-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
List of all Bengali Stories
◕
কদম
লেখিকা - জয়ন্তী চক্রবর্তী, পিতা - ঈশ্বর উমাপদ ঘোষাল, ঘটক পুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
##
কদম
লেখিকা - জয়ন্তী চক্রবর্তী, পিতা - ঈশ্বর উমাপদ ঘোষাল, ঘটক পুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
কদমকে বললুম, এখনো মাস শেষ হলো না, এর মধ্যে মাইনে চাইছিস যে বড়ো?
মুখটা কাঁচুমাচু করে কদম বলল, দাও না বৌদি... মিসতিরি চলে যাবে... হাতে একটাও পয়সা-কড়ি নেই। বাস-ভাড়া পর্যন্ত নেই... নয় আদ্দেক টাকা দাও!! পরে মাস-কাবারে বাকিটা দিও...
কদমের বলার ভঙ্গি, দাঁড়াবার ভঙ্গী ইত্যাদি দেখে বুঝলাম, টাকাটা সে নেবেই; অগত্যা দিয়ে দিলাম।
কদম ছাড়া আমার দিন চলবে না, রাতও চলবে না। ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, রুটি করা, সবজি কেটে দেয়া, মাঝে-মাঝে বাজার করে দেয়া, এমনকি মাঝে-মধ্যে আমার পিঠে সাবান ঘসে দেয়া, সব করে কদম এবং হাসি মুখে করে; হাসাতে-হাসাতে করে। কদমকে এই একটি বিশেষ গুণের জন্যে আমি বিশেষ রকম ভালবাসি। মেয়েটা সর্বদাই হাসিখুশি। গুন-গুন করে গান গাইতে-গাইতে ছোটা-ছুটি করে কাজ কর্ম যখন করে, মনেই হয় না ও ঠিকে-ঝি। সাধারণত: ঠিকে-ঝিরা হয় ভীষণ খিটখিটে। কাজ করে গজগজ করতে-করতে। বাসন মাজে ঝনঝন করতে-করতে। পা ফেলে দুমদুম করে। সব কাজে সব কথায় দুনিয়ার ওপর সীমাহীন ক্ষোভ ঝরে পড়ে ওদের। কদমের কিন্তু ঠিক উল্টো। কদমের হাঁটা, চলা, কাজ, কথা, সব কিছুতেই ঝরে পড়ে খুশি। ভাবি, এত খুশির উৎসটা কি, একবার দেখতে পেলে হত।
কদমের বর মিস্ত্রী। কলকাতা শহরে বাসা-ভাড়া করে থাকে। সপ্তায়-সপ্তায় আসে। দিন তিন-চার থেকে আবার চলে যায়। বাড়িতে কেবল বুড়ি শাশুড়ি আর কদম। নির্ঝঞ্ঝাট সংসার।
একদিন কদম এলো একেবারে যাকে বলে রণরঙ্গিণী মূর্তিতে।
- কি হলো রে কদম? এতো রাগ কার ওপর?
- ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেড়ে দোব বৌদি। একবার যাই, দাঁড়াও। যেতে দাও শুধু আমায়। ও মাগীর কত ইয়ে আমি একদম মেরে গুড়া করে দেব। চেনে না তো কদম কে!! কেন রে শতেক খোয়ারি? দেশে কি আর ব্যাটাছেলে পেলি না? লোকেরটা ধরে টানাটানি করতে হবে!! তোর হাত ভেঙে নুলো করে দোব আমি, দাঁড়া!!
অনুমানে বুঝলাম কদমের বরটি কোনও কলকাত্তাই রসগোল্লার রসে আটকে পড়েছে। ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে হাঁড়ি মাজতে-মাজতে কদম বলে চলল , দু'দিন আসতে পারব না বৌদি। চালিয়ে নিও একটু কষ্ট করে।
আমি জানি, হাজার বললেও কদমের সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না। বললুম, ঝগড়া করতে যাচ্ছিস?
- ঝগড়া? কাটতে যাচ্ছি মাগীটাকে। এই দ্যাখো, চাকু নিয়েছি সঙ্গে। দুটোকেই কাটব। পারলে এক কোপে। তারপর ফাঁসি যেতে হয়, দ্বীপান্তর যেতে হয়, যেতায় যেতে হয় যাব।
আমি শিউরে উঠলুম ওর কাণ্ড-কারখানা দেখে। সত্যি-সত্যি পেট-কাপড়ের ভেতর থেকে চকচকে একটা ছুরি বের করল দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ! চট করে ওর হাতখানা ধরে বললুম, লক্ষ্মীটি কদম, খুনোখুনি করিস নি ভাই। পুরুষ মানুষ ঐরকমই হয়। ওরা সুযোগ পেলেই ওড়া-উড়ি করে। জেলে ভীষণ কষ্ট রে... তার ওপর খুনির বদনাম। জীবনটাই বরবাদ হয়ে যাবে তোর। তার চেয়ে বরং ডিভোর্স দিয়ে দে। নিজে ভালো রোজগার করিস। তোর মত মেয়ের আবার বরের অভাব?
