-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, মে -২০২৩
Result
--------------------------
List of all Bengali Stories
◕
নামে কি আসে যায়
লেখিকা: দেবিকা বসু, বাবা - দেবকুমার বসু, ইন্দিরাপুরম, গাজিয়াবাদ, উত্তরপ্রদেশ
( নির্বাচিত গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )
##
কলকাতা এখান থেকে খুব বেশিদূরে নয়। মফস্বল যেমন হয় আর কি! শহরের যাবতীয় সুবিধে রয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র সাত-আট মিনিট হাঁটলেই হাইরোড। অথচ আশেপাশে জলাজঙ্গল, কলাবাগান, আমবাগান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘরে বসে পেছনের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বাড়ির পেছনের দিকটায় অনেক দূর অব্ধি চোখ যায়। পেছনে লাল সুরকির রাস্তা। রাস্তার গা ঘেঁষে একটা অমলতাস গাছে সোনার ঝাড়বাতির মতো অজস্র সোনা হলুদ ফুল ঝুলছে। যদিও আমি মন দিয়ে কিছুই দেখছিলাম না। মনটা ভারি হয়ে আছে। তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে গেল আজ দুপুরে ভাত বাড়ার ঠিক আগে। যার জেরে আমাদের ভাত খাওয়াই হল না। আমাদের, মানে... আমার এবং শাশুড়ি-মায়ের। উনি কয়েকমাস যাবৎ এই বাড়িতে এসে রয়েছেন।
#
কয়েকমাস আগে ভাসুর আমার স্বামীকে ফোন করে বলেছিলেন, "মাকে কিছুদিনের জন্য তোর কাছে নিয়ে যা। বাড়িটা সারাতে হবে। তোর বৌদি আর ছেলে দুটোকে নিয়ে আমি ওদের বাড়িতে থাকব। মা কুটুমের বাড়ির ভাত খাবে না।"
শুভ ভয়ে-ভয়ে বলেছিল, "সোহিনীর হাতের ছোঁয়া মা খাবে তো?"
"খাবে... খাবে। অত ছোঁয়াছুঁয়ির বিচার চলে না আজকালকার দিনে। তুই নিয়ে যা এসে।"
সে-রাতে করুণ গলায় শুভ মিনতি করেছিল, "কয়েকমাস পারবে না সই, মায়ের ভার নিতে?"
"অমন করে বলছ কেন?" অভিমান হয়েছিল ওর কথায়।
"রাগ করো না সই। আমি তো অফিসে চলে যাই। সারাদিনের দায়িত্ব তো তোমাকেই নিতে হবে।"
"কয়েকমাস কেন!! সারাজীবন থাকুন না উনি! আমি মাথায় করে রাখব।"
বলে তো দিলাম, কিন্তু ভয়ও পাচ্ছিলাম। উনি থাকতে পারবেন তো আমার সঙ্গে এতগুলো মাস! বিয়ের পরে একবারই গেছিলাম শ্বশুরবাড়িতে। ওদের বাড়ি নবদ্বীপের ঘাট পেরিয়ে সেই মায়াপুরে। আদিসপ্তগ্রামে পড়তে এসে শুভ কিভাবে যে আমার মতো এক সাধারণ মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল! চাকরি পাওয়ার পরে আমার কথা বাড়িতে সাহস করে জানিয়েছিল। ওর মা আর দাদা শুনেই নাকচ করে দেয়। শুভ কিন্তু আমাকে দেওয়া কথার খেলাপ করেনি। রুগ্ন মা ছাড়া আমার কেউ ছিল না। আমাদের বিয়েটা দেখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে মাও একদিন চলে গেলেন। পাল্টি ঘর দেখে বড়লোকের সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল শুভর মায়ের। যেমনটা ওর দাদার বেলায় হয়েছিল। ছেলের বৌ হিসেবে আমাকে যে উনি মেনে নেবেন না, শুভ জানত। তবু বিয়ের পরে ও আমাকে নিয়ে গেছিল ওদের বাড়ি। বৈঠকখানা ঘরে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল অনেকক্ষণ। শুভকে অবশ্য ভেতরবাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছিল। অনেকক্ষণ পরে শাশুড়ি-মা এলেন। দোহারা চেহারা, ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। আমার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলেন। একটা নোয়া বাঁধানো আলগোছে কোলে ফেলে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, "কি করে যে শুভর এমন নীচু নজর হল! জাতপাতের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। রং-রূপ কিছুই তো নজর-ধরা নয়। শোনো মেয়ে, আমাদের বংশের মান-মর্যাদা সম্পর্কে তোমার হয়তো ধারণা নেই। এমনিতেও শুভ এখানে থাকবে না। তোমরা নিজেদের মতো সংসার কর। এ-বাড়িতে আর তোমার আসার দরকার নেই।"
গত তিন বছরে ওনারা কেউ ফোন করে আমাদের খোঁজ নেননি। শুভ অবশ্য দু-তিনবার বাড়িতে গেছে। ফোনও করত মাঝে-মধ্যে। দেড় বছর আগে আমাদের মেয়ে হয়েছে। খবরটা শুনে শাশুড়ি-মা কি বলেছিলেন, শুভ আমাকে জানায়নি। হয়তো আমি কষ্ট পাব তাই। এখানে এসে আমার মেয়েকে প্রথমবার দেখেও উনি মুখ বেঁকিয়েছিলেন, "যেমনি মায়ের ছিরি, তেমনি মেয়ের। আমার সোনার চাঁদ ছেলেকে কি দিয়ে যে বশ করেছিলে..." বলে অবশ্য একটা গিনি মেয়ের কপালে ঠেকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ছুঁড়ে দেননি, এই আমার ভাগ্যি! তবে ছুঁড়ে দিলে আমি ফেরত দিয়ে দিতাম। নিজের অপমান মেনে নিতে পারি, মেয়েকে কেউ ভিক্ষে দিলে আমার সহ্য হবে না।
#
প্রথম দিকটায় সবেতেই আমার খুঁত ধরতেন। আমি কখনও ধৈর্য্য হারাইনি। ওনার ব্যবহারও আগের মতো রুক্ষ ছিল না। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে কেটে গেছে কয়েকটা মাস। মন-মেজাজ ভালো থাকলে নাতনিকেও আদর করেন। তবে ঘরে ফেরার জন্য উদব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। শুভর দাদা বা বৌদি কেউই ফোন করে না আজকাল। উনিই ফোন করে জানতে চান। বাড়িটা সারাতে আর কতদিন লাগবে! দাদা বলেছে আরও মাস ছয়েক লাগবে নাকি! মায়াপুরের বাড়িটা শাশুড়ি-মায়ের নামে। দাদাশ্বশুর মেয়ের নামে বাড়িটা লিখে দিয়েছিলেন। সেজন্যই বোধহয় সংসারে ওনার এত প্রতাপ!
কয়েকদিন ধরে দেখছি মায়ে-ব্যাটায় কথা বলছে চুপিচুপি। আমাকে দেখলেই চুপ করে যাচ্ছে। ওনাকে খুব উদ্বিগ্ন লাগছিল। শুভকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "দাদা এমন কাজ করবে ভাবিনি।"
"কি করেছেন তোমার দাদা?"
