Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অলীক উষ্ণতা

Bengali Story

All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    (83)     84   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অলীক উষ্ণতা

লেখক - সমরেশ মুখার্জী, মনিপাল, কর্ণাটক, ভারত

◕ পর্ব ২

আগের পর্বটি

অবাক হয়ে সুমন বলে, "কী করে পেলি?"

মুচকি হেসে করবী বলে, "তবেই দ্যাখ, তুই এতো সুনীলদার ভক্ত অথচ আমি কেমন অটোগ্ৰাফ পেয়ে গেলাম!"

সুমন অধৈর্য হয়ে বলে, "কী ভাবে পেলি, খোলসা করে বল না?"

"আচ্ছা বলছি, শোন। পরশু বিকেলে একাডেমীতে গেছিলাম, কলেজের ক'জন মিলে একটা নাটক দেখা‌র কথা ছিল। আমি আগে পৌঁছে গেছি। হাতে সময় ছিল তাই নেহাত টাইম-পাস করতেই কী একটা ছবির প্রদর্শনী হচ্ছিল, ঢুকেছিলাম। টিকিট-ফিকিট নেই। ছবির কিছু বুঝিও না আমি। এমনই ঘুরে-ঘুরে দেখছিলাম। হঠাৎ আমার ডান পাশে দেখি সুনীলদা। একটা ছবির দিকে খুব মগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি ছবি ছেড়ে সুনীলদাকে ভ‍্যালভ‍্যাল করে দেখছি। উনি মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে চেয়ে হেসে বললেন, 'কী দেখছ?' মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আপনাকে। উনি মুচকি হেসে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, 'ছবি কিন্তু ওদিকে।' আমি লজ্জায় একশেষ, ঢোঁক গিলে বলি, আমার এক বন্ধু আপনার খুব ভক্ত, ও আমায় আপনার অনেক লেখা পড়িয়েছে। 'ও, তোমার বন্ধু আমার ভক্ত, তুমি নও?' অপ্রস্তুত হয়ে কথা ঘোরাতে তাড়াতাড়ি এই খাতাটা বার করে বলি, একটা অটোগ্ৰাফ দেবেন, আমার বন্ধু‌কে দেখাবো। ও খুব খুশি হবে। 'আর তুমি?' সুনীলদার মুখে চাপা হাসি। আমিও; বলে পালিয়ে বাঁচি।"

সুমন বলে, "জানিস তো সুনীলদার লেখায় পড়েছি, উনি অচেনা পুরুষ‌দের সাথে খেজুরে আলাপ করতে একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু সুন্দরী মেয়েদের সাথে একবার আলাপ হলে জীবনে তাদের মুখ ভুলেন না। তাহলে তোর মুখটাও সুনীলদার মনে শিলালিপি হয়ে রয়ে গেল।"

রাঙিয়ে ওঠে করবী, "বাজে বকিস না, ওটা‌ আবার আলাপ নাকি। দু একটা মাত্র কথা। সেদিন ওখান থেকে বেরিয়েই হয়তো উনি ভুলে গেছেন আমায়। অমন কতজনের সাথে রোজ দেখা হয় ওনার।"

সুমন বলে, "কিন্তু তাদের সবাই তোর মতো সুন্দরী নয়। তুই পাঁচপেঁচি হলে সুনীলদা হয়তো ঘুরেও দেখতেন না। তুই নিশ্চিত সুনীলদার মনে ছাপ ফেলেছিস, তা না হলে অতো বড়ো করে উনি লিখতেন না, 'কী খবর?' - যেন কতদিনের চেনা।"

করবী চোখ পাকিয়ে বলে, "এবার কিন্তু গাঁট্টা খাবি তুই। এ জন্যই তোকে আসতেই আমি দেখাই নি এটা, ঠিক জানতাম ইয়ার্কি মারবি।"

সুমন বলে, "তোর ঠোঁটটা আজ এমন চকচক করছে কেন রে?"

করবী বলে, "আর বলিস না, ঐ আমার মেজদি, যে 'হিউস্টনে' থাকে রে, ছুটিতে এসেছে এখানে। ও জানে আমি লিপস্টিক লাগাই না, তাই আমার জন্য ন্যাচারাল লিপগ্লস এনেছে। ওটাই একটু লাগিয়েছি। কেন, ভাল্লাগছে না?"

সুমন বলে, "না, না, ভালোই লাগছে, তবে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে।"

করবী ভ্রুভঙ্গী করে বলে, "অন্যরকম মানে?"

