Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

দু'চাকা অভিযান

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



List of all Bengali Stories

দু'চাকা অভিযান
লেখক - দীপ্তেশ মাজী, বাবা- শ্রী শশধর মাজী, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## দু'চাকা অভিযান

লেখক - দীপ্তেশ মাজী, বাবা- শ্রী শশধর মাজী, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা

"দুশো গ্রাম চা-পাতা আর একটা সুজির প্যাকেট!"

এখন শ্রাবণ মাস; বালিতে মুড়ি ভাজার মত ফুটফাট সারাক্ষণ লেগেই আছে। তবে বৃষ্টি না হলে এতক্ষণ অন্য গান গাইতে শুরু করত খদ্দেররা। তখন মুড়ি, বাতাসা, আলু, পেঁয়াজ সবই চলত। একটা ছোকরা গোছের ছেলে; মাথায় ছাতা। তাকেই চা-পাতা দিচ্ছে উদ্যম। পরনে ব্লু গেঞ্জি, হাফ হাতা সার্ট এবং থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। চুল সযত্নে ছাঁটা, চোখে বড় ফ্রেমের চশমা। বাঁ হাতটা খালি-খালি লাগে, তাই সেখানে একটা স্মার্ট ওয়াচ। এটা নিত্যদিনের সঙ্গী। একটা হাতায় করে চা-পাতা দিয়ে বলল, "তোমার হল সত্তর টাকা।" ছেলেটি টাকা দিয়ে এবং জিনিস নিয়ে চলে গেল।

দোকান লাগোয়া ঘর। ঘরের আয়তন দোকানের চেয়ে খানিক ছোটো হলেও সেখানে তালপাতার সেপাই-এর মত উদ্যমের দেহটা আর সদ্য তেলে ভাজা ন্যুব্জ বেগুনির মত ওর ঠাকুমার শরীর দিব্যি খাপ খেয়ে যায়। দরজার কাছে আয়তাকার একটা ক্ষেত্র। তার ওপর রান্নার গ্যাসের ব্যবস্থা করা আছে। একটা লম্বা বিছানার ওপর আরেকটা বিছানা। মজবুত কাঠের তৈরি। তবুও উদ্যমের ঠাম্মা নিচে শোন।

এ ঘরের প্ল্যান নাতির নিজের করা। ঠাম্মার এখন বয়েস হয়েছে। তাই, উদ্যম একা ছেড়ে যেতে ভয় পায়। দোকান বন্ধ করে ন'টা নাগাদ। রান্না দুপুরের আছে; গরম করে খাওয়া হবে।

বাবা-মা গত হওয়ার পর পরই উদ্যম এসব কাজে পটু হয়েছে। উত্তরপাড়া রেলওয়ে স্টেশান থেকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে ওদের দোকান। বিক্রি বাটা ভালোই হয়। তাছাড়া উদ্যম ছাত্র পড়ায়। এইভাবেই বছর ছাব্বিশেক চলল।

রুটি আর তরকারির বাটি ঠাম্মাকে এগিয়ে দিয়ে নিজেও খেতে বসল। "তোমার যা লক্ষ্য, সেদিকে কেন যাচ্ছ না বাবা তুমি?" ঠাম্মার নিত্যদিনের এই বুলি শোনা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে! ও তবু খাবারেই মনোযোগী হয়। "ইদানীং তুই খুব অবাধ্য হয়েছিস উদ্য!" চায়ের সর জড়ানো ভঙ্গীতে ঠাম্মা স্বাচ্ছন্দ্যে বলেন। "উদ্যম' উচ্চারণ করতে পারেন না, তাই 'উদ্য'।

"আমি এখন বড় হয়েছি। ভালো মন্দ বোঝার বয়েস হয়েছে। সাইকেল নিয়ে টো-টো করে ঘুরে বেড়ালে চলবে কেমন করে ... ভাবছি পিএইচডি করে কলেজে চাকরির চেষ্টা করব। আর তুমি কিনা...!"

