Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

তাণ্ডব - পর্ব ২

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    125    (126)     127    128   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



তাণ্ডব - পর্ব ২
বাংলা গল্প
লেখক - দীপেশ মাঝি, বাবা- শ্রী শশধর মাঝি, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা


## তাণ্ডব
পর্ব ২
সকালে উঠে এক বিচিত্র দৃশ্য দেখা গেল। গাছে-গাছে পরিশ্রান্ত পাখিদের কলরব। কেউ-কেউ হট্টগোল শুনে ছাদে গেল। মনে হচ্ছে আস্ত একটা মরুভূমি। যেখানে পুরু চাদরের মত বালি নয়, বরং জল থই থই করছে। মাঝে কয়েকটা বাড়ির চালা দেখা যাচ্ছে। জলের সীমানা আকাশকেও হার মানা। কে একজন বলে উঠল, "পার্বতী, টিউবওয়েল-খানা দেখ!" সবাই সেদিকেই তাকাল। টিউবওয়েল সশরীরে বিরাজমান হলেও চতুর্দিকে জল পাহারা দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই খাবার, পানীয় নিয়ে আকাল পড়েছে। কেউ-কেউ পিপাসা মেটাতে বয়ে যাওয়া জলই-হাপুস হাপুস করে খেয়ে নিল। মোগলা বাক্স কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, "হা রে ভূষণ, তোমার লোকেরা কোথা গেল! আমরা কি বাঁচব এ জল খেয়ে!" আরও কয়েকজন গলা চড়াল। যেন সব তাণ্ডবের ভাগীদার এই লোকটাই! গোপা, ওর বাবাকে টেনে নিয়ে আসে।

বেলা প্রায় এগারোটা। চড়া রোদে আর জলের দুর্গন্ধে টেকা দায়। ইতিমধ্যে গোটা বিশেক মরা গরু, ছাগল ভেসে গিয়েছে। গোপা জানলা দিয়ে মাছ ধরা দেখছিল। রুই, কাতলা সবই মাছ-চাষের, কিছু কিছু অবশ্যি মরা। ভূষণ হিসেব কষে বলল, "মা রে, কয়েকশো পুকুর ডুবেছে। এ মাছ তাদেরই..."

স্কুলের ছাদেই রান্নার ব্যবস্থা হল৷ চালে -ডালে আর হাতের কাছে যা সবজি ছিল তাতেই, তবে কুমড়োই ছিল বেশি। ডুমো-ডুমো করে কেটে সেদ্ধ করা হল। শীতল ময়রাও রাতে এসেছিল। সে বলল, "আরেকবার খুঁজতে বেরলে হতো !"

মোগলা বলল, "আমি যাব না। আল্লা তো সবই নিল!"

আবার ভেলা ভাসল। এবারে সে স্থির নয়। জলে প্রচণ্ড স্রোত। কোথায় নিয়ে ফেলবে তার ঠিক নেই। গোপা উঠে বসল। হেঁকে-হেঁকে দেখতে হবে কে, কোথায় আছে। কিছুটা যেতেই ওপর দিয়ে হাঁক ছাড়ল, "আমি এখনে..." ওরা দেখল বংশী মোল্লা পেয়ারা গাছ জড়িয়ে বসে আছে। তাকে নেওয়া হল। শীতলের দোকানের দখিনে গোপাদের ঘর। চালা ঠিকই আছে। তবে অধিকাংশই জলের তলায়। ধূসর জলে সাদা মতন একটা জিনিস ভেসে যাচ্ছিল। গোপা টপ করে তুলে নেয়। শীতল দাবড়ি দিয়ে বলে, "মা, হেথায় অমন করিস নি!" গোপা তুলে দেখে তাতে স্বামীজির ছবি। নিচে, যে এঁকেছে তার নাম, ঠিকানা; এখানকারই দেওয়া। গোপা বলে, "শীতল কাকা, টুম্পাদের বোধ হয় কিস্যু নাই। এ তো টুম্পার আঁকা!"