সুমনের প্রথমেই যা মনে হয়েছিল সেটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, "তোর নীচের ঠোঁটটা যেন আধ-চোষা লেবু লজেন্সের মতো চকচক করছে।"

হিলহিলে শরীরে ঢেউ তুলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে করবী। ও জানে চুলে হাত দিলে রেগে যায় সুমন তবু সেই ফরসা থোড় হাত বাড়িয়ে সুমনের কোঁকড়া চুল খুবসে ঘেঁটে দিয়ে বলে, "ডায়েরী লিখে-লিখে দেখছি তোর উর্বর মস্তিষ্কে আজকাল নানান অদ্ভুত উপমা আসছে। আচ্ছা, বাজে না বকে, এবার একটু উঠে দাঁড়া তো, সামনেটা যতটা বুনেছি একটু দেখে নি। 'ভী'-টা কোথায় ফেলবো বুঝতে পারছি না।

উঠে দাঁড়ায় সুমন। সোয়েটারের সামনের অংশটা নিয়ে করবীও উঠে এসে দাঁড়ায় ওর সামনে। হলুদ মেরুন দুটো উলের গোলা লেগে আছে কাঁটায়। মাপ নেওয়ার জন্য ও দাঁড়িয়েছে একদম গা ঘেঁষে। ঘরে ঢুকেই আজ যে হালকা সুবাসটা পেয়েছে সেটা এবার ঝাপটা মেরে উচাটন করে দেয় মন, "কি রে, পারফিউম মেখেছিস নাকি? ওটাও কি দিদি দিয়েছে? তোকে তো বাড়িতে কখনো সেন্ট লাগাতে দেখি নি?"

খুশী-খুশী গলায় করবী বলে, "হুঁ, ঠিক ধরেছিস। সেটাই একটু লাগিয়েছি। গন্ধটা ভালো না?"

সুমন বলে, "হ‍্যাঁ, খুব মিষ্টি গন্ধ, বিদেশী দামি সেন্ট, ভালো তো হবেই।"

করবীর বাঁ হাতটা উলের গোলা সমেত কাঁটা দুটো সুমনের গলার কাছে ধরে আছে। ওর কলকে ফুলের মতো কড়ে আঙুল গলায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে। অংশত বোনা সোয়েটারটা ঝুলছে বুকের ওপর। করবীর ডান হাতটা সোয়েটারের ওপর দিয়ে সুমনের বুকের ওপর নড়াচড়া করছে 'ভী'-এর অবস্থানটা বোঝার জন্য। করবী মুখটা একবার তুলতেই হঠাৎ সুমন দেখে সেই চকচকে লেবু লজেন্স ওর মুখের একদম কাছে। করবী খুব মন দিয়ে‌ মাপ নিচ্ছিল। কিন্তু মেয়েদের অজান্তেই ওদের কিছু সরল আচরণ ছেলেদের মনে সৃষ্টি করতে পারে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। কেমন ঘোর লেগে যায় সুমনের। দু'হাতে হঠাৎই জড়িয়ে ধরে ওকে। প্রবল পুরুষালি আলিঙ্গনে ওর নরম শরীরটা মিশে যায় সুমনের শরীরে। করবীর দুটো হাত দড়ি থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় খসে পড়া গামছার মতো স্খলিত ভাবে ঝুলে পড়ে দু'পাশে। উলের গোলা সমেত আধ-বোনা সোয়েটার ছিটকে পড়ে মেঝেয়। সুমন ওর বুকে অনুভব করে ছোঁয়া। সেই অনির্বচনীয় স্পর্শানুভূতি তখনও অবধি সুমনের জীবনে অনাস্বাদিত। শিরশিরিয়ে ওঠে ওর সারা শরীর। তীব্র কোনো প্লাবনের অভিঘাতে পরক্ষণেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ও । মাথার পিছনে হাত দিয়ে করবী‌র মুখটা নিমেষে টেনে আনে নিজের কাছে। এতো নরম, এতো কবোষ্ণ হয় নারীর ওষ্ঠ! সেই প্রথম অনুভব করে সুমন।

