পয়েটিক জাস্টিস
- কাশফিয়া নাহিয়ান, মনেশ্বর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ
একটি নির্বাচিত গল্প
নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, ২০২০, ত্রিপুরা
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
টুম্পা, এই টুম্পা ওঠ! কলেজ যাবি না?
আপু আর পাঁচটা মিনিট! ঘুম-ঘুম চোখে বলল টুম্পা।
তোর না আজকে কলেজে প্রেজেন্টেশন আছে? ওঠ।
প্রেজেন্টেশনের কথা শুনেই ধড়মড় করে উঠলো টুম্পা। হ্যাঁ আপু আমার তো মনেই নেই!
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়! আমি নাশতা দিচ্ছি।
টুম্পা আর ইলকা দুই বোন। বোন এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের মধ্যে অনেক ভাব। মা নেই। টুম্পার তো তার মা'র কথা মনেই নেই। তার ইলকা আপুই তার কাছে সব।
বাবা প্রভাত বড়ুয়া ব্যবসায়ী। দুই মেয়েকে নিয়েই তার ছোট্ট সংসার। ছোটো মেয়ে কলেজে আর বড় মেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা।
নাশতা না খেয়ে বাইরে যাবি না? ধমকের সুরে বলল প্রভাত বড়ুয়া।
বাবা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো!
একটু কিছু তো খা! বলল ইলকা। আপেল একটা হাতে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে ছুটে চলল টুম্পা।
পাগল মেয়ে! হাসতে হাসতে বলল প্রভাত বড়ুয়া। সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠলেই তো হয়!
বাবা তুমি জানো না টুম্পার দেরী করে ঘুমানোর অভ্যাস। ও কি সকালে উঠবে?
হ্যাঁ আসলেই, বলল প্রভাত কুমার। চল আমরা দুজনে অন্তত নাশতা করি!
কলেজের সব লেকচার এটেন্ড করে প্রেজেন্টেশন শেষে ঘরে ফিরল টুম্পা। ঘরে ফিরতে আজ একটু দেরী হয়ে গেছে টুম্পার। ঘরে কেউ নেই। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকেছে সে।
কিন্তু এতক্ষণে তো বাবার আর আপুর চলে আসার কথা! চিন্তায় পড়ে গেলো টুম্পা। মোবাইলে চেষ্টা করলো। দুজনের মোবাইলই বন্ধ। হঠাৎ টুম্পার মোবাইলটা বেজে উঠলো।
চেনা জানা নাম্বার না। ফোনটা তুলতেই বাবার কান্না জড়ানো কণ্ঠ শুনল টুম্পা। মামনি, ইলকা এক্সিডেন্ট করেছে।
কি বলছ বাবা! কি হয়েছে আপুর? কোথায় এখন তুমি?
সিটি হাসপাতালে। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল প্রভাত কুমার। হন্তদন্ত হয়ে চলল টুম্পা সিটি হাসপাতালের দিকে। হাসপাতালে পৌঁছে বাবাকে কাঁদতে দেখে সেও কাঁদতে লাগলো, বাবা এসব কিভাবে হল?
জানি না মা। হঠাৎ আমার মোবাইলে ফোন আসলো ইলকার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তারপর আমি ছুটে এখানে চলে আসি। কে ফোন করেছে আমি জানি না। হাসপাতালে এসে দেখি ইলকার....ইাউমাউ করে কাঁদতে থাকলো প্রভাত কুমার।
প্লিজ বাবা তুমি কেঁদো না। ডক্টর কি বলছে?
বলেছে বাহাত্তর ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে। ইন্টারনাল ইনজুরি আছে। এখন কি হবে? আমার ইলকা ঠিক হয়ে যাবে তো?
