Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

গতানুগতিক

Online bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

গতানুগতিক

লেখক: সৌরভ নাথ, বাবা - সুরঞ্জন নাথ, হাটগাছা, বানীপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ

( নির্বাচিত গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )

##


বস্তিবাসীদের কাছে ভোটটা একটা উৎসবের মত। সকলের অলক্ষ্যে, অবহেলায় পড়ে থাকা মানুষগুলো হঠাৎ যেন রাতারাতি সেলেব্রিটি হয়ে ওঠে। যেখানে দিনের বেলাতেও অন্ধকার ও আবর্জনায় ভর্তি, সেখানেও রাত্রিবেলায় এল ই ডি লাইটের ঝলকানিতে যেন চোখ রাখা দায়। অন্ধকারে সয়ে যাওয়া চোখে বেশি আলো সয় না। যেন সমস্ত কিছুই অন্ধকার বলে মনে হয়। ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েগুলো মনে করে না-জানি কতই-না বড় উৎসব এসেছে। বড়-বড় হাত জোড় করা ছবি আর নানা রকম রঙ্গিন পতাকার সমারোহ। তবে তাদের ছোট মনে একটা প্রশ্ন উঠে আসে — আমরা তো ভগবানকে হাত জোড় করে ডাকি; এরা কেমন ভগবান যারা আমাদের দিকে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকে! তবে আমরা কি একদিনের জন্য ভগবান হলাম! আমাদের কি আজ পূজো? খেলার ফাঁকে এমন কতই না প্রশ্ন মাথায় আসে, সব কিছু কি ছাই মনে থাকে! ওসব প্রশ্ন-উত্তরের পালা হবে এখন, তবে আপাতত এখন তো খেলা যাক।

অন্ধকার গলি-খুঁজিগুলোয় আলো পড়ে অচেনা লাগছে। সেগুলোকে চোখ মেলে দেখে নিতে হবে, সারা রাত বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে হবে, না জানি আবার কবে এমন মজা হবে!

বৃদ্ধ মুরাদ আলি লস্কর বয়সের ভারে প্রায় পঙ্গু, চোখেও দেখে কম। সারাদিন অন্ধকার ঘুপচি ঘরে চুপটি করে বসে থাকা তার কাজ। এক সময় মুটে মজুরের কাজ করেছে, গায়ে গতরে খেটেছে। এখন দু-বেলা দু-মুঠো পেট পুরে খাওয়া আর চুপটি করে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকাই তার একমাত্র কাজ। দর্মা দিয়ে ঘেরা বাঁশের কাঠামোর উপর টালির চাল দিয়ে ছাওয়া ঘর। বাইরে থেকে মরা-পচা কি সব আঁশকুড়ো পাঁশকুড়োর গন্ধে সারাদিন ঘরটা মো-মো করে। ওসবে যদিও তার কিছুই আসে যায় না। কষ্ট শুধু মশার কামড়ে। বড় ছেলেটা তো সেবারে ডেঙ্গুর জ্বরে ভুগে-ভুগে সরকারী হসপিটালেই মারা গেল। বড়ছেলেটার বৌ ময়নার রূপ যৌবন যেন ফেটে বের হচ্ছে। এমন সময় ছেলেটা বৌটাকে একা ফেলে চলে গেল। ঘরেতে তো দুটো মাত্র প্রাণী আর রোজগার বলতে ময়নাই সম্বল। বৌটা চলে গেলে মুরাদ আলির ভিক্ষে করে খাওয়ারও সামর্থ্য নেই। তবে ময়নার মনটা খুব ভাল। মুরাদ আলিকে দু-বেলা দু-মুঠো পেট পুরে খেতে দেয়। সন্ধেবেলায় গলিতে দাঁড়ালে দু-একটা খদ্দের হয়ে যায় আর সকালে ধোপানীদের সঙ্গে কাপড় কাচে। ময়না যখন ফুল বাহারি সাজে উগ্র গন্ধ মেখে সন্ধ্যে বেলায় ব্যবসায় বেরোয়, তখন মুরাদ আলির মনে হয় যেন ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো। বাড়ির সামনে সাদা আলোয় ঘরের ভিতরটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আজ। মুরাদ আলি অন্ধকারে ভাল চোখে দেখে না। কিন্তু ঘরের ভিতরে আলো পড়তে সে দেখল ঘরটা বেজায় ময়লা হয়ে আছে। অন্ধকারে কিন্তু এসব কিছুই মনে হয় না তার। আজ মনে হয় ময়নার খদ্দের জুটবে না। আলোর ভয়ে আজ মনে হয় খদ্দেররা আর গলির ধার মাড়াবে না। তার ওপর আবার পুলিশের টহলদারি চলছে। তবুও ময়না আজও ফুল বাহারি সাজে বেরোল।

