Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

পথ চলা বাকি এখনও

বাংলা গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    144    145    146    147    148    (149)     150   

পথ চলা বাকি এখনও
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, মজুমদার পাড়া, কলকাতা


## পথ চলা বাকি এখনও

লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, মজুমদার পাড়া, কলকাতা

#
আজ অদিতির বিয়ে। খুব ধুমধাম। হরিদেবপুরের ধনী ব্যবসায়ী শুভময় সেনের একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। বাড়ি ভর্তি লোকজন। অথচ এই বিয়েতে যার উপস্থিতি একান্ত কাম্য সে অদিতির অভিন্ন হৃদয় বান্ধবী অপর্ণাই অনুপস্থিত। শারীরিক দিক দিয়ে অপর্ণা আগের চেয়ে অনেক বেশি বিপর্যস্ত। তাই অদিতিকে সে জানিয়েছে যে, সে আগে থেকে বিয়ে বাড়িতে আসতে পারবে না। কিন্তু অদিতির ফোনে অপর্ণা জোর জবরদস্তি, "তুই না এলে আমায় কে সাজাবে? কোনও পার্লার নয়, তুই এসে আমায় নিজের হাতে সাজাবি। তুই বিয়েতে না এলে তোর সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ। "

সম্পর্কের জোড়াতালি লাগাতেই অপর্ণা অদিতিকে কথা দেয় সে যাবে। শরীরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সে বলে, "যাব। চিন্তা করিস না। তোকে কনের সাজে সাজিয়ে দিয়েই চলে আসব। বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। রাগ করিস না। জানিস তো এক জায়গায় বসে থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়।" অদিতি তাই বন্ধুর উপর আর রাগ বা জোর কোনটাই করতে পারেনি।

অপর্ণা এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। জন্ম থেকে পিঠের শিরদাঁড়া বাঁকা হওয়ার জন্য তার বসতে, শুতে, চলতে-ফিরতে শরীরটা বোঝার মতো মনে হয়। কিন্তু তার শারীরিক দুর্বলতা তার মনকে এখনও পর্যন্ত গ্রাস করতে পারেনি। ওই মনের উদ্যমই তাকে নতুন কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়। বিভিন্ন হাতের কাজ, ঘর গোছানো, কনে সাজানো, ভালো পদ রান্না — এসব কাজে সে গুণবতী। হরিদেবপুর গ্রামে যত মেয়ের বিয়ে হয়েছে সব মেয়েকে সাজানো তার গুরুদায়িত্ব। তার বান্ধবী অদিতিও তার ব্যতিক্রম নয়। অপর্ণার নিজের জীবনের অপূর্ণতা হয়তো শারীরিক দুর্বলতার কারণে। সে বিবাহযোগ্যা সত্ত্বেও বিবাহ না হওয়া, মেয়েদের কনের সাজে সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে নিজে কনে সাজতে না পারা, নিজের বাসর সাজাতে না পারা— এসব যেন তাঁকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে একা থাকলেই। অথচ একা থাকা তার জীবনের ভবিতব্য। এই বড় পৃথিবীতে আপন বলতে তার বিধবা মা। ওই বিধবা মা আছে বলেই তার ভরসা, আশ্রয়ের জায়গাটা এখনও অক্ষুণ্ণ আছে। অপর্ণার শারীরিক কষ্ট দেখে তার মা দুঃখ করে বলেন, "তোর জন্য বড় চিন্তা হয় অপু। আমি মরে গেলে তোকে দেখবে কে? কার ভরসায় তোকে রেখে যাব?"

