Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বৃত্তের কেন্দ্রে ( পর্ব ৪)

বাংলা প্রেমের গল্প

All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বৃত্তের কেন্দ্রে ( পর্ব ৪)
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা


14 th July, 2021

## বৃত্তের কেন্দ্রে
পর্ব ৪

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১     পর্ব ২     পর্ব ৩     পর্ব ৪    

# পর্ব ৪
রামলোচন ইদানিং মালাবতীর সঙ্গে ভাব জমান। পুজোর কাজকর্ম সেরে ঘণ্টা-খানেক মালাবতীর সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা আদান-প্রদান করে বাড়ি যান। মালাবতীর সুখ- দুঃখের খবরাখবর রাখেন। তিনি মালাবতীর বিশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করেন। রামলোচনের মুখে সারল্যের হাসি, মুখ নিঃসৃত দৈববাণী তাঁরর মনকে সিক্ত করে দেয়। রামলোচনের সঙ্গে কথা বলতে-বলতে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। প্রতাপবাবু চলে যাবার পর মালাবতী তাঁর নিজের একাকীত্বকে বড় ভয় পান। তিনি আক্ষেপ করে রামলোচনকে বলেন, "ঠাকুরমশাই, আমার স্বামী আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেলেন। সন্তান-সুখ থেকে ঈশ্বর আমাকে বঞ্চিত করলেন। আমাকে সন্তান-সুখ দিতে আপনি অনেকখানি সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কই! আমার শ্বশুর-মশাই আর স্বামীর তিল-তিল করে গড়ে তোলা এই বিষয়-আশয় আমি কাকে দিয়ে নিশ্চিন্ত হবো! সন্তান থাকলে সেই রক্ষা করত সব।"

রামলোচন বললেন, "ভগবান যাকে সুখী করে না তাকে সুখী করা মানুষের দুঃসাধ্য। চিন্তা করো না। বিষয়আশয় বড় মায়ার জিনিস। ওসব থেকে মনকে যত নিষ্কৃতি দেওয়া যায় ততই ভালো।"


মালাবতী একটু নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, "কিছুটা নিষ্কৃতি দেব ভেবেছি ঠাকুরমশাই। বিজুকে ব্যবসার কিছু গুরুদায়িত্ব বুঝিয়ে দেব। বিজুকে আমার স্বামীর খুব স্নেহ করতেন। সে এক রকমের সন্তান স্নেহই বলা চলে। বিজুর তো সাতকুলে কেউ নেই। সেই কোন ছেলেবেলায় আমার শ্বশুর-মশাই মন্দির থেকে চার বছরের বাচ্চা ছেলেকে তুলে এনেছিলেন। ঠাকুরমশাই, ছেলেটা আমাকে যখন মা ডাকে আমার প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে।"

মালাবতীর ইচ্ছার কথা শুনে রামলোচনের মাংসল মুখে তীব্র কঠিন রেখা ফুটে উঠল। তাঁর দুটি চোখ অগ্নির ন্যায় জ্বলে উঠল। তিনি তিক্ত গলায় বললেন, "ছি! ছি! একটা চাকরকে বিষয়আশয়ের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক বলে মনে হয় না আমার। দত্ত বাড়ির সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে এক্কেবারে। চাকরকে কি সন্তানের জায়গা দেওয়া যায়! দত্ত বাড়ির সন্তান হবার সেই একমাত্র দাবিদার যার রক্তে এই বংশের আভিজাত্য মিশে আছে। মামুলি একটা চাকর যার জন্মের ঠিক নেই তার হাতে দত্ত বাড়ি পরিচালিত হবে এটা আমার পছন্দ নয়।"

নিজে গর্ভে ধারণ না করলেও প্রতাপবাবুর মতোই মালাবতী বিজুকে সন্তান স্নেহই করেন। ওই যে কথায় আছে সন্তান স্নেহ অতি বিষম বস্তু। বিজুর প্রতি সেই স্নেহে বশবর্তী হয়েই মালাবতী দৃঢ় কণ্ঠে রামলোচনকে বললেন, "আপনার পছন্দ-অপছন্দ তো আমি জানতে চাইনি ঠাকুরমশাই। আমার স্বামী মারা যাবার পর এই বাড়িতে কি হবে তা একমাত্র আমিই ঠিক করব। এই বাড়ির সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই কোনও মামুলি পুরোহিত নেবেন না। আর চাকর ভাবলেই চাকর। বিজু এই বাড়িতে কিছু টুকটাক কাজ করে। ঠিক আপনি যেরকম এই বাড়িতে পুজোর কাজ করেন। সেইদিক থেকে আপনিও তো বিজুরই সমগোত্রীয়। আর বংশের রক্ত- আভিজাত্য এসব গড়ে ওঠে কিছুটা পরিবেশের ফলেও। বিজু যে পরিবেশে এত বছর আছে ওই পরিবেশই ওকে অনেকটা তৈরি করে নিয়েছে দত্ত বাড়ির মতো করে। ঠাকুরমশাই, আপনি অযথা নিজের এক্তিয়ারের বাইরে কথা বলবেন না।"

রামলোচন মালাবতীর কথায় খুবই অপমানিত হলেন। বিজু রামলোচনকে এগিয়ে দিতে গেটের বাইরে এসেছিল। দু'তলার সিঁড়ি বেয়ে মালাবতীর কাছে গিয়ে বিজু বলল, "মা, তোমাকে একটা কথা বলব!"

