Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

কর্তাবাবুর জন্মদিন

Online bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



List of all Bengali Stories

কর্তাবাবুর জন্মদিন

লেখিকা: সুলেখা রায়, বাবা - ৺লক্ষ্মীকান্ত চৌধুরী, দমদম, কোলকাতা

( নির্বাচিত গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )

##
বছর তিনেক আগে চারুলতা দেবীর স্বামী গত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে বিদেশে। বিশাল বাড়িতে একজন পরিচারক এবং পরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে চারুদেবী দিন অতিবাহিত করেন। ছেলে যদিও নিজের কাছে মাকে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু কর্তার পরিশ্রমে তৈরি বাড়ির মায়া ছেড়ে চারুদেবী যেতে চান না। আজ তিনি খানিকটা ব্যস্ত, কারণ আজ কর্তার ঊনসত্তরতম জন্মদিন। প্রতিবারের মতো আজো চারুদেবী নিজের হাতে পায়েস রেঁধেছেন। কর্তার পছন্দের রান্না করেছেন। পরলোকে থাকলেও আজকের এই বিশেষ দিনে চারুদেবী স্বামীর দেখা পান। খুব কাছ থেকে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করেন এবং নিজের মনের মতো করে স্বামীর জন্মদিন পালন করেন।

সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন পরলোকগত স্বামীর দেখা পাবেন। রাত ১২টা বাজতেই কর্তার ছবিতে রজনীগন্ধার মালা পরালেন। মোম জ্বালিয়ে প্রণাম করে বললেন,"শুভ জন্মদিন রাতুলের বাবা, তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো!"

চারিদিকে মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন চারুদেবী। মাঝে-মাঝে বিশ্রীভাবে ডেকে উঠছে কুকুর। রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। মোমের আলোয় টেবিলে রাখা কর্তার ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত সৌম্যদর্শন ল্যামিনেটেড ছবিখানা বড় মায়াবী দেখাচ্ছে। এ যেন এক অলৌকিক পরিবেশ! কর্তার পছন্দের রবীন্দ্রসংগীত গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলেন চারুদেবী,
"আমার পরান যাহা চায়
তুমি তা-ই, তুমি তা-ই গো।"
পলক ফেলতেই একটা ছায়ামূর্তি ধীরে-ধীরে পা ফেলে চারুদেবীর দিকে এগিয়ে এলো। গা ছমছম করে উঠলো চারুদেবীর, তবু নিজেকে শক্ত করলেন। ঠিক তখনই বহুদিনের সেই পরিচিত প্রাণখোলা হাসি শুনতে পেলেন,"হা-হা-হা কি গো গিন্নি...ভয় পেলে নাকি! এইতো আমি এসে গেছি।"

দীর্ঘশ্বাস ফেলে খানিক অভিমানের সুরে চারুদেবী বললেন,"এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো রাতুলের বাবা! আমি সেই কখন থেকে তোমার পথ চেয়ে বসে আছি!"

"একি গিন্নি! তুমি এখনো পর্যন্ত না খেয়ে বসে আছো? সত্যি, তুমি একটুও বদলাও নি দেখছি!"

"কেন! ভুলে গেলে নাকি! আজ না তোমার জন্মদিন! এইদিনে তোমাকে আগে না খাইয়ে আমি খেয়েছি কখনো! তা এত দেরী করে এলে কেন শুনি! আমাকে আর মনে পড়ে না বুঝি!"

"কি যে বলো গিন্নি! আমি যে আজো তুমিময়! সশরীরে নাই-বা রইলাম... আমি কিন্তু সর্বক্ষণ তোমার ছায়াসঙ্গী হয়েই থাকি! আসলে কি জানো গিন্নি, ওখানে আজ শকুন্তলাদেবীর সাথে দেখা হলো। তার সাথে গল্পগুজব করতেই একটু দেরী হয়ে গেল..."

চারুদেবী ঝাঁজিয়ে উঠলেন, "শকুন্তলাদেবী!! সে আবার কে রাতুলের বাবা? তার নাম তো তোমার মুখে কোনোদিন শুনিনি!"

