-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
All Bangla Articles
◕
স্মৃতি - কথা
( Winner of the article competition, September 2022 )
লেখিকা - ডঃ ভার্গবী চট্টোপাধ্যায় ভট্টাচার্য্য
##
স্মৃতি - কথা
লেখিকা - ডঃ ভার্গবী চট্টোপাধ্যায় ভট্টাচার্য্য
"আমার চশমাটা কোথায় গেল?", "আরে, ওই ছেলেটা, কী যেন নাম, নামটা মনে আসছে না..." অথবা, "এ ঘর থেকে ওঘরে এসেছি। কিন্তু কেন এলাম?"
এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের খুব পরিচিত। অনেক সময় আমাদের মেমরি বা স্মৃতিশক্তি ঠিক মত কাজ করে না, কিন্তু মেমরি বা স্মৃতিশক্তি কি? আমরা মনে করি যে, তথ্য মনে রাখাটাই স্মৃতিশক্তির মাপকাঠি। কিন্তু স্মৃতি কি কেবলই তথ্য নির্ভর?
সাধারণভাবে স্মৃতি বলতে আমরা বুঝি অটোবায়োগ্রাফিকাল মেমরি, অর্থাৎ আত্মকথার স্মৃতি। "আমি কাল দুপুরে ভাত খেয়েছি," অথবা "গত বছর আমরা শীতের ছুটিতে পুরী গেছিলাম। শিশুদের এই স্মৃতি থাকে না। তার কারণ এই ধরনের স্মৃতির জন্য দুটো জিনিসের প্রয়োজন:
১) নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা।
২) সময় অতিবাহিত হচ্ছে এই সচেতনতা।
শিশুরা দেখবেন নিজেদের সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করতে পারে না। আমরা বড়রা বলি 'আমি খাই' বা 'আমি খেলি'। কিন্তু শিশুরা নিজেদের নাম ধরে অভিহিত করে। ধরুন একটি শিশুর নাম সুমন। তাহলে সে বলবে- 'সুমন খায়' বা 'সুমন খেলে'। মনে হয় যেন সে বাইরে থেকে দেখছে সুমন নামের একটি ছেলেকে। নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা এলে, তখন তারা সর্বনাম ব্যবহার করতে শেখে। 'মা খায়', 'বাবা খায়', 'তুমি খাও'। তারপর নিজের সম্বন্ধে বলতে শিখবে, 'আমি খাই', 'আমি খেলি', 'আমার নাম সুমন' ইত্যাদি।
তেমনি, সময় অতিবাহিত হচ্ছে, এই ধারণা শিশুদের থাকে না। গতকাল বা গত মাসের ঘটনা তারা আলাদা করতে পারে না। তেমনি স্থানের সম্বন্ধেও তাদের ধারনা থাকে না। টেলিভিশনে তারা যা দেখে, বাস্তবের সঙ্গে সেটা গুলিয়ে ফেলে। ধারাবাহিকে মনগড়া গল্প এবং সংবাদের তথ্য — এই দুইয়ের তফাৎ তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
শিশুদের কি তাহলে কোন স্মৃতি থাকে না?
