সুখ স্মৃতি, online bangla story, bangla story competition, স্বরচিত ছোট গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

List of all Bengali Stories

◕ সুখ স্মৃতি

লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, বাবা - হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতা ( ৬০০ শব্দের) নভেম্বর-২০২৩ এর একটি নির্বাচিত গল্প

##
সুখ স্মৃতি

লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, বাবা - হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ

#
নভেম্বর মাসের শেষ হয়ে এসেছে, হালকা-হালকা ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করছে। শুষ্ক পাতা ঝরতে শুরু করেছে। সঙ্গে ব‌ইতে শুরু করেছে উত্তরে হাওয়া। প্রণববাবু ভোর হ‌ওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বিছানা থেকে উঠে পড়ছেন, ও নিজের গলায় মাফলার জড়িয়ে ধীর পায়ে খুক খুক করে কাশতে কাশতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রণববাবু বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। ছোট বেলা থেকে মাঠে কাজ করে দিন কেটেছে ওনার। ভোরের আলো ফোটার আগেই ছুটে যেতেন ধানের ক্ষেতে; এইসময় ধানের ক্ষেতে গিয়ে শিশির-মাখা ধান গাছে হাত বুলিয়ে যে পরম শান্তি, তা প্রণববাবুকে এখনও টানে, কিন্তু মন চাইলে কী... সব সময় সবকিছু করা সম্ভব হয় না। কারণ এই বয়সে শরীর আর পারে না।

প্রণববাবুর বয়স আশি ছুঁই ছুঁই, কিন্তু মনে বড়োই ইচ্ছে করে এই শেষ বয়সে সেই জোয়ান বয়সের আনন্দ ফিরে পেতে। আগে ভোরের আলো ফোটার আগে কোমরে গামছা বেঁধে পাকে ধানের ক্ষেতে নেমে পড়তো সোনার ফসল কেটে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য। এ ফসল যে সোনার চেয়ে দামী, সোনা কী আর খিদে মেটাতে পারে!! একজন চাষির কাছে এই সোনালি ফসল এক বড়ো সাফল্য এবং মাঠ থেকে তা বাড়ি নিয়ে আসাও বিশাল আনন্দের। এর থেকে বড়ো কোনও শান্তির জায়গা একজন চাষির জীবনে আর কোথায়...

সোনালী ভরা ধানের ক্ষেত বারে বারে প্রণববাবুকে ডাকলেও কিন্তু শরীর আর জোর নেই। শরীর সায় না দিলেও পুরোনো স্মৃতি তাকে টানছে। প্রণববাবু লাঠি হাতে ধীর পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলেছেন ক্ষেতের দিকে। ক্ষেতের সামনে এসে তিনি দাঁড়ালেন। একে-একে মনে পড়ে গেল বজ্র-বিদ্যুৎ, কখনো প্রখর সূর্যকে মাথায় নিয়ে সেই চাষ করা, পরে সেই সোনালী ফসল নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা। মাথা থেকে ঘাম ঝড়তে থাকলেও মুখে থাকত হাসির রেখা। মনে পড়ে যায়, ধান ক্ষেতের পাশে বসে কাজের ফাঁকে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে-দিতে ধোঁয়া ছুটানো গরম চা-তে চুমুক দেওয়া, পেঁয়াজ-লঙ্কা আর বেগুন ভর্তা দিয়ে পান্তা খাওয়া...সোনালী ফসলকে মাথায় করে বয়ে নিয়ে আসা... আর ধান নিয়ে যাওয়ার পর যখন ক্ষেত ফাঁকা হয়ে যেত তখন ফাঁকা ক্ষেতকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসত, বসুমাতা তুমি কেঁদো না... আবার আসবো তোমার বুকে সোনালী ফসল ফলাতে।

কিন্তু প্রণববাবু সেইবার বসুমাতাকে কথা দিয়ে এলেও আর যাওয়া হয় নি। আর এখন এই বয়সে প্রণববাবুর কর্মক্ষেত্র এবং সেখানে কাটানো উনার স্মৃতিগুলো উনাকে মনে করিয়ে দেয়, তুমি এক-সময় এখানে তোমার দিনগুলি কাটিয়েছিলে... কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেও কতই না সুখের না ছিল সেই দিনগুলি!!

আর এই সুখ স্মৃতির খোঁজে প্রণববাবু বারে বারে ছুটে আসেন এখানে, এই ক্ষেত্রের পাশে। তাই আজ‌ও এসেছেন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শিশিরে মাখা এই ধান ক্ষেতের পাশে, নিজের সুখ স্মৃতিগুলো মনে করতে।
( সমাপ্ত )

সুখ স্মৃতি

Online bangla Story