online bangla story, bangla story competition, অতীনের ভুত, স্বরচিত ছোট গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

List of all Bengali Stories

◕ অতীনের ভুত

লেখক: মুকুট রায়, বাবা- স্বর্গীয় শ্রী কান্তি নাথ রায়, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ

( নির্বাচিত গল্প, 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৩' )

##
সাইকেলটা হুশ করে বেরিয়ে যেতেই চমকে উঠলো সমরেশ। কে গেল! বন্ধু অতীন না? কাল তাহলে কাকে দাহ করে এল ওরা? টাল খাচ্ছে মাথাটা। সমরেশের মাথা সত্যিই ঘুরতে লাগলো। গতকালই ওরা সব বন্ধুরা মিলে তাদের বন্ধু অতীনের মৃতদেহটা পুড়িয়ে এসেছিল, আজ তাহলে আবার অতীনকে দেখা যাবে কি করে? সমরেশের সবকিছু কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছিল, কিছু বুঝতে পারছিল না। তার বেশ মনে আছে দিন তিনেক আগে অতীন শহরের বাস-স্ট্যান্ড থেকে হারিয়ে যায়। তাদেরই এক বন্ধু তাকে শেষ দেখে বাস-স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে। সেদিন রাত পর্যন্ত অতীন বাড়ি না ফেরাতে তার বাবা পরদিন সকালে গিয়ে স্থানীয় থানায় মিসিং ডায়েরি করিয়ে আসেন। মিসিং ডায়েরি হাতে পেয়ে পুলিশ সম্ভাব্য সব জায়গাতেই তল্লাসি চালিয়েও কোনও কূলকিনারা করতে পারেনি। শোনা গিয়েছিল কোন একটা মানব পাচারকারীর বড় দল শহরের অনেক যুবককেই অপহরণ করে সৌদি আরবে পাচার করার তাল খুঁজছে। এই ঘটনার পরদিনই অতীনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ স্থানীয় এক খেলার মাঠে পাওয়া যায়। অতীনের মা-বাবা ছেলের মৃতদেহ সনাক্ত করার পর পোস্টমর্টেম হয়। রাতের বেলা মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ার পর সব বন্ধুরা মিলে সেই মৃতদেহ স্থানীয় শশ্মান-ঘাটে পুড়িয়ে আসে। এতটা পর্যন্ত সমরেশের জানা ছিল, কারণ বন্ধুদের সঙ্গে সেও গিয়েছিল অতীনকে পোড়াতে। কিন্তু, এরপরও অতীনকে দেখতে পাওয়া... তবে কি ভুতুড়ে ব্যাপার?

সমরেশ চিরকালই একটু ডাকাবুকো, বেপরোয়া স্বভাবের। সে ঠিক করলো এই ব্যাপারে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। এর মধ্যে তার বন্ধুদের অনেকেই রাতের বেলা অতীনকে দেখে ভুতের ভয় পেতে আরম্ভ করেছে। সমরেশ ঠিক করলো একদিন অতীনের পিছু-পিছু গিয়ে দেখবে সে কি বলতে চায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সমরেশ একদিন অপেক্ষা করে বসে রইল অতীনের ভুতকে কখন দেখা যায়। বসে অপেক্ষা করতে করতে চোখ একটু লেগে এসেছিল। হঠাৎ ঘোর কাটতেই নজরে পড়ল অতীন সাইকেল চেপে যাচ্ছে। দেখা পেতেই সমরেশ ছুটলো অতীনের পিছনে। এই রাস্তা, সেই রাস্তা ঘুরে অতীনের সাইকেল থামলো এক পুকুরের ধারে। সমরেশ অতীনের সাইকেলের কাছে পৌঁছে গেল কিন্তু অতীনের দেখা পেল না। পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে সমরেশের একটু গা ছমছম করতে লাগলো সে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে গলা চড়িয়ে অতীনের নাম ধরে ডাকতে লাগলো। হঠাৎ একটা গাছের আড়াল থেকে অতীনের একটা ছায়া বেরিয়ে এল। কিরকম একটা ফিসফিস স্বরে অতীন বলল, সমরেশ আমি চাই আমাকে যে মেরেছে সে শাস্তি পাক।

সমরেশ বললো- তুই পুরো ব্যাপার আমাকে না জানালে এবং প্রমাণ না দিলে পুলিশ তো আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না।

অতীন বলতে লাগলো - তাদের বাড়ির পাশে যে পরেশ কর মানে পরেশ কাকু থাকে সে-ই সেদিন আরেকজন লোকের সাহায্যে তাকে বাস-স্ট্যান্ড থেকে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে ট্যাক্সি করে পরেশ করের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং একটি ঘরে হাত-পা বেঁধে বন্দী করে রাখে। পরেশ করের ইচ্ছা ছিল অতীনকে সেই দলটা, যেটা সৌদিআরবে মানব পাচার করছে, তাদের সঙ্গে ট্রেনে তুলে দেওয়া এবং কিছু টাকা কামানো। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশের অনুসন্ধান শুরু হওয়াতে পরেশ করের আর সাহস হয়নি অতীনকে ট্রেনে তুলে দিতে। তারপর তারা তাদের বিরুদ্ধের প্রমাণ লোপাট করতে প্ল্যান করে অতীনকে মেরে ফেলার। প্ল্যান অনুযায়ী পরদিন পরেশ কর আরেকজন লোকের সাহায্যে তাকে পুকুর পাড়ে ছুরি দিয়ে মেরে ফেলে তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ খেলার মাঠে ফেলে আসে এবং ছুরিটা পুকুর পাড়ে এক গর্তের ভিতর লুকিয়ে রাখে। অতীন সমরেশকে সেই গর্ত দেখিয়ে দিল যাতে সেই রক্তমাখা ছুরিটা লুকানো ছিল। সমরেশ একটা কাপড়ে মুড়ে সেই ছুরিটা নিয়ে নিল এবং বন্ধু অতীনকে কথা দিল সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করবে। এরপর সমরেশ সেই রক্তমাখা ছুরি যেটা খুনের মোক্ষম প্রমাণ ছিল সেটা পুলিশের কাছে জমা দিল এবং পুলিশকে সব ঘটনা জানালো। শুধু এটা জানালো না যে সে এই ঘটনার কথা বন্ধু অতীনের কাছে শুনেছে, যে এখন ভুত হয়ে গেছে। ভুতের কথা বললে পুলিশ বিশ্বাস করতো না।

খুনের সেই প্রমাণ সঙ্গে করে পুলিশ পরেশ করকে থানায় তুলে নিয়ে আসার পর চাপ দিতেই পরেশ কর ভেঙ্গে পড়ে এবং স্বীকার করে সেইই অতীনকে খুন করেছিল টাকার লোভে। বিচারে পরেশ করের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি হয়। এর কিছুদিন পর সমরেশ আরেক বন্ধুকে সঙ্গে করে গয়াতে গিয়ে অতীনের নামে পিণ্ড দিয়ে আসে। তারপর থেকে অতীনের ভুত আর কেউই দেখতে পায়নি।
( সমাপ্ত )

অতীনের ভুত

Online bangla Story