নিজেকে সামলাও বাবা! দেখো আপুর কিচ্ছু হবে না। কাঁদতে কাঁদতে বলল টুম্পা।
এদিকে রাত হয়ে গেলো। হাসপাতালের ভিজিটিং আওয়ার শেষ। যে কোনও একজন থাকতে পারবে। টুম্পা অনেক জোরাজোরির পর বাবাকে ঘরে পাঠাল। নিজে হাসপাতালে রয়ে গেলো। অনেক কান্না
পাচ্ছে তার কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না সে। ঠিক সেই সময়ে নার্স এসে বলে গেলো কিছু ঔষধ আর ইনজেকশন লাগবে। টুম্পা অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও ডিসপেনসারি খুঁজে পেলো না।
একটা রুমে ঢুকল টুম্পা। ভাবল এটিই হয়তে ডিসপেনসারি। কিন্তু আসলে সেটা মর্গ। টুম্পা যখন বুঝতে পারলো সে কোথায় এসেছে ভয়ে শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেলো তার। অনেক চেষ্টা করলো দরজা খোলার। কিন্তু পারলো না।
কেউ আছেন? প্লিজ হেল্প...দরজা খোলো...আমি এখানে আটকা পড়ে গেছি!
দরজাটা জ্যাম একটু চাপ দিলেই খুলে যাবে..
চমকে উঠলো টুম্পা। দেখল এক সুঠাম দেহের যুবক দাঁড়িয়ে আছে। চেহারাটা ঠিক মত বোঝা যাচ্ছে না। শুধু দুই চোখ দেখা যাচ্ছ।
যুবকের কণ্ঠস্বর শুনে আরও ভয় পেয়ে গেলো টুম্পা। দ্বিগুণ শক্তিতে চেষ্টা করলো দরজা খোলার। এবার দরজাটা খুলে গেলো। কাঁপতে-কাঁপতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো টুম্পা।
কে ছিল সেই লোকটা! কিছুই বুঝতে পারলো না। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চেয়ারে বসে-বসে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টেরও পায়নি টুম্পা। সকালে ঘুম ভাঙল বাবার ডাকে।
মা তুই কিছু খেয়ে নে শরীর খারাপ করবে তো?
না বাবা আমি কিছু খাবো না।
মিঃ বড়ুয়া......
জী বলুন....
আমি ডক্টর নীল। আপনার মেয়ে ইলকার রিপোর্ট দেখলাম। মনে হচ্ছে একটি অপারেশন করতে হবে।
অপারেশন....কিন্তু কেন? অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়ে বলল প্রভাত বড়ুয়া।
জী আপনার মেয়ের ব্রেনে একটি ক্লট আছে সেই জন্যই অপারেশন।
আপু ঠিক হয়ে যাবে তো? কাঁদতে কাঁদতে বলল টুম্পা।
আমরা ইলকাকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। বলল ডক্টর নীল। প্রভাত কুমারের কান্না থামতেই চাইছে না। টুম্পা তার বাবাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। কাঁদতে-কাঁদতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলো টুম্পা।
এভাবে কাঁদতে থাকলে পরিবারকে কিভাবে সান্ত্বনা দেবেন?
চমকে উঠলো টুম্পা! এতো সেই লোকটা, যে মর্গে ছিল। তার চোখ দেখেই তাকে চিনে ফেললো টুম্পা। জী আপনি...ও....দুঃখিত আমরা এখনও পরিচিত হইনি।
হ্যালো, আমি অভয়! আপনি?
আমি টুম্পা...
সুন্দর নাম। কে অসুস্থ?
আমার আপু। এক্সিডেন্ট হয়েছে
ও....ভেঙে পড়বেন না মনের জোর রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আপনার এখানে কে আছে?
কিছু জবাব দিলো না অভয়। আস্তে করে চলে গেলো। টুম্পারও ব্যাপারটা খুব আজব লাগলো। কে এই লোক! হঠাৎ করে আসে আবার হঠাৎ করে চলে যায়।
এসব ভাবতে-ভাবতে লিফটে উঠলো টুম্পা। কিছুক্ষণ লিফট চলার পর টুম্পা খেয়াল করলো লিফট আর চলছে না। লিফটের বাটনও কাজ করছে না। কেউ আছেন হেল্প....
এদিকে আবার টুম্পার ক্লস্টোফোবিয়া আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চিৎকার করছে সে। কেউ তার কথা শুনছে না। কে...উ ...কি শুন...ছেন...আমাকে বাঁচান....