"সে তুমি ঘুরে এসে পাঁচটা বছর পরেও করতে পারো। পারো না? তোমার দাদু ও বাবা বড়ই একগুঁয়ে ছিলেন।" ঠাম্মা, নিজের পাতের একটা রুটি তুলে রেখে পান সাজতে বসলেন। কটাকট সুপুরির শব্দের সাথে তার দীর্ঘশ্বাস পড়ছে।

ওদের পাশের ঘরটা বাথরুম। সেখানেই স্নান, প্রাতঃকৃত্য সারা হয়। সেই দেওয়ালের গায়ে মাথা ঝুঁকিয়ে, পালতোলা নৌকার মত উন্মুক্ত গগনে চেয়ে আছে বর্ষীয়ান সাইকেল। শ্রাবণের নিয়মিত ধারায় দুই চাকার আর সিটের অকাল বোধন হয়েছে। টায়ারের কাছে মাথা চারা দিয়েছে দুটো অকালপক্ব ব্যাঙের ছাতা! সেদিকেই তাকিয়ে রইল উদ্যম। পরিস্থিতির চাপে ওর আর দাদুর-সাইকেলের একই অবস্থা! উন্নত মস্তকে স্বাধীন হয়ে দাঁড়াতেই পারে না! আশপাশের সমাজ বড়ই গতিহীন! খুব কম মানুষই আছেন যারা এই জগত-সংসার ঘুরে দেখার বাসনা রাখে। এমন এক মানুষ ছিলেন উদ্যমের ঠাকুরদা। বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি না — ওঁনার সম্বল কেবল এই সাইকেল। বলতেন, বাংলা সাইকেল। ঠাম্মার বিশ্বাস, নাতিও দাদুর মতই এই সংসার, দেশ-বিদেশ ঘুরে দেখতে চায়। কিন্তু নিজের ভগ্ন শরীর তাতে প্রতিবন্ধকতার সামিল!

#
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে প্রত্যেক দিনের মতই ঠাম্মা উঠে পড়েছেন। মাজন হাতে ও বাইরে আসে। দেখে, ঠাম্মা সাইকেলের সামনে কুঁজো হয়ে বসে কি করছেন! শ্বেতশুভ্র আঁচল। মাটিতে লুটিয়ে আছে। "আবার কি করছো তুমি?" খানিকটা বিরক্ত হয়েই প্রশ্নটা করে উদ্যম। ঠাম্মা না ঘুরেই বলেন, "তোর সাইকেলের চাকার কি অবস্থা!! লাল্টুর দোকানে নিয়ে যা। ও নতুন করে দেবে!"

সাইকেলের সামনে আসতেই উদ্যমের মাথায় বজ্রাঘাত পড়ে। কি সর্বনাশ! লোক দেখলে হুলস্থূল কাণ্ড বেঁধে যাবে। ডাল, ময়দা এমনকি কালকেই যে হাতা দিয়ে চা-পাতা কাটানো হয়েছে, সেই হাতার পেছন দিয়ে ঠাম্মা চাকা পরিষ্কার করছে! উদ্যম হাতা কেড়ে নেয় এবং দোকানের দিকে রওনা হয়। আন্দাজ সাড়ে বারোটার সময় এসে দেখে ঠাম্মা মেঝেতে শুয়ে কি সব বিড়বিড় করছে, "তুই যা... তোর লক্ষ্যে..আমায় নিয়ে ভাবিস নে...তুই যা!" তালপাতার পাখা সরিয়ে ঠাম্মার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়। গেলাসের জল মুখে দেয়। কিছুই হয়নি। ঠাম্মা ঘুমের ঘোরে ভুল বকছে।

বিকেলের মধ্যেই দুই চাকা নিজ ছন্দে সেজে ওঠে। একটা টিনের পাতলা স্তর কেটে ফেব্রিক রঙ দিয়ে লিখল, "ওয়ার্ল্ড ট্যুর"। তার নিচে ওর নাম, "উদ্যম বিশ্বাস"। ঠাম্মার কথায় বিকেলে পাড়ার কালীমন্দির গিয়ে সাইকেলের পুজো দিয়ে আসল। ঠাম্মা, ওর ডান হাতে বিপদতারিণীর সুতো বেঁধে দিল। সাইকেল নিয়ে বিশ্ব-ভ্রমণ— শুনতে অবাক লাগলেও অসম্ভব কিন্তু নয়!

কোথায়...কখন... কিভাবে, এসবের উত্তর দেয় একমাত্র যাত্রাপথ। এমনকি অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এসবের জন্য আগে-ভাগে চিন্তা করাও বৃথা। "সব ঠিক হয়ে যাবে।" ঠাম্মার শেষ কথাটাই ওর শক্তি, প্রেরণা।

আজ প্রায় এক সপ্তাহ ঘর ছেড়েছে উদ্যম। মাসতুতো ভাই ঋজুকে, দোকানের পাঠ বুঝিয়ে এসেছে। ঠাম্মাকেও ও-ই দেখবে। তবুও মনটা কেমন করে! বুড়ো মানুষটার কথা বড্ড মনে পড়ে। দাদু, বাবা আর মায়ের একটা করে ছবি থাকলেও এই অভিযানে দাদুর কথাই বেশি মনে পড়ছে। আর যেহেতু এদের মাঝে জীবিত একমাত্র ঠাম্মা, তাই তাঁর স্নেহময় হাতের ছোঁয়া সর্বদাই অনুভব করে উদ্যম। সড়কপথ, নুড়ি-কাঁকর, কাদামাটি পেরিয়ে উদ্যম এখন এক বিচ্ছিন্ন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। নিজের রাকসাক থেকে চা- পাতার কৌটো বের করে, ছোট্ট ষ্টোভে জল চাপায়; ফুটলে, তাতে পাতার গুড়ো দেয়। আজকে আপাতত এখানেই তাঁবু খাটিয়ে থাকবে৷