কেউ-কেউ ঐ জলেই নেমে পড়েছে; হাঁড়ি, কলসি নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। ওরা হেঁকে সবাইকে স্কুল-বাড়িতে যেতে বলল। বিপদে প্রতিবেশীই তো প্রতিবেশীদের কাজে আসে।

স্কুল চত্বরের আশপাশ ছাড়া সর্বত্রই বহমান স্রোত। ভেলা মাঝে দুলে-দুলে ওঠে। রথীন্দ্রনাথদের তুলসীমঞ্চটা প্রায় ডুবে গেছে। কিন্তু যাওয়ার জো আছে! তাতে একখানা ঢ্যামনা সাপ জড়িয়ে আছে। মরার মত পড়ে আছে। বাবলা গাছ আর মনসার মাঝে একটা জাঁতাকল তৈরি হয়েছে। সেখানে একটা কুকুর কোনোরকমে দু'হাত ওপরে করে মুখটা আকাশের দিকে করে আছে। শীতল প্রথমে নিতে চায় নি। গোপা নিজে জলে নেমে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ভেলায় তোলে। মনসা ঝোপের কাঁটা ফুটল থান কতেক। ভগবানের নিয়মে কে মানুষ, কে জন্তু! সবই সমান।

একে-তাকে ফোন করে জানা গেল ত্রাণের কাজ শুরু হয়েছে। ভূষণ কিছুটা বাতাস পেল। কিন্তু যারা আসলেন তারা তো পঞ্চায়েতের লোক নয়, বরং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে এসছে। প্যাকেটে বিস্কুট, এক বোতল জল, একটা কেক।

ত্রাণ আসতেই পিপীলিকার মত কোথা দিয়ে ভিড় উপচে পড়ল, যারা এসছিল তারা পালাই-পালাই করছে। খাবার কম পড়ে গেছে। এত সংকটের সময়েও ভূষণ দেখল, সবাই কিছু না কিছু পেয়েছে। পায়নি কেবল ওরাই। এত সংকটের দিনেও বৈষম্য ঠিক রয়েই গেল। মোগলা বাক্স কেবল গোপাকে একখানি কলা দেয়। সাথে কি একটা বলে ওর মাথা নাড়িয়ে দেয়।

ভূষণ দূরে তাকিয়ে দেখে আকাশ খুব মেঘলা। বৃষ্টি হয়তো আরও জোরে নামবে। কি মন গেল বিদ্যেধরীকে ডাক দিল। বিদ্যেধরী এলে বলল, "গোপাকে লিয়ে আয়। দেখবি চল!" ভেলায় করে গোপা আর বিদ্যেধরীকে নিয়ে ভূষণ আবার স্রোতে মিশে যায়। এগিয়ে যায় ওদের পুরনো বাগানের দিকটায়। এদিকে পঞ্চায়েত থেকে লোক আসে, সাথে প্রচুর খাবার দাবার। শীতল,কাঞ্চন,পার্বতী, বসন্ত আর মোগলারা খেয়ে পারে না৷ কেউ খাচ্ছে, কেউ আঁচলে লোকাচ্ছে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে, কেউ ছোট্ট শিশুর প্যান্টের ভেতরে খাবার লুকিয়ে রাখছে। এরপরেও খিচুরি বিলি করা হয়। পঞ্চায়েত প্রধান সুবিমল সামন্ত বলেন, "ভূষণ, গেলি কোথা! তোর মেয়ের জন্য খাতাপত্র এনছিলুম।" কিন্তু কোথাও কোনও সাড়া না দেখে বসন্ত বলল, "গোপা, গেলি কই রে!" কিছু পরে হইহই রব উঠল। গোপাদের আর খুঁজে পাওয়া গেল না।

তিনদিন পরে বানের জল নেমে গেছে। ঘোড়ামারা দ্বীপ এবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তবে, জোয়ারের জল এখন গোড়ালি অব্দি আছে। পঞ্চায়েত থেকে এখনো খাবার আসে যায়। খালি মোড়ের বট-আশুত-তাল তলায় গোপা, বিদ্যেধরী আর ভূষণের ঝুলন্ত দেহটা কেউ ভুলতেই পারছে না। লোকে বলে, "তাণ্ডবে তাজা প্রাণ গেল..."
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    125    (126)     127    128   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717