এই তো আমি এখানেই আছি...লিফটের মধ্যে অভয়কে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো টুম্পা।
হ্যালো...আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? অভয়ের আওয়াজেই আবার জ্ঞান ফিরল টুম্পার। আমি...এ...খা...নে কি ক...রে...
লিফটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন আপনি! মনে পড়লো?
তার আগে আপনি বলুন আপনি লিফটে কিভাবে ঢুকলেন?
আমি ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। লিফট চেক করতেই এসেছিলাম। আপনি এত বড় একটা বোর্ড পড়েননি যে লিফট নষ্ট কাজ চলছে।
সরি আমি অন্যমনস্ক ছিলাম। খেয়াল করিনি।
আপনাকে খুব দুর্বল লাগছে। চলুন কফি খাওয়া যাক
এখানে কফি...
হাসপাতালেই ক্যাফে আছে। ওইখানেই চলুন।
একরকম জোর করেই টুম্পাকে ক্যাফেতে নিয়ে গেলো অভয়। ক্যাফেটা অনেক সুন্দর পরিপাটি এবং পরিষ্কার। কিন্তু কেউ নেই। একটু অবাক হল টুম্পা। কফিটা কেমন লাগছে..জিজ্ঞেস করলো অভয়।
মন্দ না...
আমি যদি কফিটা বানাতাম দেখতেন কি স্বাদ হতো! এটি তো রেডিমেড কফি...
আচ্ছা...তাই নাকি!
হ্যাঁ...অমি অনেক ভালো কফি বানাতে পারি।
কফি খেয়ে ভালো লাগছে না...
হ্যাঁ অনেক ভালো লাগছে..আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে হাসপাতালে যে ক্যাফে আছে আমি জানিই না।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। অভয় গুণগুণ করে গাইতে লাগলো
'আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে পেলাম.....'
ও এম জি! শ্রীকান্ত আচার্য...আপনারও এই গানটি পছন্দ! আমার তো এই গানটি অনেক ভালো লাগে। এই গান সবসময় আমি গাইতে থাকি..
আমিও...বলল অভয়...
হঠাৎ করে মোবাইল বেজে উঠলো টুম্পার। টুম্পা মা..তুই কোথায়? অনেকটা ধমকের সুরে প্রভাত বড়ুয়া।
বাবা আমি তো ক্যাফেতে...
তুই ওইখানেই থাক। আমি আসছি।
আমাকে যেতে হবে, বলল অভয়।
আরে...আপনি কোথায় যাচ্ছেন? টুম্পার কথার জবাব না দিয়েই চলে গেলো অভয়।
মা...তুই একা এখানে কি করছিস? অবাক হয়ে বলল প্রভাত বড়ুয়া।
কই...আমি তো একা নই এ...ই তো উ...নি
কে মা...এখানে তো তুই ছাড়া কেউ নেই। চল যাওয়া যাক। এত দ্রুত কিভাবে অভয় চলে গেলো তাই ভাবতে থাকলো টুম্পা।
দিন গড়িয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু ইলকার অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। অপারেশনও হল। কিন্তু তাও হুঁশ আসছে না ইলকার। ডাক্তাররা কিছুই বুঝতে পারছে না।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ভালোই সখ্যতা বাড়তে থাকে অভয় আর টুম্পার।
হাসপাতালের কাছাকাছি হাঁটাহাঁটি করছে টুম্পা। ইলকা আপু কবে ঠিক হবে, কবে তারা আবার আগের মত হাসবে গাইবে এইসব ভাবতে থাকে টুম্পা। এমন সময় একটি গাড়ি জোরে ছুটে আসে টুম্পার দিকে...
টুম্পাকে গাড়িটি ধাক্কা দেওয়ার আগেই অভয় তাকে এক হাত দিয়ে টান দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। ঠিক আছো তুমি? বলল অভয়।
আ...মি ঠিক আছি!
সবসময় এত বিপদে কেন পড়ো তুমি? কোনওসময় মর্গে আটকা পড়ো, কখনও লিফটে...কি সমস্যা তোমার?
আর তুমি কিভাবে পৌঁছে যাও যখন আমি বিপদে পড়ি! তুমি আসলে কে বল তো?
আমি তোমার দেবদূত...আচ্ছা....তাই না!