পশ্চিমে সূর্য হেলে পড়েছে৷ উদ্যম একবার ধ্যানে বসে৷ এই সময় মনকে শান্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী। কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে মানসিক দৃঢ়তাই তখন শেষ কথা। তাই সাথে এনেছে পকেট বাইবেল আর শ্রীমদভগবদগীতা।

উদ্যমের অভিযানে প্রথম অন্তরায় দেখা দিল বর্ডার ক্রস করার পর। নিজের পরিচয় পত্র এবং যাত্রার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া স্বত্বেও জেনারেল ওকে সাময়িক একটা ঘরে বন্দী করে রাখেন। যদিও মিনিট দশেক পর সমস্ত বাঁধা কেটে যায়। বাহাদুর ইসলাম নামে একজনের কাছে আদা-রসুন আর পেঁয়াজ দেওয়া আলুর চপ খায়। ষাটোর্ধ্ব এই বুড়োর চপ নাকি ভারতীয় ট্রাক বাসিন্দাদের কাছে খুব প্রিয়। তাদের কাছে চপ পিছু তিন টাকা বেশি নেন। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। উদ্যমকে দোকানের একপাশে খাটিয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি, নিজে ফিরে যান গ্রামে। বুড়ো আর তাঁর নাতনী থাকে সেখানে।

#
বৃষ্টি একসময় থেমে আসে। আকাশে মেঘেদের হুটোপুটি লেগে যায়। দূরে হাতে গোনা নক্ষত্ররা টিমটিম করছে। আচ্ছা, চাঁদের পাহাড়ে শংকর কিংবা লিভিংস্টোন যখন একটার পর একটা অভিযান করছেন, তখনো কি তাদের এমন পরিস্থিতি এসেছে!! যে কদিন ঘরছাড়া হয়েছে, একটাও দিন না খেয়ে তো কাটায়নি। খাবারের সাথে-সাথে এই দু'চাকার ভবঘুরেকে পানীয় পেতেও অসুবিধে হয় নি। বাংলাদেশ ক্যাম্প থেকে কিছু খাবার ওকে দেবে বলেছিল। দাদুর মুখে এই শস্য-শ্যামলা দেশের কথা অনেক শুনেছে। আজ চাক্ষুষ করল। বাংলাদেশ! হাটে টাটকা সবজি বিক্রি হচ্ছে। একটা অডিটোরিয়ামে শহিদ দিবস স্মরণে উদযাপন করা হয়েছে। তাছাড়া 'ফাদার অফ নেশন' শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিবিম্ব অঙ্কিত একাধিক স্থানে। যে রুট ধরে উদ্যম এগিয়ে চলেছে সেখানে একটা পাহাড়ি গ্রাম পড়ে। আছে ঝরনা। ভাঁড়ে চা নিয়ে ঝরনার শোভা উপভোগ ইতিপূর্বে ও করেনি। তিমির অরণ্য থেকে শান্ত জলধারা যেন অমৃতবাণী! দুটি প্রতিবেশী দেশের অমিল হাতে গোনা। এখানে, বাংলা ভাষার সাথে মাটির একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে। তাই, বিদেশে এসেছে বলে এতটুকুও মনে হচ্ছে না উদ্যমের।

ইতিমধ্যে চাকায় বেশ কাদা জমেছে। হঠাৎ চাকায় হাত দিতে সেটা কেমন বেঁকে গেল। উদ্যম দেখল, বৃত্তাকার চাকার কিছুটা জড়িয়ে আছে একটা সাপ! যাত্রাপথে একজন বলে গেলেন, "ওটা শঙ্খচুড়া!"

