একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
লেখক - শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা
পর্ব ৮
২৬-১২-২০১৯ ইং
আগের পর্ব গুলি:
পর্ব ১
পর্ব ২
...
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ৮
--
বাড়িতে এই আলোচনাটা অদিতি আবার তুলল রাজেশের সামনে। রাজেশ সব শুনে বিস্মিত হয়ে গেল! অদিতি দিনের একশো শতাংশ সময় ওই বুড়োটাকে নিয়েই ভাবছে। কী
করে তাঁকে বাগে আনা যায় বা কী করে জব্দ করা যায়, এ সব তার মাথায় সারাক্ষণ ঘুরছে। সে যতই সামনে সমালোচনা করুক না কেন এই বুড়োর অস্তিত্বকে সে ভুলে
যেতে পারছে না। আসলে এখানে অদিতির কোনও কাজ তেমন নেই, তাই পরচর্চা আর পরের ব্যাপারে নাক গলিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায়। তা ছাড়া তার লোভটা
তো রয়েছেই, এই বাড়িটাকে সেও ভালবাসে ফেলেছে তাই এটাকে হস্তগত করার নেশায় পেয়েছে তাকে।
রাজেশ গম্ভীর হয়ে বলল, বুড়োকে একবার খেপিয়েছ, এ বার আবার তাঁর পিছনে লাগতে চাইছ! তোমার সাহস দেখছি দিনকে-দিন বাড়ছে। তিনি যদি এ সব কথা শুনেন
তা হলে কী হবে বুঝতে পেরেছ?
কী আর হবে?
এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এত কম পয়সায় শহরে আজকাল বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়?
এ সব কী বলছ তুমি! বাড়ি ছাড়ব মানে? এই বাড়িটা আমার চাই। আজ না হোক কাল তিনি তো বাড়িটা বিক্রি করবেন। তখন আমরা এই বাড়িটা কিনব। আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।
তাই যদি তোমার ইচ্ছে হয় তা হলে তার পিছনে লাগা ছেড়ে দাও। ছিঃ ছিঃ একজন ভাল মানুষ সম্পর্কে এত বাজে কথা তুমি বলতে পারলে?
আমরা মেয়েরা এক হলে এমন অনেক কথাই বলি। এ সব এত সিরিয়াস্লি নিতে নেই। আমরা নিজেদের মতো পরচর্চা পরনিন্দা করে একটুখানি আনন্দ করি। তোমাদের ব্যাটাছেলেদের মতো আমরা আলোচনা করি না।
যদি তাঁর কানে কথাটা যায়?
তিনি রাগ করবেন।
সেটা ভাল হবে?
আমার ওপর রাগ করে তিনি বেশিদিন থাকতে পারবেন না। তিনি আবার ফিরে আসবেন আমার কাছেই দেখবে। ওসব কাজের মেয়ে-ফেয়ে নিয়ে সময় তাঁর বেশিদিন
কাটবে না। শিক্ষিত মানুষ তাঁর স্ট্যাটাসের মানুষকেই তো কাছে চাইবেন।
◕
রাতে খাবার পর বারীনবাবু বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লেন। আজ ক'দিন ধরে তাঁর সময়টা বেশ কাটছে। কিছু নয় তবুও কেমন যেন বৈচিত্র্য এসেছে তাঁর
জীবনে। মিনতি সকালে কাজে বেরিয়ে যায় ফেরে রাত করে। প্রতিদিন ভোরে হেঁটে আড্ডা মেরে ফিরে দেখেন মিনতি ঘরে নেই। তার পর ছাত্ররা আসে। তাদের সঙ্গেও
সময়টা ভাল কেটে যায়। এই ছাত্রদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া তাঁর ঠিক হয়নি। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে তাঁর ভাল লাগে। এই যৌবন আর তার আবেগ ও দুরন্তপনা
তাঁর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তিনি তাদের দেখে নিজেও যেন উজ্জীবিত হন মনে মনে। জীবন যত যৌবন থেকে দূরে সরে যায় ততই মৃত্যু কাছাকাছি চলে আসে।
তবে ইদানীং বিভিন্ন কারণে সময়টা ভাল কাটছে সুধীরবাবুর সঙ্গেও। এই লোকটার জীবনের এই দিকটা সম্বন্ধে আগে তাঁর ধারণা ছিল না। এখন নাক গলাতেই এমন সব
কাহিনি তিনি শুনতে পারছেন তা সত্যি অভাবনীয়। যে লোকটা এখনও নারীর পানি প্রার্থনা করে ঘুরে বেড়ান তাঁকে আর যাই হোক বৃদ্ধ বলা যায় না। যে কোনও বয়েসের
নারী মানেই তাঁর কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এটা বারীনবাবু কেন যেন মানতে পারেন না। তবুও এক-একবার ভাবেন জীবনে রস আনতে গেলে এই কুভাবনাকেও কিছুটা
প্রশ্রয় দিতে হয়। এইসব ভাবনাচিন্তার মধ্যেও বেঁচে থাকার একটা তাৎপর্য লুকিয়ে আছে। মিনতির সঙ্গে সুধীরবাবুর সম্পর্ক শুনে তাঁর তো প্রায় ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড়
হয়েছিল। এ-এক রহস্য গল্পের উন্মাদনা এনে দিয়েছে তাঁর মনে। এই যে স্বাভাবিক জীবন তিনি চারদিকে দেখতে পাচ্ছেন, তার কোনও কিছুই আসলে স্বাভাবিক নয়। সব
কিছুই কেমন যেন ত্যাড়াবাঁকা। তবে সে যাই হোক না কেন একটা মানুষ সমাজের সব উপেক্ষাকে দূরে সরিয়ে বাঁচতে গেলে কিছু তো একটা চাই। কেউ যদি সাহিত্য করে,
রাজনীতি করে, সমাজসেবা, খেলাধুলা কিংবা বড়শি বেয়ে জীবন কাটাতে না পারে তা হলে কী মরে যাবে? না সবার বাঁচার অধিকার আছে, আর বাঁচতে গেলে যেখানেই
জীবনের রস খুঁজে পাওয়া যায় সেখানেই ডুবে যাও।
সুগার, প্রেসার আর ট্রাইগ্লিসারিটের ওষুধ খেয়ে সবে বিছানায় পড়েছেন, তখনই হাসতে হাসতে তার ঘরে এল মিনতি। এসেই সোজা তার পাশে বিছানায় বসল। বারীনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী রে ঘুমাবি না?