আসলেই আমি মজা করছি না। এই কয়েক দিনে তুমি আমার অনেক কাছের হয়ে গিয়েছ। তোমাকে একনজর দেখলে সব কিছু ভুলে যাই। তুমি পাশে থাকলে মনে হয় সারা পৃথিবীটা হাসছে। তোমার সাথে নিজেকে
অনেক সুরক্ষিত লাগে। একনাগাড়ে অনেক গুলো কথা বলে ফেললো টুম্পা।
ধন্যবাদ আমার এত প্রশংসা করার জন্য। হেসে বলল অভয়।
কিন্তু তোমার ঐ চোখ?
কি হয়েছে আমার চোখের? আশ্চর্য হয়ে বলল অভয়।
তোমার ঐ চোখ কিছু বলতে চায়। তুমি এত হাস্যোজ্জ্বল কিন্তু তোমার চোখ এত বিষণ্ণ এত বিমর্ষ কেন? কি যেন অব্যক্ত কথা বলতে চায়, কিন্তু পারে না।
ওরে বাপরে...এত ভালো ভাবে আমিই তো আমার চোখকে দেখিনি আর তুমি এত কিছু দেখে ফেললে! এত কিছু বুঝে ফেললে!
তোমার চোখে অনেক রহস্য। সেটা কি সেটিই জানতে চাই!
কি যে বল না তুমি....হাসতে হাসতে বলল অভয়। আচ্ছা! তোমার জন্য আমি একটি উপহার এনেছি।
কি উপহার? আগ্রহ সহকারে জানতে চাইলো টুম্পা।
এই দেখো চকলেট...
ওয়াও! তুমি কিভাবে জানলে চকলেট আমার অনেক পছন্দ। অনেক-অনেক ধন্যবাদ।
চকলেট আমারও অনেক পছন্দ!
তখনি চকলেট খেতে শুরু করলো টুম্পা। এক দুই কামড় দিতেই ছোঁ মেরে নিয়ে চকলেটটা নিয়ে নিলো অভয়।
কি করছ? চকলেটটা নিয়ে নিলে কেন? রেগে বলল টুম্পা।
বাকিটুকু আমি খাবো। শেয়ার করে খেলে ভালোবাসা বাড়ে।
তাই নাকি! জানতাম না তো! তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো?
অ......নেক....
আমি তোমাকে এতটা ভালোবাসি যে মরে গিয়েও তোমার পিছু ছাড়বো না। দেখে নিও।
ঠিক আছে দেখবো...
গল্প গুজবেই অনেকটা সময় পার করলো তারা। অবশেষে টুম্পাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় ফিরে এল অভয়।
চকলেটটা খেয়েছে সে? হঠাৎ কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো অভয়।
হ্যাঁ খেয়েছে। বলল অভয়।
তুই নিশ্চিত তুই এটা করবি? এটা তখনিই কাজ করবে যখন ওই তোর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস করবে।
টুম্পা আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। আমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর পুরো সতা জুড়ে এখন শুধু আমি।
তাও আর একবার ভেবে দেখ, তোকে কিন্তু সব কিছু হারাতে হবে। মনে রাখিস! এটি সহজ হবে না
আমি জানি দিদি। আমার ভালোবাসার মানুষের জন্য যে কোনও কিছু হারাতে আমি প্রস্তুত।
রাত তিনটা। চারদিক নিস্তব্ধ। হাসপাতালে পরিপূর্ণ নীরবতা। এমন সময়ে ইলকার কেবিনের দরজা খুলে ঢুকল অভয়। তার হাতে সেই টুম্পার খাওয়া অর্ধেক চকলেটটা।
অভয় চকলেটটা গ্লাসের পানিতে ডোবাল পুরোটা, মিশাল এবং চামচে করে সেই চকলেট মিশ্রিত পানিটুকু একটু একটু করে ইলকার মুখে দিতে থাকলো।
তুমি চিন্তা করো ন ইলকা! দেখো তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। আমি তোমাকে কিছু হতে দেবো না। আমাদের এত বছরের সম্পর্ক, আমরা পরস্পরকে এত ভালোবাসি, কি করে তোমাকে এত সহজে যেতে দিই! না! তোমাকে
কিছুতেই হারাতে পারবো না। মানলাম সেদিন দোষটা আমারই ছিল। আমরা লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম। গাড়ি ড্রাইভ করার জন্য তুমি জিদ করছিলে। কেন যে তোমার কথা শুনলাম! না তো আমি তোমাকে ড্রাইভ করতে দিতাম,
না তো তোমার এক্সিডেন্ট হতো! অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। তোমার বাবাকে আমিই ফোন করেছিলাম। সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি। অভয়ের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে জল। কোনও বাঁধ মানছে না।
আস্তে আস্তে চোখ খুলল ইলকা।
অ...ভয়...
