Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বৃত্তের কেন্দ্রে ( পর্ব ২)

বাংলা প্রেমের গল্প

All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বৃত্তের কেন্দ্রে ( পর্ব ২)
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা


14 th July, 2021

## বৃত্তের কেন্দ্রে
পর্ব ২

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১     পর্ব ২     পর্ব ৩     পর্ব ৪    

# পর্ব ২
মালাবতী প্রতাপবাবুর সুন্দরী, শিক্ষিতা স্ত্রী। ভগবান খুব যত্নে বহু সময় ব্যয়ে মালাবতীকে বানিয়েছেন। রূপ যেন তাঁর ঝরে পড়ছে। বয়স সাতাশের ঘরে। ফর্সা টুকটুকে গায়ের রঙ। মাঝারি উচ্চতা। পিঠ পর্যন্ত ঢেউখেলানো চুল। লক্ষ্মী প্রতিমার মতো মুখ। বড়-বড় টানাটানা চোখ। সর্বাঙ্গে একটা নারীসুলভ কোমলতা তাঁকে ঘিরে আছে। পরনে আটপৌরে ভঙ্গিতে লাল পাড় হলুদ গরদের শাড়িতে তাঁকে বেশ মোহময়ী লাগছে। প্রতাপবাবু অর্থের জোরে নিজের বয়স বেশি হওয়া সত্ত্বেও স্বল্প-বয়সী বউ পেয়েছেন। ভাগ্যের জোর আছে তাঁর। মালাবতীর সঙ্গে তাঁর বয়সের ফারাক নয়-নয় করে ষোল বছর তো হবেই। শোনা যায় মালাবতীর বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। প্রতাপবাবুর বাবা মালাবতীর রূপে মুগ্ধ হয়েই তাঁকে দত্ত বাড়ির বউ করে আনেন। মালাবতী সবে তখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।

রামলোচনকে দেখে মালাবতী সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নম্র ভঙ্গিতে বলল, "আসুন ঠাকুরমশাই। আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। বসুন। আপনার কাছে একটা চাইব, আপনি না করবেন না। তার জন্য অর্থকড়ি যা লাগে আমি আপনাকে দেব।"

রামলোচন একটু নিজের ওজন বাড়াতে গম্ভীর মুখে বসলেন। অর্থকড়ির কথা শুনে রামলোচনের দুটো চোখ চকচক করে উঠল। চাকর বিজু এক প্লেট সন্দেশ নিয়ে রামলোচনের সামনে রাখলো। মালাবতীর কথা শুনে রামলোচন বললেন, "আমার কাছে তোমার কি চাওয়ার আছে! ঈশ্বর তো তোমাকে সবই ঢেলে দিয়েছেন, কিছুর অভাব রাখেননি," বাক্য শেষ করে তিনি প্লেট থেকে সন্দেশ তুলে কামড় দিলেন।

মালাবতী বললেন, "আপনি আমার বাবার মতো। আপনাকে সবটা খুলেই বলি। নাম-যশ অর্থ প্রতিপত্তি এসব আমার স্বামী-ভাগ্যে হয়েছে ঠিকই। সত্যিই ভগবান এসব আমাকে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছেন। অভাব- অভিযোগ আমার বৈষয়িক কোনও জিনিসে নেই।"

রামলোচন বললেন, "তাহলে আপনার কিসের চিন্তা! মানুষের খাওয়া-পড়ার চিন্তা এ পৃথিবীতে মস্ত বড় চিন্তা।"

মালাবতী একটু ঢোক গিলে বললেন, "ঠাকুরমশাই, আমার চিন্তা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই বিশাল বাড়িতে দুটো প্রাণী। এত বড় সম্পত্তি। এত অর্থকড়ি। আমরা দুজন মরে গেলে এসব কে দেখবে? আমাদের এগারো বছরের বিবাহিত জীবনে বহু ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও আজও সন্তান-সুখ হলো না। আদৌ ভগবান সে সুখ দেবেন কিনা তাও জানি না। অনেকের মুখে শুনেছি যে আপনি নাকি ভূত-ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। আমি আপনাকে আগেই এই সমস্যা জানাতাম। কিন্তু আমার স্বামী একেবারে এসব বিশ্বাস করেন না। তাই ইচ্ছা থাকলেও সাহস করে আপনাকে বলতে পারি নি। উনি এখন বাড়িতে নেই বলে আপনাকে ডাকতে পেরেছি।"

