Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

দু নৌকায় পা ( পর্ব ২ )

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    113    (114)     115   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



দু নৌকায় পা ( পর্ব ২ )
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখক - সমরেশ মুখার্জী, মনিপাল, কর্ণাটক, ভারত


18 th July, 2021

## দু নৌকায় পা

পর্ব ২

আগের পর্বঃ পর্ব ১

# পর্ব ২
-তিনিবাবু রোজ দশ কিমি ট্রেনে এসে প্রায় দু কিমি হেঁটে কলেজ যান। তখনও কলেজ প্রায় দেড়-কিমি দুরে। পকেটে বেশী পয়সাও নেই। তাই উনি ভাবলেন উল্টো‌দিকে ফুটপাতের দোকান থেকে আজকের জন্য একটা হাওয়াই চটি কিনে নেবেন। কিন্তু সেদিকে এগোতেই দোকানী বলে, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

-সত‍্যি ভারি অদ্ভুত আপনার তিনিবাবু। পকেটে পয়সা কম, ট্রেনে, হেঁটে কলেজে আসেন অথচ পড়ে আছেন ধোপদুরস্ত কোট-প্যান্ট। তো তিনিবাবুর হাওয়াই চটি কেনার প্ল‍্যান শুনে দোকানী কী বললো?

-সে বলে, না, না, অমন নীলচে কোট-প‍্যান্টের সাথে লাল হাওয়াই চটি মোটেও মানায় না। ওর কাছে তো সবই লাল চটি। তাছাড়া পদত্রাণ‌ তো কেবল পায়ের প্রয়োজনে নয়, পোশাকের সাথেও তো মানানসই‌ হওয়া চাই।

-পদত্রাণ!

-মানে পাদুকা আর কী, যা পদযুগলকে রাস্তার বিপদ থেকে ত্রাণ বা রক্ষা করে।

-বাব্বাঃ, জুতোর এমন শুদ্ধ প্রতিশব্দ জানলো কী করে আপনার গল্পের বাতাসা ময়রা? এতো আমিও জানতাম না।

-হয়তো শুনেছে কারুর কাছে। সবাই কী সবকিছু লেখাপড়া করে জানে? তবে আবারও বলছি, বারবার গল্প-গল্প করবেন না, এটা ঘটনা।

-ও হ‍্যাঁ, তাও তো বটে, এটা তো আবার ঘটনা। তো তার‌পর কী হল আপনার ঘটনার?

-তিনিবাবু হতাশ ভঙ্গিতে বলেন, তাহলে আর আজ আমার কলেজ যাওয়া হল না। বাড়িই চলে যাই। জুতো কেনার তো পয়সা নেই। তাই শুনে দোকানী বলে, তা কেন? ঐ দেখুন আমার দোকানে‌র কোনের তাকে কয়েক জোড়া পদত্রাণ রাখা আছে। দেখুন কোনও একটা আপনার হয় কিনা।

-যে মিষ্টির দোকানীর মিষ্টি বিক্রি হয় না, বাতাসা বানিয়ে পেট চলে, সে দোকানে কয়েক জোড়া জুতো রেখে দিয়ে‌ছে আপনার তিনিবাবুর মতো কিম্ভূত লোক মনের ভুলে কখনো খালি পায়ে কলেজে চলে আসবে বলে? এমন উদ্ভট গল্প, যা আপনি বলছেন ঘটনা, আমায় বিশ্বাস ক‍রতে বলেন?

