online bangla story, bangla story competition, জীবন যুদ্ধ, স্বরচিত ছোট গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

List of all Bengali Stories

◕ জীবন যুদ্ধ

লেখক: অভিজিৎ পাল, বাবা- মানিক চন্দ্র পাল, উদয়পুর, গোমতী, ত্রিপুরা

( নির্বাচিত গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )

##
অফিসে লাঞ্চ আওয়ার শুরু হলো, সব কলিগরাই একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করে প্রতিদিন। আজও "আকাশ" সব কলিগদের সাথে খেতে বসেছে, কিন্তু খেতে বসে চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে রইল সে, আজ কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না তার। এরকম দেখে মনোজ বাবু জিজ্ঞেস করল, "কি হল আকাশ, কিছু খাচ্ছো না যে?"

কোন উত্তর নেই। গালে হাত দিয়ে চুপচাপ জানালার দিক করে বাইরের দিকে তাকিয়েই রইল আকাশ। আবার মনোজ বাবু জিজ্ঞেস করল, "এই আকাশ, এ..এ..এই আকাশ, কি হল? কিছু খাচ্ছও না, কথার কোনও উত্তরও দিচ্ছ না, কি ব্যাপার? শরীর ভালো নেই নাকি?"

আকাশ, "ছাড়ো মনোজদা, ভালো লাগছে না।"

মনোজ, "এই দেখো, কি হয়েছে সেটা তো বলবে!! কি মুশকিল, না বললে কি করে বুঝবো বল দেখি, কি সমস্যা হয়েছে সেটা বলবে তো!"

আকাশ, "আজ খেতে বসে বার-বার মায়ের কথা মনে পড়ছে গো, ছোট বেলায় মা নিজের হাতে ভাতের গরস পাকিয়ে খাইয়ে দিতো আমায়, আজ কতদিন হয়ে গেল মায়ের হাতের রান্নাও খাই না আর মায়ের পাকানো ভাতের গরসও পাই না। দু-তিন দিন ধরেই আমার মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না গো। ফোনে কথা বলেছি, ভিডিও কলেও দেখেছি, কিন্তু সামনা-সামনি গিয়ে না দেখা পর্যন্ত মনটা অস্থির হয়ে আছে গো মনোজদা।"

মনোজ,"হ্যাঁ, সেটা তো ঠিক, তা ছুটির জন্য এপ্লাই করে দাও।"

আকাশ, "বলেছিলাম। বস বলছেন, এইতো ছ মাস আগেই বাড়ি গেলে, আবার ছুটি? অনেকগুলো কাজ পেন্ডিং হয়ে আছে, সেগুলি করে না হয় দু-একদিনের জন্য ঘুরে আসতে বললো।"

মনোজ "দেখো তাহলে... কি করবে আর... বস যেহেতু বলে দিয়েছে, আর তো কিছু বলার নেই। এখন খেয়ে নাও তো, খাবার নিয়ে এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে নেই।"

চোখের জলটা মুছে আকাশ খাবার খেতে শুরু করলো, এরপর খাওয়া শেষে আবার যথারীতি কাজে লেগে গেল।

প্রতিদিন রাতে মায়ের অসুখের খবর নেওয়া থেকে শুরু করে মায়ের জন্য ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়া, অনলাইনে ঔষধ অর্ডার করা, সবই দূর থেকে যতটা সম্ভব হচ্ছে করে দিচ্ছে আকাশ, কিন্তু মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি কিছুতেই হচ্ছে না, বরং দিন-দিন সমস্যা যেন আরও বেড়েই চলেছে। আকাশ ভাবলো এবারে ছুটিটা নিতেই হবে।

ছুটি মঞ্জুর করে ফ্লাইটের টিকিট কাটা এসব করে উঠতে-উঠতে আরও দু-তিন দিন লেগে গেল। রাতে খেয়ে-দেয়ে শোয়ার সময় ভিডিও কল করলো মাকে, "মা, আমি কাল চলে আসছি মা। তোমার আর চিন্তা নেই মা," আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ফোন রেখে দিয়ে ঘুমোতে গেল আকাশ। পরদিন সকাল সাড়ে দশটায় ফ্লাইট, ব্যাগ-পত্র সমস্ত কিছু গুছিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরোলো আকাশ। এয়ারপোর্টে যেতে দেড় ঘণ্টার মত লাগবে। ট্যাক্সি বুক করে রওনা দিলো এয়ারপোর্টে। কিছু দূর যেতেই, হঠাৎ ফোন বাজলো, বাড়ি থেকে বাবার ফোন। হঠাৎ যেন কেমন মনে হলো আকাশের, হাত-পা কাঁপছে ওর, ফোনটা ধরতেও ভয়-ভয় লাগছে। তবু ও ধীরে-ধীরে আঙ্গুলটা দিয়ে রিসিভ বাটনে ক্লিক করলো। ওপার থেকে বাবা কাঁদো-কাঁদো আওয়াজে বলছেন, "তোর মা আর নেই রে বাবা..." বলেই সঙ্গে-সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। একটি শব্দও করলো না আকাশ, চুপচাপ ফোনটা রেখে একদিকে তাকিয়ে রইল, চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বয়ে চললো অনর্গল। মনে-মনে বললো, "মা গো, আজই তো আমি আসছিলাম, আর একটু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পরলে না আমার জন্য? হে ঈশ্বর, এত নিষ্ঠুর কেন তুমি? কি অন্যায় করেছি আমি যে, এত বড়ো আঘাত, এত বড়ো শাস্তি তুমি আমায় দিলে?"

নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা চলে এল আকাশের। আজ ওর মনে হলো, কেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলাম? কেন বাইরে চাকরি করতে এলাম? আজ যদি সাধারণ পড়াশোনা করে বাড়ির কাছে-ধারে কোনও সাধারণ চাকরি করতাম তাহলে তো আমার মায়ের শেষ সময়ে আমি পাশে থাকতে পারতাম। মাকে শেষ দেখাটা দেখতে পারতাম। আজ আমার বাড়ি-গাড়ি সব আছে, মা গো, কিন্তু তুমি নেই, জীবন যুদ্ধে আমি জিতেও হেরে গেলাম মা। ওপারে ভালো থেকো মা, পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। কোনও- না কোনও একদিন আবার তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে, মা গো, সেই অপেক্ষায় আমি থাকবো মা।"
(সমাপ্ত)

জীবন যুদ্ধ

Online bangla Story