Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

টর্চ

Online bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

টর্চ

লেখক: কুন্তল কুমার দে, বাবা: কাঞ্চন কুমার দে, হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ

##
হঠাৎ শম্ভু-বাবু দেখলেন তার টর্চের আলোটা নিভু নিভু হয়ে আসছে। "উফ মহা সমস্যা," মনে-মনে তিনি বললেন, "আর কিছুক্ষণ আমার বাড়ি অবধি নিয়ে চল... আমি তোকে ফুল চন্দন দিয়ে পুজো দেবো ভাই। আপাতত এখন আর জ্বালাস না।" বাড়ির কাছাকাছি আসতেই টর্চটা নিভে গেল। একদিকে যেমন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন অন্যদিকে দুশ্চিন্তা হল এই নিয়ে তিনবার হল। টর্চটার এবার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

শম্ভু-বাবু হলেন একজন 'ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার' কর্মচারী এবং মোটামুটি ভালো কাজ করেন। মাস গেলে যে মাইনে পাওয়া যায় তাতে তার একার সংসার দিব্যি চলে যায়। তবে যে মেস-বাড়িতে তিনি থাকেন তা একেবারে মাঠের শেষ প্রান্তে। কোনদিনও তার বড় বাড়ি কেনার শখ জাগেনি। তার সহকর্মীরাও তাকে বলে, "আরে এত ভালো চাকরি-বাকরি করছো, তাহলে একটা বাড়ি বানিয়ে নাও বড়..."

শম্ভু-বাবু উত্তরে বলেন, "না ভাইসব... আমি যেখানে থাকার সেখানেই ভালো আছি আর অত বড় বাড়ি বানিয়ে সামলানো পোষাবে না আমার।" অগত্যা এর বেশি আর কোনও কথা বলা চলে না। তবে এখন তার টর্চ খারাপ হওয়ার দরুন তার সেই কথাগুলো মনে পড়তে লাগলো; মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার একটি নতুন টর্চ কিনতেই হবে। বড় বাড়ি কেনার ইচ্ছে না থাকলেও টর্চ কিনতেই হবে, কারণ স্মার্ট-ফোন থাকলেও তাতে ফ্ল্যাশলাইট-টা তার পোষায় না। সুতরাং ছুটির দিন অর্থাৎ রবিবার তিনি বড়-বাজারে টর্চ কিনতে গেলেন। বেছে-বুছে অনেক দেখে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা টর্চের দোকানে ঢুকলেন। দোকানে ঢুকে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে গেলেন তারপর ভাবলেন, "ঢুকলাম কোথায় রে বাবা?"

দোকানটাকে দোকান না বলে মিউজিয়াম বলা ভালো, কারণ এত টর্চের সম্ভার বোধহয় আর কোথাও পাওয়া যাবে না। শম্ভু-বাবু টর্চ দেখছিলেন হঠাৎ পেছন থেকে কে তাকে ডেকে উঠলেন, "আপনার কোনও টর্চ লাগবে দাদা?" শম্ভু-বাবু পিছনে ফিরে দেখলেন, এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক তার দিকে চেয়ে আছে; পুরু কালো ফ্রেমের চশমা চোখে, গায়ে সিল্কের জামা, পরনে ধুতি। শম্ভু-বাবু বললেন, "একটা টর্চ কিনতে এসেছি... ভালো দেখে একটা টর্চ দেবেন তো, যেটা অনেক দূর অবধি আলো ছড়ায়।"

ভদ্রলোক বললেন, "নিশ্চয়ই!!" বলে একটি টর্চ দিলেন। টর্চটা পুরনো দিনের ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরি এবং দেখতে সুন্দর আর শুধু তাই নয়, পুরো জিনিসটা চকচক করছে ; কোম্পানির নাম এবিডি। তবে শম্ভু-বাবু টর্চটার কার্যক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। ভদ্রলোক তার মনের কথা আন্দাজ করে বললেন, "আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কতটা কি কাজ করছে টর্চটা।" বলে ভদ্রলোক দোকান ঘরে সুইচ টিপে আলো বন্ধ করে দিলেন আর শম্ভু-বাবু টর্চটা জ্বালালেন; দেখলেন ঘরে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত দেখা যাচ্ছে। "বাহ ভালোই জ্বলছে টর্চটা এবং ভালো কোয়ালিটির জিনিস..." মনে মনে বললেন শম্ভু-বাবু। আবার ঘরে আলো জ্বলে উঠল এবং মালিক জিজ্ঞেস করল,"কেমন লাগলো দাদা?"

"খুব ভালো লাগলো। কত দাম?"