"তুমি বোধ হয় জানো না গিন্নি, উনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিলেন। আহা বেচারি! করোনা মহামারীতে অকাল-বিয়োগ হয়েছে তার।"

তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন চারুদেবী, "ও বুঝেছি, ওখানে বেশ ভালোই আছো দেখছি! তাইতো আজকাল আর আমাকে মনে পড়ে না তোমার।"

"আহা... চটছো কেন গিন্নি! কথায়-কথায় অভিমান করার স্বভাবটা দেখছি আজো তেমনিই রয়ে গেছে তোমার! আহা! তোমার হাতের পায়েসের সুগন্ধটাও সেই আগের মতোই! এসো দেখি, আমি নিজের হাতে তোমায় খাওয়াব আজ।"

"থাক, আর আদিখ্যেতা করতে হবে না..."

"একি! তুমি কাঁদছ গিন্নি! তোমার চোখে জল যে আমি সহ্য করতে পারি না!" স্বামীর বুকে মাথা রেখে চারুদেবী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।

"আমার যে আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না রাতুলের বাবা! তোমাকে ছাড়া বড় অসহায় আমি! নিষ্প্রয়োজন এই বেঁচে থাকা। তোমার কাছে আমায় ডেকে নাও...তাহলে আমি শান্তি পাই!"

"কেঁদো না গিন্নি... মরা-বাঁচা যে আমাদের হাতে নেই! ঈশ্বর যেমনটা চান তেমনটাই আমাদের মেনে চলতে হয়। যত যাই করি বা ভাবি না কেন আমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের অধীন। তাঁর ইশারায় আমরা চলতে বাধ্য। জানি, ছেলে-বৌমা অনেকদিন আসেনি... নাতনির মুখটাও দেখলে ঐ মুঠোফোনের মধ্যে, তাই তোমার মনটা ভালো নেই। সবই বুঝি গিন্নি! কিন্তু কি করবে বলো! ছেলে-বৌমা দুজনেই অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে। নিশ্চয় সময় করে উঠতে পারে না। তাই বলে প্রতিদিন নিয়ম করে তোমার খোঁজ-খবর নিতে তারা কোনোরকম ত্রুটি রাখে না... সে আমি বিলক্ষণ জানি। আর এই ডিজিট্যাল বিশ্বে সবাই তো সবার কাছাকাছি। ভৌগোলিক দূরত্বে কি যায়-আসে বলো তো!"

"অনেক কিছুই যায়-আসে রাতুলের বাবা! ডিজিট্যাল দুনিয়া সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সবই হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে... কিন্তু সন্তান-সন্ততিকে ছুঁয়ে দেখবার অপার সুখানুভূতিগুলো কেড়ে নিয়েছে। তুমি আমায় যতই সান্ত্বনা দাও, আমি আর একা থাকতে পারছি না! নিঃসঙ্গ বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে! ছেলে তো মাঝে- মাঝেই বলে, এই বাড়ি বিক্রি করে আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু যে বাড়িতে আমাদের সারাজীবনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে... সুখ-দুঃখের কত স্মৃতি আঁকড়ে আমি বেঁচে আছি, সেই সম্বলটুকু যে আমি হারাতে পারব না গো!"

"আহা! শোনো গিন্নি, এ তোমার আবেগের কথা। আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না! তাই বাস্তবকে বোঝার চেষ্টা করো! দেখো, ছেলে যা ভাবছে নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই ভাবছে। জীবনটাকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে হলে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া যে আমাদের আর কোনও উপায় নেই গিন্নি! আমি বলি কি, ছেলের কথা শোনো। মাকে একলা ফেলে সেও কি স্বস্তিতে থাকতে পারে বলো!"

চারুদেবী অভিমানী দৃষ্টিতে তাকালেন স্বামীর দিকে, "তুমিও শেষে ছেলের সুরেই সুর মেলাচ্ছ! কেন রাতুলের বাবা! ছেলে-বৌমা তো দেশে ফিরেও চাকরি করতে পারে! মায়ের কথা ভেবে কি এইটুকু করতে পারে না তোমার ছেলে!"

"তা হয় না গিন্নি! আমাদের সন্তান এখন আর সেই ছোটটি নেই। ওর ভালো লাগা আর আমাদের ভালো লাগার মধ্যে এখন বিস্তর ফারাক। আচ্ছা বল তো গিন্নি, আমাদের ছোট্ট রাতুল লেখাপড়া করে একদিন অনেক বড় হবে, তাকে ঘিরে এই স্বপ্নটা তো আমরাই দেখেছিলাম; না-কি!! মনে আছে তোমার... যেদিন সে চাকুরিসূত্রে বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র পেলো, সেদিন সবচেয়ে খুশি হয়েছিলে তুমি। আর আমি ছেলের গর্বে গর্বিত পিতা হিসেবে আত্মীয়-বন্ধু সবার কাছে বাড়তি সম্মান পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছি। সেসব ভুলে শুধু শুধু ছেলেকে দোষারোপ করে কি লাভ বলতো!"