মালাবতী বিজুকে দেখে সহাস্যে বললেন, "বল কি বলবি। তুই কাজ ফেলে এখানে এখন।"

বিজু একটু ঢোক গিলে বলল, "মা, আমি আড়াল থেকে তোমার আর ঠাকুরমশাইয়ের সব কথা শুনেছি। তুমি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত একা নিয়ে ফেলেছ। ঠাকুরমশাই এতে খুব রেগে গেছেন। আজ ঠাকুরমশাইয়ের চোখ-মুখ আমি দেখেছি। আমি এই বাড়িতে কাজ করি। তুমি যখন যা বলবে আমি করব, কিন্তু এত বড় দায়িত্ব কাঁধে নেবার ক্ষমতা আমার নেই।"

মালাবতী বিজুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিজুর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন, "তোকে তোর ভালোবাবু এমনি পড়াশোনা শেখায়নি বিজু। আর তুই তো আমাকে মা বলিস। মা দায়িত্ব দিলে সেটা সন্তানকে পালন করতে হয়। আমি যেটা ভালো বুঝেছি সেটা করব। তোকে কেন আমি এত ভরসা করি জানিস, কারণ তোর মধ্যে একটা নির্লোভ সরল মানুষ আছে। ঠাকুরমশাইয়ের কথা তুই ভাবিস না।"

বিজুর দু'চোখ জলে ভরে গেল। মালাবতীকে সে বলল, "আমি জানি না আমার গর্ভধারিণী মা কে। কিন্তু তুমি আমার মা। তুমি আশীর্বাদ করো আমি যেন সন্তান হয়ে আমার ভালোবাবুর আর তোমার মান রাখতে পারি।"

মালাবতী বললেন, "অবশ্যই পারবি। আমি কি কখনো ভেবেছি ব্যবসার হাল ধরব। পরিস্থিতি আমাকে এই জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পেটে কিছু শিক্ষা থাকলে অনায়াসে অনেক কাজ শেখা যায়। আর আমি তোকে হাতে ধরে শিখিয়ে দেব।"

বিজু নিজের কাজে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে আবার মালাবতীর কাছে ফিরে বলল, "মা, তুমি ঠাকুরমশাই থেকে একটু সাবধান থেকো। ওনাকে গ্রামের সকলেই দেবতা রূপে মানে। তুমি যা আজ বলেছ তাতে ওনার অপমান হয়েছে। একটু সতর্ক থেকো। আমার মনে হয় মানুষ প্রতিশোধ নিতে মানুষের ক্ষতি করতে পিছুপা হয় না। ঠাকুরমশাইয়ের চোখ-মুখ দেখে কেন জানি না সেরকমই মনে হলো আজ।"

মালাবতী বললেন, "ঠাকুরমশাই, আমার উপর প্রতিশোধ নেবে বলছিস। দেখা যাক। আর তোর মা ভালোবাবু মারা যাবার পর সতর্কই থাকেন সবসময়। চিন্তা করিস না আমাকে নিয়ে।" বিজু চলে গেল।

রামলোচন মালাবতীর কাছে অপমানিত হয়ে তিন দিন দত্ত বাড়ির ছায়াও মাড়ালেন না। সন্ধ্যায় জল বাতাসা গলায় ঢেলে রামলোচন জপে বসে মালাবতীর ষষ্ঠীপুজো করতে লাগলেন। তিনি বললেন, "মালাবতী, তোমার অপমানের জবাব তোমাকে দেবো। প্রতাপবাবু আমাকে দেখতে না পারলেও মুখের উপর কোনদিন অপমান করেননি। আমার পথের কাঁটা সরাতে তাঁকে যদি মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারি তাহলে তুমি তো কিছুই নও। তোমার এত বড় স্পর্ধা হয়েছে তুমি একটা চাকরের সঙ্গে আমাকে তুলনা করেছ। মালাবতী, তুমি একসময় বুঝবে যে তুমি সাপের ল্যাজে পা দিয়েছ। ছোবল তো তোমাকে খেতেই হবে।" রামলোচন কথা শেষ করে একটা ক্রুর হাসি হাসলেন।

