Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

দয়ার অধিকার

Online bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

দয়ার অধিকার

লেখিকা: জয়ন্তী চক্রবর্তী, পিতা- উমাপদ চক্রবর্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ

##
অনেকদিন, হ্যাঁ তা প্রায় বছর তিনেক পর এ-পথে আবার যাচ্ছে দিবাকর। দিবাকর শ্যাম। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মস্তবড় অফিসার। জুনিয়ার অফিসাররা জানে মিস্টার শ্যাম রেগে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সিনিয়ার অফিসাররা জানে মিস্টার শ্যামের মত কাজের লোক কদাচ পাওয়া যায়। লোকটার যেমন নিখুঁত সময়-জ্ঞান, তেমনি নিখুঁত দায়িত্ব-বোধ। ছুটি-ছাটাও বিশেষ নেয় না। দুর্গাপুর 'এ'-জোনে মিস্টার শ্যামের মস্তবড় ডুপ্লেক্স কোয়ার্টার। স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন। ওনার স্ত্রী বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বাড়ির একতলায় গানের স্কুল। রবিবার সকাল বিকাল গানে গানে ভরে থাকে সারা পাড়া। মেয়ে কত্থক নৃত্য শিল্পী; গুরু থাঙ্কমণি কুট্টির কাছে তালিম নেয়। প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে দেশের এখানে-ওখানে ছুটতে হয় মিস্টার শ্যামকে। ছেলেটিও যথেষ্ট প্রতিভাবান। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ফাস্ট বয়।‌ প্রিন্সিপল আশা করছেন এবার আই. সি. এ .সি. তে অগ্নিবেশ প্রথম পাঁচের মধ্যে আসছেই।

বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দিবাকরের মনে হয় জুতোটার বারোটা বাজল। আবার ফিরেই একজোড়া কিনতে হবে। রাস্তার দু-পাশে কাঁটা ঝোপে অজস্র রঙিন ফুল ফুটেছে।‌ এখানে-ওখানে ছোটো বড় টিলা। সামনে একটা বড় পুকুর। এখানে বলে 'পোকখর'। তার পাশে মাঠের ওপর সারি সারি উঁচু উঁচু ঢিপি। এগুলো সব মৃত পূর্ব-পুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতি চিহ্ন। এখানে দিবাকরের ঠাকুরদা আছেন। তার ভায়েরা আছেন। দিবাকরের বাবাও থাকবেন। তারপর? না দিবাকর এখানে কোনোদিন থাকবে না। সে এখানকার কেউ নয়। সে ইস্পাত নগরী দুর্গাপুরের একজন বিখ্যাত, সম্মানিত ব্যক্তি। তার সঙ্গে এই গণ্ড গ্রামের, এই আজে-বাজে বিচ্ছিরি বেয়াড়া গ্রামের কোনও সম্বন্ধ নেই।

"কে বটে রে বাবুটো?" রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে ঠেকে বসে আছে একদল বুড়ো। পাশাপাশি পাতা দুটো বাঁশের তৈরি বেঞ্চ। সামনে গোবর দিয়ে নিকোনো ঝকঝকে পরিষ্কার কয়লার উনুন। চা ফোটার চমৎকার গন্ধ বের হচ্ছে। দিবাকরের লোভ হল। কিন্তু সামলে নিল। না হলে বুড়োগুলোকে এখন এক রাশ কথার জবাব দিতে হবে। এমন হতচ্ছাড়া জায়গা যে, একটা রিকসা, কি নিদেন পক্ষে একটা কাঠ-বওয়া তিন চাকার ভ্যান-রিকসাও পাওয়া যায় না। বাস থেকে নেমে তিন মাইল পুরো হেঁটে গেলে তবে ওদের গ্রাম কুসমা। আড় চোখে তাকে দেখতে দেখতে বেশ কটা বাইক বেরিয়ে গেল। হ্যাঁ। উন্নয়ন হয়েছে ভালোই ইদিকে।‌

"কে যায় বটে? আমাদের দিবা নাকি?"

দিবাকর চিনতে পারল। তাদের জমি-জমা দেখা শোনা করে সনাতন পাইক। বলল, "হ্যাঁ সোনাদা। কেমন আছো?"

"আর আমাদের থাকা! জ্বর-জ্বালা লেগেই আছে। চাষ-বাসেরও কুনো সুরাহা নাই। সার বিষ দিতে যে খরচ, ধানে খরচ ওঠে না। উলটে লোসকান। তা, বড় বাবুর খবর পাঁয়া দেখতে আসছেন বটেক। বাড়ির সব খপর ভালো তো?"

"ভালো সোনা দা। বাবা এখন কেমন?"

"কেমন আর? ভালকরি খাতি লারছেন। কতা কতি লারছেন। চিনতেও লারচেন সোব্বাইকে। কখন কি হয়। থাইকব্যান তো কিচুদিন?"

