All Bengali Stories
98
99
100
101
102
103
104
(105)
106
107
108
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
ভুল
লেখক - দীপ্তেশ মাজী, বাবা- শ্রী শশধর মাজী, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা
24 th June, 2021
## ভুল
ইতিহাস নিয়ে পড়ে-পড়ে আমি বলতে গেলে এক রকমের উন্মাদ হয়ে গেছি। এর সুবাদে দশ বছর একটা স্কুলে শিক্ষকতাও করেছি। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা এখন আর সেরকম ভাবে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী নয়।
খালি পেছন ঘুরলেই হাতে ফোন নিয়ে ধরা পড়তো। একবার তো এই নিয়ে বিশ্রী এক কাণ্ডও হয়ে যায়। বেশ কিছু দিন ধরে শুনছিলাম, টিফিন টাইমে নাকি ছেলে-মেয়েগুলো দরজায় ছিটকিনি আটকে কি সব করে।
দুর্ভাগ্যক্রমে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনেরাও সে সব দেখত। গান চালিয়ে নাকি নাচন-কোদনও হয়।
তো একদিন হেডমাস্টার-মশাই, ক্লাস-মনিটর এবং আরও কয়েকজন মিলে একটা ফাঁদ পাতলাম; ধরাও পড়ল। শাস্তি হল মোট পাঁচ জনের। তাদের মধ্যে রসিদ নামে এক ছেলে ছিল।
ব্যতিক্রম কেবল এই ছেলেটি। রসিদ শুরু থেকেই বলে আসছে, সে কিছুই জানে না।
আমরা তিন দফায় সিদ্ধান্ত নিলাম।
এক, ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ঠিক কাদেরকে দেখতেন?
দ্বিতীয়, ক্লাসের বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা কি বলছে এবং তৃতীয়, স্যর-ম্যাডামরা কি বলছেন?
প্রথম এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে সবাই প্রায় সমান মতামত দিয়েছে। দেখলাম যাদের নাম উঠেছে তারা যে-সে ঘরের ছেলে-পুলে নয়। কারোর বাবা সরকারের ঘরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেউ আবার পুলিশ তো কেউ আবার রাজনীতির
সাথে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে আছে।
আমরা ঠিক করলাম রসিদ নির্দোষ। ওকে বিনা দোষে পাকড়াও করা হয়েছে। বাকিদের শাস্তি দেওয়া হোক। পরের দিন ছাত্র-ছাত্রীরাও একই কথাই বলল। রসিদকে নাকি ফাঁসানো হয়েছে।
স্কুল ছেড়েছি প্রায় দশ বছর হতে চলল। বর্তমানে একটি বই প্রকাশনের সাথে আমি যুক্ত। তাছাড়া বাপ-ঠাকুরদার আমলের একটা অক্ষত হোটেল ব্যবসা ছিল। সেটাকে সম্প্রতি জাগিয়ে তুলেছি।
আমি এখনো যেহেতু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই নি, তাই যেখানে পারি ঘুরে আসি। যেখানে পারি... তোসে জঙ্গল হোক বা পাহাড়ের ঢালু ঝর্ণার মুক্ত ধারা। সবই আমার তালিকায় আছে।
মাঝে-মাঝে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পড়তে যাই। কত ধরনের বই-পত্র। তবে, স্কুলের কথা মনে হলেই কেমন জানি করে। গোলাপের পাপড়ির মত মনের শাখা-প্রশাখাগুলো শ্রাবণের ধারায় ভিজে ওঠে।
এবার হোটেল ব্যবসার কথায় আসা যাক। সম্প্রতি বকখালিতে আমরা একটি দু"কামড়ার রুম নিয়েছি। আপাতত তৃণমূল স্তরের হলেও পাকা হতে বেশিদিন সময় লাগবে না। এই প্রথম আমরা সেখানে যাচ্ছি।
আমি আর আমার প্রভুভক্ত ভৃত্য, শ্রী বাহাদুর আটা। বাহাদুর নেপালি। বয়স আন্দাজ পঞ্চাশের কাছাকাছি। গাড়ির সামনে বসেছে। বলল, "সাব-জী থোরি পেয়াস বুঝা লেতে তো আচ্ছা হোতা। "
আমি বললাম, "ড্রাইভার গাড়ি সাইড করো। আমরা একটু খাওয়া-দাওয়া করব।। "
ব্যাগ-পত্র সমস্তটাই ছিল গাড়ির পেছনে। জলের বোতল নিয়ে দোকানে ঢুকলাম। বাহাদুর খেল দশটা ইয়া বড় সাইজের কচুরি আর ছোলার ডাল। আমি খেলাম ভেজানো চিড়ে আর আধ বাটি টক দই।
দোকানদার বলল, "বাবু, বাতাসা, মুড়কি ছড়িয়ে দেব?"
