Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

স্বপনবাবুর শেষদিন

বিজয়ী গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩'

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



List of all Bengali Stories

স্বপনবাবুর শেষদিন

( বিজয়ী গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )

লেখক - অগ্ৰদীপ দত্ত, বাবা - বিপ্লব দত্ত, হেইদার পারা, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ

##
আবার ভুল করে ফেললেন স্বপনবাবু। মাথাটা এবারও পুরো ব্ল্যাংক হয়ে গেল। দু'তিন বার কিছু একটা বলার চেষ্টা করে থেমে গেলেন। কী বলবেন ভেবে পেলেন না। প্রচণ্ড বিরক্তিতে হোয়াইট-বোর্ডের উপর 'বিবর্তনের ইতিহাস' লেখাটা হাতের তালু দিয়ে ঘষে সাফ করে দিলেন। অন্য একটা চ্যাপ্টারের নাম লেখার জন্য মার্কার তুলে নিলেন টেবিলের উপর থেকে। 'এরপর থেকে প্রত্যেকটা দিনই রবিবার', ভাবনাটা জোঁকের মতো সেঁটে বসে আছে মনের ভেতর। যতবারই তাড়ানোর চেষ্টা করছেন চাপা একটা উত্তেজনা, ভয়, যন্ত্রণা মিলেমিশে এক বিশ্ৰী অনুভূতি। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রাণীবিদ্যার একটা চ্যাপ্টার পড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্বপনবাবু। কিন্তু শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আটকে যাচ্ছেন বারবার। মাথা পুরো ব্ল্যাংক। তিনি ক্লাসে বই ছুঁয়ে দেখেন না কোনোদিন। আজও দেখছেন না। বোর্ডের উপর 'কোশতত্ত্ব' হেডলাইনটা লেখার পর স্বপনবাবুর আচমকাই সেই রাতের কথা মনে পরে গেল। পঁয়ত্রিশ বছর আগে, স্কুল-জয়েনিং এর ঠিক আগের রাত। পরের দিন জীবনে প্রথমবার ক্লাস নিতে যাওয়ার উত্তেজনা, আনন্দ মেশানো রাত। বাবা, দাদা, মায়ের 'ঘাবড়ে যাচ্ছিস কেন?' বলা ধমক দেওয়া রাত। সেই রাতেও তিনি নিজের ফাঁকা ঘরে কাল্পনিক ছাত্রদের পড়ানোর রিহার্সাল করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলেন। ঠিক আজ যেমনটা খাচ্ছেন। কালকে জীবনের শেষবার ক্লাস নিতে যাবেন স্বপনকুমার।

ঘরের কোণায় এতদিনের অযত্নে পড়ে থাকা ধুলো-ঝুল মাখা হোয়াইট-বোর্ডটা ঝেড়ে দেওয়ালে টাঙিয়েছেন। ল্যাম্প, বই, পেন-টেনগুলো উপর থেকে সরিয়ে বোর্ডের সামনে টেবিল এনে কাঠের চেয়ারটা টেনে পাশে রাখার পরই রিহার্সাল শুরু। হতাশ হয়ে বিছানায় এসে বসলেন স্বপনবাবু। দলা পাঁকিয়ে যাচ্ছে সব। লাস্ট ক্লাস, ফেয়ারওয়েল, বিদায়ী বক্তৃতা, চোখের জল... এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো বিষ পিঁপড়ের মতো কামড়ে যাচ্ছে বারবার। কাল যখন ছাত্ররা পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে আসবে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের চোখের জল আড়াল করতে পারবেন তো? ভাবামাত্রই ছ্যাঁত করে উঠল বুকটা। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মালা ঝোলানো ফটো-ফ্রেমের ভেতর মিতালী হাসছে।