মুরাদ আলি ময়নাকে জিজ্ঞেস করল, 'আজ কি আর খদ্দের পাবি?'

ময়না বিরক্তির সুরে মুরাদ আলির দিকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল, 'আ মোলো যা! বুড়োর কতা দ্যাখো! সন্দেবেলায় অলুক্ষুনে যত সব কতা কইচে। কেন খদ্দের পাব না... কেন শুনি, বয়স কি আমার ঢলে গেচে?'

'না আমি তা বলিনি, কিন্তু চরু দিকে এত আলো দিয়েচে, তাতে খদ্দের কি আর আসবে?'

'আলো দিয়েচে তো কি হল! তোমার বুজি খিদে পেলে খাও না? পেটের খিদের চেয়ে শরিলের খিদের জ্বালা অনেক। ও ব্যাটারা ঠিক আসবে।'

ময়না একটু ন্যাচ-ন্যাচ করে কথা বললেও, মনটা কিন্তু তার বেশ পরিষ্কার। আর তাছাড়া বুড়ো হলে ওসব কথা গায়ে মাখতে নেই। এমনিতেই ময়নার উপর অনেকেরই রাগ। এ বস্তিতে তার মত রসালো মেয়ে আর দুটো নেই। তার বাঁধা খদ্দের; অন্যান্যদের মত প্রতিদিন তাকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয় না। অনেক বড় বড় বাবুদের সঙ্গেও হাত আছে ওর। সেদিন তো বলছিল, কে একজন বাবু নাকি তাকে গাড়ি করে ঘুরিয়ে, রাত্তিরে বড় হোটেলে খাইয়ে তবে ছেড়েছে। এখনকার এসকর্ট, না কি সব বলে, সেখান থেকেও ময়নার ডাক এসেছে। সামনেই নাকি ইন্টার্ভিউ আছে। একবার ইন্টার্ভিউয়ে পাশ করতে পারলেই নাকি বড় ফ্ল্যাট দেওয়া হবে তাকে। সেই কারণে মুরাদ আলি আর ময়নাকে খুব একটা বেশি চটায় না। আর যাই হোক ময়না যদি জীবনে একটা স্ট্যান্ড করতে পারে তাহলে তো অন্তত এই ঘিঞ্জি বস্তি থেকে তাদের মুক্তি মিলবে। মাঝে কয়েকদিন ব্যবসা বন্ধ ছিল, কয়েকদিন তো কাপড় কাচতেও যেতে পারেনি ময়না। কোন ব্যাটা নাকি এমনিই কাজ করেছিলো, শুধু শুধু মেয়েটাকে তিনমাসের প্রেগন্যান্ট করে দিল। এই লাইনে শরীরের দিকে নজর না দিলে কি হয়? ওটাই তো এই ব্যবসার মূলধন।

ময়না চলে গেলে মুরাদ আলি যতটা সম্ভব বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখল। 'উফ! এত আলো দিয়েচে যে চোক রাকা দায়!' নিজের মনে-মনেই গজরাতে লাগল মুরাদ আলি।

