All Bengali Stories
100
101
102
103
104
105
106
(107)
108
109
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
◕
রাজকুমারী
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam
27 th June, 2021
##
রাজকুমারী
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam
পর্ব ৩
আগের পর্বগুলিঃ পর্ব ১
পর্ব ২
# পর্ব ৩
রাজকুমারী নতুন স্কুলে গিয়েও প্রতি ক্লাসে প্রথম হচ্ছে। বলতে গেলে যত সময় যাচ্ছে তার পড়াশোনা আরও ভালো হচ্ছে সেই সঙ্গে ওর দুরন্তপনাও বাড়ছে। ওর একটা পাঁচজনের দল আছে সেই ছোট
থেকেই, তার মধ্যে সবাই ছেলে। বরুণও সেই দলে আছে আর বাকিরা রামু, রঘু, রবি। বরুণ ছাড়া বাকীরা তার সঙ্গেই পড়ে। রাজকুমারী সেই দলের নেত্রী। মেয়েরা তার সঙ্গে খুব একটা মিশতে পারে না। একে তো
সে পড়াশোনায় ভালো সেই কারণে অনেকে তাকে হিংসা করে, তার উপর সে চঞ্চল তার সঙ্গে মিশলে নাকি মেয়েরা খারাপ হয়ে যাবে।
ওর দলের নিত্যকর্ম হল নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাঁটা, গাছে উঠে ফল পেড়ে খাওয়া সে যার গাছই হোক না কেন। আর একটা ব্যাপার হল রাজকুমারীর দলের সবাই খুব ভালো গুলতি চালাতে পারে। যত বড়
হচ্ছে পড়াশোনার চাপ বেড়ে যাওয়ায় রানী মনে-মনে খুশী হয়, কারণ এখন রাজকুমারীর স্কুলে যেতে-আসতে অনেক সময় লাগে, স্কুল ছুটি হয় দেরীতে তাই এখন হয়ত মেয়েটা একটু শান্ত হবে। লোকের নালিশ
শুনতে-শুনতে তার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। গ্রামের সবাই তাকে আর বিশুকে বলে, "যতই রাজকুমারী লেখাপড়ায় ভালা হোক না কেনে সে তো আসলে চোর, তার লগের সব-কটাই চোর। আম, পেয়ারা
তোগোর জ্বালায় রাখাই যায় না।"
"তার উপর কিছু কইতে গেলে গুলতি মাইরা পালাইয়া যায়। দেখিস একদিন গাছ থাইকা পইরা এমন কাম হইব চোখে শস্য ফুল দেখবা তোমরা।"
সেই ছোট থেকে নালিশ শুনে আসছে রানী। কতদিন স্কুল থেকে আসার পর তাকে বেঁধে রেখেছে রানী। বিশু খুব একটা এসব গায়ে মাখে না, মাঝে-মাঝে বুঝায় রাজকুমারীকে। সে সবসময় মেয়েটার গুনটাই দেখে,
স্বপ্ন দেখে মেয়েকে ডাক্তার, না হয় বড় অফিসার বানাবে। প্রতিবার যখন প্রথম হয়ে বাড়ী আসে গর্বে বুকটা ফুলে যায় বিশুর।
রাজকুমারী যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন একদিন স্কুলে যাবার সময় রামু বলেছে নয়ন মোদকের বাগানে আম, পেয়ারা খুব ধরেছে। এখন রাজকুমারী খুব একটা ঘুরতে পারে না, ওরাই খবর এনে দেয় আর সে
স্কুল থেকে ফেরার সময় দলবল নিয়ে গাছে চড়ে এসব পেড়ে আনে। রাজকুমারী বড় হলেও ওর শরীর খুব পাতলা, তাই এখনও সে গাছে উঠতে পারে। ওরা স্কুল থেকে ফেরার একটু আগে খুব বৃষ্টি হয়েছে।
রাজকুমারী তার দলের সবাইকে বলল, "এখন কেউ থাকব না। আমি পেয়ারা গাছে আর রামু আম গাছে উঠবো। তোরা নীচে থাকবি, কেউ আইলে ইশারা করবি।"
