একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা
পর্ব ২
০৭-১১-২০১৯ ইং
আগের পর্ব গুলি:
পর্ব ১
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ২
--
মর্নিং-ওয়াক সেরে এসে বারীনবাবু দোতালায় চলে গেলেন। এখন টানা এক ঘণ্টা প্রাণায়াম করবেন। তার পর উঠে রাতের ভেজানো মেথির জল খাবেন, খেয়ে বেরিয়ে
পড়বেন আবার ঘুরতে। সকালের বাজার বসে বাড়ির কাছেই, সেখানে গিয়ে চা খেয়ে সামান্য সবজি মাছ হাতে ঝুলিয়ে ফিরবেন। ফেরার পথে ডেকে যাবেন, রাজেশ ঘরে
আছো? একবার সাড়া পেলেই হল, গোটা সকালটা ড্রয়িংরুমে জমে ক্ষীর হয়ে যাবে। রবীন্দ্রনাথ, মায়কোভস্কি, ট্রটস্কি, স্তালিন থেকে শুরু করে রুজভেল্ট, হিটলার হালের
লাদেনও তাদের আলোচনার বিষয়। সুনীল, শামসুর, জীবনানন্দ গড় গড় করে মুখস্থ বলে যেতে পারেন। এত জানেন বলেই হয়তো এত বকবক করতে ভালবাসেন, এটা
অদিতির ধারণা। কিন্তু এই আড্ডাটা যে করে হোক এবার বন্ধ তাকে করতেই হবে।
ঘর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়ে তিনি বাজারে চলে গেলেন। বাজারে সামান্য কেনাকাটা সেরে হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন বাড়িতে। অভ্যাস মতো ফিরেই তিনি রাজেশকে ডাকলেন, কী হে রাজেশ আছো না কি?
অদিতি কিচেন থেকে উত্তর দিল, সে তো নেই মেসোমশাই।
সেকী! এই সাতসকালে কোথায় চলে গেল?
কাজে গেছে ফিরতে একটু দেরি হবে। ফিরে সোজা অফিস চলে যাবে। এলে আমি বলব মেসোমশাই, আপনি খুঁজেছিলেন।
আচ্ছা।
অদিতি তাকে আজ চা খেতে ডাকল না। এমনকী ঘরের দরজাও খুলল না। দত্তমশাই খুব মুশকিলে পড়লেন এই সক্কালবেলা। আজ ফ্রয়েড নিয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু তা আর হচ্ছে না। কিন্তু কুট্টুসের জন্য নলেন গুড়ের যে ক'খানা সন্দেশ এনেছিলেন তা এখন কী করবেন? সকালে বাজারে গিয়ে পেয়েছেন এই সন্দেশ।
একা-একা খেতে তার কখনওই ভাল লাগে না। তাই রাজেশ, তার বাচ্চা ও স্ত্রী'র সঙ্গে ভাগ করে খেয়ে খুব মজা পান। বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় ভাবলেন কী করবেন। তার পর তিনি আবার ডাকলেন, বউমা কুট্টুস ঘরে আছে?
কুট্টুস পড়ছে মেসোমশাই। ঘরের ভিতর থেকেই উত্তর ভেসে এল।
অ। আচ্ছা তাইলে তুমিই একটু এদিকে শুনবে?
রাগে তিড়িক্কি মেজাজ হঠাৎ লাফিয়ে উঠল অদিতির। এত বেহায়া মানুষ সত্যি আজকাল দেখা যায় না। শিক্ষিত মানুষ, এটুকু তার অন্তত বোঝা উচিত যে গৃহিণী তাকে
এই মুহূর্তে চাইছে না। ইচ্ছে করেই একটু দেরি করল সে। সময় নিয়ে কৃত্রিম একটা হাসি দিয়ে দরজাটা হাঁ-করে বাইরে তাকাল অদিতি।
বলুন মেসোমশাই।
না না তেমন কিছু না। কয়েকটা সন্দেশ এনেছিলাম কুট্টুসের জন্য।
লজ্জায় কেমন গুটিয়ে গেলেন দত্তবাবু। রাজেশ নেই বলে সকালবেলাটা তার মাঠে মারা গেল। আজ যেন সব কিছু কেমন বেসুরো বাজছে। হতে পারে অদিতির কোনও
কারণে মুড নেই অথবা সে ব্যস্ত কোনও ব্যক্তিগত কারণে। তাই বুড়োমানুষটাকে সে এই মুহূর্তে চাইছে না। অনেক কিছুই হতে পারে বটে, হতেই পারে। কিন্তু এই বুড়োটার
সকালবেলার সুখটা কেউ যেন কেড়ে নিল।
তিনি সামান্য হেসে বললেন, ফেরার পথে কয়েকটা নলেন গুড়ের সন্দেশ নিয়েছিলাম, ভাবলাম সবাই মিলে মজা করে খাব। এই নাও এটা রেখে দাও মা, তোমার ছেলেকে দিও।
অদিতি পেকেট হাতে নিয়ে আবার হেসে বলল, কুট্টুস তো পড়ছে মেসোমশাই।
পড়ছে। খুব ভাল খুব ভাল।
এখন খাবার পেলে আর পড়বে না। তাই ওকে পরে দিয়ে দেব কেমন। তা ছাড়া কুট্টুসের বাবা এলেও বলব।
অদিতি একটু ব্যস্ত হয়ে ভেতরে চলে গেল। তবে এ বার দরজাটা সে বন্ধ করে যায়নি। তিনি খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে যতদূর দেখা যায় দেখলেন। পর্দার ফাঁক দিয়ে
বেশি দূর দেখা যায় না। তবুও তার মনে হল ঘরের ভিতরের পরিবেশটা আজ অচেনা লাগছে। অদিতি তাঁকে ঘরে এসে বসতে বলল না। তবে কি সে মনের ভুলে তাঁকে
ডাকেনি? একটা সন্দেশ অন্তত খাবেন বলে তিনিও তো কম আশা করে আসেননি। নাকি দরজা খোলা রেখে অদিতি তাকে ভেতরে আসারই আহ্বান করেছে? হয়তো
