Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

একা, বড়ো একা


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    (55)     56   

শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা




একা, বড়ো একা
বাংলা উপন্যাস
- শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

পর্ব ৭
১৯-১২-২০১৯ ইং


আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



◕ একা, বড়ো একা
পর্ব ৭
--

শুনুন দাদা একটা কথা বলি, যদি বাঁচতে চান এই বয়সেও প্রেম করুণ। দেখবেন বাঁচতে ভাল লাগবে। নিজেকে সমাজে প্রাসঙ্গিক মনে হবে।

কিন্তু বুড়ো বয়েসে বুড়ি পাব কোথায় মশাই?

বুড়ি খুঁজবেন কেন? যুবতির অভাব পড়েছে দেশে? মেয়েরা পুরুষদের চাইতে বেশি একাকীত্বে ভুগে। তা ছাড়া ইয়াং লেডিদের একটা পার্সেন্টেজ ওল্ড পুরুষ পছন্দ করে। কেউ কেউ আবার স্বামী হিসেবে ইয়াং পছন্দ করে বটে কিন্তু প্রেমিক হিসেবে ওল্ড পছন্দ করে।

হা হা-করে হেসে উঠলেন বারীনবাবু। আমাদের মতো বুড়োর জন্য লাইন দিয়ে যুবতিরা দাঁড়িয়ে আছে মশাই, কবে বুড়োটা মরবে জানতে। তারা কেউ আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আসবে না।

কী যে বলেন না দাদা! আপনার আমার বয়সে অনেক লোক এখনও বিয়ে করছে। তারা কি মেয়ে পাচ্ছে না মশাই? আসলে মনে নেশা থাকতে হবে তা হলেই সব ঠিক। বেহায়ার মতো লেগে থাকতে হবে, পয়সাও ওড়াতে হবে-- দেখবেন পাখি ধরা দিচ্ছে।

বলছেন?

কথাটা আমি আপনাকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তো এই পথে পা দেন না তাই কিছু বলিনি। কাউকে মন দিয়ে দেখুন, একতরফা ওই নারীর কাছে প্রেম বিলিয়ে যান। ওয়ান সাইডেড লভ এন্ড এফায়ার। একা-একাই নিজের মনে ওর সঙ্গে কথা বলুন, ওকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠুন দেখবেন ভাল লাগছে। কেউ সাড়া দিক না দিক তাতে আপনার কী? আপনি তো কাউকে ভেবে ভেবে নিজের মনে নিজের খারাপ লাগা দূর করে ফেলতে পারবেন। ওই নারীর বয়স কত, কার বউ, কার মেয়ে সেসব কথা মনে রাখবেন না। যাকে মনে ধরবে তাকে নিয়েই ভাবতে থাকুন। নিজের মনে ওকে ভেবে ভেবে ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠুন। ক'দিন পর দেখবেন আপনার মন থেকে সব একাকীত্ব দূর হয়ে যাবে। ওদিক থেকে সাড়া পান বা না পান এর মজাই আলাদা। সেই প্রথম প্রেমের অনুভূতি এখনও ফিরে আসতে পারে। দেখবেন বুড়ো বলে অনেকে আমাদের অবজ্ঞা করবে, কিন্তু সত্যি বলতে অবজ্ঞা করার মতো বয়স এখনও আমাদের হয়নি। আমরা এখনও সবার মতো নিজেদের জীবনকে উপভোগ করতে পারি।

আপনি ঠিক বলেছেন আমিই ভুল করেছি এতদিন। বয়স বয়স করে নিজেকে আমি সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এখন বুঝতে পারছি কেন আমার এত একাকীত্ব। ইউরোপিয়ানরা রিলেশনশিপের ব্যাপারে আমাদের মতো এত কঞ্জারভেটিভ নয়।

সব কিছু মন দাদা, ওটা বুড়ো হয়ে গেলে বুঝবেন আপনি সত্যি বুড়ো।

না না মনটাকে তাজা রাখতে হবে। মরার আগে মরে যাওয়া ঠিক না।

হঠাৎ আরও নতুন দুই পার্টনার এসে জুড়ে গেল তাদের সঙ্গে তাই তাদের কথা আর এগোল না।

◕ ◕
অদিতিও কিছুটা অবাক হল! এক সপ্তাহ হতে চলল বুড়োমানুষটি আর এদিকে আসেন না। তাকে প্রশ্রয় না দিতে অদিতিও চা'র জন্য ডাকেনি বা অন্য কোনও খাবার উপরে নিয়ে যায়নি। তা সে যায়নি বটে কিন্তু বুড়োটা এদিকে আসবে না? এ আরও এক নতুন জ্বালা হল অদিতির। সে বারবার জিজ্ঞেস করে, কী গো মেসোমশাই আজকাল কোথায় থাকেন?

রাজেশ গম্ভীর হয়ে বলে, আমি কী করে জানব!