বড় হওয়ায় রাজকুমারীর একটু লজ্জায় হয়েছে। আগে গাছে চরলে কেউ কিছু এসে গালিগালাজ করলে বলত, "আম কি তোমারে জিগাইয়া পাড়তে হইব, আম তো গাছের। হে মানা করলে আর খাইতে আসুম
না!" বলে গুলতি মেরে-মেরে নেমে পালিয়ে যেত।
সেদিন সে পেয়ারা গাছে উঠতেই নয়ন মোদকের ছোট ভাই পরম লাঠি নিয়ে তেড়ে এল তার দিকে। নীচ থেকে গাল পাড়তে-পাড়তে পাথর দিয়ে ঢিল ছুঁড়তে থাকে তার দিকে, "বান্দর মাইয়া, এতো বড়
হইছে চুরি করা বাদ দেয় নাই। আর গাছে উঠছত লজ্জা নাই। তোরে আইজ তোরে মাইরা ফালাইমু।"
রাজকুমারী থেমে থাকার পাত্রী নয়। রামু চুপিচুপি গাছ থেকে নেমে গেছে তার গাছটা একটু দূরে ছিল। সবাই গিয়ে আড়ালে লুকিয়ে থাকে। রাজকুমারীর হাতে গুলতি নেই তাই সে পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে
@@@
না। কিন্তু সে কিছুতেই ধরা দেবে না। একে তো একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে তার উপর পেয়ারার নরম ডালে সে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে একটা ছোট পুকুর ছিল রাজকুমারী ভাবল সে পুকুরে ঝাঁপ দেবে, কিন্তু তখনই ডাল ভেঙ্গে পড়ে যায় নীচে থাকা একটা বড় পাথরের উপর। খুব চোট পায় চোখে অন্ধকার দেখছিল। কিন্তু ধরা দেবে না বলে লাফিয়ে পরে পুকুরে। কোন রকমে উঠে আড়ালে একটা গাছের নীচে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকে। পরম তাকে আর ধরতে পারেনি। রাজকুমারী সবাইকে বারণ করেছে এই কথা কাউকে না বলতে। বাড়ীতে ভিজে কাপড়ে এসে রানীকে বলেছিল, ওদের একটাই ছাতা, বৃষ্টি আসায় ভাইকে বাঁচিয়ে সে ভিজে গেছে। এরপর কিছু না খেয়ে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়েছিল। রাতে তার খুব জ্বর আসে। রানী বকবক করতে থাকে, "কি দরকার আছিল বৃষ্টি ভিজনের! আমি জানি তুই ইচ্ছা কইরা ভিজছস। এত বড় হইলি কিন্তু তোর দস্যিপনা গেল না। কত জ্বর আইছে দেখ!"
"একটু ঘুমাইলেই কইমা যাব মা, চিন্তা কইরো না।"
রানী সারারাত বসে জল পট্টি দেয়। বিশু গিয়ে ঔষধ আনে পরদিন জ্বর কমে তার, ব্যস আবার দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দেয়। কিন্তু এরপর থেকে রাজকুমারীর প্রায়ই মাথায় যন্ত্রণা হয়, বিশেষ করে যখন পড়তে বসে, মাথায় চাপ পরে তখন। প্রথম-প্রথম কম ছিল তাই কাউকে বলত না, পাছে মায়ের কাছে বকুনি খায় দস্যিপনার জন্য। কিন্তু যতদিন যাচ্ছিল তার মাথার যন্ত্রণা সবসময় থাকে, মাঝে-মাঝে জ্বর আসে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। বিশু তাকে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ এনে দেয়, তারপর কমে, কদিন পর আবার হয়ে যায়। মেয়েটার কষ্ট সহ্য হয় না বিশু, রানীর। রাজকুমারীকে নিয়ে তাদের কত আশা সামনে তার মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু ক্লাস নাইনে ঠিকমত পড়াশোনা করতে না পারায় রাজকুমারী প্রথম হতে পারেনি। এতে অনেকে খুশী হয়। বলে, "বেশ হইছে মাইয়ারে লইয়া খুব অহংকার বিশুর। দেখবা মাধ্যমিকে ফেল করব।"
