Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

গুরু-মারা বিদ্যা

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    126    127    128    129    130    131    (132)     133    134    135   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



গুরু-মারা বিদ্যা
বাংলা গল্প
লেখক - মুকুট রায়, পিতা- কান্তি নাথ রায়, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প


## গুরু-মারা বিদ্যা
লেখক - মুকুট রায়, পিতা- কান্তি নাথ রায়, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ
গণেশ-টকিজ বাস-স্টপেজ থেকেই বাসে উঠল কাল্লু শেখ। কেপমারি বা পকেটমারিতে সিদ্ধহস্ত ওস্তাদ। কেপমারি বা পকেটমারি লাইনে নামকরা কাটার বা ব্লেড রানার। এক ডাকে সবাই তাকে চেনে। কেপমারি বা পকেটমারি কাজও শিল্পকর্মের থেকে কম কিছু নয়। পকেটমারের একটা দল যখন বাসে বা ট্রেনে ওঠে তখন তাতে তিন ধরনের লোক থাকে -
প্রথম জন, ঘাইবাজ; যার কাজই হল যাত্রীদের কার কাছে কি জিনিষ বা টাকা আছে তার খবর নিয়ে কাটার বা ব্লেড রানার কে পৌঁছে দেওয়া। কাটার বা ব্লেড রানারের কাজ হল মসৃণ ভাবে পকেট কেটে তা ট্রান্সপোর্টারের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ব্লেড রানারের কাজে অন্যরাও সাহায্য করে। ব্লেড রানার যখন কারো পকেট কাটে, তখন সেই লোককে নানা ভাবে বিব্রত করে তার দৃষ্টি যেন পকেটের দিকে না থেকে অন্য দিকে থাকে তার ব্যবস্থা করে। ব্লেড রানার দুই-আঙ্গুলের মাঝে ব্লেড নিয়ে এমন মসৃণ ভাবে পকেট কাটে যেন মাখনের উপর ছুরি টানা। যার পকেট কাটা হয় সে বিন্দুমাত্র টের পায় না। পকেট কেটে জিনিস বা টাকা বের করার পর তা মুহূর্তের মধ্যে চলে যায় ট্রান্সপোর্টারের কাছে। ট্রান্সপোর্টারের কাজই জিনিস কিংবা টাকা নিয়ে বাসের বা ট্রেনের দরজার কাছে তার দলের যে লোক দাঁড়িয়ে থাকে তার কাছে পৌঁছে দেওয়া। বাসে বা ট্রেনে পকেট কাটার ব্যাপারে জানাজানি হলে দরজার কাছে দাঁড়ানো দলের লোক বাস থেকে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ে। বাসে বা ট্রেনে পকেট মারের দলের যে লোক ধরা পড়ে তাকে দলের লোকেরাই অল্পস্বল্প মারধর দিয়ে অন্য লোকের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

কাল্লু শেখ বা কালুয়ার গণেশ-টকিজ বাস-স্টপেজের কাছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ট্রেনিং সেন্টার ছিল। তার দলের নতুন-নতুন ছেলেদের নিয়ে সে বাসে উঠত। প্রথম-প্রথম তার আড্ডা বা ডেরাতে প্রাথমিক জিনিস গুলো শিখিয়ে দেওয়ার পর সে তাদের নিয়ে ভর্তি বাসে উঠে সেখানেই তাদের ট্রেনিং দিত। তার শিক্ষার গুনে কত ভীতু ছেলে আজ মাস্টার কাটার হয়ে নাম করে ভালো উপার্জন করছে। নতুন-নতুন দল খুলে তারাই এখন ওস্তাদ। গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে। এই তো লাল্টু নামের একটা ছেলে ভীতু, নরম মনের ছিল। কালুয়া আর তার দলবল যখন এক বুড়ো ভদ্রলোকের মেয়ের বিয়ের গয়নার ব্যাগটা হাতসাফাই করেছিল, তখন সে বুড়ো ভদ্রলোকের কালুয়ার পায়ের উপর পড়ে কি কান্না, তাঁর মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাবে। তখন ঐ লাল্টুই ভদ্রলোকের দুঃখে গলে গিয়ে কালুয়াকে অনুরোধ করেছিল গয়নাগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য। কালুয়া ফেরত দেয়নি। উল্টো লাল্টুকে সে বুঝিয়েছিল, এটা তাদের বিজনেস। এখানে দয়া-দাক্ষিণ্য করলে তাদের রুটি-রোজগারই বন্ধ হয়ে যাবে। মাস্টার কাটার বা ওস্তাদ হতে গেলে তার মনকে শক্ত করতে হবে।