"পরে বলব তোমাকে।"
কালকে শুভ মায়াপুর গেছিল। ফিরতে রাত হয়েছিল। খেয়েদেয়ে সোজা মায়ের ঘরে ঢুকল। মামনকে ঘুম পাড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে-করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম। দাদা কি বলেছে, শোনা হল না। সকালে কথা বলার ফুরসত কোথায় বাবুর! নাকে-মুখে খাবার গুঁজে অফিসে চলে গেল। শাশুড়ি-মা মিয়োনো মুখে বসেছিলেন। সকালে স্নান করে পুজো সেরে তবে জলখাবার মুখে তোলেন। আজ কিছু খেলেন না। বললেন, শরীর ভালো নয়। রুবি সকালে-বিকেলে দুবেলা কাজে আসে। ঘর ঝাঁট দিয়ে মোছে, কাপড় কাচে, দুবেলা বাসন মাজে। আগে কুটনো কুটেও দিত। আজকাল সেই কাজটা আমি নিজেই করি। ওকে দিয়ে করাই না।
মামন বড্ড রোগে ভোগে। আজ সকাল থেকে ঘ্যানঘ্যান করছে। খেতে চাইছে না। চলে যেতে-যেতে রুবি বলল, "মামনকে নিয়ে পীর-বাবার মাজারে যাও না গো বৌদি! একবার ঝাড়ফুঁক করিয়ে আনলে দেখবে এত আর ভুগবে না।" কদিন পরে রমজান মাস শুরু হচ্ছে। কথা এড়ানোর জন্য বলি, "রোজা রাখবি তো?"
"না গো বৌদি। পাঁচটা বাড়ির কাজ। রোজা রাখলে শরীর চলে না গো।"
দুপুরে মেয়েটাকে আগে খাইয়ে দি। তারপরে শাশুড়ি-মাকে ঘরে আসন পেতে খেতে দি। উনি টেবিলে বসে খান না। আজ সকাল থেকে কিছু খান নি বলে ভাবলাম ওনাকে আগে খেতে দিয়ে মামনকে খাওয়াব। ওনার ঘরে গিয়ে দেখি গুম হয়ে বসে আছেন। বললাম, "মা আপনাকে ভাত দেব?"
বলামাত্র যেন বিস্ফোরণ হল। "আমার জাত মেরে এখন পিণ্ডি গেলাবে তুমি আমাকে!! গোপালকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। এই ঘরে আসন পেতেছি। তুমি জানো না!! মুসলমান মেয়েটা রোজ এই ঘর পোঁছে। বাসন মাজে। সেই থালায় আমায় খেতে দাও! এত বড় আস্পর্ধা তোমার!!"
আমার আর রুবির কথা ওনার কানে গেছে তাহলে! তখন কি উনি ঘর থেকে বেরিয়ে ওদিক-পানে গেছিলেন! চিৎকার শুনে মেয়েটা ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল। মেয়েকে ভোলাতে-ভোলাতে শান্ত গলায় বললাম, "খেতে দেবার আগে আপনার থালা বাটি গেলাস রোজ আমি নিজের হাতে আরেকবার ধুয়ে নিই।"
"চুপ কর ছোটলোকের বেটি!" উনি গর্জে উঠলেন, "তোকে বরণ করে ঘরে তুলি নি বলে তোর মনে এত বিষ! বাগে পেয়ে তুই এভাবে আমার জাত মারলি!!"
কেঁদে ফেলেছিলাম। কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে এসেছি। মেয়েটা অকাতরে ঘুমোচ্ছে। মাঝে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ভাত খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়েছি। শুভকে ফোন করলাম। ফোন বেজে গেল। যে ভয়টা ছিল, সেটাই সত্যি হল। উনি আসার আগেই শুভকে আমার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। রুবির পরিচয় জানলে উনি রাজি হতেন না এই বাড়িতে থাকতে। অথচ এতদিন ধরে মেয়েটা কাজ করছে। ছাড়াতাম কোন অজুহাতে! কামাই প্রায় করেই না। ওকে ছাড়িয়ে দিলে আমি তো অথৈ জলে পড়ে যেতাম। এমনিতেও এই অঞ্চলে কাজের লোকের আকাল। শুভ গা করেনি তেমন। "পরিচয় না দিলেই হল। কাজের মেয়ে কাজ করে দিয়ে যাবে। ব্যাস। মা এমনিতেও কাজের লোকেদের সঙ্গে মাখামাখি পছন্দ করে না।"