"হেইডাই ঠিক হইব।"
কিন্তু ক্লাস টেনে পড়ার চাপ বাড়তেই রাজকুমারীর শরীর খারাপ হতে থাকে। সে বিছানা থেকে উঠতে পারছিল না, মাথার যন্ত্রণা খুব বেড়ে যায়, তার চোখের দৃষ্টি কমতে-কমতে একসময় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায় রাজকুমারী। বিশু, রানী, বরুণ সবাই পাগল হয়ে যায়। গ্রামের লোকেদের কেউ-কেউ বলছে রাজকুমারীর উপর ভূত- পেত্নীর নজর পড়েছে? কেউ-কেউ বলছে দেবতা বা অপদেবতা ভর করছে তাকে। রাজকুমারী দুপুর, সন্ধ্যা কিছু মানে না, যখন যেদিকে খুশী চলে যায়। গাছে চড়ে, নদীর ধারে চুল খুলে ঘুরে বেড়ায়, এর ফলেই ওর এমন অবস্থা হয়েছে।
আসলে রাজকুমারী যেদিন গাছ থেকে পড়ে যায় সেদিন মাথায় প্রচণ্ড চোট পায় আর সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে ওর ব্রেনে টিউমার হয়। আর টিউমার আস্তে-আস্তে ভয়ানক আকার ধারণ করে, তা থেকেই ওর চোখের জ্যোতি আস্তে-আস্তে চলে যায়। ওর যে রোগ হয়েছে তার চিকিৎসা একটুও হয়নি। কেউ বুঝতে পারেনি তার কি হয়েছে এমনকি রাজকুমারীও বুঝতে পারেনি তার সেদিনের আঘাত থেকে এমনটা হয়েছে।
বিশু আর রানী লোকের কথায় কখনও কোন সাধুর কাছে যায় জবাব তুলতে, কখনও মোল্লার কাছে যায় ভূত- পেত্নী তাড়াতে ওদের সবকিছু শেষ করে কবচ, তাবিজ আর মাদুলিতে ভরে দিয়েছে মেয়েটাকে। আজ কালী পুজো, কাল বিপদতারিণী পুজো এসব করতে-করতে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় বিশু, কিন্তু একবারও তারা বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি। একেই মনে হয় বলে অন্ধবিশ্বাসের ফাঁদ! যারা সেই ফাঁদে পা দেয় তারা অকালেই তলিয়ে যায়, আর যখন বুঝতে পারে তখন আর ফিরে আসতে পারে না। ওরা ওদের সাধ্যমত যত টাকা অন্ধবিশ্বাসের পিছনে খরচ করেছে তা দিয়ে যদি একবার ডাক্তারের পিছনে খরচ করত তাহলে হয়ত মেয়েটা একটু হলেও শান্তি পেত।
রাজকুমারীর শরীর দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা সে দিতে পারবে না এই ভেবে মেয়েটা দিনরাত কাঁদে বিছানায় শুয়ে শুয়ে। মনসার থানে জবাব উঠেছে তিনদিনের মনসা পূজা দিলে নাকি রাজকুমারী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। বিশুর হাতে একটাও টাকা নেই, কিভাবে সে পূজো করবে। শেষে ওদের সবচেয়ে প্রিয় গাভী ধবলীকে বিক্রি করল পূজো দেবার জন্য। ধবলীকে রাজকুমারী খুব ভালবাসে তাই বিশু তাকে না জানিয়ে ধবলীকে বিক্রি করে আসে। কিন্তু রাজকুমারী চোখে দেখতে না পেলেও কিছু একটা আন্দাজ করেছিল। তাই বরুণকে বলত, " ভাই ধবলী কই? তার ডাক শুনতে পাই না কেন?"
"ঘাস খাইতাছে দিদি, আর না হয় ঘুমাইয়া আছে।"
"আচ্ছা ভাই, তিনদিনের মনসা পূজা হইব, বাবা এত টাকা কই পাইল?"
"তুই কি করবি দিদি জেনে। টাকা বাবার কাছে আছিল!"
"না ধবলীরে কিছু করছে?"