#
হাঁফাতে -হাঁফাতে বাসে উঠে নির্ধারিত সিট 'সিনিয়র সিটিজেন'-এ এসে বসলেন স্বপনকুমার। জানালার কাঁচ ঠেলে সরালেন পুরোটা। স্কুল পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরে। এ বয়সে আর ডেইলি প্যাসেঞ্জারির ধকল সয় না। চাইলেই ট্রান্সফার নিয়ে কাছে-পিঠে কোনও একটা স্কুলে চলে আসতে পারতেন। নেন নি।

#
মিতালী মারা গেছে প্রায় তিন বছর। এই তিনটা বছরে স্কুলটা যেন তার জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে একেবারে। মনেপ্রাণে চাইতেন রবিবারেও ছুটে আসতে স্কুলে। ও বাড়িতে সারাদিন থাকার কথা ভাবলেই আঁতকে ওঠেন তিনি। নিজেদের পছন্দ মতো দেখে-শুনেই ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কপাল পোড়া থাকলে হাজার দেখে-শুনে বিয়ে দিয়েও কোনও লাভ থাকে না। বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই ফ্লোর ভাগ হল। ছেলের বৌ আলাদা ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার দাবী তুললেও সেটা হয় নি। তাই উপরের তলায় স্বপনবাবু আর তার স্ত্রী মিতালী। ছেলে, ছেলের-বৌ নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিল নীচ তলায়। উপর-নীচ দুটো তলার দূরত্ব যেন কোটি-কোটি মাইল। একে অপরের গায়ে নিঃশ্বাস ফেলে এভাবেই চলছিল। তারপর হঠাৎ একদিন দুম করে মিতালী চলে গিয়ে ফটোফ্রেমে ঢুকে পড়ল।

#
"জায়গা আছে?"

জানালা থেকে চোখ সরিয়ে স্বপনবাবু দেখলেন এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা তার দিকে তাকিয়ে। কাঁধ-ব্যাগটা পাশের সিট থেকে কোলে তুলে নিলেন স্বপনবাবু। ভদ্রমহিলা সিটে বসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলেন। বাচ্চাটাকে দেখেই বুকটা টনটন করে উঠল। বাড়িতে এরকমই একটা ফুটফুটে নাতি থাকা সত্ত্বেও তাকে স্পর্শ করতে পারেন না তিনি। ওর মা আসতে দেয় না উপরে। তাও মাঝে-মাঝে লুকিয়ে উপরে চলে আসে খেলতে। ঐটুকুই।

দুরন্ত গতিতে ছুটছে বাস। খোলা জানালা দিয়ে সাঁইসাঁই করে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে স্বপনবাবুর মনে হল এত তাড়া কিসের? আস্তে চালালেই বরং ভালো। আর একটাই তো ক্লাস নেওয়া বাকি!

#
"রোল নম্বর টুয়েলভ...ঋত্বিক বিশ্বাস..."

স্বপনবাবু শুধু রোল নম্বর ডাকেন না, রোলের সাথে নামটাও ডাকেন। এতে প্রত্যেকটা স্টুডেন্টের নামের সঙ্গে মুখটাও মনে থেকে যায়।

"ইয়েস স্যার..."

"থার্টিন...দেবাঞ্জন রায়..."

রোল কলের সময় স্বপনবাবুর একটা অদ্ভুত অভ্যাস হল ছাত্রটিকে খুঁটিয়ে দেখা। কে-কীভাবে রোল কলের সাড়া দেয় সেটা দেখতে ভীষণ আকর্ষণ বোধ করেন তিনি।

"থার্টিন...দেবাঞ্জন..."

"ইয়ে... ইয়েস স্যার..."

আশপাশ থেকে হাসির গুঞ্জন শোনা গেল।

এই ছেলেটা সত্যিই অদ্ভুত! রোল কল মিস করা ওর নিত্য দিনের অভ্যাস। স্বপনবাবু কড়া গলায় বললেন "কী ব্যাপার আজকেও?"

"হ্যাঁ... মানে... না স্যার, ভুলে গিয়েছিলাম..."

ওর মুখের সরলতা দেখে হাসি পেল স্বপনবাবুর।

"রোল ফরটিন...সৌরভ সিনহা..."