দাম মিটিয়ে চলে আসার পর শম্ভু-বাবু মনে মনে আনন্দিত হলেন‌। যাক একটি ভালো পুরনো আমলের টর্চ পাওয়া গেল, তবে এটা সার্চ-লাইটের মত দূর অব্ধি আলো দেয়। যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল এবার টর্চ নিয়ে।

প্রথম কয়েক দিন বেশ ভালো কাটলো আর অফিসে তার টর্চ দেখে সবাই প্রশংসা করতে লাগলো; পুরনো দিনের বলে আরও বেশি করে আগ্রহ দেখাতে লাগলো সবাই। কিন্তু সপ্তাহান্তে একদিন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন টর্চটা নিয়ে; যেহেতু অন্ধকার জায়গায় তিনি টর্চ জ্বালিয়ে চলছিলেন এবং আলো দূর অব্ধি যাচ্ছিল, হঠাৎ টর্চের আলোটা কমতে আরম্ভ করল; কমতে-কমতে একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। শম্ভু-বাবু ভাবলেন,"যা বাবা... ব্যাটারী এতদিন ঠিক ছিল আজ হঠাৎ কি হল?" ভাবতে ভাবতেই আবার আলো জ্বলে উঠলো, কিন্তু উনি এবার একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। তিনি দেখলেন টর্চ থেকে আলো বেরোচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সাথে কিছু দৃশ্য যেন দেখা যাচ্ছে এবং ঐ দৃশ্যের উপর শম্ভু-বাবু কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই; সিনেমা হলে প্রজেক্টরের আলো ফেলে যেমন দেখানো হয় সেরকম ব্যাপার । কিন্তু তফাৎ একটিই, এখানে পিছনে পর্দার কোনও ব্যাপার নেই।

তিনি দেখলেন একটা লোক দূর থেকে আসছেন, তার হাতেও একটা টর্চ কাছে। কাছে আসতেই শম্ভু-বাবু চমকে উঠলেন, কারণ লোকটার হাতেও সেই একই ধরনের টর্চ। লোকটির সামনে হঠাৎ অপর একজন লোক এসে দাঁড়ালে কিছুক্ষণ উত্তেজিত কথাবার্তা চলল তাদের মধ্যে। তবে ঐ কথাবার্তার কিছুই শুনতে পাওয়া গেল না আর কারোর মুখও দেখা গেল না। হঠাৎ দেখা গেল টর্চ হাতে থাকা লোকটার মাথায় একটি সজোরে আঘাত করলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা আর চারিদিক রক্তাক্ত হয়ে গেল।

অন্ধকারে তা দেখে ক্ষণিকের জন্য শম্ভু-বাবু সম্বিত হারিয়ে ফেললেন, যখন আবার সম্বিত ফিরে পেলেন, ভাবলেন, "এসব যা দেখলাম সব কি সত্যিই?" তিনি টর্চ জ্বালাতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তার গায়ে জোর কমে গেছে, পা টলমল করছে। কোনও-মতে বাড়ি ফিরে এলেন।

পরের কয়েকদিন কোনরকম উপদ্রব হয়নি। ভাবলেন, "দূর কি দেখতে কি দেখেছি, মনের ভুল তো বটেই, তাছাড়া আগের সপ্তাহে কাজের অনেক চাপ গেছে তাই এসব আজগুবি ব্যাপার চোখের সামনে রাত-দুপুরে দেখতে পাই; আর কিছু না।" তবে তার এই ধারণা যে ভ্রান্ত ছিল তা কয়েক দিন বাদে টের পেলেন। একদিন বাড়িতে হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল; স্বাভাবিকভাবে টর্চ জ্বেলে তিনি মোমবাতিটা খুঁজতে গেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে টর্চটি বন্ধ হয়ে আবার চালু হতেই সেই রাতের স্মৃতি ফিরে এলো এবং এবারও সেই একই দৃশ্য; একি ধরনের শ্রুতিগোচর-হীন কথাবার্তা। কিন্তু এবারে একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন যে, কোনও এক পুরনো ঘটনার গল্প ছায়াছবি হিসেবে দেখাচ্ছে তারপর সেই ঘটনা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আবার কারেন্ট চলে এলো। টর্চ পরীক্ষা করে দেখা গেল সেটা একদম ঠিক আছে। এবার শম্ভু-বাবু ভাবলেন, "দুটো ঘটনা বারবার একই রকম ভাবে হলে সেটা কি মনের ভুল বলা যায়? এবারে তো বাড়িতেই হল ব্যাপারটা।" মনে মনে ভাবলেন এই টর্চের ইতিহাস সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হবে। সেই মত পরের রবিবার বড়বাজার দোকানের গেলেন, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, দোকানটা আর খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। যেদিন প্রথম দোকানটায় এসেছিলেন তার উল্টোদিকে একটি চায়ের দোকান খোলা ছিল; আজও সেটা খোলা আছে। শম্ভু-বাবু সেখানে গিয়ে চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা দাদা, বলছি কি ,আপনার উল্টোদিকের দোকানটা কখন খুলবে?"