রামলোচন তাঁর দুই ভ্রু কুঞ্চিত করে মনের কুটিল চিন্তাকে আহ্বান জানিয়ে বললেন, "দেখি তোমার হাতখানা। তোমার অল্প বয়সে এসব চিন্তা করো না। ঈশ্বর ঠিক সন্তান-সুখ দেবেন।"

মালাবতী তাঁর বাঁ হাত রামলোচনের দিকে প্রসারিত করলেন। রামলোচন ভাবলেন যে এই সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। মেয়েমানুষের মন নরম। এই মনটাকেই রামলোচনকে কাজে লাগাতে হবে। মালাবতীর কোমল হাত অনেকক্ষণ ধরে নেড়েচেড়ে চিন্তান্বিত মুখে গম্ভীর গলায় বললেন, "এতো মারাত্মক ব্যাপার। তুমি আমার মেয়ের মতো। মা, আমি তোমাকে কোনও খারাপ বলতে পারব না। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি এখন আসি," চলে যাবার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রামলোচন সোফা ছেড়ে উঠতে উদ্যত হলেন।

রামলোচনের কথা শুনে মালাবতী কৌতূহল নিবৃত্ত করতে পারলেন না। তিনি রামলোচনকে বললেন, "আপনি যাবেন না। কেন, কি হয়েছে ঠাকুরমশাই? কি দেখলেন আপনি! আমার জানা খুব দরকার।"

রামলোচন মালাবতী সম্পর্কে সদ্য করা ভবিষ্যৎবাণী মনে-মনে গুছিয়ে নিলেন। তারপর তিনি শান্ত গলায় বললেন, "ঈশ্বর কি করে তোমার মতো মেয়ের উপর নিষ্ঠুর হতে পারলেন! যা দেখলাম তা তোমাকে বলতে পারব না। আমাকে অনুরোধ করো না মা।"

রামলোচন হাত দেখে কি গণনা করেছেন তা জানার জন্য মালাবতীর উৎকণ্ঠিত মন আরও ব্যাকুল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, "আপনি এখান থেকে না বলে কিছুতেই যেতে পারবেন না। ভালো-খারাপ যা দেখেছেন তাই বলুন। আমি সব শোনার জন্য প্রস্তুত।"

রামলোচনের অর্থলোভী মন প্রতাপ দত্তের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একটা হিসাব মনে-মনে করে ফেলল। তিনি একটু কেশে বললেন, "তুমি যখন এত করে শুনতে চাইছ তখন তো আমাকে বলতেই হবে। তবে বলার আগে আমার একটা শর্ত আছে।"

মালাবতী তাঁর পায়ের কাছে বসে বললেন, "কি শর্ত বলুন?"

রামলোচন দৃঢ় গলায় বললেন, "আমি যেকথা তোমার আজ বলব তা যেন আমাদের দুজনের মধ্যেই থাকে। একথা যেন কাকপক্ষীতে টের না পায়। একথা পাঁচ কান হলে সমূহ সর্বনাশ। বিশেষ করে তোমার স্বামী মানে প্রতাপবাবু জানতে পারলে অনর্থ হবে।"

মালাবতী ভীত হয়ে কম্পিত গলায় বলল, " আপনি আর আমি ছাড়া একথা কেউ জানবে না। আমি আপনাকে কথা দিলাম। ঠাকুরমশাই, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।"

প্রতাপবাবু জানতে পারবেন না ভেবে রামলোচন আশ্বস্ত হয়ে বললেন, "তোমাকে যে সন্তান-সুখ ঈশ্বর দেননি তার দায় কিন্তু তোমার একার নয়। মূলত তোমার স্বামীর জন্য তুমি সেই সুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছ। তোমার স্বামীর কিছু দোষ ত্রুটির জন্যই তোমার কোল আলো করে সন্তান আসবে না। এই দোষ দূর না করলে যতই ডাক্তার বদ্যি করো না কেন কোনও ফল মিলবে না। কিছু মনে করো না মা। তোমায় একটা কথা বলি। প্রতাপবাবুর বয়স আর তোমার বয়সের আকাশপাতাল তফাৎ। বয়সে মানানসই তোমরা কোনোভাবেই নও। অর্থ প্রাচুর্যের জোরে তিনি তোমার মতো সহধর্মিণী পেয়েছেন। তাই বলে নিজের সব ত্রুটি তো অর্থ দিয়ে সংশোধন করা যাবে না। তুমি শিক্ষিত মেয়ে। এইটুকু নিশ্চয়ই তুমি বোঝো।"