অপর্ণা মায়ের কথায় উদাসভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে হতাশার সুরে বলে, "পৃথিবীতে কানা, খোঁড়া, পঙ্গু লোককে সকলে করুণা করে মা। কেউ তো হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে না। সখ করে কেউ ঘরের বউ করে নিয়ে যায় না। আমার পাশে তুমি আছো। ভালোই আছি। কতজনের তো আমার চেয়েও খারাপ অবস্থা। কেটে তো গেল ত্রিশটা বছর বোঝার মতো শরীর নিয়ে। চিন্তা কোরো না। এভাবেই দিন চলে যাবে।"

অপর্ণা অনেক দিন পর আজ নিজে একটু সময় নিয়ে সাজলো অদিতির বিয়ে উপলক্ষে। বন্ধুর বিয়ে বলে কথা। অদিতিই তার প্রাণের বন্ধু। সুখ- দুঃখের সব কথা বলার একমাত্র জায়গা। অপর্ণাকে দেখে আজ তার মায়ের খুবই ভালো লাগে। মা বললেন, "আজ তোকে সুন্দর দেখাচ্ছে অপু। অদিতি চলে গেলে তুই বড় একা হয়ে যাবি... হাজার হোক ছেলেবেলার বন্ধু।"

অপর্ণার চোখে একটু জল আসে। চোখের জল নিয়ন্ত্রণে রেখে সে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "কেন মা, একা কোথায়! তুমি তো আছো আমার সঙ্গে..."

সন্তানের অসহায়তা মাকে যেন স্থির থাকতে দেয় না। মা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন অপর্ণাকে। অপর্ণা বলে, "মা, ছাড়ো। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। যেতে তো আধ ঘণ্টা লাগবে।"

মা ছেড়ে দেন অপর্ণাকে। বললেন, "সাবধানে যাস। দেরি করিস না।"

অপর্ণা যখন অদিতিদের বাড়ি পৌঁছাল তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে। অপর্ণা যেতেই অদিতি বলল, "আসতে পারলি তাহলে। কিছু খেয়ে নে আগে। তারপর আমায় সাজাতে বসবি।"

অদিতি একটি প্লেটে কয়েকটা মিষ্টি এনে দিলো। অপর্ণা খেতে-খেতে অদিতিকে বলল, "জানিস আজ আমার খুব ভালো লাগছে, তোকে নিজের হাতে সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। আবার একদিক থেকে কষ্টও হচ্ছে, তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবি বলে।"

অদিতির চোখে জল আসে। অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে সে বলল, "ছেড়ে যাব কেন! প্রতিদিন তোকে ফোন করব। আমাদের সম্পর্ক একই থাকবে অপু। হয়তো রাস্তার দূরত্বটা বেড়ে গেল।"

অপর্ণা বলল, "আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। চল তোকে সাজিয়ে তৈরি করে দিই। ছ'টা বাজতে যাচ্ছে। আটটায় বিয়ের লগ্ন। দেরি করিস না।" অদিতি উঠে অপর্ণাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। অপর্ণা গভীর মনোযোগ দিয়ে অদিতির কপালে চন্দনের নকশা আঁকতে শুরু করল। সন্ধ্যা সাতটায় অদিতিকে সাজানো শেষ হলো।

অপর্ণা অদিতিকে বলল, "চোখ খুলে দেখ নিজেকে কেমন লাগছে!"

অদিতি চোখ খুলে আয়নায় নিজেকে দেখল। অপর্ণার সত্যিই হাত আছে। অদিতি বলল, "খুব সুন্দর সাজিয়েছিস। সত্যিই অনেক ভাগ্যে এত গুণবতী বন্ধু পেয়েছি। তোর তুলনা হয় না।"

অপর্ণা অদিতিকে নিয়ে নিচে চলে এলো। অপর্ণা বলল, "আমায় বাড়ি যেতে হবে এবার।"

লোকজনের সমাগম আরও বাড়তে লাগল বিয়ে বাড়িতে। অদিতির হাতে একটা করে উপহার ধরিয়ে দিয়ে যে যার গল্পে মত্ত। বিয়ে বাড়িতে করুণ সুরে সানাই বেজে চলেছে। অদিতি বলল, "এই তো সবে সাতটা বাজছে। বিয়ে একটু দেখে, খেয়ে-দেয়ে যাবি। এত তাড়া কিসের!"

অপর্ণা বলল, "মা বাড়িতে চিন্তা করবে।"

অদিতি নাছোড়বান্দা। বলল, "আচ্ছা, আমার বরকে তোর দেখতে ইচ্ছে করছে না! পরিচয় করতে ইচ্ছে করছে না!"