বিকেলে ধপ করে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ কানে এল। "উঃ মাগো..." আর্তনাদ শুনে একছুট্টে পাশের ঘরে গিয়ে দেখি, মা খাট থেকে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন। মাথা থেকে রক্তগঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। সাদা কাপড় রক্তে মাখামাখি। ভয়ে আমার হাত-পা ছেড়ে যাচ্ছিল। মায়ের কিছু হলে শুভকে কি জবাব দেব! কত বড় মুখ করে বলেছিলাম, মাথায় করে সারাজীবন রাখতে পারি। ডান হাতের কব্জির ওপরে ভর পড়েছে ভারী শরীরের। শাশুড়ি-মাকে নিয়ে কোন ডাক্তারের কাছে যাব, কি করে নিয়ে যাব, কিচ্ছুটি মাথায় আসছিল না। মোটা করে কাপড় জড়িয়েও রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছিল না। তক্ষুনি রুবি এল বিকেলের কাজ করতে। রুবির বর আব্দুলদা টোটো চালায়। ভাগ্যিস সে তখন বাড়িতে ছিল। ফোন করতেই চলে এল। ওরা দুজনে ধরাধরি করে ওনাকে তুলে বসাল। উনি বাচ্চা মেয়ের মতো রুবিকে আঁকড়ে ধরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। আমি মেয়েকে কোলে নিয়ে সমানে ঠাকুরের নাম-জপ করতে করতে গেছি।
#
"উনি আপনার বৌমা! আমি তো মেয়ে ভেবেছিলাম। যেভাবে কান্নাকাটি করছিলেন..." ডান হাতের কনুই থেকে কব্জি অব্ধি প্লাস্টার করে দিয়ে ডাক্তারবাবু মুচকি হাসলেন। খাট থেকে আচমকা পড়ে গিয়ে কব্জির হাড় ভেঙেছে। বললেন, "শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। এমনিতেও মনে হয় শরীরে রক্ত কম আছে। সব রিপোর্ট দেখিয়ে নিয়ে যাবেন। দরকার পড়লে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরে এক বোতল রক্ত দিতে হতে পারে।"
"তোমাকেও তো এক বোতল রক্ত দিতে হয়েছিল মামন হবার সময়। তোমার নাকি যায়যায় অবস্থা হয়েছিল।" ওনার গলাটা নরম শোনাল। আমি তো অবাক! মেয়ে হবার খবর দেওয়ার সময় শুভ হয়তো আমার কথাও জানিয়েছিল। উনি মনে রেখেছেন তাহলে!
#
মেয়েটাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলাম। শুভ কাল খবরটা শুনেই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। আজ ছুটি নিয়েছে। মায়ের ঘরেই শুয়েছিল গতকাল রাতে। এ-ঘরে বসেই শুনতে পেলাম উনি তড়পাচ্ছেন, "সন্তুকে আমি ছেড়ে দেব না। মামলা করব। শুভ, তুই ভালো উকিল লাগা। বৌ ছেলে নিয়ে ওকে আমি পথে বসিয়ে ছাড়ব। এত বড় তঞ্চকতা করল আমার সঙ্গে!!"
সন্তু আমার ভাসুরের ডাকনাম। মায়াপুরে বড় রাস্তার ওপরে তিন বিঘা জমি নিয়ে বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছেন আমার ভাসুর। বাড়ি ভাঙা হয়ে গেছে। ওখানে একটা রিসর্ট তৈরী হচ্ছে। একটু দূরে কয়েক কাঠা জমি কিনে সেখানে নতুন বাড়ি তৈরী করাচ্ছেন। ও পরশু মায়াপুরে গেছিল। ভাসুর ওকে কাগজপত্র দেখিয়েছেন। বাড়িটা নাকি মা দাদার নামে লিখে দিয়েছিলেন। মা বলছেন, "সর্বৈব মিথ্যে কথা। সন্তু আমাকে না জানিয়ে কাগজে সই করিয়ে নিজের নামে করে নিয়েছে বাড়িটা। আমাকে অনেকদিন ধরেই ব্যবসার নাম করে এটা-ওটা কাগজপত্রে সই করায়। আমিও যেখানে সই দিতে বলেছে, দিয়েছি।"
মেয়েকে কোলে নিয়ে ওনার ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়ালাম। শুভ মাকে বোঝাচ্ছিল, "ছেড়ে দাও মা। দাদা পথে বসলে, তোমার কি কষ্ট হবে না! দাদা বলেছে নতুন বাড়ি হলে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কষ্ট করে আরও মাস-কয়েক থাকতে পারবে না মা এই বাড়িতে?"