মালাবতী বললেন, "এর কি কোনও বিহিত হতে পারে না! ঠাকুরমশাই, আপনি তো অনেক কিছু পারেন। আমার স্বামীর দোষ কাটাতে যা কষ্ট করতে হবে আমি তা করব। শুধু একটা সন্তান আমার দরকার। আপনি যা বলবেন আমি সন্তানের জন্য তাই করব।"

রামলোচন মালাবতীর কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তিনি মনে-মনে একটা কুটিল হাসি হেসে বললেন, "মা, তেমন কষ্ট করতে বলব না তোমায়। প্রতাপবাবুকে কিছু ওষুধ দিতে হবে। সেগুলো ঠিক-ঠাক সময়মতো খাওয়ালেই ফল মিলবে। আমি সেই জড়িবুটি ওষুধ তোমাকে দেব মা। তুমি সেটা খাওয়াতে পারলেই হবে। আর সেই সঙ্গে তোমাকেও একটা কাজ করতে হবে। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি- এই তিনটে বার একটু কষ্ট করে নির্জলা উপবাস করতে হবে। সংসারের মঙ্গলের জন্য এটুকু ত্যাগ তোমায় করতে হবে।"

মালাবতী একটু সংশয়পূর্ণ কণ্ঠে রামলোচনকে বললেন, "আমি সংসারের মঙ্গলের জন্য সব করতে রাজি। কিন্তু আপনি তো জানেন আমার স্বামী এসব একেবারে মানেন না। আমি ওনাকে ওষুধ কিভাবে খাওয়াবো! উনি তো জিজ্ঞাসা করবেন যে আমি এসব কেন করছি! উনি এসব জানতে পারলে রাগ করবেন। কিছুতেই আপনার দেওয়া কোনও জড়িবুটি ওনাকে খাওয়ানো যাবে না।"

রামলোচন মালাবতীকে বললেন, "এই যে মা বললে সংসারের জন্য তুমি সব করতে রাজি। সংসারের মঙ্গলের গুরুদায়িত্ব তো তোমাকেই নিতে হবে। তুমি আমার কাছে একটা সমস্যার সমাধান চাইলে। আমি সমাধান-সূত্র খুঁজে দিলাম। তোমাকে একটা পথ দেখালাম। সে পথে কিভাবে তুমি চলবে সেটা তোমাকেই ভাবতে হবে।"

মালাবতী একটু ভেবে বললেন, "আমার স্বামীকে না জানিয়ে যদি খাবারের সঙ্গে ওষুধ খাওয়ানো যায় তাতে কি কোনও কাজ হবে!"

রামলোচন ফোকলা দাঁতে সারল্যের হাসি হেসে বললেন, "এই তো তুমি ঠিক নিশানায় তীর ছুঁড়েছ। আর তাছাড়া এমন জড়িবুটি আমি দেব তাতে তরল কোনও জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে বর্ণ গন্ধ কিছুই বোঝা যাবে না। তোমার ভয় নেই। তুমি নির্দ্বিধায় তোমার স্বামীকে দিতে পারবে। তুমি তো কোনও অন্যায় করছো না। তুমি যা করছো ভবিষ্যতের কথা ভেবে করছো। একটা সন্তান কামনায় করছো। তোমার মনে এত দ্বিধা থাকলে চলবে না মা।"

মালাবতী রামলোচনকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বললেন, "ঠাকুরমশাই, আপনি আমাকে বাঁচালেন। আপনি আমার কাছে ভগবান।"

তাঁর কথায় রামলোচনের আবার একবার দেবতার আসনে বসা হয়ে গেল। মালাবতীর মাথায় হাত রেখে তুলসী কাঠের মালা আঙুলে জড়িয়ে রামলোচন বললেন, "দীর্ঘায়ু হও মা। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে ঘর করো। প্রতাপবাবু আসার সময় হলো। অসময়ে আমাকে এখানে দেখে নানান কথা জিজ্ঞাসা করবেন। আমি কাল সকালে পুজো করতে আসার সময় তোমার হাতে জড়িবুটি এনে দেব। আমি এখন আসি।"

রামলোচন সানন্দে দু'তলা থেকে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এলেন। প্রতাপবাবু আসার আগেই তিনি তড়িঘড়ি করে দত্ত বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন।
Next part


All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717