-সে আপনার মর্জি। তবে আপনার পক্ষে যা বিশ্বাসযোগ‍্য তাই কেবল ঘটনা আর অবিশ্বাস্য লাগলে‌ই গল্প, এমনটা তো নাও হতে পারে। তো শুনুন না, যা বলছিলাম। জুতোর তাকে ছিল কয়েক জোড়া জুতো। ছেলেদেরই বেশী। মেয়েদের মাত্র দু জোড়া। তিনিবাবুর পায়ে এক জোড়া হল। হান্টারের মতো, পুরু সোল, উঁচু কানা, অনেক ফিতে বাঁধা‌র ফুটো। কিন্তু রঙটা সাদা। মোজা নেই। দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে তাড়াহুড়ো‌ তো তিনিবাবু ডান পাটা এক পাটিতে ঢুকিয়ে ওপর থেকে নীচে ফিতে বেঁধে বাঁ পাটা অন্য পাটিতে ঢোকাতে যাচ্ছেন, এমন সময় দোকানী বলে, একটু দাঁড়ান।

-আবার কী হল?

-তিনিবাবুও সেই একই প্রশ্ন করেন। দোকানী বলে, কতদিন খোলা পড়ে আছে তাকে, আপনি না দেখেই পা ঢুকিয়ে দিলেন? আরশোলা, মাকড়সা থাকতে পারে ভেতরে। উল্টো করে ঝেড়ে নিন। তিনিবাবু বাঁ জুতোটা উল্টো করে ঝাড়লেন।

-কিছু ছিল নাকি?

-হ‍্যাঁ, ঠপাস করে একটা কাঁকড়া‌বিছে মাটিতে পড়ে হেলে-দুলে চলে গেল।

-কী সর্বনাশ!

-তবে তিনিবাবু চমকালেন না। চোখ কুঁচকে খানিক কী যেন ভাবলেন। দোকানী বলে, কী হল? তিনিবাবু বলেন, ডান পায়ের কড়ে আঙ্গুলের পাশেও কী যেন একটা নরম নরম ঠেকছে। দোকানী বলে, খুলে ফেলে ঝেড়ে আবার পড়ুন। ওটার জুড়িও হতে পারে। হয়তো লীলাখেলার পর পাশেরটায় ঢুকেছে ডিম পাড়তে।

-হতেই পারে। তারপর? ওরে বাবা, শুনেই তো আমার গা শিরশির করছে।

-আপনি‌ তো বলেইছেন তিনিবাবু লোকটা কিম্ভূত প্রকৃতির। তাই উনি বলেন, না, না, কাঁকড়াবিছে হলে খরখরে হোতো। এতক্ষণে হয়তো কামড়েও দিতো। এটা হয়তো টিকটিকি-ফিকটিকি হবে। দেরী হয়ে যাচ্ছে কলেজের। এখন যাই, ফার্স্ট পিরিয়ডে‌র পর খুলে দেখবো।

-সত‍্যি অদ্ভুত মানুষ ঐ তিনিবাবু! তো দোকানী কিছু বললো না?

-শুধু বললোই না, রীতিমতো জোর করলো। সে বলে, তা হয় না, খুলে ঝেড়ে আবার পড়ুন। আমার দেওয়া পদত্রাণ পড়ে আপনার কিছু হলে আমার আফসোসের সীমা থাকবে না। দেরী হবে না। ঐ সামনের মোড় থেকে বাস পেয়ে যাবেন। পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবেন কলেজে। আবার ফিতে খুলে ডান পায়ের জুতোটা ঝাড়তে এবার টপাক করে মাটিতে পড়লো ছোট্ট একটা সবজেটে সোনাব‍্যাঙ। মুখটা ছুঁচলো। কালো চোখ। খুব মিষ্টি দেখতে। মাটিতে পড়ে তার আর লাফানোর ক্ষমতা নেই। পায়ের চাপে দমবন্ধ হয়ে কাহিল অবস্থা। ওটাকে জুতোর মধ‍্যে পায়ে চেপে তিনিবাবু এক পিরিয়ড ক্লাস করলে ওর পঞ্চত্ব-প্রাপ্তি অবধারিত ছিল।

-একটা জুতোয় কাঁকড়াবিছে অন্যটায় ব‍্যাঙ? আপনার গল্পে, থুরি, ঘটনায় অত‍্যন্ত বিচিত্র সব ঘটনার ঘনঘটা! তারপর কী হল?