"হ্যাঁ, করছে। কিন্তু অত রাত পর্যন্ত থাকতে হবে! খুব সুন্দর দেখতে নিশ্চয়ই তোর বর। তাই তুই বিয়ে দেখা ছেড়ে বর দেখার কথা বলছিস।"

অদিতি বলল, "সুন্দর দেখতে। তবে খুব কিনা, জানি না। তোর মামার বাড়ি যেখানে, ওর বাড়ি তো সেখানে। কি যেন নাম জায়গাটার! ভুলে যাই।"

অপর্ণা বলল, "ও তোর বরের বাড়ি পালসিট?"

"হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো বলছি আমার বরকে চিনলেও চিনতে পারিস। আলাপ করে যাবি।"

অপর্ণা আর অদিতির কথা ফেলতে পারল না, অগত্যা অদিতির পাশে বসে পড়ল। অপর্ণার পিঠে, কোমরে হালকা ব্যথা করছে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাতে। ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় আটটা। অদিতির বিয়ের শুভ লগ্ন। বরপক্ষ এখনও এসে পৌঁছায়নি। অদিতির বাবাকে ফোনে জানিয়েছে ওরা রাস্তায় আছে। মিনিট পনেরোর মধ্যে ঢুকবে। অপর্ণা বলল, "অদিতি, বরপক্ষ তো আসতে দেরি নেই। আমি বরং কিছু খেয়ে আসি। বর দেখেই আমি চলে যাব। বিয়ে অতক্ষণ দেখতে পারব না রে। পিঠে, কোমরে খুব যন্ত্রণা করছে।" অদিতি আপত্তি করল না। বলল, "যা তুই খেয়ে নে।"

অপর্ণা খাবার জায়গায় গিয়ে টুকটাক খাবার খেল। খেতে-খেতে হঠাৎই খাবার জায়গায় শোরগোল উঠল, "বর এসেছে... বর এসেছে... "

অপর্ণা শুনে তাড়াহুড়ো করে হাত ধুয়ে বর দেখতে গেল। অপর্ণা দেখল বাড়ির গেটের সামনে মেলার মতো লোক। সকলে বরের গাড়ি ঘিরে ধরেছে বর দেখার জন্য। উদগ্রীব অপর্ণা ওই ভিড়ের মধ্যে যাওয়ার সাহস করল না। বরকে বরণ করে নামিয়ে আনা হলো গাড়ি থেকে। অপর্ণা অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে অদিতির হবু বরকে দেখল। অদিতির হবু বরকে দেখে অপর্ণার বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিজের অজান্তেই বলে উঠল, "অঙ্কন!!"

অপর্ণার জীবনের অব্যক্ত ভালোবাসা অঙ্কন। আর তার চরমতম দুর্বলতা। অপর্ণা আর দেরি না করে সকলের অগোচরে বন্ধু অদিতির বিয়ের মণ্ডপ থেকে বিদায় নিল। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নটা বাজতে আর কয়েক মিনিট বাকি। এতক্ষণে ওদিকে হয়তো বিয়ের নিয়মকানুন, আচার- অনুষ্ঠান চলছে। অদিতিও জীবনের সেরা আনন্দঘন মুহূর্তের সঙ্গে মেতে উঠেছে। অপর্ণার কথা ভাববার সময় কোথায় তার! রিক্সার "ক্যাঁচ ক্যাঁচ" আওয়াজে সব ভাবনা এলোমেলো হয়ে গেল অপর্ণার। সে বাড়ি পৌঁছে গেছে। বাড়ি পৌঁছে অপর্ণা দেখল মা তার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করছেন। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মা সাগ্রহে বললেন, "এসেছিস! আয়। আমি ভাবছি যে, অদিতি আজ হয়তো তোকে ছাড়বে না।"

অপর্ণা বলল, "মা, কি যে বলো! আজ অদিতির এত আনন্দের দিন। আর আমার মতো পঙ্গু মেয়েকে নিয়ে সে মাতামাতি করবে! জানো কত লোকজন এসেছে ওদের বাড়িতে। দম ফেলার ফুরসৎ নেই। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ ধরে রাখতে পারবে না মা..." অপর্ণা কথাটা শেষ করেই মায়ের বুকে মুখ লুকালো।

মা একটু চিন্তিত সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, "কি হয়েছে অপু! কেউ কি তোকে কিছু বলেছে?"