চাকায় কুণ্ডলী পাকানো সাপটার ছবি তুলল। অবশ্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীটি আপনা হতেই সরে পড়ল এবং উদ্যম আবার এগিয়ে চলল। ভোরবেলায় সাইকেল রওনা হয়। মাঝে হল্ট দু'বার। দুপুর আড়াইটে-কি তিনটের মধ্যে বিশ্রাম। সেক্ষেত্রে পথ দুর্গম হলে আরও আগেই বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।

পদ্মা পেরিয়ে তবেই ত্রিপুরায় ঢোকা সম্ভব। নদীপথে নৌকাই আশা ভরসা। পাটাতনের সাথে সাইকেল বেঁধে দিব্যি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা গেল। এরই মাঝে ঋজু আর ঠাম্মার সাথে কথা হয়। ঠাম্মাকে অনেকটাই সুস্থ মনে হল। হয়তো উদ্যমের অভিযানের কথা শুনে বৃদ্ধা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন।

#
নাগাল্যান্ডে গিয়ে উদ্যম দোচালায় ভোগে। এখানে খাবার আছে, পানীয় আছে তথাপি ওকে ভাবতে হচ্ছে। এখানকার এক গাইডের সাথে ওর পরিচয় ছিল। ওর নাম মাভি। আর তার পোষ্য, ডুকো।

"ইধার, সবই পে যাবেন। কুচ পর্বা নেহি।" সাথে-সাথেই একটা শিস দিয়ে ডুকোকে ডেকে নিল। ভেঁড়ার মত লোমশ কুকুরটা ল্যাজ নেড়ে আসল। একবার উদ্যমের সাইকেলে গন্ধ শুকেই চলতে আরম্ভ করল। উদ্যম ভাবছিল একটু শাক, সবজি, আর মাংস নিলে ভালো হত। শরীরটা দুর্বল ঠেকছে। মশলাপাতি সাথে আছেই। মাভি দর-দাম করছে দেখে উদ্যম বলল, "তুমি কি করছো মাভি!! আমি তো এসব মুখেই দিতে পারব না!"

একজন মাঝবয়েসী মহিলা কয়েকটি পলিথিনের পাত্রে গুটিকয়েক ব্যাং নিয়ে বিক্রি করছেন। চার-পাঁচটা ব্যাং একসাথে সুতো দিয়ে বাঁধা। এক-একটা জোটের মূল্য একশো টাকা। এছাড়াও শুঁয়োপোকার মত দেখতে পোকা বিক্রি হচ্ছে। তারই পাশে খরগোশ, শ্বেতকায় ইঁদুর আছে। একটা সময় উদ্যমের মনে হল, ও বাজারে নয়; বরং হরেক পশুপাখির খাঁচায় সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানায় এসেছে! হাঁটতে-হাঁটতে বাজার শেষ হলেও খাওয়া কিছুই হল না। বছর পঁচিশের প্রাণবন্ত মাভি শেষে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলল, "আপ, ইয়ে খা লিজিয়ে। গ্র্যানি কো মত বাতানা!"

মাথায় ওড়না জড়ানো, টানা চোখ দুটো প্রায় বন্ধ মনে হল এবং এলোকেশী। অপূর্ব এই। সুন্দরী শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি সসেজ রোল বিক্রি করছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উদ্যম খেল। বেশ মাংসের মত খেতে, ভেতরে সবজি দেওয়া। তেলে ভাজা দুটো সসেজ থেতেই খিদেটা আবার চাগাড় দিয়ে উঠল।

তুলো ভর্তি বালিশের মত মালভূমি, উপত্যকা বেয়ে মাথা-চারা দেয়া গাছের সারি, থেকে-থেকে আড়ি পেতে শুনতে আসা মেঘের দল উদ্যমকে হাতছানি দেয়। মাভিকে ও ইংরাজী হিন্দি মিশিয়ে বলে, "মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। প্রকৃতি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তাকে বাঁচানোটা আমাদের কর্তব্য। এটাই ওর অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।"

মাভি কি বুঝল তা বলা মুশকিল! তবে পাহাড়ের ধাপ কেটে ওরা যেখানে পৌঁছাল সেটা উপজাতি অধ্যুষিত গ্রাম। লঙ্গা পরিবারের কর্তা হলেন আশি বছরের বেনথাও। হাড়গিলে কলেবরটি যেন পাথর কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। গলার মালা জঠরদেশ পর্যন্ত আবৃত। তাতে বন্য শূকর আর হিংস্র বাঘের দাঁত ঝুলছে। কটিদেশে তিনটে কঙ্কাল মুণ্ড এবং তার গায়ে অজস্র কেশরাশি। অর্থাৎ সর্দার একসময় তিন-তিনজনকে হত্যা করেছিলেন। আসাম থেকে চা, ভাতের চাল, নুন নিয়ে আসা হয়। যাত্রা পথে অপহরণ, এমনকি লুণ্ঠন পর্যন্ত হতে পারে। আসলে এরা সরকারি কোনও সহায়তা ছাড়াই দিন যাপন করেন। এক কথায় দুর্গম পরিবেশে অতি নিকৃষ্ট মানের জীবনযাত্রা।