ঘুম পাচ্ছে না। তোমার সঙ্গে একটু গল্প করে যাই।
আমার ঘুম পাচ্ছে, তুই যা।
ঘুম পাচ্ছে, তা হলে দাঁড়াও তোমার শরীরে হাত বুলিয়ে দিই ঘুমিয়ে যাবে।
এই না!! বারীনবাবু লাফিয়ে উঠলেন, আমার ভীষণ কাতুকুতু লাগে। তুই যা-যা।
মিনতি ওসব কথায় আমল না দিয়ে তাঁর বুকে হাত দিল।
চুপ করে শুয়ে থাকো তো বুড়ো কোথাকার। আমার ভাল লাগছে।
বারীনবাবু সমস্ত শরীর শিরশির করে উঠল। মুখে নিষেধ করলেও তাঁর বাধা দিতে আর ইচ্ছে হল না। মিনতি তাঁর পিঠ, ঘাড়, নরম হাতে টিপে দিতে লাগল। মাঝে
মাঝে আবার প্রশ্ন করছে, কী গো ভাল লাগছে? তোমার ভাব দেখলেই বুঝতে পারছি তোমার আরাম লাগছে।
বারীনবাবু কিছু বলতে পারছেন না। তাঁর মাথায় তখন অন্য ভাবনা খেলা করছে। এই মেয়েকে এই ভাবে ঘরে জায়গা দেওয়াটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। যে কোনও সময়
তার সংযম যদি ভেঙে যায় তা হলে ভয়ানক কান্ড ঘটে যাবে। এইরকম চলতে থাকলে কতদিন তিনি আর নিজেকে বেঁধে রাখতে পারবেন।
মিনতি আস্তে করে ডাকল, দাদু-
বল।
ভাল লাগছে?
উঁ।
এখন আমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে না?
মাথার শিড়াগুলি লাফিয়ে উঠতে চাইছে তাঁর। ভেতরের একটা পশু ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবুও তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে ঘুমের ভান করে চুপ করে শুয়ে
রইলেন। মিনতি তার বুকের উপর তার শরীরটা এলিয়ে দিল। সেও জোরে জোরে হাই তুলছে আর তাঁর তলপেটে হাত দিয়ে বলছে, তোমার একদম পেট নেই। আর সইতে
পারছেন না বারীনবাবু, তাঁর বুকের উপর আছড়ে পড়েছে মিনতি। বারীনবাবু শরীরের যত ক্ষুধা সব আনন্দে পাগলের মতো খুঁজছে এক নারীর শরীর। হঠাৎ বারীনবাবু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলেন।
কী রে মিনতি তোর কী হয়েছে? যা ঘুমোতে যা তো দেখি। কী আরম্ভ করেছিস পাগলামি?
মিনতি সজোরে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরল। তুমি খুব ভাল দাদু। তুমি যদি আমাকে কাছে রাখো আমি সারাজীবন তোমার কাছেই থাকব।
আছিস তো আমার কাছেই!
তা হলে আমাকে একটু আদর করো।
দেয়ালে স্ত্রী'র বড় ছবিটার দিকে তাকালেন বারীনবাবু। তাঁর স্ত্রী তাঁর দিকে স্মিতহাস্যে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি চোখ বন্ধ করে মিনতির মুখের উপর ছড়িয়ে পড়া চুল্গুলি সরিয়ে দিয়ে গালে চুমু খেলেন।
নে হয়েছে, এ বার যা।
Next Part
আগের পর্ব গুলি:
পর্ব ১
পর্ব ২
...
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭
অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত
মাণিক্য
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
লুকানো চিঠির রহস্য
সে তবে কে?
All Bengali Stories
49
50
51
52
53
54
(55)
56
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717