"দেখি... ছুটি নাই গো অফিসে।"

"হ্যাঁ। সে তো জানি। মস্ত কারখানা। মস্ত কাজ। আমি তাই তো কই মোর ব্যাটারে, 'কত্ত বড় কাম করে দুগ্গোপুরে তোর দিবা কাকা। দিবা দাদা, দ্যাকবেন আমার বেটাটার জন্যি। কিচু বেয়ারার কাজ-টাজ যদি থাকে ..."

"হ্যাঁ হ্যাঁ দেখব বৈকি। আজকাল ইউনিয়ানের খুব চাপ বুঝলে কিনা। দেখব, সুযোগ সুবিধে পাই যদি... ঠিক আছে চলি। পরে কথা হবে।"

"হ্যা দাদা। আসুন কেনে।"

দিবাকর মৃদু হাসে। প্রথম প্রথম সে যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিল তখন কত কথা উঠেছিল। কত ছি ছি করত লোকে। কত জ্ঞান দিত। গ্রামে আসাই তাই বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন কত খাতির। আসলে টাকা হয়েছে তার; তাই। দু-চারবার গাড়ি নিয়ে গ্রামে আসবার পরই সবাই বুঝে গিয়েছিল তাদের দিবাকরের এলেম। তাই সামনে তো দূরে থাক, পেছনেও আর কথা বলতে সাহস করত না।মানুষ কত সহজেই ভুলে যায় সবকিছু।

বাড়ি পৌঁছতে বেশ বেলা হয়ে গেল। চারদিকেই একটা শোকের আবহ। মা মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগেই। এখন বারও অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। কাকা জ্যাঠারা নামেই আছেন। সেবা শুশ্রূষা যা করবার, সুধা করেছে। সুধাময়ী একা। দিবাকর বাবার বিছানার পাশে গিয়ে বসল। একমাস পড়ে আছেন বিছানায় তবু ফিটফাট বিছানা পত্র। পরিষ্কার মাজা জলের গ্লাসে জল। কাঁচের গ্লাসে চাপা আছে ফলের রস। ছোটো একটা টেবিলের ওপর পানের বাটার মধ্যে রাখা ওষুধপত্র। বাবা ঘুমোচ্ছেন। খাটের তলা থেকে একটা মোড়া টেনে নিয়ে বসল দিবাকর, "কেমন আছ বাবা?"

চোখ মেলে তাকালেন দেবীপ্রসাদ। একমাত্র পুত্রকে মৃত্যু শয্যার পাশে দেখে তাঁর বিশেষ ভাবান্তর হল না। যেমন ছিলেন তেমনি চিৎ হয়ে চোখ বুজে রইলেন। দিবাকর সাবধানে ধীরে ধীরে বাবার পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, "আমাকে চিনতে পাচ্ছ বাবা? কে বলত আমি?"

"দেবু। আমার ছেলে।"

খুশিতে ভরে উঠল দিবাকরের মুখ। যাক। চিনতে পেরেছেন বাবা। মুখের কাছে মুখ এনে মৃদু স্বরে দিবাকর বলল,"কিছু খাবে বাবা? কি খেতে ইচ্ছা করে তোমার?"

"কিছু না।"

"কেন? তুমি তো নলেন গুড়ের সন্দেশ ভালবাসতে। শিবু ময়রার অমিত্তি। মাখন ঘোষের মিষ্টি দই, ধানুর আলুর চপ।"

"সব খেয়েছি। বৌমা খাইয়েছে সব।"

দিবাকর একটু যেন আঘাত পেল। সুধা সব আগেই খাইয়ে দিয়েছে বাবাকে। একটু বাদে দিবাকর আবার বলল, "অসুখে তো খরচ পত্র হচ্ছে ভালই। কিছু টাকা পয়সা লাগবে বাবা? আমি সঙ্গে করেই এনেছি।"

"নাঃ। বৌমা যোগাড় করছে সব ধানচাল বেচে। জমি-জমা বাধা পড়েছে কিছু।"

এবার দিবাকর একটু যেন বিরক্তই হলো। দিব্যি তো সব কথা বলতে পারছেন। চিনতেও অসুবিধে হল না। তা হলে শুধু শুধু ডেকে আনা কেন? মেয়েটার সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা।

"তোমাকে একটা দরকারে ডেকে এনেছি দেবু। খাওয়া দাওয়া করেছ?"