উনি থমথমে মুখ করে বললেন, "আমি আর ও ছেলের মুখদর্শন করতে চাই না। আমি মা; অভিশাপ তো দিতে পারি না। তবে ওরও দুই ছেলে; মাথার ওপরে ভগবান আছেন। ওর কি দুর্গতি হয় দেখার জন্য হয়তো আমি থাকব না। কিন্তু তোরা তো থাকবি।" চোখ দিয়ে দেখি টসটস করে জল পড়ছে। আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন। ইতস্তত করে ওনার পাশে খাটে বসলাম। এই প্রথমবার। শুভ মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। চোখ মুছে বললেন, "সন্তু আমার প্রাণ ছিল। সেই ছেলে আমায় ঠকাল! বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে! রান্নাঘরে জল আনতে গিয়ে তোমাদের কথা কানে গেল। রুবি মুসলমান জেনে রাগে আমার মাথার ঠিক ছিল না। তুমি ভাত খেতে ডাকলে নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। আকথা-কুকথা যা মুখে এসেছে তাই বলেছি। কত দূরছাই করেছি। গোপালেরও বুঝি আমার ওপরে রাগ হয়েছিল। কেমন শিক্ষে দিলেন দেখো! আমার হাতে পুজো নেবেন না বলে হাতটাই ভেঙে দিলেন। ভাঙা হাত নিয়ে তো গোপালের সেবা করতে পারব না। তোমাকেই পুজোর ভার নিতে হবে।" কথা বলতে-বলতে ওনার বাঁ-হাতটা দিয়ে আমার ডান-হাতটা চেপে ধরলেন। ওনার গলা দিয়ে করুণ আর্তি ঝরে পড়ল, "তোমাদের কাছে বাকি জীবনটা আমাকে থাকতে দেবে ছোট-বৌমা? কথা দাও তুমি এই বুড়িটার ভার নেবে।"
কথা দিতে পারলাম না। কি করে কথা দেব! গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না। হাপুস নয়নে কাঁদছি আমি। 'ছোট-বৌমা!' এই স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার জন্য আমিও যে কাঙাল হয়ে ছিলাম। রুবি আমাকে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ইশারায় কি যেন জিজ্ঞেস করছিল। চোখ পড়তেই উনি ধমকে উঠলেন। গলায় যদিও তেজ ফুটল না তেমন। "হ্যাঁরে রুবি, ঘরগুলো যে এত বেলা অব্ধি বাসি পড়ে আছে, সে খেয়াল আছে তোর! এই ঘরটা আগে ভালো করে ঝাঁট দিয়ে মুছে ফ্যাল। গোপালকে জল-বাতাসা দিতে হবে না! ঠাকুর বলে কি খিদে পায় না!"
মায়ের কথা শুনে শুভ ফিক করে হেসে ফেলল। রুবি দেখি আমতা-আমতা করছে, "মাসিমা গো, আমি রুবি না। আমি রুবিনা।"
স্পষ্ট দেখলাম, মায়ের মুখে চকিত হাসি খেলে গেল। পরক্ষণেই গম্ভীর গলায় বললেন, "তুই রুবি, নাকি রুবিনা, তুইই জানিস। তোর কাজ তো তুই কর। নামে কি আসে যায়! তবে আমি বাপু যেমন রুবি বলে ডাকতাম, তেমনিই ডাকব।"
আজ আমার মামনের শরীরটা ভালো আছে। মনেও বেশ ফুর্তি। বাবার কোল থেকে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, "রুবি না। রুবিনা, রুবিনা।"
(সমাপ্ত)
Next Bangla Story
List of all Bengali Stories
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717