প্রতিরাতে উপরের ঘরে মানুষের কথাও শোনা যায়। ব্যাপারটা কী বোঝার জন্য তক্কেতক্কে থেকেও অদিতির কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল না। যে লোকটা সারাদিন অদিতির ঘরে পরে থাকতে ভালবাসতেন তিনি এখন এদিকের ছায়াও মাড়ান না! কুট্টুসের সঙ্গে অন্তত একবার খুনসুটি, মারপিট না করলে যিনি শান্তি পেতেন না, তিনি আচমকা এত উদাসীন হয়ে গেলেন, সত্যি ভাবা যায় না!

অদিতি সকালে রাজেশকে ডাকল, এই শুনছ আজ একটু কুচো চিংড়ি করেছি মেসোমশাইকে দিয়ে আসবে? অনেকদিন বুড়ো লোকটাকে কিছু দেয়া হয় না।

রাজেশ অবাক হয়ে তাকাল! আমি পারব না, তুমি যাও।

আচ্ছা ঠিক আছে। এই শোনো, মানুষটা দেখি আমূল বদলে ফেলেছেন নিজেকে। মেসোসশাই এদিকে আর একদম আসেন না।

তুমিও তো তাই চাইছিলে।

তা চাইছিলাম বটে, কিন্তু তিনি এখানে আসা ছেড়েই দেবেন তা তো চাইনি।

তিনি তো তোমার হাতের দম দেওয়া পুতুল না অদিতি যে তুমি যেমন খুশি চাবি ঘোরাবে আর তিনি ঘুরবেন। তিনি বিনয়ী সরল বটে কিন্তু মোটেই বোকা নন। তিনি যেদিন বুঝতে পেরেছেন তোমার ঘরে তিনি অবাঞ্ছিত সেদিন থেকে তিনি এখানে আসা ছেড়ে দিয়েছেন।

হুম। কিন্তু আমি তো কোনও খারাপ ব্যবহার করিনি।

তা ঠিক। কিন্তু কোনও আগ্রহও দেখাওনি। এক সপ্তাহ ধরে কুট্টুস একবারও তাঁর সঙ্গে খেলতে যায়নি। আমি গল্প করার জন্য একবারও তাকে ডাকিনি, তুমিও চা থেতে বলোনি। তার মানেটা কী দাঁড়ায় বুঝেছ? আমি তাঁর সঙ্গে অনেকদিন ধরে চলেছি বলেই তাঁর জ্ঞান বুদ্ধি কতটা আমি জানি। তিনি একা থাকেন বটে কিন্তু অসহায় বা দুর্বল নন।

বেশ তো আমি যাব আজ।

যেয়ো না।

কেন?

অসম্মানিত হওয়ার ভয় আছে।

মানে?

তিনি তোমার খাবার শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে গ্রহণ করবেন না। এটা খুব সম্মানের হবে না। তাঁর মধ্যে মানুষকে রিড করার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে। তা ছাড়া তোমার মতো স্বার্থান্বেষী মহিলা ওরকম ভদ্রলোকের ঘরে না যাওয়াই ভাল।

এই ভাল হবে না বলছি।

ভুল তো বলিনি কিছু।

আচ্ছা এখন কী করব সেটা বলো?

রাজেশ থেমে বলল, এই অদিতি, তুমি আবার তাঁকে কাছে ডাকতে চাইছ কেন বলোতো? তুমিই তো তাড়ালে তাঁকে। তুমি কি চাও তিনি তোমার চ্যালা হয়ে থাকুন?

ওসব তুমি বুঝবে না।

বেশ তাইলে তুমিই বুঝে করো যা করার, আমাকে বারবার ডেকো না।

মুখে আর কিছু না বললেও অদিতির মনে একটা ফালতু যন্ত্রণা তৈরি হয়ে গেল। আমি ডাকি বা না ডাকি তাতে কী? আপনি এখানে আসা ছেড়ে দেবেন কেন? বুড়োর আত্মসম্মান বোধ আর ব্যক্তিত্ব দেখে সত্যি স্তম্ভিত হয়ে গেল অদিতি! তিনি যে খুব কষ্টে আছেন তাও বোঝার উপায় নেই। দিব্যি হেসে খেলে চলে যাচ্ছে তাঁর দিন। তা হলে অদিতির পরিকল্পনাটা একদম মাঠে মারা গেল। অদিতি ভেবেছিল বুড়োটা তার হাতের পুতুল হয়ে থাকবে। কিন্তু তা তো হলই না উলটে লোকটা আরও দূরে চলে গেল। ইদানীং আবার সেই কথাটা কানাঘুষো শুনতে পেয়েছে অদিতি, বুড়ো নাকি বাড়ি বিক্রি করে সত্যি চলে যাবেন এ বার। তা হলে এটাই সঠিক সময় আবার তাঁকে কাছে টেনে নেবার। যদি তিনি বাড়িটা কোনওমতে একবার তাদের হাতে দিয়ে দেন তা হলে এ জীবনে থাকার জায়গা নিয়ে আর ভাবতে হবে না।