তিন দিন কেটে যাবার পর রামলোচন দত্ত বাড়িতে গেলেন। মালাবতী এবং বিজুর সঙ্গে তাঁর ব্যবহারে কোনও রুক্ষতা ছিল না। বরং দত্ত বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁর আচরণে অধিক নম্রতা ছিল। পূর্বের আচরণের জন্য তিনি মালাবতীর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিলেন। মালাবতী ব্যবসার কাজে বাইরে বেরোবার আগে ঠাকুরদালানে পুজোর প্রসাদ আনতে গেলেন। সেই সময় রামলোচন ধুতির কোঁচা থেকে একটা বিষের শিশি বার করে পুজোর জন্য কাটা ফল, মিষ্টিতে মেশাচ্ছিলেন। ঠাকুর ঘরে ঢুকে মালাবতীর চোখে সে দৃশ্য এড়ালো না। মালাবতী ভ্রু কুঞ্চিত করে রামলোচনকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কি মেশাচ্ছেন ঠাকুরমশাই?"

রামলোচন নিজের কাজে এতই নিমগ্ন ছিলেন যে তিনি বুঝতে পারেননি মালাবতী কখন এসে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছে। মালাবতীকে দেখে তিনি একটু হকচকিয়ে গেলেন। বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমেছিল তাঁর কপালে। তিনি আমতা-আমতা করে মালাবতীকে বললেন, "কিছু না মা। আসলে ঠাকুরের চরণামৃত।"

মালাবতী স্মিত হেসে বললেন, "তাই নাকি! ওই চরণামৃত মেশানো প্রসাদ আপনি খাবেন।"

মালাবতীর গলা পেয়ে বিজু এসে দাঁড়িয়েছিল। মালাবতী বিজুকে বলল, "তুই থানায় একটা খবর দে। দেরি করিস না।"

বিজু চলে গেল। রামলোচন ভয় পেয়ে বললেন, "বিশ্বাস করো মা। আমি কিছু করিনি।"

মালাবতী বললেন, "ঠাকুরমশাই, আমি আপনার মেয়ের বয়সী। কি করে বিশ্বাস করি বলুন তো আপনাকে! আমি নিজের চোখে প্রসাদে আপনাকে বিষ মেশাতে দেখেছি।"

রামলোচন বললেন, "আমি এত বছর পুজো করছি। আমার নামে এই অপবাদ দিও না।"

মালাবতী শান্তস্বরে বললেন, "ঠিক আছে। আমি আপনাকে বিশ্বাস করলাম। আপনি রেকাবিতে রাখা প্রসাদ খেয়ে প্রমাণ দিন।"

রামলোচনের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। তিনি মালাবতীর পায়ের কাছে বসে বললেন, "আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি আর এ বাড়ি কখনো আসব না।"

মালাবতী বললেন, "ঠাকুরমশাই, আপনি আমাকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। আর শাস্তি না দিয়ে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব! কখনো না।"

রামলোচন বিস্ফারিত নেত্রে তিরিক্কি মেজাজে বললেন, "তোমাকে আমি ছাড়ব না মালাবতী। কিছুতেই না। তোমার স্বামীকে শেষ করেছি। তোমাকেও করব।"

মালাবতী বললেন, "তার মানে আপনি আমার স্বামীকে যে জড়িবুটি দিয়েছিলেন সেটা এক ধরনের বিষ।"

রামলোচন বললেন, "হ্যাঁ, বিষ। তোমাকেও আমি খুন করে এই বিশাল সম্পত্তির মালিক হবো।"

মালাবতী রামলোচনের মুখে একথা শুনে তীব্র অনুশোচনায় ভেঙে পড়লেন। তিনি কাঁদতে-কাঁদতে ঠাকুরদালানের সিঁড়িতে বসে পড়ে বললেন, "অফিসার ওনাকে নিয়ে যান। আমার স্বামীকে উনি খুন করেছেন। আপনাদের সামনে উনি স্বীকার করলেন। আমাকে মারতে চেয়েছিলেন। নিয়ে যান।"

পুলিশ অফিসার রামলোচনের হাতে হাতকড়ি পড়িয়ে নিয়ে যাবার সময় বিজু রামলোচনের মুখোমুখি হল। ঈর্ষান্বিত দৃষ্টিতে রামলোচন বিজুর দিকে তাকাল। বিজু বলল, "ঠাকুরমশাই, আপনি তো শুনেছি ভবিষ্যৎবাণী করেন। আপনি জানতেন না আপনার কপালে এই পরিণতি আছে! দুঃখের কপাল আপনার। যান ক'দিন শ্রীঘরের ভাত খেয়ে আসুন।"

রামলোচন চলে যাবার পর শতাব্দ প্রাচীন নিস্তব্ধতা নেমে এলো দত্ত বাড়িতে। অনন্ত শূন্যতার বুকে শুধুমাত্র স্বামী প্রতাপের জন্য মালাবতীর হাহাকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717