চোখ পড়ল টেবিলের এক কোণায় রাখা রঙচটা অকেজো কাঠের বেতটার দিকে। বেতের ব্যবহার অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। এক সময় কম বেত ভাঙেন নি ছাত্রদের পিঠে। পরে যখন সেই ছাত্রগুলোই ভালো নম্বরে-ভর্তি মার্কশিট নিয়ে প্রণাম করতে এসেছে বেতের বদলে হাত দিয়েই চাপড়ে দিয়েছেন পিঠ।

"প্রেজেন্ট স্যার..."

অন্যান্য দিনের চাইতে আজ অত্যধিক মন্থর গতিতে রোল কল করছেন স্বপনবাবু। প্রতিটা ক্লাসেরই আলাদা-আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। নানা ধরণের ছাত্র। কে বসেই অ্যাটেন্ডেন্স দেওয়ার চেষ্টা করে, কে সোজা স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে, কে হাফ দাঁড়িয়ে, আর কে বদমাশি করে অন্যের রোল অ্যাটেন্ড করে, সব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মুখস্থ থাকা সত্ত্বেও আজ শেষবারের মতো খুঁটিয়ে দেখে নিতে মন চাইছে। রোল কল শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন স্বপনকুমার। রেজিস্টারের খাতায় লেখা নামগুলোর উপর হাত বোলালেন কয়েক মুহূর্ত। এই কাঠের চেয়ারে কাল থেকে অন্য কেউ... টেবিলের উপর থেকে চকের টুকরো তুলে ব্ল্যাক-বোর্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় স্বপনবাবুর মনে হল কিছু অভ্যাস চাইলেই ছেড়ে ফেলা যায় না। 'ঢং' করে ঘণ্টার আওয়াজ স্কুলের প্রতিটা ইট কাঁপিয়ে দিল। কিন্তু হাতুড়ির ঘা-টা ঘণ্টায় নয় সোজা এসে লাগল স্বপনবাবুর বুকের বা'দিকে। ক্লাস নিতে গিয়ে খেয়ালই করেননি সময় কখন ফুরিয়ে গেল। জীবনের শেষ ক্লাসগুলোর সময়সীমা বড্ড কমই হয় বোধহয় । তাই বলে এত তাড়াতাড়ি!! কথাটা যেন বিশ্বাস হতে চাইল না। কয়েক মুহূর্ত ক্লাসের প্রতিটা ছাত্রের দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে রইলেন। কথা, হাসির মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কেউ-কেউ উঠে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে আর সামলে রাখতে না পেরে এতদিনের পরিচিত ক্লাসরুমের দরজা দিয়ে শেষবারের বেরিয়ে আসলেন স্বপনকুমার।

#
"যোগাযোগটা নষ্ট করবেন না। যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবেন স্বপনদা..." কথাটা বলে অতনু একটু থামলো। পাশ থেকে অভিজিৎ গুহ বলে উঠলেন, "আরে স্বপনদা যা মানুষ, দেখা গেল কালকেই আবার সেভেন বি-তে ঢুকে রোল কল করা শুরু করে দিয়েছেন..." কথাটা শুনে হেসে উঠল সবাই। স্বপনবাবুও হাসার চেষ্টা করলেন। হাসি এল কি-না ঠিক বুঝতে পারলেন না। তার চোখ বারবার পিছলে চলে যাচ্ছে টিচার্স রুমের দক্ষিণ দিকের দাঁড় করানো সার-সার লকারগুলোর দিকে। ভেতর-ভেতর একটা উত্তেজনা হচ্ছে। তাই অন্য কারোর কথা সেভাবে কানে ঢুকছে না। আজই কাজটা করে ফেলতে হবে। এরপর আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। ঠিক তখনই হেডমাস্টার সুজন সোমরায় এসে ঢুকলেন, "এই তোমরা সবাই হল ঘরে চলে যাও। কুইক। সব রেডি। আমি উদ্যালককে বলে দিয়েছি; ও স্টুডেন্টসদের নিয়ে যাচ্ছে।" স্বপনবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন "স্যার চলুন উপরে।"