সকালে রওনা দেবার আগে উপজাতি রমণীরা চালগুঁড়ির পিঠে, কেক, নাগাদের অস্ত্র 'দা' দিয়ে কাটা মুৰ্গীর মাংস ইত্যাদির আয়োজন করেছে। উদ্যমের মনে হল শরীরে বেশ অনেক দিন পর বল এল। এরপর, শিশু এবং বয়স্কদের সাথে সখ্যতা বিনিময় করে রওনা দিল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতেই মাভি বলল, "দোস্ত, আলবিদা। হামারি সাফার খতম হুয়া! " উদ্যম, ডুকো আর মাভিকে বিদায় দিয়ে নিজের অন্তিম লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকল।

#
অক্টোবরের শেষে উদ্যম ব্রহ্মপুত্র নদের সম্মুখে উপস্থিত হয়। এরপরের যাত্রা সামচুং জঙ্ঘা বর্ডার হয়ে ভুটান, নেপাল এবং সবশেষে খার্দুংলা পাস! উচ্চতা প্রায় সাড়ে সতেরো হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু এখনই চোখে সরষে ফুল দেখছে উদ্যম। পায়ের পেশি কেঁপে- কেঁপে উঠছে। সাইকেলের কলকব্জা ঢিলে বোধ হচ্ছে!

কলকলিয়ে নদী বয়ে চলেছে। একটা পাথরে উদ্যম হেলান দিয়ে বসে পড়ে। বছরের এই সময়ে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এখানে শীতের আগমন হয়। দুটো সোয়েটার, একটা জ্যাকেট গায়েও উদ্যম থরথরিয়ে কাঁপছে। ক্ষণিকের জন্যে শুধু একবার দেখল দূরে এক স্নেহময়ী রমণী বসে আছেন। কানে ভেসে আসছে মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র!

কলকাতার শেষ দুর্গাপুজো। মা আর ঠাম্মা, ঠাম্মা দাদুর হাত ধরে। উদ্যম দৃঢ়ভাবে ওর মাকে ধরে আছে। ধীরে-ধীরে সেই হাত আলগা হচ্ছে। ঘন কুয়াশার আড়ালে ঢেকে গেল একফালি সাদা আঁচল!

"ইয়ে লেরকা আকেলা ঘুমনে কে লিয়ে আয়া হ্যায়! জরুর বাঙ্গালি হোগা! ইয়ে বাবু! উঠ যা..." মাথার ওপর সূর্য স্থির হয়ে আছে। উদ্যম চোখ খুলেই একটু অস্বস্তিতে পড়ল। ওর সারা শরীর নগ্ন! এমনকি কটিদেশের নিচেটাও! ওকে কেন্দ্র করে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের এক কথায় সাধু-সন্ত বলা যায়। উদ্যম, পাশেই পড়ে থাকা চাদরটা নিজ সম্মান রক্ষার্থে গায়ে জড়িয়ে নিল। তারপর স্বাভাবিক ছন্দে বলল, "আমি কোথায়? আমার সাইকেল?"

গাঁজা সেবন করে এক সাধুবাবা বললেন, "তুমি বাঙালি! স্বর্গে গিয়েও ঢেকি ধান ভাঙে! আর মৃত্যুপথে তুমিও সাইকেল খুঁজছ?"

সাধুদের মাথা-মুখ যেন আমাজনের জঙ্গল! কি বীভৎস সেই চেহারা! প্রথমে ওঁরা কারনসুধা দিলেও উদ্যম কফিতেই সন্তুষ্ট হয়। একটু স্থিরতা এলে সাধুবাবা বললেন, "তোমার আজ তিনদিন পর জ্ঞান ফিরল। তারপর, একটা ছোট্ট শিশি দেখিয়ে বললেন, এই অমৃত দিয়ে তোমার শরীরটা যদি দলাই-মালাই না করতাম, তাহলে তোমার নামে 'বোম-শংকর' আওরাতে হত।"

রাতদিন মারিজুয়ানা বা গঞ্জিকার কিরকিরে গন্ধে আর বোম-শঙ্করের চোটে উদ্যম ভাবল, এখান দিয়ে কেটে পড়াই শ্রেয়। এদিকে সেলফোনটা দেহ রেখেছে। দিক নির্ণয়ে অসুবিধে হচ্ছে। আসার সময় কতগুলো বাইক আরোহীর সন্ধান পেয়েছিল। এখন হয়তো তারাও অনেকটা এগিয়ে গেছে। শেষে অষ্টম দিনের মাথায় উদ্যম ওর দুই চাকার ঘোড়াকে পথে নামাল। সাধুবাবা কুটির থেকে বেরিয়ে বললেন, "তেরা ভালা হোগা। পিছে মুড়কর কভি মাত দেখনা। বোম শংকর..."