কদম চোখ বড়-বড় করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কেন? আমি ছাড়ব কেন? আমার জিনিস আমি তাকে ছেড়ে দেব? বারে! মজা না? কদমকে অত ভালো মানুষ পাও নি। এর এসপার-ওসপার দেখে তবে ছাড়ব। আমার নামও কদম!!
চলে গেল কদম মুখখানা হাঁড়িপানা করে। আমি ভাবতে লাগলাম, এ ঘটনা তো অহরহ সর্বত্রই ঘটে চলেছে। গাছেরটাও খাব এবং তলারটাও কুড়োব, এই নিয়েই তো পুরুষ মানুষের পৌরুষ। ঘরোয়া পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোককে লোকে মেনিমুখো বলে। মেয়েরা নাকি সেই সব পুরুষের ওপর ভীষণ অত্যাচার করে। অন্যদিকে একটু উড়ু-উড়ু পুরুষ মানুষকে বেশ তোয়াজে রাখে বৌ। এ সবই অবশ্য আমার শোনা কথা। কে জানে সত্যি-মিথ্যে!! আমার নিজের কর্তাটি তো বেশ নেটি-পেটি দেখান; অবশ্য ঘরে যতক্ষণ। বাইরে কি করে, কে জানে!!
দুটো দিন খুব ভয়ে ভয়ে রইলুম। কি জানি, কি করতে কি করে বসে মেয়েটা। যা রাগ দেখলুম সেদিন। এদিকে ওর কাজগুলোও আমাকেই করে নিতে হচ্ছে। কর্তা অবশ্য সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু তাতে কাজের থেকে অকাজই হচ্ছে বেশি। কাজ বাড়ছে বৈ কমছে না। তাই যা পারছি নিজেই করছি। একবেলা ঝোল-ভাত। একবেলা দোকান থেকে রুটি তড়কা আনিয়ে নিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি কোন রকমে। ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় কদম এলো। সেই আগের মতোই হাসি মুখ। গুনগুন করতে করতে ঝাঁটা তুলে নিল হাতে। পাঁচদিনের জমে থাকা ঝুল-ময়লা সাফ করতে-করতে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিয়ে এলুম বৌদি...
কাকে রে?
কাকে আবার? মাগীটাকে। একেবারে মৌরুষিপাট্টা গেড়ে বসেছিল। গিয়ে সোজা বললুম, বেরো। আইবুড়ো, একলা কোনও ছেলে দেখে ঘাড়ে চাপগে যা। এদিকে ফের তাকালে খুন করে ফেলব, মনে থাকে যেন।
তারপর?
তারপর মিস্তিরিকে বললুম, ঢের হয়েছে... পাওনা-গণ্ডা কোথায় কি আছে আদায় করে নাও। আমার সঙ্গে দেশে যাবে। খুঁটোয় বাঁধা হয়ে থাকবে। পুরুষ মানুষ, হাতের কাজ জানলে আবার ভাতের অভাব?
কদম যেন আগের থেকেও বেশি চটপট কাজ সারছে। মুখে যেন আগের চেয়েও বেশি ঝলমল করছে খুশি।
বাসন মাজছিল কদম গুনগুন করতে-করতে। আমি পিছনে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখছিলুম আর ভাবছিলাম। আমাদের ভদ্রলোকের ঘরে হলে ডিভোর্স তো হতোই। তার আগে কত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। কত অর্থনাশ। আর প্রাণান্ত অবস্থা হতো বাচ্ছাগুলোর। তবু থাকতে পারলাম না। বললুম, হ্যাঁ রে কদম, ঐ চরিত্রহীন বরকে নিয়ে ঘর করতে ঘেন্না হয় না তোর?
- হয় তো। হয় না আবার? যখন রাগ মাথায় চড়ে যায় দিয়ে দিই ধুয়ে... দু-চারঘা বসিয়েও দিই কখনো-সখনো...
বললাম, আমরা হলে বাপু পারতাম না...
হেসে কদম বলল, কি করব বলো বৌদি! নিজেরই তো জিনিস। কোথায় ফেলব? ঘরে ঝুল ময়লা হলে তুমি কি করো? ঘর বদলে অন্য ঘর ভাড়া করো, না ঝাঁটা বাগিয়ে ঝুল ঝেড়ে ঘর সাফ করে নাও? তারপর ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ঘর তবু বদলে নেয়া যায়। বর কি বদলে নেয়া যায় বৌদি? ভালবাসার জিনিস যে...
( সমাপ্ত )
Next Bangla Story
List of all Bengali Stories
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717