গভীর আশ্লেষে আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ হয়ে থেমে গেছিল সুমনের সময়। করবী‌র কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। না প্রতিরোধ না আবাহন। যেন অচেতন সমর্পণ। করবীর শরীর যখন সুমনের আলিঙ্গনে আবদ্ধ, সুমনের ওষ্ঠ যখন প্রবল তৃষ্ণায় শুষে নিচ্ছে ওর ওষ্ঠে‌র উত্তাপ। তখনও করবীর ঝুলে থাকা দুটো নিষ্প্রাণ হাত সুমনকে ক্ষণিকের জন্যও জড়িয়ে ধরে না। তাহলে কী ভুল হয়ে গেল? এতদিন মিশে, অনেক সুযোগ পেয়েও সুমনের কখনো কোনো বিচ্যুতি হয়নি, সেই আত্মনিয়ন্ত্রণ কী ক্ষণিকের দুর্বলতায় হারিয়ে ফেললো ও? সুমনের প্রতি বিশ্বাসে কী চিড় ধরলো করবীর?

প্রথম থেকে শরীর-কেন্দ্রীক আকর্ষণে করবীর অনীহা লক্ষ্য করেছে সুমন। যৌবনে নারী ও পুরুষের মধ্যে দেহাতীত প্রেম বা প্লেটোনিক লাভ হয়তো সোনার পাথরবাটির মতই অবাস্তব, কিন্তু মূলত: হরমোন প্রভাবিত সম্পর্কের টান যে ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য এ ব্যাপারে ওরা দুজনেই ছিল সহমত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথায় শশী কুসুমকে বলে, 'শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?' ওদেরও মনে হতো নিবিড় কোনো মানসিক টান ক্ষণস্থায়ী শারীরিক আকর্ষণের চেয়ে অনেক মহার্ঘ। হামলে পড়া পুরুষ ছিল করবীর দু'চক্ষের বালাই। ও যে সুমনকে পছন্দ করতো, সহজ ভাবে মিশতো তার প্রধান কারণ সুমনের মধ্যে কখনো হ‍্যাংলামো দেখেনি ও। কিন্তু ওর নারীত্বের আবেদন যে সুমনের কাছে মূল্যহীন নয় সেটাও ও জানতো সুমনের ডায়েরী পড়ে।

হঠাৎ এই বোধোদয়ে যেমন আচম্বিতে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল সুমন, তেমনি আচমকা‌ই ছেড়ে দিল। আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থা থেকে হঠাৎ অবলম্বনহীন হয়ে একটু টলে গিয়ে টেবিলটা ধরে সামলে নেয় করবী। নিচু করে রাখা ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে গেছে। কয়েক পলের সূচী-পতন নীরবতা। তারপরেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় করবী। মনে সংশয়ের দোলাচল নিয়ে বসে থাকে সুমন। প্রায় মিনিট পনেরো বাদে দুটো চায়ের কাপ হাতে ঘরে আসে করবী। মুখে চোখে জল দিয়ে এসেছে। ঠোঁটে লিপগ্লসের চিহ্নমাত্র নেই। সহজ ভাবে বলে, "কি রে, ভ‍্যাবলার মতো বসে আছিস কেন? নে, চা খা।" একটা কাপ বাড়িয়ে দেয় সুমনের দিকে। সুমন আড়চোখে দেখে ওকে। একটু আগের ঘটনার লেশমাত্র রেশ নেই ওর ব্যবহারে। সুমনের দৃষ্টি ওর ঠোঁটে থমকে যায়। ফর্সা মুখে ওপরের ঠোঁট এখনও গাঢ় লালচে হয়ে আছে। তাহলে কি উত্তেজনার বশে জোরেই ... ছি ছি! ওর মনের কথাটা পড়ে ফেলে করবী। অস্ফুটে বলে, "ভোঁদড় একটা। এভাবে কেউ..." বাক্যটা অসমাপ্ত রেখে‌‌ই টেরিয়ে তাকায় করবী। মুখে বিস্ময় ও কৌতুকের হেঁয়ালী প্রলেপ, "ক‍্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস যে? তোকে সাদাসিধে ভাবতাম, কিন্তু পেটে-পেটে এতো? ঐ সুনীলদাই তোর মাথা খেয়েছেন মনে হচ্ছে।"

করবীর কৌতুকে তির্যক প্রশ্রয় সুস্পষ্ট। তবে সুমনটা সত্যিই গোলা। মিনমিন করে বলতে যায়, "আসলে মাথাটা কেমন যেন গুলি‌য়ে গেল। সেন্টের মিষ্টি গন্ধ, অতো কাছে তোর লজেন্সের মতো ঠোঁট, আর..."