ক'দিন পর কুট্টুসকে উপরে পাঠাল অদিতি পরিস্থিতিটা মেপে দেখার জন্য। পাঠানোর আগে ভাল করে ছেলেকে টিপস দিয়ে দিল।

শোনো, দাদু যদি বলে এখন খেলবে না তা হলে তুমি মানবে না। তুমি ঘরে ঢুকে একটু সময় তাঁর সঙ্গে কাটিয়ে এসো।

কুট্টুস অবাক হয়ে জানতে চাইল, কেন মা? দাদু তো এ ঘরেই আসবে।

না আসবেন না।

কেন?

দাদুর রাগ হয়েছে। তাই আমাদের ঘরে আসেন না। ওসব তুমি বুঝবে না, যাও।

কুট্টুস্কে ওঘরে পাঠিয়ে জানালায় কান পেতে বসে রইল অদিতি। যদি এই প্ল্যান সাকসেস হয় তা হলে আগামীকাল সে নিজে যাবে। কিন্তু একটু সময় পরে কুট্টুস মুখ কালো করে ফিরে এল।

কী হল বাবা?

দাদু তো পড়াচ্ছে। পড়ার সময় খেলা নাকি বারণ।

কাকে পড়াচ্ছেন?

দুটো আন্টি আর তিনটে আংকেলকে।

অ! তা তোমাকে কী বললেন?

দাদু বলেছে তাঁর শরীর ভাল নয়। তিনি এখন আর খেলতে পারবেন না। এখন ঘরে মা-বাবার সঙ্গে খেলতে।

রাজেশ যে কিছু ভুল বলেনি তা এখন বুঝতে পারছে অদিতি। চালাকি করতে গিয়ে সে নিজেই ফেঁসেছে এ বার। তবে সেও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। এই বুড়োকে জব্দ করার একটা পরিকল্পনা করতে হবে। তুমি যদি ডালে ডালে চড়ে বেড়াও ঘুঘু আমি চলব পাতায় পাতায়। বিকেলে মোড়ের মধ্যে পাড়ার মেয়েদের আড্ডা হয়। সেখানে পাশের ঘরের সর্বাণীর সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল। দেখা হতেই অদিতির মনের জিজ্ঞাসাটা তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে এল, কী গো সর্বাণী মেসোমশাইর ঘরে রাত্তিরে আজকাল কেউ থাকে নাকি?

হ্যাঁ, থাকে তো। ওই যে কাজের মেয়েটা মিনতি।

ওহ তাই! মেয়েটা কিন্তু বিশেষ সুবিধের নয়। তার চেহারাটা দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না। কিন্তু সে হল জাত হার্মাদ। তাই তো কোনও জায়গায় তার ঠাঁই হয় না। বুড়োকে হাতিয়ে একদিন চম্পট দেবে দেখো।

বুড়োর আর ক্ষতি কী? তাঁর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। কিছু দিয়ে দেবে, এই মেয়েও বশে থাকবে। সব মেয়েরা একসঙ্গে খিক খিক করে হেসে উঠল।

অদিতি বলে, শুধু দিয়ে দেবে, নেবে না কিছু? বুড়ো কিন্তু এখনও ইয়াং, দু'বেলা শরীর চর্চা করেন। দেখো কোন ঘাটের জল কোথায় গড়ায়।

অন্য একজন মহিলা বললেন, ছিঃ ছিঃ এ সব কী বলছ তোমরা! একজন বুড়োমানুষ একা-একা থাকেন তাঁর সম্বন্ধে যা নয় তাই বলে যাচ্ছ। এই মিনতি তো অনেকদিন ধরে তাঁর এখানে কাজ করে, কই কোনওদিন তো কোনও কথা শুনিনি। তোমরা কিছু একটা পেলে সবার সম্বন্ধেই বাজে কথা বলো।

অদিতি বলল, এই হয়ে গেল আর কী! আমরা মজা করে সময় কাটাচ্ছি তাতে জল ঢেলে দিলেন দিদি। পুরুষ বুড়ো হয় নাকি? মৃত্যুর আগের দিনও নাকি এদের সাধ আহ্লাদ থাকে।

সর্বাণী বলে, অদিতি ওনাকে নিয়ে কিছুদিন কাটিয়েছে তো, বুড়োর ক্ষমতা সম্বন্ধে ওর ভাল ধারণা আছে দিদি।

সব মহিলারা এমন জোরে হেসে উঠল, অপ্রস্তুত হয়ে গেল অদিতি। সব কাজেই সে কেমন যেন ফেঁসে যাচ্ছে বারবার।

Next Part

আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   


অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
সে তবে কে?   



All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    (55)     56   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717