ফেরা, online bangla story, bangla story competition, স্বরচিত ছোট গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

List of all Bengali Stories

◕ ফেরা

লেখিকা - কাশফিয়া নাহিয়ান, বাবা - মোঃ ফেরদৌস, মা - নার্গিস আহমেদ, ধানমন্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতা ( ৬০০ শব্দের) নভেম্বর-২০২৩ এর একটি নির্বাচিত গল্প

##
ফেরা

লেখিকা - কাশফিয়া নাহিয়ান, বাবা - মোঃ ফেরদৌস, মা - নার্গিস আহমেদ, ধানমন্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ

#
- এই যে শুনছেন...এই বাস তেঁতুলিয়া যাবে তো?

- হ..যাইবো...আফনে কি সত্যই এই বাসে উডবেন...

- হ্যাঁ... অবশ্যই উঠবো... সারারাত ধরে কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো... আজব কথা বলেন তো আপনি...

- না...মাইনে...

হেলপারকে একরকম ধাক্কা দিয়ে বাসে উঠে পড়ে অনিক; সিটে বসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আজ তো ভেবেছিলো কোনোভাবেই বাড়ি যেতে পারবে না... ওদিকে মা বলে দিয়েছে আজকেই রওয়ানা দিতে, কারণ, দুই দিন পর দুর্গা পূজা...বাড়ি ফিরতেই হবে...

- এই-হানে মোবাইলে টাওয়ার পাওয়া যায় না... মোবাইল দিয়া কল কইরা লাভ নাই...

হেলপারের কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেলো অনিকের। আসলেই মোবাইলে কোনও সিগন্যাল নেই। মাকে ফোন করে বলতেও পারলো না যে, সে বাড়িতে আসছে।

বাসের সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এত রাতে তাই তো হওয়ার কথা! হঠাৎ খেয়াল করলো তার পাশের সিটে একটি মেয়ে..সেও ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তার চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে, এজন্য চেহারা ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। অনিকও ঘুমাবার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুতেই তার ঘুম আসছে না...

- অ...নি...ক...

চমকে গেলো সে — আরে!!এ তো রাহা...

রাহা তার পাশের সিটে বসে আছে অথচ অনিক বুঝতেও পারেনি...

- রাহা তুমি...

- হ্যাঁ আমি...বাড়ি যাচ্ছো বুঝি...

- হ্যাঁ... কতদিন পর তোমাকে দেখলাম রাহা...

- আমাকে তোমার মনে আছে?

- এভাবে কেন বলছো? তোমাকে আমি কখনও ভুলিনি...ভুলতে পারি না...

- তাহলে সেদিন কেন আসো নি?

- আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি এসেছিলাম, তোমাকে আর পাইনি। তোমার বাসায় গিয়েছিলাম। হাজারো-বার তোমাকে ফোন করেছি, কিন্তু তোমার কোনও খবর পাইনি...

- তুমি এতদিন কোথায় ছিলে রাহা?

- আমি তো সেই কবে... আমার কথা বাদ দাও... তুমি এখন কি করছো? বিয়ে করেছো?

- এ কথা তুমি বলতে পারলে রাহা? দুজনে মিলে কত স্বপ্ন দেখেছিলাম... আমাদের একটি বাড়ি হবে...সবাই তো সংসার করে, কিন্তু আমরা ঘর করবো...কতই না সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো...কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর খেলায় সব ওলটপালট হয়ে গেলো...

অনিক খেয়াল করলো রাহা কেমন যেন বিমর্ষ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রাহা আর আগের মত নেই। তার রাহা তো ছিলো সাগরের মত উত্তাল, দুরন্তপনায় মাতিয়ে রাখতো চারপাশ। তার চোখে কেমন যেন এক শূন্যতা, যে শূন্যতা অনিককে ভেতর থেকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। তার নির্লিপ্ত মনোভাব, তার ঠাণ্ডা দৃষ্টি দেখে কেমন যেন গা ছমছম করতে লাগলো অনিকের। অনিক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্চর্য!! এমন তো হওয়ার কথা নয়...

- ভাই...এখন কয়টা বাজে? অনেকক্ষণ ধরেই তো বাস চলছে...কখন পৌঁছাবো একটু বলবেন কি?

হেলপার কিছুই বললো না... শুধু হাসতে লাগলো।

- এই যে ড্রাইভার...আর কতক্ষণ লাগবে...

ড্রাইভার যেন কোনও কথাই শুনলো না।

- তুমি চিন্তা করো না ...আমরা ঠিক পৌঁছে যাবো... অনিকের হাত ধরে বললো রাহা।

- তোমার হাত এত ঠাণ্ডা কেন?

রাহা কিছু বললো না। অনিকের সন্দেহ হলো যে, এই বাসে কোনও না কোনও গণ্ডগোল আছে...

- ড্রাইভার বাস থামান...আমি এখানেই নামবো...

- এই বাস তো থামবো না...পিলে চমকানো হাসি দিয়ে বললো হেলপার।

থামবে না মানে!! কেন থামবে না?

- এই বাস থামবে না অনিক...আমরা তো অনেক দূর যাচ্ছি... অনেক দূর...

- কি বলছো রাহা?

- এটা মৃত মানুষের বাস। এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই...

- মানে!!!

- কতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আমি...শেষ পর্যন্ত তুমি এলে...যেদিন তোমার আশার কথা ছিলো সেই দিনই তো অ্যাকসিডেন্টে আমি...

- না...না...এ হতে পারে না...

অনিক দেখলো বাসের সব যাত্রীর কদাকার চেহারা...লাল লাল চোখ...

এ সব আমার কল্পনা... চিৎকার করতে লাগলো অনিক...

#
কিছুদিন পর...

এই বাস তেঁতুলিয়া যাবে তো?

হ...যাইবো...

আফনে কি সত্যই এই বাসে উডবেন?

হ্যাঁ...

বাসে উঠে বসলো রায়ান। বাস চলতে লাগলো নিজস্ব গতিতে। রায়ান জানে না তার সাথে কি হতে যাচ্ছে...সে পাড়ি দিচ্ছে এক অজানা গন্তব্যের দিকে...রায়ানের পক্ষে আর কখনই সম্ভব হবে না তার বাড়িতে ফেরা।
( সমাপ্ত )

ফেরা

Online bangla Story