পাহাড়ের ঢাল পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে উদ্যম। কি মন গেল পিছনে ঘুরে দেখল একবার। মনে হল প্রকৃতির কোলে বাস্তব- অবাস্তব সবকিছুই মিলে-মিশে থাকে। দূরে পাহাড়ের ঢালু জমিতে সাধুবাবাদের কুটীর এখন পুরোটাই অদৃশ্য!

#
সামচুংজঙ্ঘা দিয়ে ভুটানে ঢুকতে বৃষ্টি এল। একটা উঁচু টিলার ওপর উঠে দু'হাত দুদিকে মেলে দিয়ে আসমানি মেঘেদের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল উদ্যম। নবজন্ম লাভ করা সাইকেল যেন পক্ষীরাজ ঘোড়া! ইতিমধ্যে শকটে লাল, হলদে, সবুজে তিব্বতীয় ভাষার ধ্বজা অঙ্কিত হয়েছে।

দুর্গম পঙ্কিল যাত্রার সবটাই ডকিউম্যানটেশনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। উদ্যম সাইকেল নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করল। স্থানীয়দের সাথে-সাথে উপজাতিরাও স্টল দিয়েছে। বিভিন্ন রকমের মালা, পশুর চামড়ার তৈরি শাল, বাইসনের শিং-এর চামচ, চিরুনি বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ পিঠে একটা টোকায় উদ্যম ঘুরে দেখল, জুকোমা এসে পড়েছে। সাথে ওর রেঞ্জার-সাইকেলটা সহাস্যে প্রজ্জ্বলিত৷

জুকোমা ভুটানি তরুণী। উদ্যমের সমবয়সী বলা যায়। উদ্যমের শীর্ণ দশা দেখে একটা আলখাল্লার মত পোশাক দিল। হাতার কাছে সাদা গোল- ডিজাইন করা। গলায় পশমের মোটা চাদর। গলায় পটলের সাইজের টুকরো দেয়া হার। জুকোমার চুল কাঁধ ছুঁয়েছে, জামার বড় হাতা আর কটিদেশের বিশাল ঘেরওলা পাটের কাপড়। ফলে হাত আর পা ঢাকা।

ধ্রুপদী গানের আসর জমেছে। সূর্যাস্তের সাথে ভুটানিদের হাত-জড়ো করে নাচ, বাদ্যযন্ত্র যেটা ছোটো সেতারের মত দেখতে, তার মাতাল করা সুর—সব মিলিয়ে অভূতপূর্ব! উদ্যমের মনে হল, পীতবর্ণ আকাশ হতে দৈব আশীর্বাদ ভেসে আসছে। ভিড়ের মধ্য সবাই কিছু-না কিছু কলাকৌশল দেখাচ্ছে। জুকোমা কিছুটা ইচ্ছে করেই ঠেলে ওকে মাঝখানে পাঠিয়ে দিল। বলল, "ও টিচার আছো!"

উদ্যম খানিক ভেবেই, জুতো খুলে নিজের জিমন্যাসটি দেখাল। হাত দুটো মাটিতে রেখে সমগ্র শরীরটা শূন্যে ভাসিয়ে দিল। বেশ রোমাঞ্চ হচ্ছিল সবার তালি আর হুল্লোড়ের শব্দে৷

এত রকমের খাবার উদ্যম কখনো খায় নি। ইয়াকের দুধ দিয়ে তৈরি মাখন, ঘি, শূকরের কোপ্তা, বাম্বু শুটের রেসিপি, গম দিয়ে বানানো লম্বা সাপের মত নুডলস বার্লি, সয়াবিন, শুকনো মেদবিশিষ্ট শূকরের মাংস এবং চাটনি।

যে ক'দিন ও জুকোমার সাথে ঘুরেছে তাতে এটা বুঝেছে, মেয়েটা স্বাধীনচেতা। অনুসন্ধানী চোখ আছে। ওকে এখনো স্থায়ী চাকরি করার জন্যে জোর করা হয়। উদ্যমের মতই জুকোমার বাবা নেই। পথ দুর্ঘটনায় মারা যান দশ বছর আগে। সেই থেকেই সাইকেল নিয়ে ওর বিচরণ শুরু। কথা বলতে-বলতে পাতা ভিজে আসে জুকোমার। নুড়ি পাথরের মাঝে বিলি কেটে বলে, "তুমি কালই রওনা দেবে!"