অপর্ণা স্মিত হেসে বলল, "কে বলবে! আর কি-বা বলবে! আমি অদিতির সবচেয়ে ভালো বন্ধু সবাই জানে।"

মা অপর্ণার মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে বললেন, "তবু ভয় হয়, কার কোন কথায় তুই আঘাত পাস..."

অপর্ণার চোখে জল এসেছে। আজ চোখের জল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না অপর্ণা। এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় তার গাল বেয়ে অশ্রুধারা নীরবে বয়ে চলেছে। মা সন্তানের যন্ত্রণা কাতর হৃদয়ের কথা বুঝতে পেরে বললেন, "কাঁদছিস! মন খারাপ করছে অদিতির জন্য!"

অপর্ণা কথা বলতে গিয়েও কথা বলতে পারল না। কি গভীর অযাচিত যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করছিল কে জানে, তাকে বারবার বাকরুদ্ধ করে দিচ্ছিল। নিজের অক্ষমতা, অসহায়তা তাকে বড় বিষণ্ণ করে তুলেছে। আজ সে কারোর জন্য নয়, নিজের জন্য চোখের জল ফেলছে। সে চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরকে মনে-মনে বলল, "হায় ঈশ্বর! আমার শরীরকে জড়ত্ব সম্পন্ন করেছো কেন? মনটাকে কেন করোনি? শরীরের মতো মনটা পঙ্গু হলে এত যন্ত্রণা তো হতো না।"

মা বললেন, "চল অপু শুতে চল। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেব।" মায়ের কোলে মাথা রেখে এক অদ্ভুত শান্তিতে শুয়ে অপর্ণা কখন ঘুমিয়ে গেল তা মনে নেই।

অদিতির বিয়ে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। বিয়ের পর অদিতি অপর্ণাকে একবারই ফোন করেছিল। অদিতির কথায় অপর্ণা বুঝেছিল রাস্তার দূরত্ব হৃদয়ের দূরত্বকে বাড়িয়ে তুলেছে। অপর্ণা নিজের মনকে খুশি রাখলো 'অদিতি শ্বশুরবাড়িতে ভালো আছে' এই ভেবে। অদিতির সঙ্গে কাটানো সমস্ত স্মৃতি ভুলতে চেষ্টা করল অপর্ণা। হঠাৎই একদিন সে তার মাকে বলল, "মা, আমি চাকরি করব। যেকোনো চাকরি। এভাবে বাড়িতে বসে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব।"

মা বললেন, "তোকে চাকরি কে দেবে?"

অপর্ণা বলল, "জানো মা, কাল প্রবোধদার সঙ্গে দেখা হলো। এই গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন নতুন ডাক্তারবাবু আসবেন। খুব ভালো ডাক্তার শুনলাম। উনি কলকাতা থেকে অনেক ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেছেন। ওই ডাক্তারবাবু একজন সহকর্মী খুঁজছেন। মানে কম্পাউন্ডার আর কি! হাতে-হাতে সাহায্য করতে হবে। ভালো মাইনেও দেবে। মাসে দশ হাজার টাকা।"

অপর্ণার মা শুনে একটু অবাকই হলেন। বিস্ময়ের সুরে বললেন, "কিন্তু তোকে কেন নেবে এত লোক থাকতে?"