চায়ের দোকানদার যেন আকাশ থেকে পড়ল, "দোকান, কোথায় দোকান? তা দোকান একখানা ছিল বটে, কিন্তু সে তো আমার বাপ ঠাকুরদাদার আমলের কথা।" শম্ভু-বাবু অধৈর্য হয়ে বললেন, "কি যা তা বলছেন... এই তো সেদিন..."

চায়ের দোকানদার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল," ওরকম অনেকেই এই ঘটনা দেখেছে... তাহলে আপনাকে খুলে ঘটনাটা বলি শুনুন... তখন ইংরেজি আমল। এই চত্বরে তখন 'বড়াল টর্চ সেন্টার' নামে একমাত্র টর্চের দোকান ছিল যার মালিকের নাম সুখেন্দু বড়াল এবং তিনি দোকান একাই সামলাতেন। তার এক ভাই ছিল, তার নাম সুমন বড়াল। সুমন ছিল তার দাদার একেবারে উল্টো, লম্পট, দুশ্চরিত্র, মাতাল আর সমাজের অন্ধকার জগতে মানুষের সাথে তার মেলামেশা ছিল। ফলে তার দাদা তাকে কিছুতেই দোকানের দায়িত্ব দিতে রাজি হয় না। ক্রমে দুই ভাইয়ের মত বিরোধ প্রায় হাতাহাতি পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এর কয়েকদিন বাদে সুখেন্দু বাবু অন্ধকার মাঠে দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে তাকে সামনে থেকে মাথায় রড মেরে খুন করা হয়। সবাই নিশ্চিত ছিল খুনটা ওর ভাই করিয়েছে। পুলিশ-তদন্ত হলো বটে, কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে গেল ওর ভাই সুমন। তারপর সুমন কোনও-না কোনও ভাবে ভাইয়ের দোকান হাতিয়ে নেয়। কিন্তু দোকানের অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে থাকে আর একদিন সুমন হঠাৎ রহস্যজনক-ভাবে মারা যায়। তার মৃতদেহের মাথার সামনের দিকে ছিল একটি গভীর ক্ষত, ঠিক যেমনটা তার দাদার হয়েছিল। দোকানের অবস্থা খুব খারাপ হল, তার উপর দুটি অকাল মৃত্যুর ফলে কর্মচারীদের সব কাজ ছেড়ে পালালো। দোকান সামলানোর কেউ ছিল না ফলের দোকানটা একেবারে ভেঙে পড়ল। দেখছেন তো ভাঙা-চোরা ঘর উল্টোদিকে, তবে মাঝেমধ্যে রাতে যারা এখানে টর্চ কিনতে আসে দোকানটা দেখে। যারা ঐ দোকান থেকে টর্চ কিনে নিয়ে যায় তারা একটা ঘটনা অলৌকিকভাবে সিনেমার মতো দেখতে পায় যে, অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা যেখানে দোকান-মালিক তার ভাইয়ের হাতে খুন হচ্ছে। তার হাতে থাকে তার দাদার এবিডি কোম্পানির স্টিলের বডির টর্চ। ক্রেতারা সকালে এসে দোকানের কাছে যায়, তখন কোথায় কি? সব ভগ্ন দশা অবস্থা; আর তারা যে টর্চ থেকে ঘটনাগুলো দেখে সেটাকে আর খুঁজেও পায় না..." এই বলে থামল চা ওয়ালা।

শম্ভু-বাবু বললেন, "আশ্চর্য বিষয়..." মনে মনে বললেন, "আমাকে বোকা বানিয়ে বেশ দিব্বি পয়সার চা খাইয়ে কামিয়ে নিল। তবে ঘটনা গুলো একটু হলেও মিল আছে..." এই ভেবে কিছু দূর আসার পর হঠাৎ মনে হলে, "একবার টর্চটা দেখি..." এই ভেবে ব্যাগ খুলে যেই বার করতে গেলেন অমনি দেখলেন টর্চটা নেই, " আশ্চর্য গেল কোথায়? বাড়িতে ফেলে এলাম নাকি ভুল করে?" তৎক্ষণাৎ সেদিন বাড়িতে ফিরলেন, কিন্তু সেখানেও নেই; তাহলে গেল কোথায়? তাহলে কি সেই চা ওয়ালাটা ওটা হাতিয়ে নিল? না সেটা তো হবার নয়; নিজের কাছ থেকে তো তিনি সেটা কাছ-ছাড়া করেনি... তাহলে কি চা-ওয়ালার বলা ঘটনাটা কি?

এইবার তিনি টের পেলেন তার পিঠে শিরদাঁড়া বরাবর ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
( সমাপ্ত )


Next bangla story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717