বললাম, "না। " কারণ এই গরমে মিষ্টিটা আমি বিশেষ পছন্দ করি না। তাছাড়া রোদের প্রখরতা এড়াতে শুধু টক দই কাফি। খাওয়া শেষে আবার রওনা দিলাম। পৌঁছলাম প্রায় সাড়ে বারোটা।
হেনরি আইল্যান্ড থেকে মাত্র সাত মিনিটের দূরত্বে। জায়গাটাকে ডান হাতে ফেলে বাঁদিক দিয়ে সোজা সমুদ্রের বালুচর। আছে জঙ্গলও। সেখান দিয়ে অবিশ্রান্ত ঝড়ের মত হাওয়া খেলা করছে।
মাটিতে পা দিয়েই মনে হল মনের ভেতরটা কেমন জানি স্বচ্ছ হয়ে উঠল। সারা গায়ে যে জড়তা ছিল তা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। গাড়ি থেকে নেমেই আমরা রুমে গেলাম। লোক বলাই ছিল।
সমস্তটাই সাদা দুধের মত পরিষ্কার। বাহাদুর বলল, "সাব-জী, বাজার মে যাওঁ?" আমি কিছু বলার আগেই ও চলে গেল।
এখান দিয়ে সামনের ওয়াচ টাওয়ার দেখা যাচ্ছে। মনে হল যেন একটা বিশালায়তন জিরাফ। গলার নরম মাংসপেশি উন্মুক্ত করে চতুর্দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। এখানের আকাশ, মেঘ সব কেমন যেন রূপকথার বশবর্তী।
এই মাটি ফাটানো রোদ তো কখনো আবার শান্ত মেঘেদের নিরিবিলি বিচরণ তো কখনো আবার গুমরে থেকে হালকা বর্ষণ। দুপুরে খাওয়া শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারলাম না।
বসেই রইলাম। বাহাদুর বলল, "বাবু, অওর কুছ লে আওঁ!" আমি ওর দিকে তাকালাম। মুখের চারপাশে ডাল-মাখা ভাত লেগে আছে। দাঁতগুলো হলুদ। আঙুলের মাথাগুলো চেটে-চেটে ঝাঁ চকচকে করছে।
বললাম, "পান বাহাদুর, পান হলে জমে যেত। দেখো, কাছে কোথাও পানের দোকান আছে কিনা!"
আসলে, বাহাদুরের রান্নার হাত কামাল করেছে। স্নান সেরে উঠতেই পেটে কেমন ছুঁচো দৌড় শুরু হয়ে গেছে। তবে, বাজারে ভেটকি মাছ, ইলিশের মত কয়েকটা মাছ এনেছিল ও। তা দিয়েই দুপুরের আহার সারলাম।
দুপুরের দিকে, ঐ সাড়ে তিনটে থেকে টুরিস্টদের আগমন শুরু হল। জনায়-জনায় সব ঘুরতে আসছে। জায়গাটা কেমন ভরে গেল। দেখলাম, দূরের ঐ গাছপালা, সমুদ্রের নীলাভ রেখা কেমন আনন্দে লাফাতে শুরু করছে।
বাহাদুর মেঝেতেই শুয়েছিল। ওকে বললাম, "দেখো, এই আমরা হলাম বৃহত্তর খাদক। যারা অরণ্য ধ্বংস করে কি ভুলটাই না করছি। সভ্যতা বানাচ্ছি প্রকৃতির শব-ভস্মের ওপর।
আবার এই মানুষ, কচিকাঁচাদের সামনে প্রকৃতির শোভা দেখো বাহাদুর, কোনও স্বর্গলোকের চেয়ে কম নয়।"
বাহাদুর কি বুঝল, তা জানি না। খালি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। জানলা দিয়ে মাঝে-মাঝে দূরের পথটার দিকে চেয়ে থাকছে। আমিও দেখলাম, হাজারো মানুষ কেমন সুন্দর ভাবে তাদের প্রকৃত জন্মদাতার কাছে ফিরে যাচ্ছে।
দূরের আকাশ মেঘে ঢাকা। সূর্যাস্ত হতে এখনো অনেকটা সময় আছে। আমি, হাতে একটা বই নিয়ে সুদীর্ঘ বালুচরের দিকে অগ্রসর হলাম। কিছুটা যেতেই চোখে পড়ল বিচিত্র এক জিনিস।
রাস্তাটা কিছুটা গিয়েই দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মাঝে-মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ঢালু-জমির। সেখানে কি সব লাল, নীল, হলুদের সামিয়ানা। দেখলে মনে হয় লালশাক হয়ে আছে।
খাঁজে-খাঁজে হাঁটুর চেয়েও কম উচ্চতার স্রোতহীন জল জমেছে সেখানে। স্বচ্ছ জলধারায় উন্মুক্ত গগনের প্রতিচ্ছবি ধরা দিচ্ছে। অনেকে আবার সেইসব জলে নেমে মণি মুক্তা খোঁজার হাজারো চেষ্টায় ব্রত হয়েছে। কেউ ছবি তুলছে।
বিচিত্র এই স্থান পেরিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। সামনে বিশাল বালিরাশি। হাঁটলে জুতোতে বালির দানা ঢুকে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত কিছুটা গিয়ে একটা কাঠের ভাঙা অংশে বসে পড়লাম। সামনেই সমুদ্র,
শান্ত আর নিরিবিলি। আমার সারা শরীর ঘর্মাক্ত। তার ওপর নোনা হাওয়ায় খুব অস্বস্তি বোধ হতে লাগল। দক্ষিণ ভারতের মন্দির গাত্রের ইতিহাসের ওপর একটা বই পড়ছিলাম। পড়তে-পড়তে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছি।
একটু আগে মাথা তুলে দেখেছি, সমুদ্র কেমন যেন এগিয়ে এসেছে। তারপর মনে হল, পাশে যেন কে এসে দাঁড়িয়েছে!
Next Part
All Bengali Stories
98
99
100
101
102
103
104
(105)
106
107
108
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717