"হ্যাঁ এই মাত্র খেলাম।"

"একটা কথা ছিল।" বাবা ঈষৎ জড়িয়ে জড়িয়ে বললেন কথাটি।
"বলো বাবা।"

"বৌমার কি ব্যবস্থা করবে? আমি তো চললুম।"

এই ভয়টাই ভেতরে ভেতরে পাচ্ছিল দিবাকর। এই অমোঘ প্রশ্নটা যে কোনও-না কোনও দিন উঠে আসবে সেটা তো জানাই। আঠারো বছর ধরে চাপা দিয়ে রাখা প্রশ্নটা একদিন উঠে আসবেই। সে একটু ইতস্তত করে বলল, "ওকি বাপের বাড়ি যেতে চাইছে না?"

"না। যাবার হলে আগেই যেত। আর এখন তো কেউ নেই ওর ওখানে। ভাইটা কোথায় যেন চলে গেছে। বাড়িটাও ভেঙে চুরে পড়ে আছে।" দিবাকর পড়ল অথৈ সমুদ্রে। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, "ও কি চাইছে?"

"ও তো এখানেই থাকতে চাইছে। কিন্তু এতবড় বাড়ি! একা মেয়ে মানুষ! বয়সটাও তেমন বেশি কিছু নয়..."

দিবাকর বুঝতে পারে না কি বলবে। সুধাময়ীকে দুর্গাপুরে নিয়ে গিয়ে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। এখানে এই গণ্ডগ্রামে, একা এত বড় বাড়িতে থাকবে ... তা-ই বা কি করে হয়? ভাবতে ভাবতে কোনও কূল কিনারা পায় না দিবাকর। বলে, "আপনি কি বলেন?"

"আমি কি বলব? আমার কথার কি দাম? বৌমাকে জিজ্ঞেস কর। বৌমা..."

রুগ্ন মানুষ। গলা বেশি দূর পৌঁছল না। কাজের মেয়ে সেবা এলো ঘোমটা টেনে। "ও দাদু, কাকী রাইনছে। আইসতে পাইরবেক নাই।"

দিবাকর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "ঠিক আছে, আমিই যাচ্ছি। তুমি বাবার কাছে থাক সেবাদি।"

পাড়া গাঁয়ের বড়-সড় রান্নাঘর। সুধাময়ী মাথা নিচু করে মুসুর ডালের সুপ বানাচ্ছিল। দিবাকর বার-দুই গলা খাঁকারি দিয়ে ঢুকলো রান্নাঘরে। কোনও রকম ভাবান্তর দেখা গেল না সুধাময়ীর মধ্যে। সে মাথার ঘোমটাটা আরও একটু টেনে দিয়ে নিজের কাজ করে যেতে লাগল। দিবাকর একটা তালপাতার চাটাই টেনে একধারে বসেছিল। রান্নাঘরে একটা ঝুল মাখা বালব ঝুলছিল। এখানে এখনো কাঠের জ্বালে মাটির উনুনে রান্না হয়। আগুনের আলোয় সুধাময়ীর মুখের একপাশটা দেখা যাচ্ছিল। রঙটা তামাটে হয়ে গেছে। অনেক রোগা হয়ে গেছে সুধা। দিবাকর আবার একবার গলা খাকারি দিয়ে বলল, "কেমন আছ সুধা?"

"ভালো।"

নাহ, সে কেমন আছে, পাল্টা এ প্রশ্ন করল না সুধা। করেও নি কোনোদিন। দুর্গাপুরে নিজের পছন্দ মত বিয়ে করার পর গ্রামে এসে সে বলেছিল,"সুধা, চাইলে তুমিও ইচ্ছামত বিয়ে থা করে নতুন সংসার পাততে পার। তোমার আমার আইনি বিয়ে হয় নি। ঐ সব মন্ত্র-টন্ত্র পড়া, স্ত্রী আচার, এ সবের কোনও দাম নেই আইনের চোখে। বাবা কিছু না জানিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন বেকার। তাই প্রতিবাদ করতে পারি নি। তারপর তো গোপনে ইনটারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েই পালিয়েছি। আমার দিক থেকে তুমি কোনও বাধা পাবে না। বলো, কি করবে। আমি দাঁড়িয়ে থেকে তোমার বিয়ে দিতে চাই।"

সুধাময়ী কোনও উত্তর দেয়নি।

দিবাকরও কয়েকবার একই কথা বলে-বলে শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। তাছাড়া বাবা-মায়ের জীবনে সুধাময়ী ক্রমশঃ অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল ততদিনে। মেয়ের মত না, সুধা হয়ে উঠেছিল তাঁদের ছেলে। একমাত্র সন্তান। স্বেচ্ছায় সুধা মাথায় তুলে নিয়েছিল বাবা-মায়ের সব দায়। স্নেহ এমনি-এমনি ক্ষরিত হয় না। আইন, রক্ত, কিছুই মানে না ভালবাসা। সে আসে তার অনুকূল বাতাসে ভেসে। যেমন আসে ফুলের গন্ধ, চাঁদের কিরণ, রাতের শিশির, তেমনি।

"সুধা, তুমি এবার তবে কি করবে ঠিক করলে? কোথায় যাবে? যদি কোনও আশ্রমে যেতে চাও তো খোঁজ-খবর নিয়ে না হয় দেখি। টাকা পয়সার জন্য ভেবো না। মোটা একটা টাকা আমি ফিক্সড ডিপোজিট করে দেব তোমার নামে। আমি মারা গেলেও যাতে..."