সেই লাল্টুই এখন ওস্তাদ, মাস্টার কাটার। নিজের দলবল নিয়ে ভালো রোজগার করছে। গর্বে কালুয়ার বুক ভরে ওঠে। ঠিক শিক্ষা দিয়েছিল বলেই না তার চেলারা এখন এত বড় হতে পেরেছে। কালুয়া কিন্তু এখন আর পুরানো ধান্ধা করতে পারে না। বয়স হয়েছে, তার উপর ক্ষয়রোগে ধরেছে। তার হাত এখন কাঁপে, ব্লেড চালিয়ে পকেট কাটতে পারে না। দু- একবার চেষ্টা করতে গেছে, কিন্তু হাত কেঁপে ধরা পড়ে গিয়েছে। আজ সে চলেছে তার সারা মাসের সম্বল নিয়ে ওষুধ কিনতে। ওষুধ ছাড়া তার এখন একদিনও চলে না।

বাসে উঠেই দেখা হল লাল্টুর সঙ্গে,দলবল নিয়ে উঠেছে। লাল্টু বলল, " ওস্তাদ কেমন আছ? অনেক দিন দেখা হয়নি.."

কালুয়ার গলা থেকে একরাশ অভিমান ঝড়ে পড়ল,"আজকাল তোরা বড় হয়েছিস, ওস্তাদকে আর মনেই পড়ে না.."

"বুঝতেই তো পারছ ওস্তাদ, কাজের চাপ বেড়েছে।"

বাসের ঝাঁকুনি না লোকজনের চাপে, কে জানে, লাল্টু কালুয়ার দিকে ঝুঁকে গেল আর তখনই কালুয়ার মনে হল কিছু একটা হয়ে গেল। সাধারণ মানুষ হলে টেরই পেত না। কিন্তু কালুয়া, হাজার হোক এত দিন ধরে তার টেনিয়াদের হাতে ধরে শিখিয়েছে, সে বুঝতে পারল। পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখল, ঠিক তাই, কাটা পকেট দিয়ে হাত সোজা বেরিয়ে গেল।

লাল্টুর সঙ্গে কালিয়াও বাস থেকে তড়িঘড়ি নেমে লাল্টুর হাত জড়িয়ে ধরল, "লাল্টু এভাবে আমাকে পথে বসাস না। এই মাসের পুরো টাকাটাই ঐ ব্যাগে আছে। ওটা গেলে ওষুধ তো কেনা হবেই না, খাওয়াও জুটবে না।"

লাল্টু বলল, "ওস্তাদ আমি জানতাম তুমি ধরতে পারবে, হাজার হোক তোমার কাছ থেকেই তো আমরা শিখেছি। আর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলছ, তোমার মনে আছে বুড়ো ভদ্রলোকের যখন মেয়ের বিয়ের গয়নার ব্যাগটা আমরা হাতসাফাই করেছিলাম, ভদ্রলোক যখন তোমার পায়ের উপর পড়ে কাঁদছিলেন গয়নার ব্যাগ ফেরত দেওয়ার জন্য; তখন তুমি বলেছিলে এটা আমাদের বিজনেস, এতে একবার কিছু চলে এলে সেটা আর ফেরত হয় না। ওস্তাদ এটা আমাদের বিজনেস, রুটি- রোজগারের ব্যাপার। এতে ফেরত দিতে গেলে বিজনেসই বন্ধ করে দিতে হবে; বুঝতেই পারছ,ফেরত দিতে পারব না। আজকে ৫ই সেপ্টেম্বর, টিচার্স-ডে'তে দেখিয়ে গেলাম তোমার শেখানো বিদ্যা কতটা শিখেছি। পেন্নাম করি ওস্তাদ।"

কালুয়া অসহায় ভাবে লাল্টুর অপসৃয়মান শরীরের দিকে তাকিয়ে রইল। তার কিছুই করার ছিল না। তার শেখানো বিদ্যাই যে 'গুরু মারা বিদ্যা' হয়ে তার কাছে ফেরত আসবে সেটা তার জানা ছিল না।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    126    127    128    129    130    131    (132)     133    134    135   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717