রাত পোহালেই ভোট। চারিদিকে গণ্ডগোল চলছে। এমনিতে শান্ত বস্তি এলাকাটা। যে-যার মত সারাদিন মুটে মজুরের কাজ করে, খাটে, খায়, রাত্তিরে মদ খেয়ে খিস্তি-খেউর করে, কিন্তু ভোটের সময় মানুষগুলো যেন কেমন পালটে যায়। ভোট যত এগিয়ে আসবে ঝাণ্ডাগুলো ডাণ্ডায় পরিণত হবে। ভোটের দিন তো কথাই নেই, ডাণ্ডা থেকে তলোয়ার এমনকি বন্দুক পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়াবে। দু দলে রক্তারক্তি হবে, পুলিশ আসবে, রাস্তায় র‍্যাফ নামবে, বেদম ঠেঙানি চলবে, জেলে ভরবে, কোর্টে চালান পর্যন্ত হবে। ভোটের রেজাল্টের পরেও দিন দুয়েক এরকমই চলবে। তারপর আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে সব এক হয়ে যাবে। আবার সকলে মিলে আকণ্ঠ মদ খাবে, খাটবে, খাবে। নিত্যদিনের রুটিনের ধারা আবার সেই একই পথে ফিরে আসবে।

মুরাদ আলি শোনে, সকলে বলে পরিবর্তন আসবে? কিন্তু তার সত্তর বছর জীবনের তো আজ পর্যন্ত কোন পরিবর্তন আসেনি! তার মাথার চালের উপর যেই ফুটোটা দিয়ে পাঁচ বছর আগেও বৃষ্টির জল পড়ত, আজও তো সেই ফুটোটা মেরামত হয়নি! মুরাদ আলির ছোট ছেলেটা তো কচি বয়সে বোম বাঁধতে গিয়ে মরে গেল। ছিল একটা বড় ছেলে, সেও গেল ডেঙ্গুর জ্বরে। এখন সবে ধন-নীলমণি বলতে ঐ ময়না। ময়না গেলে মুরাদ আলির ইহজগতে আপনজন বলতে আর কেউই থাকবে না। তাই তো তার সব সময় চিন্তা হয়। গরীবের দুঃখ বোঝে এমন লোক কোথায়! গরীবকে তার নিজের জোগাড় নিজেকেই করে নিতে হয়। যেমন ময়না নিজের জোগাড় নিজে করছে।

রাখোহরির বৌটা সেবারে কলেরায় মরল। ছোট ছেলেটা চার বছর বয়সে মাতৃহারা হল। ছেলেটার সহায় সম্বল বলতে ঐ মোদো মাতালে বাবা ছাড়া আর কেউই নেই। বৌটা মরার পর রাখোহরি বেশ কয়েকদিন ময়নার পিছনে লেগেছিল, বিনে পয়সায় যদি শরীরের খিদে মেটানো যায় সেই আশায়। তবে টাকা ছাড়া ময়না শরীর দেবার মত বান্দি একেবারেই নয়। বেশ কিছুদিন সাধ্য সাধনায় কোনও ফল না পেয়ে রাখোহরি আর এ ধারে খুব একটা ঘেঁষে না। তবে রাখোহরির ছোট ছেলে 'শান্ত' কিন্তু মুরাদ আলিকে 'দাদু দাদু' করতে-করতে প্রায়ই আসে। দু'জনে বসে-বসে অনেক গল্প করে। এই দুই অসম বয়সী মানুষ দুটোর মধ্যে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে।

মুরাদ আলি শান্তকে জিজ্ঞেস করল, 'তোর বাপ ঘরে ফিরেচে?'

'না গো দাদু, সেই সকালে বেরিয়েচে, এখনও পর্যন্ত মুক দেকিনি...'

'মুক দেকিসনি মানে? সারাদিন শালা ঘরে ফেরেনে?'

'না, আজ সারাদিন ঘরে ফেরেনে।'

'দ্যাক শালা, কোনও মেয়ের পেচনে-পেচনে ঘুরচে। ঘরে একটা দুদের শিশু আচে, সে কতা কি আর তার নেশার ঘোরে খেয়াল আচে? বলি সারাদিন পেটে কিছু পরেচে?'

শান্ত মাথা নিচু করে বলে, 'না।'

'সেকি! বলিস কিরে! সারাদিন কিচু খাসনি?'