এই মুহূর্তে নীচে বিশেষ কেউ নেই। হল ঘর গিজগিজ করছে। স্টুডেন্ট-টিচার, নন-টিচিং স্টাফে। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হবে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এই মোক্ষম মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সুজন সোমরায়কে "একটু আসছি" বলে নীচে নেমে এলেন স্বপনবাবু। লম্বা বারান্দা। একের পর এক পাল্লা ভেজানো ক্লাসরুম পেরিয়ে এসে পৌঁছালেন অমলের চায়ের দোকানে। টিফিনে কলিগরা মিলে অমলের চায়ের দোকানেই আড্ডা জমাতে আসতেন। সুখ-দুঃখ, রাগ-বিরাগ, বিজ্ঞান-রাজনীতির প্রসঙ্গে কখন যেন তৈরি হয়ে যেত চা। কিন্তু আড্ডা থামতো না। আজ থামল। বকেয়া পঁচিশ টাকা মিটিয়ে রাস্তা পার হয়ে স্কুলের মেন-গেটের সামনে এসে দাঁড়ালেন স্বপনকুমার। এখান থেকে একশো বছরের পুরানো লাল বিল্ডিংটার সমস্ত অংশ চোখে পড়ে। এই স্কুলের প্রতিটা ইট, মাঠের প্রতিটা ঘাস তার চেনা। স্বপনবাবু হাঁটা শুরু করলেন। ক্লাসরুমের ঘ্রাণ নিতে-নিতে পৌঁছে গেলেন স্কুলের পেছন দিকটায়। এদিকে টয়লেট। পরীক্ষার সময় টুকলি করতে আসা কত ছেলেকে হাতে-নাতে ধরেছেন তিনি। বেতের বাড়িতে ঠেঙিয়ে স্বভাব বদলেছেন। আজ চোখের সামনে সেসব দৃশ্য জ্যান্ত হয়ে ধরা দিচ্ছে বারবার। সেদিক দিয়ে ঘুরে টিচার্স রুমের পেছনের দরজায় যখন এসে দাঁড়ালেন দেখলেন কৌশিক তালুকদার কী যেন একটা কাজ করছেন। দরজার আড়ালে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলেন স্বপনকুমার। নিজের হৃৎস্পন্দন ছাড়া আর কিছুই কানে আসছে না। খানিকক্ষণ পর কৌশিকবাবু বেরিয়ে যাওয়াতে স্টাফরুম পুরো ফাঁকা। এদিক-ওদিক চোখ বুলিয়ে স্বপনকুমার ঢুকে পড়লেন ভেতরে।

#
খুব বেশি রাত না। স্বপনবাবু বিছানায় শুয়ে আছেন আলো নিভিয়ে। মাথার ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা। চোখের পাতা জুড়ে হাল্কা-হাল্কা তন্দ্রা ভাব। সারাটা দিন স্বপ্নের মতো কাটল। কাল থেকে আর স্কুল নেই কথাটা ভাবলে এখনও শিউড়ে উঠছে গা। বাকি জীবনটা এই পরিত্যক্ত শ্মশান বাড়িতে বন্দি হয়ে কাটাতে হবে! বুকের মধ্যে জোরে-জোরে কয়েকটা কিল বসিয়ে কাঁদতে চাইলেন। নিঃশব্দে চিৎকার করে বুঝতে পারলেন চোখে আর জল নেই। ফুরিয়ে গেছে সব। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষের কয়েকটা মুহূর্ত ভেসে উঠল চোখের সামনে। সারাটা দিন নিজেকে সামলে রাখলেও স্টুডেন্টরা যখন প্রণাম করতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল, আর সামলাতে পারলেন না। তাদের বুকে টেনে জড়িয়ে ফেটে পড়লেন কান্নায়। শেষবার মিতালীর ডেড-বডিটা জড়িয়ে এরকম কেঁদেছিলেন। ছাত্রদের সবার চোখে জল। তাদের অত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষক আজ....