কোনও কাজে ব্যস্ত আছে বলে অদিতি ওকে ডাকতে ভুলে গেছে। অদিতি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে, এ সব ফর্মালিটি ওকে শিখিয়ে দিতে হবে না। দরজার কাছে কিছুক্ষণ
দাঁড়িয়ে রইলেন বারীনবাবু। তার পর এক পা-এক পা করে এগোতে পিছোতে লাগলেন দরজার সামনে, যদি অদিতি হঠাৎ খেয়াল করে তাঁকে আবার ডাকে। নিজের মনের সঙ্গে
একান্তে কথা বলে তার মনে হল, না এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আজ আর কাজ নেই। এ ভাবে নিজের বাড়িতে অপাঙক্তেয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে তার আত্মমর্যাদায় লাগছে। একটা নলেন
গুড়ের সন্দেশ তাকে খেতেই হবে আজ। তাই তিনি আবার ছুটলেন বাজারে। ওখানে গিয়ে দেখেন সন্দেশ অনেক আগেই উধাও হয়ে গেছে।
ময়রা অবাক হয়ে জানতে চাইল, সেকী সকালে আপনি তো অনেকগুলি নিয়ে গেলেন মাস্টারমশাই। এই বয়েসে এত সন্দেশ খেলে সুগার বেড়ে যাবে।
বারীনবাবু ঢোক গিলে বললেন, এতগুলি আমি একা খেয়েছি নাকি ব্যাটা! আমরা চার-পাঁচজন মিলে শেষ করে দিলাম। আমার ভাগ্যে পড়েছে মাত্র একটা। বুঝলে একদম আশ মেটেনি। তাই তো আবার ছুটে এলাম আরও কয়েকটা পাওয়া যায় কি না।
আর পাবেন না, সবাই কাড়াকাড়ি করে নিয়ে গেল।
একটা দীর্ঘশ্বাস বয়ে গেল বারীনবাবুর বুক থেকে। একটাও নেই?
সত্যি নেই।
তিনি যে ভাগের অংশ আজ পাননি এই কথাটা বলতে তাঁর লজ্জা করছিল। তাই তিনি ভান করে বললেন, তোমার সন্দেশগুলি এত ভাল হয়েছে আর কী বলব। তাই আবার এসেছিলাম বুঝলে। ঠিক আছে না থাকলে আর কী করা যাবে। তুমি নিজের
জন্য লুকিয়ে রাখোনি কয়েকখানা? সেখান থেকে একটা অন্তত দাও ভাই।
আপনাকে মিছে কথা বলব স্যার? আপনি এমন করে বলছেন খারাপ লাগছে। আপনি তো পয়সা দিয়েই নেবেন, দিতে পারলে আমার লাভ হত।
ঠিক আছে। তবে আবার যদি করো আমার ভাগে আগে রেখে অন্যদের দিও।
ময়রা নিজের হাতে মিষ্টি-পরোটা এগিয়ে দিয়ে বলল, আগামীকাল সকালে আসুন স্যার আমি আপনার জন্য আলাদা করে রাখব। সত্যি আজ আর নেই, শেষ হয়ে গেছে।
তিনি পেট ভরে খেয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন। দোকানে একটাও মানুষ নেই যে তার মতো অনন্ত অবকাশ নিয়ে বসে আছে। সবাই আসছে যাচ্ছে কেউ আর
দু'দণ্ড বসে থাকে না। এত মানুষ চারদিকে তবু যেদিকে তাকান তাঁর মনে হয় সব কিছুই ফাঁকা। ময়রা চা এনে দিলে তিনি বসে বসে কাগজের হেডলাইনগুলি দেখতে লাগলেন।
এই খবরের কাগজ তাঁর বাড়িতেও আসে তবুও বাড়িতে কাগজ পড়তে ভাল লাগে না। দোকানে বসে কাগজ পড়ে আলাদা মজা পাওয়া যায়। যার হাতে কাগজ তার দিকে
বাকিরা তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কেউ কেউ অধৈর্য হয়ে কাগজের উলটো পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করে। বারীনবাবু চা খেয়ে দোকানের ভিতর বেশ কিছু সময় বসে রইলেন।
দু-একজন লোক সামান্য পরিচিত হলেই কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। পত্রিকার খবরের সাথে সাযুজ্য রেখে হওয়ায় ছেড়ে দেন একেকটা কথা। কেউ যদি ভুল করে
তার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মতামত দেয় তা হলেই হল। ওই লোকটা এখানে কত মিনিট থাকবে সেটা বড় কথা নয়, এমনকী ওই বিষয়টাও এখানে থাকবে কি না তাও বড় কথা নয়, তবে বিতর্কটা থাকবে ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা।
বারীনবাবু যেন এটাই চাইছেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও একটা বিতর্কও দানা বাঁধল না।
Next Part
আগের পর্ব গুলি:
পর্ব ১
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
All Bengali Stories
47
48
49
50
51
52
53
54
(55)
RiyaButu.com কর্তৃক বিভিন্ন Online প্রতিযোগিতাঃ
■ স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ...
Details..
■ Hindi Story writing competition...
Details..
■ RiyaButu.com হল লেখক / লেখিকাদের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ। ঘরে বসেই নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে লেখা পাঠাতে পারেন সারা-বছর ...
Details..
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 7005246126