শান্ত চুপ করে থাকে। মুরাদ আলি ব্যস্ত হয়ে রাখোহরির চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে-করতে বেতো শরীরে উঠে ভাতের হাঁড়ির দিকে উঁকি দিয়ে দেখল তখনও পর্যন্ত দুপুরের ভাত আর আলু কিছুটা রয়ে গেছে। এলুমিনিয়ামের থালায় ভাত আর আলু নিয়ে শান্তর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, 'নে দিকি, খেয়ে নে।'

শান্ত সারাদিন অভুক্ত অবস্থায় এদিক-ওদিক ঘুরে বেরিয়েছে। সারাদিনে কতবার যে খিদে পেয়েছে আর কতবার খিদে মরে গেছে তার কোন হিসেব নেই। হাতের কাছে ভাতের থালা পেয়ে সে গোগ্রাসে খেতে লাগল। সেটা দেখে মুরাদ আলির রাখোহরির উপর রাগ যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল। 'শালা মোদো মাতালে, চরিত্তর হীন, বৌ খেকো - দুদের ছেলেটা যে সারাদিন না খেয়ে আচে সে কতাও খেয়াল নেই! আল্লা তোর বৌকে না নিয়ে তোকে নিলো না কেন রে! তাহলে তো তোর বৌ গতর বেচে হলেও ছেলেটাকে খাওয়াতে পারত। শালা এমন বাপ থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল।'

শান্তর কিন্তু ওসব দিকে একেবারে খেয়াল নেই। সে পেট পুরে গোগ্রাসে ভাত গিলতে লাগল। যতক্ষণ পর্যন্ত থালায় ভাত আর আলু ছিল তার চকচকে চোখ দুটো যেন হিংস্র পশুর মত সেদিকে তাকিয়ে থাকল। একেই বোধ হয় বলে খিদের জ্বালা। পেটে আগুন লাগলে কানে কিছু ঢোকে না। আর তাছাড়া কানে যদি কিছু ঢুকেও থাকে, তাতে তার একশ শতাংশ সমৰ্থন আছে। তার বাপকে কেউ গাল দিলে তার খুব ভাল লাগে। মা-টা যতদিন বেঁচে ছিল তত দিন রাত্তিরে মাল গিলে এসে তাকে পেটাত। শান্ত তো মনে-মনে ঠিকই করে রেখেছে, সে একবার বড় হোক তারপর তার বাপের পিঠের ছাল ছাড়িয়ে রোদ্দুরে শুকোতে দেবে।

শান্তর বাপ যখন বাড়ি ফিরল তখন সন্ধ্যে পার হয়ে রাত হয়ে গেছে। মদে চুর হয়ে টলতে টলতে ছেলেকে বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে তো রাখোহরি একেবারে রেগে আগুন। রাগের মাথায় যেন তার গালিগালাজের বাঁধ ভেঙে গেল। মুরাদ আলি আর শান্ত ততক্ষণে গল্প করতে-করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুরাদ আলির বুড়ো বয়সে করবার মত কাজ কিছুই নেই। কখন যে ঘুমোয় আর কখন যে জেগে থাকে তার কোন ঠিক নেই। শান্তর পেটে সারাদিনের পরে একবার ভাত পড়তেই তার দু-চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো। মুরাদ আলি শান্তর সঙ্গে বকবক করতে করতে যখন দেখল যে শান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন সেও তার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমটা যেন তার অনেকটা ছোঁয়াচে রোগের মত। কাউকে ঘুমোতে দেখলেই নিজেরও ঘুম পায় ৷ রাখোহরি জানে শান্তকে কোথাও খুঁজে না পাওয়া গেলে ময়নাদের বাড়িতে ঠিক পাওয়া যাবে। ছেলেটার মান-সম্মান বলে কিচ্ছু নেই! তার বাপকে যে পাত্তা দেয় না, তাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকা! রাখোহরির মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল। কিন্তু ময়নার বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার আর তার সাহস হল না। সেবারে ময়না হাতে ঝাঁটা নিয়ে তাকে তুলোধোনা করেছিলো। রাখোহরি নিজের মনেই বলল, 'যা শালা, ব্যাটার ছেলে যেখানে পারে যাক।'

রাত পেরলেই ভোট। আজ বোধ হয় সারা রাত শহর জেগে থাকবে। আচমকা কিছু লোকের সমবেত শব্দে শান্তর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটল। মুরাদ আলি কানে কম শোনে, তখনও নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। কত রাত হল কে জানে! শান্ত ডাকল, 'দাদু, ও দাদু, বাইরে কারা যেন ডাকচে!'