সেটা কিন্তু সঠিক নয়। তাদের যে স্মৃতি থাকে, তাকে বলে প্রসিডিওরাল মেমোরি বা পদ্ধতিগত স্মৃতি। শিশুদের ওপর একটা পরীক্ষা করা হয়েছিল। শিশুরা স্বভাবতই হাত-পা ছোঁড়ে। ঝুলন্ত কিছু খেলনার নিচে একটি শিশুকে রেখে মাপা হয়েছিল সে মিনিটে কতবার পা ছুঁড়ছে। এরপর তার পায়ে একটা সুতো দিয়ে একটা মোবাইল বেঁধে দেয়া হলো। এবার সে যখন পা ছোঁড়ে, তখন ঝোলানো মোবাইলটা ওঠা-নামা করে। শিশুটি সেটা দেখতে পাচ্ছে। এবার মাপা হল সে মিনিটে কতবার পা ছুঁড়ছে। দ্বিতীয় বার দেখা গেল সে অনেক বেশি পা ছুঁড়ছে। অর্থাৎ সে শিখেছে যে আমি পা ছুঁড়লে মোবাইল ওঠা-নামা করে। এই শিক্ষা বা স্মৃতিকে প্রসিডিউরাল মেমোরি বা পদ্ধতিগত স্মৃতি বলে। আমরা সাঁতার কাটা শিখি, সাইকেল চালানো শিখি। সেগুলো এই পদ্ধতিগত স্মৃতির উদাহরণ।
স্মৃতিশক্তিকে নানা ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন ধরুন — তথ্যগত স্মৃতি বা ঘটনামূলক স্মৃতি। তথ্যগত স্মৃতি বলতে বোঝায়, যে তথ্য আমরা জানি। যেমন ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লি, ভারতবর্ষের জাতীয় পাখি ময়ূর। চশমা আমরা কোথায় রেখেছি, বা পরিচিত ব্যক্তির কি নাম; সেগুলোও এই স্মৃতির আওতায় পরে। আর ঘটনামূলক স্মৃতি বলতে কী বোঝায়? ধরুন, গতকাল আমি একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম। সেখানে আমি গিয়েছিলাম আমার বাবা-মার সঙ্গে। আমরা মেনু কার্ড দেখে খাবারের অর্ডার দিলাম। আমি খেলাম বিরিয়ানি, বাবা খেলেন চিকেন, মা খেলেন মাছের কাবাব। এটা একটি ঘটনামূলক স্মৃতি। কিন্তু এর আগেও আমরা রেস্টুরেন্টে গিয়েছি। অন্য লোকের সঙ্গে গিয়েছি, অন্য রকম খাবার খেয়েছি। এই ঘটনামূলক স্মৃতি গেঁথে-গেঁথে তথ্যমূলক স্মৃতি গঠিত হয়। অর্থাৎ রেস্টুরেন্টে গেলে আমরা বসি, মেনু কার্ড দেখি, কিছুটা খাবারের অর্ডার দিই, খেতে আমদের সময় লাগে তারপর বিল মিটিয়ে দিই। এটা কিন্তু আর ঘটনামূলক স্মৃতি নয়, আমরা বিশেষ কোনও একদিনের ঘটনা বলছি না। এটা তথ্যমূলক স্মৃতি। অনেকবার গিয়ে-গিয়ে রেস্টুরেন্ট সম্বন্ধে আমাদের একটা ধারণা বা স্কিমা তৈরি হয়েছে। রেস্টুরেন্টে গেলে সেখানে হোটেল-মালিক বা রাঁধুনি আমাদের নাচ দেখায় না। সেখান থেকে আমরা শাড়ি কিনি না, বা বাঘ-ভালুক দেখতে পাই না। এগুলো দেখতে হলে আমাদের যথাক্রমে প্রেক্ষা গৃহে, শাড়ির দোকানে বা চিড়িয়াখানায় যেতে হবে।
স্কিমা শুধুমাত্র রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমাদের জীবনের সব অভিজ্ঞতাই আমরা স্কিমার মাধ্যমে সঞ্চয় করি। রেস্টুরেন্ট ভ্রমণের স্কিমার মত স্কুলে যাওয়া, বাজারে যাওয়া, বাসে চড়া, ট্রেনে চড়া, প্লেনে চড়া, সবই একেকটা স্কিমা। আমরা সব জিনিস ছবির মত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে রাখি না। একমাস আগে যে রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম, সেদিন কি পোশাক পরেছিলাম, বা কি খাবার খেয়েছিলাম, তা সঠিক মনে থাকে না। আবছা একটা ধারণা থাকে। এই আবছা ধারনাটা স্কিমা বা তথ্যমূলক স্মৃতি। কিন্তু ধরুন আমি যখন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম তখন যদি একটা নাশকতামূলক ঘটনা ঘটে, যেমন ঘটেছিল পুনার জার্মান বেকারিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ এর সন্ধ্যা ৭.