অপর্ণা বলল, "প্রবোধদা বলেছে, ওই সব ব্যবস্থা করে দেবে। শুধু কাল সকাল এগারোটায় একবার আমাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা করতে হবে।"

অপর্ণার কথা শুনে মা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। অন্যমনস্কভাবে বললেন, "যাক তোর একটা ব্যবস্থা হলেই ভালো। আমি শান্তিতে মরতে পারব।"

অপর্ণা মাকে জড়িয়ে ধরে আদো গলায় বলল, "আমায় ছেড়ে তুমি কোথাও যাবে না।"

অপর্ণা সকালে ঠিক সময় মতো হরিদেবপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা করল। যাইহোক প্রবোধদার সাহায্যে অপর্ণার চাকরির একটা ব্যবস্থা হলো। নতুন ডাক্তার বিমল মিত্র অপর্ণাকে নিযুক্ত করলেন তাঁর সহকর্মী হিসাবে। ডাক্তার মিত্র বললেন, "কালই তুমি কাজে যোগ দাও অপর্ণা। তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা কালই দিয়ে দেব। তোমার কোনও অসুবিধা নেই তো!"

অপর্ণার বিষণ্ণ মুখে একটু হাসির আভা দেখা গেল। সে বলল, "আপনি যে আমার কি উপকার করলেন, কি বলব!"

অদিতির সঙ্গে বহুদিন হয়ে গেল অপর্ণার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপর্ণার জীবনধারা বয়ে চলেছে নিজের মর্জিতে। ডাক্তার মিত্রর পাশাপাশি থাকতে-থাকতে ডাক্তারি বিদ্যায় অপর্ণা বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। ডাক্তার মিত্র মাঝেমধ্যেই অপর্ণাকে বলেন, "আমার প্রয়োজন বোধ হয় আর কিছুদিনের মধ্যেই ফুরাবে। অপর্ণা আমার বিদ্যার প্রায় সবটুকু আমি তোমায় উজাড় করে দিয়েছি। আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ এই যে, যেটুকু তোমাকে দিয়েছি সেটুকু তুমি নিতে পেরেছো। আমার খুব ভালো লাগছে।"

দেখতে-দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল অপর্ণার কর্মজীবন। অপর্ণার ব্যবহারের জন্য সে সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। একদিন এক মুমূর্ষু বৃদ্ধাকে একটি লোক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার বিমল মিত্রের কাছে দেখাতে নিয়ে আসে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে তারা জানতে পারে যে ডাক্তারবাবু অপর্ণার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে কদিনের জন্য বাইরে গেছেন। অপর্ণা ভালো করে পরীক্ষা করে বৃদ্ধাকে বলল, "ঠাকুমা, চিন্তা করবেন না। আপনি ভালো হয়ে যাবেন।"

বৃদ্ধা মহিলা কাশতে-কাশতে বলল, "আর ভালো। শ্বাসকষ্টটা ভীষণই রাত-বিরেতে আমার উপর এমন অত্যাচার করছে যে মনে হচ্ছে মরে যাব।"

অপর্ণা বলল, "আমি ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি। সময় মতো খাবেন। ভালো হয়ে যাবেন।"

অপর্ণা কয়েকটি ওষুধ বৃদ্ধা মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোককে দিলো। কোন ওষুধ কখন খেতে হবে লোকটিকে বুঝিয়ে দিলো অপর্ণা। চার দিন পর ডাক্তার বিমল মিত্র ফিরে এলেন। অপর্ণা নিজের কাজে ব্যস্ত। ওই বৃদ্ধা মহিলা একটু সুস্থ হয়ে এসে অপর্ণার কথা জিজ্ঞাসা করলেন ডাক্তারবাবুকে। ডাক্তারবাবু অপর্ণাকে পাশের ঘর থেকে ডেকে আনলেন। অপর্ণা বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল, "কেমন আছেন?"

বৃদ্ধা বললেন, "ভালো। খুব ভালো। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি।" বৃদ্ধা চেয়ার ছেড়ে উঠে অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "খুব ভালো মেয়ে। আশীর্বাদ করি সুখী হও জীবনে।"

ডাক্তার মিত্র এই দৃশ্য দেখে একটু অবাক হলেন। অপর্ণা নিজেও জানে না সে সুখী হবে কিনা! তবে এরকম মানুষের আশীর্বাদ, ভালোবাসা তার জীবনে চিরকাল চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    144    145    146    147    148    (149)     150   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717