-তিনিবাবু জুতো পড়ে দৌড়ে গিয়ে মোড় থেকে একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়লেন।

-যাক শেষ অবধি তাহলে তিনিবাবু‌র কলেজ যাওয়া হল।

-না:, তাও কলেজ মিস হয়ে গেলো।

-এ্যাঁ, কীভাবে? এই তো বললেন বাসে কলেজ মোটে পাঁচ মিনিটের পথ। তাহলে?

-তিনিবাবু একটা ভুল বাসে উঠে পড়েছিলেন। বললাম না, সেদিন ওনার দিনটাই গড়বড় যাচ্ছি‌ল। সে বাসে কোনও রুট নম্বর নেই। সামনে গন্তব্য লেখা বোর্ডটাও ফ‍্যাটফেটে সাদা। ও বাস সন্ধ্যার আগে কোথাও দাঁড়ায়ও না। যে রাস্তায় যায় তাতে কখনো জ‍্যামও হয় না। তাই চলতেই থাকে। কখনো রাস্তা বেশ মসৃণ। তখন বাসের গতি বেড়ে যায়। গতি‌র নিজস্ব উন্মাদনা আছে, জানেন তো? জানলা দিয়ে তখন ফুরফুরে বাতাস আসে। কোথায় যাচ্ছে না জেনেও তখন যাত্রী‌রা বেশ উৎফুল্ল বোধ করে। মাঝে-মাঝে ও রাস্তায় বেশ খানাখন্দ আছে। তখন বাস সেখান দিয়ে প্রচণ্ড নেচে-কুঁদে আস্তে-আস্তে যায়। গায়ে গতরে ব‍্যাথা হয়ে যায়। তবু বেশিরভাগ যাত্রীই বসে থাকে। ভাবে আবার মসৃণ রাস্তা আসবে। শুধু কিছু অধৈর্য যাত্রী সেই নাচন-কোঁদন সহ্য করতে না পেরে খোদলানো রাস্তায় ধীরগতিতে চলা বাস থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে। তবে রাস্তার দু'পাশেই গভীর খাদ। টাল সামলাতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে খাদে। ওখান থেকে তোলার কেউ নেই।

-যেমন আপনার তিনিবাবু তেমনি অদ্ভুত বাস তো মশাই? ওতে কন্ডাক্টর নেই?

-আছে।

-চলন্ত বাস থেকে কেউ নামতে গেলে সে বারণ করে না?

-না। বাসে সে থাকে বটে তবে তার কোনও ভূমিকা নেই। তিনিবাবুর মতো তারও কোনও নাম‌ নেই।

-নাম নেই মানে?

-নামের কী দরকার। তাকে সবাই ডাকে ভাই বলে। ও ভাই শুনছো, কোথায় যাচ্ছে এ বাস? সে চুপ। ও ভাই, এখন কোথায় এলো? সে চুপ। ও ভাই, একটু দাঁড়াবে? সে চুপ। সে ভাড়াও চায় না। কেউ উঠলে কিছু জানতে চায় না। চলন্ত বাস থেকে কেউ লাফিয়ে নামতে গেলেও বাধা দেয় না। সে কেবল চুপ করে বসে থাকে তার নির্ধারিত আসনে।

-আশ্চর্য ব‍্যাপার তো! তাহলে তার বাসে থাকার দরকার‌টাই বা কী?

-সেটাও ঐ - আপনার ভাষায় - নিছক নিয়ম। চলন্ত বাসে একজন চালক ও একজন সঞ্চালক থাকতে‌ হয়, তাই। তবে কোথায় যাচ্ছে, কোথায় এলো এসব প্রশ্ন না করে অন্য কিছু জানতে চাইলে সে জবাব দেয়।

-যেমন?