ইলকা...তোমার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তুমি কথা বললে! এত খুশি হল অভয় যে বলার মত না।
আর এদিকে হঠাৎ করে কাশি শুরু হল টুম্পার। এত কাশি তার আগে কখনও হয়নি। কাশির সাথে বেশ খানিকটা রক্তও বের হল। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো টুম্পা।
দুই মাস পর ...
বাবা... বাবা! তুমি আজকেও ঔষধ খেতে ভুলে গেছো! অভিমান করেই বলল ইলকা।
আর ঔষধ খেয়ে কি হবে মা! আমার নিয়তিতে একটা মেয়ে হারানোই লেখা ছিল। তুই সুস্থ হয়ে গেলি কিন্তু টুম্পা....কাঁদতে লাগলো প্রভাত বড়ুয়া।
বাবা, তুমি একটু শান্ত হও...কাঁদতে কাঁদতে বলল ইলকা। আমারও টুম্পার কথা খুব মনে হয় বাবা! আমি তো ওকে একনজর দেখতেও পারলাম না।
কোথায় গিয়েছিলো টুম্পা? কিভাবে এক্সিডেন্ট হল কিছুই বুঝতে পারলাম না।
অভয় কোথায়?
বাবা তুমি তো জানো ও কেমন সবসময় রুমেই থাকে। আচ্ছা বাবা..বিয়ের পর কি সবকিছু বদলে যায়?
কেন মা কি হয়েছে?
অভয় আগে কত হাসত কত কথা বলতো। আর এখন মনমরা হয়ে থাকে। ঠিকমত কথা বলে না।
ওকে একটু সময় দে মা! সময়ের সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
অভয় এদিকে পেইন্টিং করতে ব্যস্ত। কার ছবি আঁকছ? রুমে ঢুকে বলল ইলকা।
আবারও টুম্পার ছবি! অভিমান করে বলল ইলকা। একবারও তো কোনোদিন আমার ছবি আঁকলে না! আমি মাঝে-মাঝে অবাক হয়ে যাই তোমার তো কোনোদিন জীবিত অবস্থায় টুম্পার সাথে দেখা হয়নি,
শুধু ছবি দেখেছো তার। এত নিখুঁত ছবি কি করে আঁকো?
জানি না! আঁকতে তো চাই তোমার ছবি কিন্তু কি করে যেন হয়ে যায় টুম্পার ছবি!
কুঁজো হয়ে হাঁটছে অভয়...তোমাকে না বললাম ডাক্তার দেখাও। তোমার পিঠের ব্যথা তো দিনদিন বাড়ছে..
এই পিঠের ব্যথা কেউ ঠিক করতে পারবে না... দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল অভয়। কারণ সে জানে এ কোনও সাধারণ পিঠের ব্যথা নয়। টুম্পা তো তার পিঠে চড়ে আছে। তার ভারে ক্রমাগত নুয়ে পড়ছে অভয়।
আর টুম্পা...সে তো মনের সুখে গান গাইছে...
"আ....মার সারা...টা দি...ন মেঘ...লা আ...কাশ বৃ...ষ্টি তো...মাকে পে...লাম...."
সত্যিই কোনও কিছু পাওয়ার জন্য কিছু না কিছু হারাতে হয়। চরম মূল্য দিতে হয়। এটিই প্রকৃতির নিগূঢ় সত্য।
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
সে তবে কে?
All Bengali Stories
62
63
64
65
66
67
(68)
69
70
71
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717