মুরাদ আলি ধরমরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বলে, 'কি হল?'

'আরে শুনতে পাচ্ছো না, বাইরে কারা ডাকচে!'

মুরাদ আলি কান পেতে শোনে, 'তাই তো, বাইরে কারা ডাকাডাকি করচে! ময়না? ময়না? গেলি কোতায়? ময়না কি ঘরে ফেরেনে? হায় আল্লাহ্, কি যে হল কে জানে! ময়না? ময়না?'

ঘরের সামনে কতগুলো কুকুর ঘেউ-ঘেউ করছে। মুরাদ আলি বুড়ো হাড়ে জোর দিয়ে উঠল, বাইরে মুখ বাড়াল। কেউ কোথাও নেই। মুরাদ আলি দেখল, রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। সত্যিই তো কতগুলো লোক তার নাম ধরে ডাকাডাকি করছে! মুরাদ আলি জিজ্ঞেস করল, 'কি হল ভাই? কি হয়েচে?' ঘরেতে আরও একবার চোখ মেলে দেখল ময়না তখনও ঘরে ফেরেনি৷


'কখনও শুনেছেন পতিতার ধর্ষণ?' শহরের ভদ্র-সভ্য কিছু লোক প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে গরম-গরম ঘটনাটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। বৃদ্ধ মুরাদ আলি বহুদিন পরে রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছে। কত বছর যে সে ঘর থেকে বাইরে বের হয়নি তার কোনও হিসেব নেই। ভোটের আবহে থমথমে বাতাস যেন গুমোট হয়ে অপেক্ষায় আছে কোনও এক বিভীষিকাময় ঝড়ের আশঙ্কায়। ময়না কাল রাতে ঘরে ফেরেনি। আজ সকালে তার লাশ রাজপথে পাওয়া গেছে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায়। মুরাদ আলি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে ভাষা নেই, চোখে জল নেই, হা-হুতাশের ব্যথা নেই। শুধু যেটা আছে সেটা হল এক-চোখ জিজ্ঞাসা। কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর দেবার মত কে-ই বা আর আছে! মুরাদ আলির চাদরের খুঁট ধরে শান্ত ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ময়নার দিকে। মানুষ মরে গেলে কেমন বিশ্রী দেখতে লাগে। এর আগে কখনও কাউকে মরতে দেখেনি শান্ত। ময়না দিদি তাকে বড় ভালোবাসতো। তার ভালোবাসার মানুষগুলো একে-একে যেন কেমন মরে যাচ্ছে। এখন একটি মাত্র মানুষ‍ই এই পৃথিবীতে আছে যে তাকে ভালোবাসে। মুরাদ আলির চাদরের খুঁটটা শান্ত আরও জোরে আঁকড়ে ধরল।

কাল রাত্তিরে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, অথচ মুরাদ আলি তার বিন্দুমাত্র টের পেল না। মুরাদ আলি সকলের মুখের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই তার গলা থেকে শব্দ বের হল না। বস্তিতে কার্ফু জারি হয়েছে কাল রাত থেকে। রাখোহরিকে পুলিশে ধরেছে খুনের অভিযোগে। কাল রাত্তিরে ময়নাকে একলা পেয়ে তার শরীরের খিদে মিটিয়ে নিয়েছে সে, উগরে দিয়েছে সে তার বুকের সমস্ত জ্বালা। ময়নাকে নিয়ে যাওয়া হল ময়না তদন্তের জন্য। রাস্তায় পড়ে রইল চক দিয়ে আঁকা তার দেহের অবয়ব। মুরাদ আলি দেখল এখনও যেন ময়না পড়ে আছে রাস্তায় অর্ধ-নগ্ন হয়ে...
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717