"আমি এ বাড়িতেই থাকব।" কঠিন স্বরে জবাব দেয় সুধা।

"তা হলে দিনরাত তোমার সঙ্গে থাকার একজন লোক দেখো। হাজার দশ-বারো দিলে পাওয়া যাবে আশা করি।"

"আপনার কোনও টাকা দিতে লাগবে না।"

"এতো অভিমানের কথা হল সুধা। আমার তো একটা কর্তব্য আছে।"

"না নেই।" সুধাময়ী এবার ঘোমটা খুলে ফেলেছে। সরাসরি দিবাকরের চোখে চোখ রেখে সে বলল, "শুনুন, আপনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক কখনো ছিল না, এখনও নেই। মান-অভিমান তো দূরের কথা। কোনও কর্তব্য করতে হবে না আপনাকে। আমার ব্যাপার আমি বুঝব।"

দিবাকরের মনে হল তার গালে যেন কেউ ঠাস করে একটা চড় মারল। এই রোগা, শ্যামলা গেঁয়ো, অর্ধমূর্খ মেয়েটা এমন ভাবে প্রত্যাখ্যান করল তার দয়া। সে মনে মনে যা কিছু ছকে রেখে এসেছিল, কিচ্ছু মিলল না! মেয়েটা কোথায় অসহায় হয়ে লুটিয়ে পড়বে, কান্নাকাটি করবে, তর্ক করবে নিজের অধিকার নিয়ে, প্রণয় জাগিয়ে তোলবার জন্যে সাজগোজ করে সামনে-সামনে ঘোরাঘুরি করবে; এতো তার ধার-পাড় দিয়ে গেল না। এ কেমন মেয়ে?

"বাবা, আপনি তো এখন ভালই আছেন মনে হচ্ছে। আমি তবে আসি।"

"এসো।"

গলার কাছে এক দলা অভিমান পাকিয়ে উঠল। ভীষণ কান্না পেল দিবাকরের। একবারও থাকতে বলল না কেউ! না বাবা, না সুধা। সে তো পকেট ভর্তি করে টাকা এনেছিল। কেউ চাইল না। একটা টাকাও চাই না কারো তার কাছ থেকে। বেশ। সেও দেবে না। টাকা কি ফেলনা নাকি? সবাই জানে না টাকার সদ-ব্যবহার।

বাবার শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দায় এসে দিবাকর দেখল একদঙ্গল ছেলে-মেয়ে বই খাতাপত্র নিয়ে মাদুর বিছিয়ে বসে আছে। আরও কতক গুলো আসছে। তাদের চেহারায় দারিদ্র স্পষ্ট। মাথার চুল লালচে। কারো পেটটা ফোলা। পা দুটো কাঠি কাঠি। কারো নাক থেকে ঝুলে আছে মোটা সর্দি। কারো মাথা ভর্তি উকুন, দু-হাতে চুলকাচ্ছে প্রাণপণে। দিবাকর বলল,"এই, তোরা এখানে কি করছিস?"

"পড়তে এসেছি। দিদিমণি পুড়াবেক।"

দিবাকর আর দাঁড়াল না। নিজের বিদ্যের দৌড় সেভেন-এইটের বেশি না। সে আবার পড়াবে। হুঁঃ!" বিরক্ত মুখে বেরিয়ে পড়ল সে। গট-গট করে হাঁটতে হাঁটতে চলল। আবার এতোটা যেতে হবে। যেমন জঘন্য দেশ তেমনি অসভ্য সব মানুষ। হঠাৎ পেছন থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে একটা ছোটো ছেলেকে ছুটে আসতে দেখা গেল, "বাবু বাবু বাবু..."

দিবাকর দাঁড়িয়ে পড়ল। ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ওর হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। বলল,"দিদিমণি দিল। আপনি ফেলে এয়েচেন ভুল করি।"

দিবাকর দেখল একটা এক লাখ টাকার চেক। বাবার বালিশের নিচে রেখে এসেছিল সই করে। সাহস হয়নি হাতে দেবার। ছেলেটা ঠিক ঠাক কাজ করার গর্বে হাসছিল হাঁপাতে হাঁপাতে। সে খেয়ালই করল না দিবাকরের মুখখানা কালো হয়ে গেছে রাগে, লজ্জায়। এমন অপমান জীবনে কেউ তাকে করেনি।
( সমাপ্ত )


List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717