১৫ তে; তাহলে আমাদের সেই ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে থাকবে। একে বলে ফ্ল্যাশ-বাল্ব মেমোরি। বাল্ব জ্বলে উঠলে যেমন সেই আলোতে চারপাশ পরিষ্কার দেখা যায়, তেমনি ফ্ল্যাশ-বাল্ব মেমোরি সব ঘটনা মনে রাখে ছবির মত। অর্থাৎ সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সময় আমরা ওখানে থাকলে আমাদের পরিষ্কার মনে থাকত সেদিন কে-কে খেতে গেছিলাম, কী খাচ্ছিলাম, কী পোশাক পরে ছিলাম, অন্যান্য টেবিলে কারা বসে ছিলেন। সচরাচর এত তথ্য মনে রাখা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু যেহেতু এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের জীবনে, তাই এই ঘটনা সম্পর্কিত প্রত্যেকটা তথ্য জরুরী। কেন বলুন তো? কারণ আমাদের প্রাণ সংশয় হয়েছিল এবং এই ধরণের পরিস্থিতিতে আমরা আগে কখনো পড়িনি। এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের জীবনে, কাজেই আমাদের মস্তিষ্ক বোঝার চেষ্টা করে "কোন পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছিল। সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করতে হবে ভবিষ্যতে।" এই থেকেই জন্ম হয় কিছু মানসিক অসুখের। যেমন ধরুন ওই রেস্টুরেন্টে ভয়ানক ঘটনা ঘটলেও, দ্বিতীয়বার সেখানে যেতে অসুবিধে নেই। কিন্তু সে কথা মন মানে না। শুধু রেস্টুরেন্টের ভিতরে নয়, রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে গেলেও, বা যেকোনো জিনিস যা আমাদের সেদিনের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, সেগুলো সন্তর্পণে এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যায়।
স্মৃতি সম্বন্ধে বলতে গেলে শেষ হতে চায় না। কিন্তু থামতে তো হবে। কাজেই দুটো গল্প দিয়ে আজ শেষ করছি। যাঁদের স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, তাঁদের পর্যবেক্ষণ করলে আমরা স্মৃতি সম্বন্ধে জানতে পারি। একজন বিদেশিনী ভদ্রমহিলার স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিল। তার ডাক্তার পরীক্ষামূলক ভাবে করমর্দনের ছলে তাঁর হাতে একটি পিন ফুটিয়েছিলেন। পরদিন ডাক্তার আবার যখন এসেছেন, ভদ্রমহিলা তাঁকে চিনতে পারেননি। তাঁর ঘটনামূলক স্মৃতি রোগের কারণে লোপ পেয়েছে। কিন্তু যখন ডাক্তার আবার করমর্দন করতে গেলেন, তখন হাত সরিয়ে নিলেন ভদ্রমহিলা। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন "কেন?" ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন, "কিছু লোক করমর্দন করার সময় হাতে পিন ফুটিয়ে দেয়।" ডাক্তার বললে, "আমি কি সেরকম কিছু করেছি?" উত্তরে ভদ্রমহিলা বললেন, "না, না, আপনার সঙ্গে তো আগে দেখাই হয়নি।" এক্ষেত্রে ঘটনামূলক স্মৃতি হারিয়ে গেছে, কিন্তু ঘটনা থেকে যে তথ্যমূলক স্মৃতি তৈরি হয়েছে, সেই তথ্যমূলক স্মৃতি অক্ষত আছে।
আরেকটি ক্ষেত্রে এক ভদ্রলোক নিজের ছেলেকেও চিনতে পারছেন না স্মৃতিভ্রংশের জন্য। নিজের ছেলের সম্বন্ধে বলছেন, "এই ভদ্রলোক আমাদের বাড়িতে থাকা শুরু করেছেন।" উত্তরে ছেলে বলল, "রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, বাড়িটা দেখে পছন্দ হল, ঢুকে পড়লাম থাকবার জন্য।" বাপ ছেলের কৌতুকময় সহজ সম্বন্ধের প্রতিচ্ছবি। এর উত্তরে তৎক্ষণাৎ বাবা সজোরে বললেন, "মিথ্যে কথা আমার একদম পছন্দ হয় না।" ইমোশনাল মেমোরি, অর্থাৎ যে স্মৃতির সঙ্গে রাগ দুঃখ কৌতুক জড়িয়ে থাকে, সেই স্মৃতি সহজে মোছে না। এই ভদ্রলোক ছেলের কথার মধ্যে কৌতুক বুঝতে পেরেছিলেন। স্মৃতিভ্রংশের ফলে এমনকি যাদের বাকশক্তি রহিত হয়ে গেছে, সংগীতের মাধ্যমে তারা অনেক সময় নিজেদের খুঁজে পায়। সংগীতের আবেদন আমাদের অনুভূতির কাছে, দুঃখ ভালোবাসা রাগ সবই আমরা সংগীতের মাধ্যমে ব্যক্ত করে থাকি।
( সমাপ্ত )
All Bangla Articles
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717