কথার ভাঁজ এড়িয়ে উদ্যম বলে, "এ যাত্রায় আমার একমাত্র সঙ্গী এই সাইকেল! যতদিন ও আছে, ততদিন এই উদ্যম বিশ্বাসের অভিযান বেঁচে থাকবে। উত্তরে রীতিমতো বরফ পড়া আরম্ভ হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি যাব, ততই মঙ্গল।"

ভুটানি তরুণী জুকোমা আর সদ্য রেগে যাওয়া বাঙালি তরুণীর মধ্যে কোনও তফাৎ খুঁজে পাওয়া গেল না। হাত দুটো বুকের কাছে সমান্তরাল রেখে অন্যদিকে চেয়ে রইল।

"রয়্যাল ভুটান পুলিশের পক্ষ থেকে একটা মেডেল উদ্যমকে প্রদান করা হয়। ওর পাসপোর্টে আরেকটি দেশের সম্মান নামাঙ্কিত হয়। ভোর রাতে উচ্ছ্বসিত জনতা আর জুকোমা একরাশ প্রেরণা দেয় ওকে। জুকোমা, নীল নেল-পলিশ মাখা আঙুল দেখিয়ে বলল, "স্যাক্রিফাইস টুডে ফর ইওর বেটার টুমরো..."

নেপালের অন্তর্ভুক্ত বাজুরা নামক স্থানে উদ্যম বিশ্রাম নেয়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। শীত জাঁকিয়ে পড়েছে। কাছেই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের একটা চালাঘর আছে। তার নিচে ও তাঁবু খাটায়। দপদপিয়ে জ্বলা অগ্নিশিখার সম্মুখে কফি হাতে কত কি মনে পড়ছে। উদ্যমের রাকসাকটা বিভিন্ন দেশ-বিদেশ, রাজ্যের তকমায় ভরে গেছে। নাগাল্যান্ড থেকে এমব্রয়ডারির শাল, ঋজুর জন্যে টুপি আছে। ও চেখে দেখেছে ইয়াকের দুধের তৈরি মাখন, ঘি, চা। ভাষা জেনেছে দশেরও বেশি; যেমন- বাংলাদেশের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা, গারো ভাষা-ভাষীদের সাথে কোমর দুলিয়ে নাচা, এছাড়াও নেপালি, লেপচা, গুরুং, লিম্বু, বোরো ভাষার রীতিনীতি প্রত্যক্ষ করেছে। প্রায় আট হাজার কিমি দূরত্বের এই অভিযানে সংগৃহীত বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রেরণা, তাঁদের দস্তখৎ, অনুপ্রেরণা বাণী, পদক ইত্যাদি অন্যতম প্রাপ্তি। নেপাল, ভুটান, সিকিমে এসে একটা জিনিস দেখেছে, এরা অত্যন্ত পরিষ্কার এবং নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। নেপালে তামাক নিষিদ্ধ। আবার যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি ব্যবহার বা ফেলা আইনত অপরাধ। মাতৃভূমিকে এরা খুবই শ্রদ্ধা করে। উদ্যম জানতে পারল, এদের বার্ষিক আয়ের অধিকাংশই আসে পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে। তাই উন্নত রাস্তাঘাট, থাকার ব্যবস্থা এবং নিয়ম শৃঙ্খলা। ভারতের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, থাকার জায়গা এবং ঘোরার জায়গার সাথে এদের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য আছে। তথাপি ভারতীয় হিসাবে উদ্যমকে যথেষ্ট সম্মান এরা যে দিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। বিভিন্ন মন্দির, বৌদ্ধ স্তূপ, খৃষ্টান মিশনারি, জৈন মন্দির, দরগা, উপজাতিদের দেবদেবী, বনদেবী, ইত্যাদি স্থানে ভ্রমণের একটাই উদ্দেশ্য –সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সবশেষে, প্রকৃতিকে ভালোবাসা, নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস এবং জন্তু জানোয়ারদের হত্যা না করা, পশুচর্মের লেনদেন বন্ধ করা ইত্যাদির বার্তা দিয়েছে। আর এই দুর্গম যাত্রাপথে আশীর্বাদ হিসাবে পেয়েছে ওর ঠাকুমাকে, মা দুর্গাকে আর পাহাড়ের অতীন্দ্রিয়বাদী সাধু-সন্তদের অবিরাম সেবা, যা ওকে পুনরায় নিজ শিরদাঁড়ায় দৃঢ় হতে প্রেরণা দিচ্ছে। উদ্যমের কাছে 'একসপিডিশ্যান' হল মূল মন্ত্র। সাইকেল কাঁধে নিয়ে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী পেরোনো, সাপের কামড়, ঠাম্মার বারণ স্বত্বেও শূকরের মাংস খাওয়া, হাসিমারায় জোঁকের কবলে পড়া, ঘণ্টার-পর ঘণ্টা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা, হাড় কাঁপানো শীত আর বৃষ্টিতে হরিনাম জপ করা—সবার পশ্চাতে একটাই মন্ত্র —
"থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে,
দেখব এবার জগৎটাকে..
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের
ঘূর্ণিপাকে?"

