিয়ে যেন সেই খাদের তল পরিমাপ করছে। সে আমাকে দেখতে পেয়েই বলতে
লাগল, ওর সব। জমানো টাকা ওর বর কেড়ে নিয়েছে। ও আলাদা করে টাকা জমাত বলে ওকে খুব মেরেছে সে। সেই কারণে অসুস্থ হয়ে সে বাড়িতে বিছানায় পড়েছিলো।
মেয়েটা সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই কাঁদছিল। আমি ওকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম না। ওকে কি বলব সেটাই আমি বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ ও বলে উঠল, 'আমি কিভাবে পালাবো বলুন।
আমি কিভাবে পালাবো?' এই বলতে বলতে ও আমার কিছুর বোঝার আগেই ঐ মরণখাদে ঝাঁপ দিল। "
এই পর্যন্ত বলে নাবিকজেঠুর কিছুক্ষণ থামলেন। তাঁর সামনে দণ্ডায়মান শ্রোতামণ্ডলী সবাই নিশ্চুপ। নাবিকজেঠু ধীরে-ধীরে বলতে লাগলেন, "মেয়েটাকে সেদিন বাঁচাতে পারিনি - এই আক্ষেপ আমার মন থেকে
কোনোদিন মুছবে না। তখনও এই মরণখাদ সম্বন্ধে বিশেষ জানতাম না। ঐ ঘটনাটা কাগজে বেরিয়েছিল। তখন থেকেই জানি, এখানে সারাবছরে অন্তত কুড়ি থেকে পঁচিশটা মত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
তখন থেকে ঠিক করলাম, যদি পারি, তো কিছু মানুষকে আমার যতদূর সম্ভব সাহায্য করবো। এরপর থেকে আমি নিজেকে সজাগ রাখতে শুরু করলাম। যদি কেউ এখানে এসে পড়ে।
যদি কাউকে দেখে মনে হয় সে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করছে। তাহলে আমি বেশি কিছু নয়, শুধু তাকে এক কাপ কফি খেয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতাম।
এইভাবেই আমি আপনাদের সকলকে বাঁচিয়েছি। আরো অনেকে এখানে নেই যাদের আমি বাঁচিয়েছিলাম। অনেককে বাঁচাতে আমি পারিও নি। অনেকক্ষেত্রে আমাকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল।
এই বুড়ো বয়সে একজনকে বাঁচাতে গিয়ে পায়ে চিড়ও ধরেছে আমার। তবু তাতে আমার কোন ক্ষোভ নেই। নাবিক হিসেবে একসময় সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকাটাই আমার পেশা ছিল।
আর আজ যে আমি আপনাদের জীবনের সমুদ্রে ভাসতে শেখাতে পেরেছি, এতেই আমি খুশী।
আমার আয়ু ফুরিয়েছে। আপনারা হয়ত জানেন আমি ক্যান্সার আক্রান্ত। এই মারণ রোগ নিয়ে আমি হয়তো এই পৃথিবীতে আর বেশিদিন থাকবো না।
কিন্তু আপনাদের মধ্যে থাকলে আমার খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে। জানিনা, এখান থেকে চলে গেলে সেই ইচ্ছেটা কতখানি জীবিত থাকবে। তবে আপনাদের সকলের জীবন সার্থক হয়ে উঠুক, এই কামনা করি। "
নাবিকজেঠুর কথা শেষ হতে একজন কৃশকায় লোক তাঁর কাছে এগিয়ে এলো। তারপর জেঠুর হাতদুটো ধরে বলল, "কাল এক বড় ভুল করছিলাম। আপনি শুধরে দিলেন। অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে। "
লোকটাকে আমি চিনি। কালকের ঐ ব্যক্তি যাকে নাবিকজেঠু আর হরিকাকু ধরাধরি করে নিয়ে আসছিলেন। গতকাল সে রাগের সঙ্গে বেরিয়ে গেছিলো, আর আজ দেখলাম তার চোখে জল।
অনেকের চোখেই আজ জল দেখেছিলাম। নাবিকজেঠু তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন। তারপর স্থির দৃষ্টিতে সমুদ্রের ঐ অসীমের পানে চেয়ে রইলেন। পড়ন্ত বিকেল তখন সূর্যের কমনীয় রক্তিমাভ আলো
তাঁর সমস্ত মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে উজ্জ্বল করে তুলছে। তবে তাঁর দৃষ্টিতে যেন লেগে রয়েছে একটা গভীর শূন্যতা। যেন অসীম কোনও খাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ, নাচগান - সবই হল। নাবিকজেঠু আজ একজন প্রাণচঞ্চল যুবকের মত সমস্ত কিছুতেই অংশগ্রহণ করলেন। রাতে আমাদের সাথে চিকেন রোস্ট খেলেন।
আগুনের ধারে আমাদের সাথে গোল হয়ে কিছুক্ষণ নাচলেন। কি একটা গান বেসুরো ভাবে গাইলেন। এই গানটা নাকি তিনি জাহাজে চাকরি করাকালীন শিখেছিলেন। সবই তাঁকে করতে দেখলাম।
তবু আমার মনে হল, তিনি আজ বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলেন। সারাদিন হুল্লোড় চলেছে, থেমেছে রাত বারোটার পরে।
তাও ওদের অধিকাংশেরই সারারাত আনন্দ করবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নাবিকজেঠুর শরীরের অবস্থা বিচার করেই ওরা সবাই একে-একে বিদায় নিল।
এখন রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। আমার আর আজ রাতে হয়তো ঘুম হবে না। এখানে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। কাল যখন বাড়ি ফিরবো, মনটা অনেক হাল্কা থাকবে।
ইচ্ছা করে, মাঝে মাঝেই এখানে ফিরে আসি, হয়ত আবার আসবও। নাবিকজেঠু এখান থেকে চলে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বাড়িটা তো আর যাচ্ছে না। আপাতত হরিকাকু এখানে থাকবে।
আমিও মাঝে মাঝে না হয় এখানে এসে হরিকাকুর সাথে কাটিয়ে যাব। আর যদি দেখি কেউ মরণখাদের কাছে গেছে, তাহলে একবার বলব; এক কাপ কফি খেয়ে যান।
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
সে তবে কে?
All Bengali Stories
61
62
63
64
(65)
66
67
68
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717