"দাদাই..."

ডাকটা শুনে হুড়মুড় করে উঠে বসলেন স্বপনবাবু। তাকিয়ে দেখলেন তার বছর পাঁচেকের নাতি দরজার কোণা থেকে উঁকি দিচ্ছে। অসহ্য মাথা যন্ত্রণা নিয়ে শরীরের অবশিষ্ট শক্তিটুকু প্রয়োগ করে প্রায় এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে সুইচ টিপে লাইট জ্বালালেন, "দাদুভাই তুই!! আয় আয় ভেতরে আয়। আয় আমার কাছে..." নাতিকে কোলে তুলে বিছানায় বসালেন স্বপনকুমার, "মা বকবে না? তুই এলি যে?"

"মা তো টিভি দেখছে। টেরই পায়নি। আমি চুপচুপ করে এসেছি।"

স্বপনবাবু জড়িয়ে রইলেন নাতিকে। আচমকা চোখ পড়ল টেবিলের উপর রাখা সাইড ব্যাগটার দিকে। কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা ভাবলেন। তারপর উঠে গিয়ে ব্যাগের চেন খুলে রেজিস্টারের খাতাটা বের করলেন। কাউকে না বলে লকারের ভেতর থেকে ক্লাস সেভেন বি এর অ্যাটেন্ডেন্সের এই খাতাটাই স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। রেজিস্টারের খাতায় লেখা নামগুলোর উপর পরম যত্নে হাত বোলালেন। তারপর একটু অদ্ভুত হেসে নাতির দিকে তাকিয়ে বললেন "দাদুভাই একটা খেলা খেলবি?"

"কী খেলা খেলব?" নাতির কৌতূহলী প্রশ্ন।

"কিছুই না, সোজা একটা খেলা..."

স্বপনবাবু তৎক্ষণাৎ কাঠের চেয়ারটায় গিয়ে বসলেন। পেছনে টাঙানো হোয়াইট-বোর্ড। সামনের বিছানায় তার নাতি বসে।

"আমি রোল কল করবো। আর তুই শুধু 'ইয়েস স্যার' বা 'প্রেজেন্ট স্যার' বলবি। প্রত্যেকটা নামের শেষে। ঠিক আছে?"

নাতিকে ঘাড় কাত করতে দেখে নিজের পুরানো কায়দায় রোল কল শুরু করলেন।

#
স্বপনবাবু ঘড়ির দিকে তাকালেন। তারপর আবার পায়চারি শুরু করলেন। রাতের এই সময়টুকুর জন্যই এখন সারাটাদিন অধীর হয়ে অপেক্ষা করে থাকেন। নাতি আসবে। বেশ কিছুদিন থেকে ঠিক এই সময়টাতেই আসছে। ওর মা এ সময় টিভিতে ডুবে থাকায় কোনোরকমে পালিয়ে চলে আসে কিছুক্ষণের জন্য, খেলাটা খেলতে। প্রত্যেকদিন রোল কল করার সময় একটা ঘোরের মধ্যে চলে যান স্বপনকুমার। তার পাঁচ বছরের অবুঝ নাতি খেলাচ্ছলে রোল কলে সাড়া দিয়ে যায় আর অবাক হয়ে দেখে প্রতিটা রোল কলের পর তার দাদু অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখে। কখনও কড়া গলায় ধমকে দেয়, কখনও মুচকি-মুচকি হাসে।

রেজিস্টারের খাতা খুলে অস্থির হয়ে পায়চারি করতে থাকেন স্বপনবাবু। নাতি আসলেই হাজার-হাজার হাসি, গুঞ্জন, চিৎকারে ভরে ওঠে ঘর। রোজ রাতে সবার অজান্তেই দোতলার এই টুকরো ঘর হয়ে যায় একশো বছর পুরানো একটি স্কুলের সেভেন-বি ক্লাসরুম।
(সমাপ্ত)

Next Bangla Story



List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717