"না না, ধবলীর কিছু হয় নাই।"
@@@
মনসা পূজা শুরু হল তিনদিনের। বিশু তার সাধ্যমতো আয়োজন করেছে। উঠানে ছোট প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে পূজোর জন্য, ওঝার গান হচ্ছে। রাজকুমারীকে বসানো হয়েছে পুজো ঘরের সামনে। গত শশীবালা, বনমালী কেউ বেঁচে নেই এক বছরের মধ্যেই দুজনে মারা গেছে! রাজকুমারীর দিদা আর ওর সঙ্গের দুজন মেয়ে বসে আছে তার পাশে। বিশুর বোনেরা এসেছে, কাজকর্ম করছে। রাজকুমারীর বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল একে তো তার শরীর এত খারাপ, এমনিতেই খেতে পারে না তার উপর সকাল থেকে সে উপোষ করতে পুরত মশাই বলেছেন। তার জন্যই তো পূজো তাই পূজো না হওয়া অবধি তাকে নির্জলা উপোষ থাকতে হবে।
তার স্কুলের প্রিন্সিপাল আর প্রদীপ মাষ্টার সেদিন এলেন তাকে দেখতে। রাজকুমারী পড়াশোনায় ভালো থাকায় তারা তাকে খুব ভালবাসতেন তার উপর মেয়েটা এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারছে না তাই তারা তাকে দেখতে এলেন। রাজকুমারীকে দেখে তাদের খুব কষ্ট হল। চটপটে মেধাবী মেয়েটা অন্ধ হয়ে চুপ করে বসে আছে আর বসে-বসে থাকতে-থাকতে রাজকুমারীর শরীর ফুলে গেছে? রক্ত কমে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তাই শ্যামলা মেয়েটাকে ফর্সা লাগছিল। দেখে তাদের চোখে জল আসে গেল।
বিশু, রানী আর বরুণ তাদের যত্ন করে বসাল। তারা রাজকুমারীর সামনে গেলেন না, পাছে রাজকুমারী কাঁদে। প্রিন্সিপাল আনন্দমোহন দত্ত বললেন, " কি অবস্থা হয়েছে রাজকুমারীর? কোথায় ওকে ডাক্তার দেখিয়েছ? কি বলেছে ডাক্তার? আমরা এতদিন শুনেছি নানা কথা আজ কাছ থেকে দেখে বুঝলাম ভয়ানক কিছু হয়েছে তার!"
"ডাক্তার দেখাই নাই মাষ্টার-বাবু, রাজকুমারীর উপরে দেপতার খারাপ নজর পড়ছে। তাই এতদিন ধইরা কবচ, তাবিজ মাদুলি পরাইছি। এখন মনসার থানে জবাব উঠছে তিনদিনের পূজা দিলে রাজকুমারী ভালা হইয়া যাইব।"
"কিছু মনে করো না বিশু। তোমাদের অজ্ঞতার জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা!"-প্রদীপ রায় বললেন।
"কি কন মাষ্টার-বাবু!! মাইয়াডা যাতে ভালা হয় তার লাইগা আমি কত কিছু করতাছি, একেবারে সর্বস্বান্ত হইয়া গেছি।"
"এতো দিনে বুজরুকির পিছনে যত টাকা নষ্ট করেছ তা দিয়ে যদি ডাক্তার দেখাতে তাহলে হয়ত মেয়েটা ভালো হয়ে যেত। কে যে তোমাদের এমন পরামর্শ দেয় বুঝি না। আর কি বলব সারা পৃথিবী এগিয়ে গেলেও ইশানপুরের লোকেরা অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার নিয়ে থাকবে, এরা আর এগোবে না। মেয়েটাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই কথাগুলো বললাম।"
"আমরা অত কথা বুঝি না মাষ্টার-বাবু। হগলে কইল রাজকুমারী মাঠে- ঘাটে ঘুরে, গাছে চড়ে হের লাইগা তার বাতাস লাগছে। আমাগোরও তাই মনে হইল!" চা নিয়ে এসে রানী কথাগুলো বলল। বিশু তাদের কথা শুনে কি যেন ভাবছে!