এমন সময় দারোয়ান রামু ঘুম-চোখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে দরজায় ধাক্কা দিল। দরজা খুলতেই, "মাইজি, দাদাবাবু আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলো কি, আপনার শরীর ভালো আছে তো!"

"কেন রে রামু! তোর দাদাবাবু আজ হঠাৎ তোকে ফোন করে আমার কথা জানতে চাইল কেন?"

"মাইজি, দাদাবাবু আপনাকে অনেকবার ফোন করেছে, কিন্তু আপনার সাড়া না পেয়ে খুব চিন্তা করছিল। তাই আমাকে ফোন করলো। আপনি এত রাতে কার সঙ্গে বাত করছিলেন মাইজি? ঘরে কি কোনও মেহেমান এসেছে?"

"হ্যাঁ রে রামু, আজ একটু ব্যস্তই ছিলাম। আজ যে তোর কর্তাবাবুর জন্মদিন। তিনি এসেছেন তাই..." চারুদেবীর কথা শেষ না হতেই রামু চমকে উঠলো। সে বারবার চোখ কচলে একবার কর্তাবাবুর ছবির দিকে তাকায়, আর একবার গিন্নিমার মুখের দিকে অবাক চাহনিতে তাকায়, "আপনি কি বলছেন মাইজি! আমার কুচ ভি সমঝমে না আসছে। কর্তাবাবু তো ইস দুনিয়ামে নেহি আছেন! তাহলে উনি কেমন করে আসবেন!"

যেই না বলা অমনি একটা ছায়ামূর্তি রামুর ঘাড়ে হাত রাখলো,"হা-হা-হা, কি রে রামু... কেমন আছিস?"

গলার আওয়াজটা খুব চেনা মনে হলো রামুর। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। এদিক-ওদিক তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই ভূত-ভূত-ভূত বলে চিৎকার জুড়ে দিল। চারুদেবী রামুকে যতই শান্ত হতে বলেন, রামু ততই চিৎকার করে। শেষে চারুদেবী রামুকে একটা গাঁট্টা মেরে বললেন, "ওরে হারামজাদা, ভূত-ভূত বলে গোল বাধালি কেন রে? দেখতে পাচ্ছিস না, তোর কর্তাবাবু এসেছেন!"

রামু আরও ভয় পেয়ে বলে,"কর্তাবাবু! কোথায় মাইজি ? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না! আপনার তবিয়ত ঠিক আছে তো মাইজি! আপনাকে ফোনে না পেয়ে দাদাবাবু খুব চিন্তা আছেন।"

এতক্ষণে চারুদেবী মনে পড়লো ফোনটা চিলেকোঠায় ঠাকুরঘরে ফেলে এসেছেন। এতক্ষণ কর্তার জন্মদিন পালন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, কথায়-কথায় কথন ভোর হয়ে গেছে বুঝতেই পারেননি। ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন রাতুলের পনেরটা মিসড কল। হাসতে-হাসতে বললেন,"এই দেখ রাতুলের বাবা, তোমার ছেলের কাণ্ড! মাকে ফোনে না পেয়ে ছেলে আমার কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে!" কিন্তু কর্তাবাবুকে দেখতে পেলেন না চারুদেবী। ব্যস্ত হয়ে বললেন,"একি! তুমি চলে গেলে রাতুলের বাবা!" কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলেন চারুদেবী। আপনমনে বলে উঠলেন,"তুমি ঠিকই বলো রাতুলের বাবা; এ পৃথিবীতে সবই মায়া! এই মায়ার বাঁধন থেকে যতই আলগা থাকা যায় ততই ভালো!"

সকালবেলা সূর্যের প্রথম আলোকছটা এসে পড়েছে কর্তাবাবুর ছবির উপর, চারুদেবী একদৃষ্টে চেয়ে আছেন। অজান্তে দু'ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো দু'গাল বেয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস! ভেবে চলেছেন এই একাকীত্বকে সঙ্গী করে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে! "সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই গিন্নি," কর্তার কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে চারুদেবীর কানে।
(সমাপ্ত)


Next Bangla Story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717