তড়বড় করে করবী থামিয়ে দিয়ে বলে, "খুব হয়েছে, তোকে আর অজুহাতের ফিরিস্তি দিতে হবে না, পাজী কোথাকার। চা খেয়ে তুই এখন কেটে পড়। আমায় একবার স‍্যারের কাছে যেতে হবে নোটস আনতে।"

সেদিন চলে আসার সময় সুমনের মৃদু অভিমান হয়েছিল। চারবছরে সেই প্রথম করবী ওকে চলে যেতে বললো। এর আগে যতবার চলে আসতে গেছে, ও বলেছে, 'আর একটু বোস না বাবা।' আসলে এক হাতে যে তালি বাজে না সেই প্রবাদ বাক্যটি সেদিন সুমনের মনে পড়েনি। ও বোঝেনি সংকোচের দ্বিধা কেটে যেতে সেদিন ফাঁকা বাড়ীতে সংযমের বাঁধ ভাঙার ভয় করবীরও ছিল। ভয়টা শুধু সুমনকে নয়, ভয় ছিল ওর নিজেকেও। তাই বাইরে যাওয়ার ছল করে ও সুমনকে ভাগিয়ে দিয়েছিল। আলোচনা‌য় দেহাতীত প্রেমের ধ্বজা ওড়ালেও একুশের সজীব যৌবন চার বছরের অন্তরঙ্গতায় ওটুকু নৈকট্য দাবি করতেই পারে। সেটা‌ মোটেই দোষেরও কিছু নয় বরং খুবই স্বাভাবিক। অল্প আলাপে পুরুষের একতরফা হামলে পড়া স্বভাব মেয়েদের অবাঞ্ছিত লাগলেও দীর্ঘ মেলামেশার পরেও প্রিয়জনের নৈকট্যে অনাসক্তিও আবার অস্বাভাবিক লাগতে পারে। পুরুষ কাছে টানতে চাইবে, নারী রহস্য করে এড়িয়ে গিয়ে সেই টান জিইয়ে রাখবে। কখনও বা ধরা দেবে নিজের মর্জিতে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এতদিন সুমনকে সেই প্রচলিত ছকে ফেলতে না পেরে করবী হয়তো ভেবেছিল সুমনের সেই তাগিদ‌ই হয়তো কম। তাই হঠাৎ ওর নারীত্বের আকর্ষণে সুমনকে অমন প্রবল ভাবে সাড়া দিতে দেখে ভালো লাগার আবেশে সেও বিহ্বল হয়ে যায়। মেয়েরা তো পরিষ্কার করে কিছু বলে না। ভোঁদড়, পাজী এসব কপট বিশেষণই ছিল সেই আবেশের তির্যক প্রকাশ। গোলা সুমন সেদিন তা বোঝেনি।

সেদিনের ঘটনার পর‌ ক্যাম্পে যাওয়ার আগে অবধি আরো বেশ কয়েকবার সুমন ওদের বাড়ি গেছে। বাড়িতে কেউ না থাকলেও ওরা সহজ ভাবেই আগের মতো আড্ডা দিয়েছে। কেবল মাঝে মধ্যে ওর মুখের দিকে সুমনকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে করবী চোখ পাকিয়ে ধমক দিয়েছে, "এ্যাই, আবার কোনো বদমায়েশির ফন্দী আঁটছিস? ভালো হবে না বলছি।"

সুমনের আত্মসম্মান জ্ঞান ছিল টনটনে, কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে নিরেট। তাই করবীর কপট ধমকের আড়ালে যে অনুক্ত হাতছানি তা ও দেখতে পায়নি। ফলে তারপর যতদিন ওদের সম্পর্ক ছিল আর কোনোদিন সুমনের আচরণে কোনো 'বিচ্যুতি' প্রকাশ পায়নি। সুমন ভাবতো সেটা ওর আত্মসংযমের পরাকাষ্ঠা। করবী কী ভাবতো তা ও ভেবে পায়নি। আর মাপ না নিয়েই করবী শেষ করে দিয়েছিল সেই সোয়েটার। গায়ে দিতে দেখা গেল 'ভী'-টা একটু ঢিলে রয়ে গেছে। করবী দেখে বলে, "ইস, 'ভী'-টা ঠিক হয়নি। সুমনের গালে ঠোনা মেরে বলে, তুই পাজীটা এর জন্যে দায়ী, বেশ বুনছিলাম, দিলি সব গুলিয়ে।"