-যেমন ধরুন তিনিবাবু চলন্ত বাসে উঠে দেখেন পিছন থেকে তীব্র হর্ণ দিচ্ছে একটা প্রাইভেট কার। তারপর তিনিবাবুর সাথে কন্ডাক্টরের যা কথাবার্তা হল তা এই প্রকার:

-ও ভাই, ঐ গাড়িটা অতো হর্ণ দিচ্ছে কেন?

-হয়তো ওর তাড়া আছে।

-কিসের তাড়া?

-বাসটাকে ওভার‌টেক করার।

-ওভার‌টেক করে কোথায় যাবে?

-যেখানে এই বাসটা যাচ্ছে, রাস্তা‌ তো একটাই।

-অমন প্রাইভেট কার কী কেবল বাসকেই ওভার‌টেক করে?

-না অন্য কোনও প্রাইভেট কার বাসের থেকে জোরে গেলেও তাকে‌ও কেউ-কেউ ওভার‌টেক করতে চায়।

-কেন?

-হয়তো সে আরও দ্রুত যেতে চায়।

-এ বাসটা কোথায় যাচ্ছে?

-জানি না।

-কোথায় যাচ্ছে না জেনেই বাস চলছে?

-হ‍্যাঁ। রাস্তা তো একটাই।

-কতদূর যাবে?

-যেখানে সন্ধ‍্যা হবে সেখানেই যাত্রা শেষ।

-সেখানেই কি বাসের সবাই নেমে যাবে?

-হ‍্যাঁ।

-আমাকেও কি ওখানেই নামতে হবে?

-হ‍্যাঁ।

-ওখানেই কি রাস্তা শেষ?

-তা জানি না। তার‌পর ওদিকে কোনোদিন যায়নি বাস। রাস্তা আছে কী নেই, তা অন্ধকারে বোঝা‌ও যায় না। তবে যারা বাস থেকে নামে তাদের কাউকে টর্চ হাতে ওদিকে যেতে দেখেছি। বাকি‌রা কী করে, কোথায় যায়, জানি না।

-বাস কি ওখানেই রাতে থেকে যাবে?

-না, ফিরে আসবে।

-কোথায়?

-সকালে যেখান থেকে ছেড়েছিল সেখানে।

-সেটা কোথায়?

-জানি না।

-আমি কি তাহলে এই বাসেই আবার ফিরে আসতে পারি?

-না, এই বাসে কাউকে ফেরৎ নিয়ে আসার নিয়ম নেই।

-তাহলে আমি কী করবো?

-জানি না।

-রাতে ওখানেই থেকে সকালে ফিরে আসতে পারি?

-পারেন, তবে কোনও নিশ্চয়তা নেই।

-মানে?

-সকালে কোন বাস ছাড়ে জানি না। রোজ ছাড়ে কিনা, কখন ছাড়ে তাও আমি জানি না।

-তাহলে? আজ না হয় আমার কলেজে মিস হয়ে গেলো, কাল কী হবে?

-জানি না।

চুপ করে যান তিনিবাবু। প্রশ্ন শেষ হয়ে যায়। তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

#
চোখ থেকে চশমা‌টা খুলে, বাঁ-হাতে স্টেপল করা কয়েকটি পাতার গোছা ধরে প্রমোদ রায় কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে রইলেন সামনে সোফায় বসা সলিলের দিকে। সলিল উদগ্ৰীব হয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। ভিতু খরগোশের মতো লাগছে ওকে। একবার ঢোঁক গিললো‌। সারা শরীরে মাখা ডুবন্ত মানুষের আর্তি। একটু পরে তিনি সপ্রশংস দৃষ্টিতে মুখ সামান্য ডানদিকে ঘোরালেন পাশের সোফায় বসা সুদীপের দিকে। সহাস্যে বললেন, তোমার বন্ধু‌ তো বাজী মেরে দিল হে ভাগ্নে।
Next Part


All Bengali Stories    106    107    108    109    110    111    112    113    (114)     115   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717