পরের বছর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে উদ্যম খার্দুংলা পাস-এ পৌঁছায়। ট্রান্স হিমালয়ান এই রুট আর সার্ক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি অতিক্রম করতে প্রায় আট মাস সময় লেগে গেল। উঁচুতে ওঠার পূর্বে ও খাওয়া-দাওয়া করে। খাবার বলতে আলু-পরোটা, আচার আর দই। সেলফোনটায় চার্জ দিতেই জীবিত হয়। আতো-আতো ভাষায় ঠাম্মা বলেন, "কেমন আছু? আমায় চিনতে পারতো!" তারপর উদ্যমের মুখ দেখে বললেন, "এত রোগা হয়ে গেছু! সাবধানে আসিস বাবা।"

ঋজু বলল, "উদ্যম দা, তুমি যাওয়ার তিন মাস পরেই সাংবাদিকদের ভিড় জমে। ওরা ঠাম্মার ইনটারভিউ নিয়েছে।"

ইতিপূর্বে সাইকেল নিয়ে এই পথ কেউ অতিক্রম করেছে বলে উদ্যম শোনেনি। তাছাড়া এ বড়ই দুর্গম অঞ্চল। অনেক জায়গায় বাসের মাথায় সাইকেল চাপিয়ে ও দিব্যি ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে এসেছে। সেক্ষেত্রে, বাসের মাথায় চেপে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অসামান্য। নিজের ব্যাগ থেকে উদ্যম ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা বের করে। কিছু না পেয়ে পতাকাটা মাথায় বেঁধে নেয়। সাইকেল থাকে ওর গায়ে ঘেঁষে। খার্দুংলায় অনেকে এসেছেন। সব বাইক আরোহী। উদ্যমকে দেখে তাদের আনন্দে আর গর্বে ছাতি প্রসারিত। কেউ-কেউ আবার ওর সাথে ছবিও তুলল। বলল, "উদ্যম বিশ্বাস, ইউ আর এমেইজিং।"

ভারি মেঘেদের কাছে নতি স্বীকার করেছে বিশাল পাহাড়। সহস্র বছর ধরে বিরাজমান এই শ্বেতশুভ্র মহাদানবেরা উদ্যমের চোখের ঘুম কেড়েছে! সাথে তুষার বৃষ্টি। হাতের মুঠোয় তাল-তাল বরফ নিলে হাড় কনকন করে। এখানে প্রকৃতি একাই বিরাজমান। এত ওপরে ওঠার জন্য রাস্তাটাও মানুষ ঠিকমতো মেরামত করতে পারেনি। এত উঁচুতে সভ্যতা আদতে শূন্যতা লাভ করেছে। দুর্গম প্রকৃতি, তিমির অরণ্য আর খরস্রোতা নদীর মাঝে আমরা আজও কেবলই দর্শক।

ফেরার সময় ওর শরীর ভেঙে পড়ে। সম্প্রতি একটি সরকারি টিভি চ্যানেলে ওর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এই সোলো এক্সপেডিশানের মোটো বা মূলমন্ত্র কি, তা জিজ্ঞাসা করলে ও বলে, "প্রথমে অভিযানই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু যাত্রাপথে এত মানুষ, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আমায় উদ্বুদ্ধ করে। তারা এভাবে পাশে না দাঁড়ালে বোধয় আমার অভিযান সাফল্যমণ্ডিত হত না।"

পুনরায় খাবার প্রসঙ্গ উঠলে উদ্যম সাবধানতা অবলম্বন করে। কারণ ঠাম্মা বাড়িতে এই লাইভ টেলিকাস্ট দেখছেন। অনেকেই উদ্যমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একটি সংস্থা আবার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর করার কথাও বলেছে। কিন্তু সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল, বিখ্যাত সাইক্যালিস্ট অমর কৃষ্ণানের চিঠি। যিনি, তাঁর পরবর্তী বিশ্ব-ভ্রমণের জন্য উদ্যমকে আহ্বান জানিয়েছেন। একবার সাইকেলে হাত রেখে উদ্যম ভাবল, অভিযান এখন নেশা; শেষ হয়েও হল না শেষ!
( সমাপ্ত )


Next Story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717