একাংশের ওই সামান্য ত্রুটিতে অবশ্য কিছু এসে যায় না কারণ সুমনের প্রতি করবীর সখ্যতা মাখা ছিল ঐ সম্পূর্ণ সোয়েটারে। ওই সামান্য বিকৃতি আসলে ক্ষণিকের এক মধুর বিচ্যুতির স্মারক। ক্যাম্পে গিয়ে সুমন ওর কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধু‌কে বলে, "জানিস এই সোয়েটারটা না করবী বুনে দিয়েছে।" শুনে ওদের কী আহ্লাদ, "তাই নাকি? তাহলে তো তোর একদমই শীত করছে না, কী বলিস? আমাদের তো মা, দিদি ছাড়া আর কেউ বুনে দেওয়ার নেই। একটু হাত বুলোতে দে মাইরি, ফীল করি।"

বন্ধুদের চ‍্যাংড়ামি সুমন বেশ উপভোগ করে। ওর অনেক বন্ধুরা যখন মেয়েদের নিয়ে নানা অশ্লীল মস্করা করতো সুমন তখন বিগত চার বছর ধরে এক জলজ্যান্ত সুন্দরী‌র সাথে নির্ভেজাল আনন্দে চুটিয়ে মিশেছে। করবী শুধু সুন্দরীই নয়, তার স্বভাবটিও ছিল কোমল, অন্তরঙ্গ। যৌবনে নারী‌র শীতল প্রত্যাখ্যানে অপমানিত পৌরুষ হয়ে যেতে পারে কর্কশ, বিপথগামী। পুরুষের হবে সবল হৃদয়, তাতে অযথা উঠবে না ভাবাবেগের তরঙ্গ, উঠলেও তার পাথর প্রথিম মুখচ্ছবি‌তে ফুটবে না অন্তর্লীন ভাবনার সামান্যতম আঁকিবুঁকি, একান্তে ক্ষণিক ক্রন্দনও সবৈর্ব নৈব নৈব চ। এই হচ্ছে সমাজে পুরুষের প্রচলিত ম‍্যানলি ইমেজ। এই মডেল অনুসরণেই অধিকাংশ মেল শভিনিস্ট অজান্তেই রত। যারা এ ছকে পড়ে না, নারীর মধুর আন্তরিক সঙ্গ তাদের মননকে করতে পারে গভীর সংবেদনশীলতায় সমৃদ্ধ। সুমনের কাছে করবী‌র সাহচর্য ছিল সেরকম। গন্তব্য নয়, যতদিন সম্ভব সখ্যতার এক সহযাত্রাই ছিল সুমনের কাছে অতীব আনন্দময়।

ছাত্র, পাচক, সাহায্যকারী নিয়ে প্রায় সত্তর জন। তার ওপর আছে সার্ভের যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত মাল। সরকারী কলেজের শিক্ষামূলক ভ্রমণ, বাজেট কম। তাই RMS ভ‍্যান সংলগ্ন একটা অর্ধেক জেনারেল ডাব্বা রিজার্ভ করা হয়েছে। জশিডি জংশনের সাইডিংয়ে সেটা দাঁড়িয়ে আছে। মোগলসরাই প্যাসেঞ্জার এলে তার সাথে জুড়ে দেওয়া হবে। ট্রেন প্রচুর লেট। কামরা অন্ধকার। কেউ শুয়ে পড়েছে। কয়েকজন মোমবাতি জ্বালিয়ে তাস খেলছে। বাকি‌রা আড্ডা মারছে। রাত প্রায় দুটো। স্টেশনে একা পায়চারি করছে সুমন। ঘুম আসছে না। কাল করবীর সাথে দেখা হবে। মাত্র এক মাসের অদেখা। কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন হয়ে গেছে।

প্ল্যাটফর্মে কনকনে ঠাণ্ডা। উলিকটের ফুলহাতা গেঞ্জির ওপর সুমন পড়েছে করবীর বোনা সোয়েটার, তার ওপর চাপিয়েছে বাবার দেওয়া পুলিশের ওভারকোট। মাথায় হনুমান টুপী। তাও শেষ ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো বিহারের ঠাণ্ডার দাপট টের পাওয়া যাচ্ছে। একবার কোটের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে সোয়েটারের ওপর নিজের বুকে হাত বোলায় সুমন। নিমেষে যেন এক অলীক উষ্ণতার আবেশে ভরে যায় মন।
( সমাপ্ত )
Next Bengali Story


All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    (83)     84   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717