ওদের কথার মাঝখানেই হঠাৎ রাজকুমারী মাথা ঘুরে পরে গেল। তার হাত -পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের লোকজনেরা তাকে তুলে বসাল। কিন্তু রাজকুমারী চোখ কিছুতেই খুলছে না। আনন্দমোহন বললেন, "এখনও কি মেয়েটাকে নিয়ে বসে থাকবে বিশু! চল নিয়ে চল! আমরাও তোমার সঙ্গে যাচ্ছি।"
"কিন্তু মাষ্টার-বাবু ওর লাইগা তো পূজা হইতাছে মনে হয় কইমা যাইব, আর মাইয়াডা তো উপোষ পূজা না হইলে কেমনে যাইব।?" রানী বলল।
"চুপ কর মূর্খের দল! তোমরা মেয়েটাকে শেষ না করে ছাড়বে না দেখছি।"
বিশু হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। বলে, "মাষ্টার-বাবু চলেন আমি রাজকুমারীরে লইয়া যামু।"
"তাহলে চল। এখানে নয়, একেবারে কলকাতায় নিয়ে যাই। প্রদীপ বাবু আপনার গাড়ীটা নিয়ে চলুন।"
"বিশু ওকে নিয়ে আমার গাড়ীতে উঠ, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। বড় রাস্তার পাশেই গাড়ীটা রাখা আছে!"
রাজকুমারী তখনও অচেতন। দুজনে তাকে নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে বসল। রানীর যাবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পূজা ফেলে কি করে যাবে। আর উপস্থিত অনেকে বাধা দিচ্ছে পূজো ছেড়ে না যাওয়ার জন্য।
কলকাতায় যেতে-যেতে অনেক সময় কেটে গেল। আনন্দমোহন বাবু আর প্রদীপ-বাবুও সঙ্গে গেছেন। তত সময়ে রাজকুমারী একবারও চোখ খুলে তাকায় নি।
আনন্দমোহন বাবুর চেনা-জানা ডাক্তার অনির্বাণ দাসগুপ্তর কাছে রাজকুমারীকে নিয়ে গেলেন তিনি। ডাঃ দাসগুপ্ত দেখেই বললেন, "একেবারে শেষ করেই তো এনেছেন এখানে। এখন এখানে না আনলেই পারতেন!"
বিশু কাঁদতে থাকে। প্রদীপ-বাবু বললেন, "আপনি চেষ্টা করে দেখেন ডাক্তারবাবু। কি হয়েছে মেয়েটার বলতে পারেন?"
"সম্ভবত ব্রেন টিউমার। ওকে আইসিউতে রাখতে হবে কয়েকটা পরীক্ষা করে তারপর বুঝা যাবে কি হয়েছে। বাকীটা ভগবানের হাতে!"
রাজকুমারীকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বিশুর হাতে সামান্য কটা টাকা। দুই মাস্টারমশাই ওকে সাহায্য করছেন।
পরীক্ষায় ধরা পড়ে রাজকুমারীর ব্রেন টিউমার, একেবারে লাস্ট ষ্টেজ। বিশু কাঁদতে থাকে বলে, "আপনেরা যদি একটু আগে আইতেন তাইলে মনে হয় আমার রাজকুমারী বাইচা যাইত।"
"সেটা অনেক দেরীতে বুঝলে বিশু!"
কোন চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই পরদিন মারা যায় রাজকুমারী। ওর লাশটা নিয়ে যখন তারা বাড়ী এলেন তখন ওঝার গানে লক্ষ্মীন্দরের মৃত দেহটা জলে ভাসানো হয়েছে। বিশুর বাড়ীতে কান্নার রোল পরে যায়। রানী কাঁদতে-কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বরুণও খুব কাঁদছে দিদির জন্য। যারা একসময় রাজকুমারীর নিন্দা করত তারাও চোখের জল ধরে রাখতে পারে নি। শুধু বিশুর চোখে জল নেই, সে পাথরের মতো হয়ে গেছে! অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, অজ্ঞতার করাল গ্রাসে হারিয়ে যায় বিশুর রাজকুমারী! এরপর থেকে বিশুকে পাগল অবস্থায় একা-একা রাজকুমারীর কথা বলতে-বলতে মাঠে ঘাটে ঘুরতেই দেখা যায়!
( সমাপ্ত )
Next Bangla Story
All Bengali Stories
100
101
102
103
104
105
106
(107)
108
109
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717